
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে প্রথমবারের মতো মাটির তৈরি পণ্য ফ্রান্সে রপ্তানি হচ্ছে। বাংলাদেশের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘ওয়াক অ্যান্ড এসএ লিমিটেড’ ১৫ হাজার টন ওজনের এক কনটেইনার মাটির তৈজসপত্র ফ্রান্সে পাঠাচ্ছে। এটি গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজে তোলা হয়েছে। মার্চের প্রথম সপ্তাহে ফ্রান্সে পৌঁছবে।
মাটির পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে কলসি, হাঁড়ি, পাতিল, সরা, মটকা, দই পাতিল, মুচিঘট, মুচিবাতি, মিষ্টির পাতিল, রসের হাঁড়ি, ফুলের টব, জলকান্দা, মাটির ব্যাংক, ঘটি, বাটি, বাসন ও খেলনাসামগ্রীসহ ১০০ ধরনের পণ্য। এসব পণ্য বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। বিশেষভাবে দিনাজপুর এলাকা থেকে অধিকাংশ পণ্য সংগ্রহ করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মাটির পণ্যের রপ্তানি এ শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করতে পারে। এক সময় গ্রামাঞ্চলে মাটির তৈরি জিনিসপত্র ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু বর্তমানে প্লাস্টিক ও সিরামিকপণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মৃৎশিল্প প্রায় হারিয়ে গেছে। অনেক মৃৎশিল্পী বর্তমানে এই পেশা ত্যাগ করেছেন। কিন্তু কিছু পরিবার এখনো এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত।
চট্টগ্রামের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট (সিঅ্যান্ডএফ) প্রতিষ্ঠান স্পিড লিংক লিমিটেড রপ্তানির কার্যক্রমটি পরিচালনা করছে। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার হাফিজুর রহমান মিন্টু জানান, ইউরোপের বাজারে মাটির শোপিস, ফুলদানি, ডিনার সেট ও বাটিসেট পাঠানো হচ্ছে। তিনি জানান, ‘ফ্রান্সে মাটির পণ্য রপ্তানি বাংলাদেশির জন্য একটি সুখবর। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও যদি এই ধরনের পণ্য রপ্তানির ইচ্ছা পোষণ করে, তারা সহযোগিতা করবে।
ওয়াক অ্যান্ড এসএ লিমিটেডের অপারেশন ম্যানেজার মো. ইকবাল বাহার সৈকত বলেন, ‘মাটির পণ্য রপ্তানি প্রথমবারের মতো ফ্রান্সে যাচ্ছে। এটি একটি বড় সফলতা। তিনি আরও বলেন, এই পণ্য চালানটি প্রায় ৪৭ দিন পর ফ্রান্সে পৌঁছাবে। এ ছাড়া চট্টগ্রামে কোনো আন্তর্জাতিক মানের প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠান না থাকায়, তাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়ে প্যাকেজিং করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই উদ্যোগকে অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘একসময় দেশের গ্রামাঞ্চলে মাটির তৈজসপত্র ছিল গৃহস্থালি জীবনের অঙ্গ। কিন্তু বর্তমানে এর চাহিদা কমে গেছে।’ তিনি সরকারের কাছে মৃৎশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য বিনাসুদে ঋণ ও রপ্তানিকারকদের জন্য প্রণোদনা দেওয়ার আহ্বান জানান।
মাটির পণ্যের রপ্তানি বাড়ালে দেশের বৈদেশিক আয় বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষত, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের অতিরিক্ত কমিশনার মো. তফসির উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘মাটির তৈরি তৈজসপত্র বিদেশে রপ্তানি হলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তিনি আরও বলেন, ‘মাটির পণ্য এবং অন্যান্য হস্তশিল্পের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বিদেশে। বিশেষভাবে উন্নত দেশগুলোতে এসব পণ্যের চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।’
এর আগে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ যেমন- সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান ও কুয়েতে মাটির পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। তবে ফ্রান্সে রপ্তানি শুরু হওয়া এই চালানটি বাংলাদেশের মৃৎশিল্পকে একটি নতুন সুযোগ এনে দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাটির পণ্য রপ্তানি বাড়ানো গেলে বাংলাদেশের বৈদেশিক আয় বৃদ্ধি পাবে। এটি দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই উদ্যোগ মৃৎশিল্পের পুনর্জাগরণে সহায়ক হতে পারে। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের তৈরি পণ্যের প্রতিযোগিতা বাড়াতে সহায়তা করবে।