
শেরপুরের চরাঞ্চলে মিষ্টি আলু চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। জাপানের একটি কোম্পানি সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে মিষ্টি আলু কিনে নেয়। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। কোম্পানি বিনামূল্যে বীজ, সার ও কীটনাশক সরবরাহ করে। মিষ্টি আলু চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। স্থানীয় কৃষকদের জন্য এটি একটি লাভজনক ও পুষ্টিকর ফসল হয়ে উঠেছে।
শেরপুরে চরাঞ্চলে মিষ্টি আলু চাষ এখন ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। একসময় এই আলু ছিল সাধারণত স্থানীয় মানুষের খাদ্য। কিন্তু এটি রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, শেরপুরে ব্যাপকভাবে মিষ্টি আলু চাষ হচ্ছে। এখন এই আলু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে। এতে আলু চাষে চাষিরা আরও বেশি আগ্রহী হয়েছেন।
এ বছরের শুরুতে শেরপুরে ২০৫ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু তা ছাড়িয়ে ২১২ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলু চাষ হয়েছে। জাপানে রপ্তানির কারণে কৃষকদের মধ্যে চাষের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। জাপানি কোম্পানি নারুতো লিমিটেড সদর উপজেলার বলাইয়েরচর, চরমোচারিয়া ও কামারেরচরে ৪৩ জন কৃষকের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এই কোম্পানি সরাসরি আলু কিনে নেয়। এ ছাড়া কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ, সার ও কীটনাশক সরবরাহ করে।
এ বছর ওই কোম্পানি প্রতি মণ আলু ৬৫০ টাকা দরে কিনছে। গত বছর ৫৮০ টাকা দরে কিনেছিল। কৃষকরা বলেন, এই চাষে তাদের খরচ কম, লাভ অনেক বেশি। মিষ্টি আলু চাষের জন্য কোনো বড় ধরনের খরচ নেই, শুধু শ্রমিক খরচ ও পরিচর্যা প্রয়োজন। একরপ্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ মণ আলু পাওয়া যায়। এই আলু দেড় থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়।
মিষ্টি আলু চাষের ফলে কৃষকদের পাশাপাশি অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে আলু তোলার সময় অনেক নারী ও পুরুষ দিন হাজিরায় কাজ করছেন। এতে তারা বাড়তি আয় করছেন। কৃষকরা জানান, মিষ্টি আলু চাষে তাদের লাভ বাড়ছে। এটি তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করছে।
কৃষিবিদরা বলেন, মিষ্টি আলু একটি পুষ্টিগুণে ভরা উদ্ভিদ। এতে প্রচুর বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬ ও ফাইবার রয়েছে। এটি স্বাস্থ্যগত নানা উপকারে আসে। এই আলুর পাতা ও মূল বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
তবে মিষ্টি আলু ঠাণ্ডা সহ্য করতে পারে না। তাই গড় তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস সবচেয়ে উপযুক্ত।
শেরপুরের ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলের আবহাওয়া এবং মাটি মিষ্টি আলু চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায়, চাষে জোর দিলে কৃষি অর্থনীতিতে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। কৃষকদের মিষ্টি আলু চাষে সহযোগিতা করছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তারা কৃষকদের পরামর্শ দেয় এবং প্রয়োজনীয় সাহায্য করে থাকে।
জাপানি কোম্পানির প্রতিনিধি জাকারিয়া বলেন, তাদের কোকোই-১৪ জাতের মিষ্টি আলু খুব সুস্বাদু। কোম্পানি আলু প্রক্রিয়াজাত করে সেদ্ধ আলু, চিপস, মিষ্টি ইত্যাদি তৈরি করে বিক্রি করবে। জাপান ও থাইল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশে রপ্তানি করবে।
কৃষিবিদ মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, মিষ্টি আলু চাষের জন্য জেলার চরাঞ্চলের মাটি খুবই উপযোগী। জাপান এবং দেশের বিভিন্ন সুপার শপে আলু বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য মিষ্টি আলু জাতের তুলনায় এই আলুর ছালসহ খাওয়া যায়, এটি জাপানে জনপ্রিয়। কৃষকদের জন্য মিষ্টি আলু চাষ একটি লাভজনক ও পুষ্টিকর বিকল্প হতে পারে।