
সংকটে পড়া ছয়টি ব্যাংকের সম্পদের (ঋণের) প্রকৃত আর্থিক চিত্র বের করতে নিরীক্ষা শুরু করেছে দুই বৈশ্বিক নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান আর্নস্ট অ্যান্ড ইয়াং এবং কেপিএমজি। এর মধ্যে বিতর্কিত কেপিএমজি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানারকম অভিযোগ রয়েছে।
গত সোমবার লন্ডনভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্রিটিশ হিসাবরক্ষণ প্রতিষ্ঠান কেপিএমজি তাদের সাম্প্রতিক ভুল ও ত্রুটিপূর্ণ নিরীক্ষার জন্য ক্রমাগত জরিমানার সম্মুখীন হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নিরীক্ষাসংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে। ব্রিটিশ জুয়া কোম্পানি ‘এন্টেইন’-এর সঠিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত না করায় ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) কর্তৃক কেপিএমজি তদন্তের সম্মুখীন হচ্ছে। সংস্থাটির ২০২২ সালের আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুতে সম্ভাব্য ভুল রিপোর্টের জন্য এই তদন্ত হচ্ছে বলে ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিংয়ের নিয়ন্ত্রক সংস্থা গত সোমবার এফআরসি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া কেপিএমজি বিগত কয়েক বছর ধরে পক্ষপাতদুষ্ট এবং ত্রুটিপূর্ণ রিপোর্টিংয়ের কারণে ২১ মিলিয়ন পাউন্ড জরিমানা পরিশোধ করেছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল বলেছে, তাদের এনফোর্সমেন্ট বিভাগ চারটি বড় হিসাবরক্ষণ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম খতিয়ে দেখবে। যদিও তারা বলেনি, ঠিক কী কারণে এই তদন্ত করা হচ্ছে। এ বিষয়ে কেপিএমজির মুখপাত্র বলেছেন, তারা এই তদন্ত কার্যক্রমে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা করবেন।
এদিকে জুয়া প্রতিষ্ঠান এন্টেইনের হিসাব নিরীক্ষা নিয়ে অভিযোগ থাকলেও সেই এন্টেইন এ বিষয়ে কিছু বলেনি। এ ঘটনা কেপিএমজির জন্য বড় ধাক্কা বলে মনে করা হচ্ছে। এমনিতেই তারা নিজেদের ভাবমূর্তি উন্নত করার চেষ্টা করছিল। এর আগেও বেশ কয়েকটি ঘটনায় কেপিএমজির ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। বিশেষ করে ২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যের সরকারি সেবাদাতা কোম্পানি ক্যারিলিয়ন ধসে যাওয়ার পর তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। এই কোম্পানির নিরীক্ষাও করেছিল কেপিএমজি।
এমন অবস্থায় সেই প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করা হয়েছে বাংলাদেশের সংকটে পড়া ব্যাংকগুলোর সম্পদের (ঋণের) প্রকৃত আর্থিক চিত্র বের করতে। এতে ব্যাংকগুলোর প্রকৃত চিত্র বের হবে কি না, সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হলে প্রকৃত ফলাফল না-ও আসতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে খবরের কাগজকে বলেন, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাংকগুলোর সম্পদের প্রকৃত আর্থিক চিত্র বের করতে আন্তর্জাতিক দুটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ কাজে অর্থায়ন করছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। তারাই এই দুটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিয়েছে। নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো ভূমিকা নেই।
যে ছয়টি ব্যাংকে অডিট করা হবে, সেগুলো হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। এসব ব্যাংকে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে অডিট কার্যক্রম।