ঢাকা ৮ চৈত্র ১৪৩১, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫
English

পুঁজিবাজার বিকাশের মুনাফা বেড়েছে ১৭ গুণ

প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:২৩ এএম
বিকাশের মুনাফা বেড়েছে ১৭ গুণ
বিকাশ লিমিটেড

২০১৯-২০২১ টানা তিন বছর লোকসান টানার পর ধারাবাহিক মুনাফায় দেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান বিকাশ লিমিটেড, যার ৫১ শতাংশ মালিকানায় আছে ব্র্যাক ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির ২০২৩ সালে মুনাফা হয়েছিল ১০৩ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের ৯ মাসে যে মুনাফা হয়েছে, তা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৭ গুণ বেশি।

সম্প্রতি ইবিএল সিকিউরিটিজ ব্র্যাক ব্যাংক-সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে বিকাশের আর্থিক অগ্রগতির বিষয়টি উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিকাশ শুধু মুনাফা করেনি, ২০২৪ সালের প্রথম ৯ মাসে ব্র্যাক ব্যাংক যে মুনাফা করেছে তার ২১ শতাংশের জোগান দিয়েছে বিকাশ লিমিটেড, যা ২০২৩ হিসাব বছরের তুলনায় ১২ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। 

পরিসংখ্যানে দেখে গেছে, ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত লোকসানে ছিল বিকাশ। এ সময়ের মধ্যে ২০১৯ সালে লোকসান হয়েছে ৬২ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ২০২০ সালে লোকসান ৬৭ কোটি টাকা এবং ২০২০ সালে লোকসান হয়েছিল ১২৩ কোটি টাকা। 

বিকাশ জানিয়েছে, ২০২১ সালের আগে বিকাশ কৌশলগত বিনিয়োগে করেছে। এরপর নতুন বিনিয়োগ ও নতুন কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে। ফলে ২০২৩ সাল থেকে মুনাফায় ফিরেছে। ফলে ২০২৩ সালে বিকাশের কর-পরবর্তী নিট মুনাফা আগের বছরের তুলনায় ৫০৪ শতাংশ বেড়ে ১০৪ কোটি টাকা হয়েছে। 

২০২২ হিসাব বছরে বিকাশের পরিচালন লোকসান হয়েছিল ৭৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। দুই বছরে ঘুরে দাঁড়ায় প্রতিষ্ঠানটি। ফলে ২০২৩ সালে পরিচালনা মুনাফা করেছে ৩০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। ২০২৪ সালের প্রথম ৯ মাসেও সেই মুনাফা অব্যাহত ছিল, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ গুণ। এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালন মুনাফা হয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। 

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিকাশের কাছ থেকে ২০২২ সালে মোট রেভিনিউ এসেছে ৩ হাজার ৪৩০ কোটি ৮১ লাখ টাকা। ২০২৩ সালে যা ছিল ৪ হাজার ১৯০ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং ২০২৪ সালের ৯ মাসে রেভিনিউ অর্জিত হয়েছে ৪ হাজার ৮৬০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। 

২০১১ সালে ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানি অ্যান্ড মোশন এলএলসির যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিকাশ, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছে। এদের মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি), বিল অ্যান্ড মেলিন্ড গেটস ফাউন্ডেশন, অ্যান্ট ফাইন্যান্স গ্রুপ এবং সফটব্যাংক, যা পুরো প্রযুক্তিকে শক্তিশালী করেছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিকাশের প্রবৃদ্ধি মূলত নতুন নতুন ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস উদ্ভাবন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করা এবং গ্রাহক বৃদ্ধিতে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা। বিকাশ তার বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে শক্তিশালী আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর হয়েছে, যা এর মূল প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ব্যাংকের বছরের মোট আয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। 

ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসির গত ৫ বছরের আর্থিক প্রতিবেদনেও বেশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ হিসাব বছর পর্যন্ত ব্যাংকটির ঋণ প্রদানের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ এবং আমানত গ্রহণ বেড়েছে ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ। একই সঙ্গে ২০২৪ সালের ৯ মাসে আর্থিক সেক্টরের তারল্য সমস্যা থাকলেও ব্র্যাক ব্যাংকের ক্ষেত্রে আমানত ২২ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে। 

২০২৪ সালের ৯ মাসে ব্যাংকটির পরিচালন আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। যদিও সুদ থেকে আয় ১৮ শতাংশ কমেছে। তবে বিনিয়োগ থেকে আয় ১১২ দশমিক ৪ শতাংশ। একই সময়ে ব্যাংকটির সরকারি সিকিউরিটিজে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৬ শতাংশ বেড়েছে, যার পরিমাণ ২ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা। 

আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্র্যাক ব্যাংকের গত পাঁচ বছরে নিট মুনাফার ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। যেখানে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ২০২০ হিসাব বছরে ছিল আড়াই টাকা, সেখানে ২০২৪ সালের ৯ মাসে শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ৬ টাকা ৬০ পয়সায়। 

২০২৪ সালের প্রথম ৯ মাসে ব্র্যাক ব্যাংকের নিট মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৩ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৪৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্র্যাক ব্যাংক মূলত তিনটি খাতে সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করে থাকে। এর মধ্যে ২০২৪ সালের প্রথম ৯ মাসে এসএমই খাতে মোট বিরতণকৃত ঋণের ৪১ দশমিক ১ শতাংশ বিতরণ করা হয়েছে, টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ২ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা। ব্যাংকটি গত কয়েক বছর ধরে এসএমই খাতের ঋণের সুদের হার ৪ শতাংশে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে এবং এসএমই খাতের ঋণ আরও সম্প্রসারিত করতে ব্যাংক ২০২৪ সালের মে মাসে ব্রিটিশ ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্টের (বিআইআই) সঙ্গে ৫ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি করেছে।

ঈদের আগেই মাংসের বাজার লাগামহীন

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ১১:১৫ এএম
ঈদের আগেই মাংসের বাজার লাগামহীন

ঈদ আসতে আরও ১০ দিন বাকি রয়েছে। তার পরও তিন দিনের ব্যবধানে মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ১৭৫ টাকার ব্রয়লার মুরগি ২৩০ টাকা, ২৬০ টাকার সোনালি মুরগি ৩২০ টাকায় ঠেকেছে। গরুর মাংসের দামও বেড়েছে। কেজি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। চালের দাম রেকর্ড চড়া। ১৯টি রোজা চলে গেলেও কমেনি খেজুর, বেগুন, লেবুর দাম। বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। তবে এখনো খোলা সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) রাজধানীর হাতিরপুল, মোহাম্মদপুরের টাউন হলসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

হঠাৎ মুরগির দাম বাড়ল কেন? জানতে চাইলে হাতিরপুল বাজারের ব্রয়লার হাউসের স্বত্বাধিকারী মো. জাকির হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে প্রতিদিনই বাড়ছে দাম। আমরা দাম বাড়াচ্ছি না। খামারিরা ঈদে বেশি দামে বিক্রি করবেন। এ জন্য তারা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে বাজারে দাম বাড়ছে। কয়েক দিন আগে ব্রয়লার ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। বর্তমানে ২২০ টাকায় ঠেকেছে। ২৬০ টাকার সোনালি মুরগি ৩২০ টাকা হয়েছে। দেশি মুরগি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।’ এই বাজারের অন্য মুরগি বিক্রেতারাও একই তথ্য জানান। এ সময় জসিম উদ্দিন নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘যে যা ইচ্ছা তাই করছে। এ জন্য বাজার নিয়ন্ত্রণে নেই। কয়েক দিন কমার পর হুট করে বাড়ছে মুরগির দাম।’

অন্য বাজারেও একই অবস্থা। বিক্রেতারা বলছেন, খামার থেকে বাড়াচ্ছে দাম। টাউন হল বাজারের ব্রয়লার হাউসের মো. বেল্লাল হোসেন, সোনালি চিকেন হাউসের ইব্রাহিম আলীসহ অন্য মুরগি বিক্রেতারা বলেন, ‘ঈদ আসতে এখনো ১০ দিন বাকি। প্রথমে দাম কমই ছিল। কিন্তু তিন দিন ধরে দাম বাড়তেই আছে। খামারিরা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। ব্রয়লার ২১৫ টাকা ও সোনালি ২৯০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’ নিউ মার্কেট, কারওয়ান বাজারেও বেড়েছে মুরগির দাম। মুরগির মতো গরুর মাংসের দামও বাড়তি বলে খুচরা বিক্রেতারা জানান। আগে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও গতকাল বিভিন্ন বাজারে ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। 

মাংসে উত্তাপ ছড়ালেও ডিমে মিলেছে স্বস্তির বার্তা। গতকালও বিভিন্ন বাজারে ১২০ থেকে ১২৫ টাকা ডজন বিক্রি করতে দেখা গেছে। আগের মতোই রুই, কাতলা আকারভেদে ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি, পাবদা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি, তেলাপিয়া ও পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৫০, ট্যাংরা ৫০০ থেকে ১ হাজার, চিংড়ি ৭০০ থেকে ১ হাজার, ইলিশ ১ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। 

মিনিকেট চালের দামও লাগামহীন

রমজানে চালের বিক্রি অনেক কমে গেছে। আমদানিও বেড়েছে। তার পরও মিনিকেট চালের দাম ৮৬ থেকে ৮৮ টাকা, সবচেয়ে ভালো মোজাম্মেল মিনিকেট ৯৬ টাকায় ঠেকেছে। তবে আটাশ ও মোটা চালের দাম বাড়েনি। খুচরা চাল বিক্রেতারা বলছেন, বোরো ধান না উঠলে কমবে না চালের দাম। টাউন হল বাজারের আনোয়ার রাইস এজেন্সির আব্দুল মান্নান, হাতিরপুল বাজারের মাসুম স্টোরের মো. মাসুম মিয়াসহ অন্য বিক্রেতারা বলেন, ‘মিনিকেট চালের দাম থামানো যাচ্ছে না। রশিদ ৭৮ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করা হলেও ডায়মন্ড, হরিণ, মনজুর, এরফান ৮৬ থেকে ৯০ টাকায় ঠেকেছে।’ 

কারওয়ান বাজারের বরিশাল রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী সোহেল রানা ও আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘রমজানে চাল বিক্রি কমে গেছে। তার পরও মিল থেকে বাড়ছে দাম। আমাদেরও বাড়তি দামে মিনিকেট ৮২ থেকে ৮৬ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে আগের মতোই আটাশ চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা এবং মোটা চাল ৫২ থেকে ৫৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলেন, আগের মতোই ছোলা ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি, ছোলার ডাল ১২০ টাকা, খেসারির ডাল ১১০, চিনি ১২০, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা লিটার ও পাম অয়েল ১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

এখনো চড়া দামে বেগুন, লেবু বিক্রি

রমজানের শুরুতে বেগুন, শসা, লেবুর দাম সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে যায়। গতকাল ১৯তম রমজানেও এসব পণ্যের দাম তেমন কমেনি। লম্বা বেগুনের কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, বড় লেবুর হালি ১০০ থেকে ১২০ টাকার কমে মেলে না। টাউন হল বাজারের সবজি বিক্রেতা রমজান আলীসহ অন্যরা বলেন, ‘লম্বা বেগুন ১০০ থেকে ১২০ টাকা, সবুজ বেগুন ৬০ থেকে ৭০, ছোট লেবুর হালি ৪০ থেকে ৭০, তবে বড় লেবু ৮০ থেকে ১২০ টাকা। হাইব্রিড শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও দেশি জাতের শসা ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা সবজি বিক্রেতারা জানান, আগের মতোই বিভিন্ন বাজারে কাঁচা মরিচের কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, আলু ২০ থেকে ২৫, পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫০, দেশি আদা ১৩০, আমদানি করা আদা ২২০, দেশি রসুন ১০০ থেকে ১২০, আমদানি করা রসুন ২৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে বিভিন্ন পাড়ায় এসব সবজি কেজিতে ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। 

বাড়তি দামেই খেজুর বিক্রি

রমজান মাস উপলক্ষে এবার প্রচুর আমদানি হলেও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে খেজুর। ফল বিক্রেতারা বলেন, রমজান শুরুর আগেই সব খেজুরের দাম বেড়েছে। 

গতকালও মেডজুল খেজুর ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি, মরিয়ম ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০, বরই খেজুর ৪৫০ টাকা, জাহিদি ২০০ থেকে ২৪০ টাকা। মালটার কেজি ৩০০ টাকা, আপেল ৩২০ থেকে ৩৫০, আঙুর ৩৫০ থেকে ৪৫০, তরমুজ ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

করপোরেট কর ও ভ্যাট কমানোর প্রস্তাব বিসিআই’র

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ০৭:৪৫ পিএম
করপোরেট কর ও ভ্যাট কমানোর প্রস্তাব বিসিআই’র
ছবি: সংগৃহীত

শর্ত আরোপ ছাড়াই করহার ২.৫ শতাংশ হারে কমিয়ে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির জন্য ২৫ শতাংশ এবং পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির জন্য ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। এছাড়া সংগঠনটি করমুক্ত আয় সীমা ৫ লাখ টাকা করার, সরবরাহ পর্যায়ে উৎসে কর কমানোর, রপ্তানি আয়ের উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.৫০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) প্রাক বাজেট আলোচনায় সংগঠনটির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) এসব প্রস্তাব দিয়েছেন।

তিনি বলেন, গ্রস-প্রফিট খাতভিত্তিক নির্ধারণ করা হয়ে থাকে, যা যুক্তিসঙ্গত নয়। আবার গ্রস-প্রফিট কমে গেলে বা ব্যবসায় লস হলে তা বিবেচনায় নেওয়া হয় না। এমনকি পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় বিক্রয় কম হলেও কর কর্তৃপক্ষ তা বিবেচনায় নেয় না। এটি নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন। ব্যবসায় ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও টার্নওভার কর নির্ধারণ করা হয়, যা প্রতিষ্ঠানের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

সংগঠনটির অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে অনুন্নত এলাকার শিল্পে বিশেষ কর অবকাশ দেওয়া, নিম্নতম শুল্ক হারে পণ্যের কাঁচামাল, উপকরণ, মেশিনারিজ যন্ত্রপাতি আমদানির সুযোগ দেওয়া ইত্যাদি।

নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স পাইকারি ব্যবসায়ীদের টার্নওভারের ওপর ১.৫ শতাংশ ভ্যাটের পরিবর্তে ০.৫ শতাংশ করার, বিভিন্ন সূতায় করহার কমানোর, আগাম কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে।

বাংলাদেশ পেপার মিলস অ্যাসোসিয়েশন ছাপা কাগজ আমদানিতে সিডি ও আরডি মওকুফের সিদ্ধান্ত বাতিল করার, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানসমূহ কর্তৃক বিনাশুল্কে প্রাপ্যতার অতিরিক্ত কাগজ ও বোর্ড আমদানি কঠোর হস্তে দমন এবং খোলা বাজারে বিক্রি বন্ধে তদারকির ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দিয়েছে।

এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান বলেন, ভ্যাট আদায়ে প্রতিষ্ঠানগুলো সহযোগিতা করে না। তারা প্রকৃত তথ্য লুকায়, আমরাও চেপে ধরি। এভাবে চলতে পারে না। 

এমএ/

প্রবাসী আয়ে সুবাতাস, ১৯ দিনে এল ২৭ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ০৬:০৫ পিএম
প্রবাসী আয়ে সুবাতাস, ১৯ দিনে এল ২৭ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা

মার্চ মাসের প্রথম ১৯ দিনে দেশে এসেছে ২২৫ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স)। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে) যার পরিমাণ ২৭ হাজার ৪৭৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে দেশে এসেছে ১১ কোটি ৮৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স।

বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে আরও জানায়, শুধু ১৯ মার্চ একদিনেই রেমিট্যান্স এসেছে ১৩ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার।

এতে বলা হয়, মার্চের প্রথম ১৯ দিনে দেশে এসেছে ২২৫ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। আর গত বছরের একই সময়ে এসেছিল ১২৬ কোটি ২০ লাখ টাকা। বছর ব্যবধানে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৭৮.৪ শতাংশ

এদিকে গত ফেব্রুয়ারি ও জানুয়ারির প্রথম ১৯ দিনে প্রবাসী আয় এসেছিল যথাক্রমে ১৬৬ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ও ১২৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এ হিসাবে মার্চে বেড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদকে সামনে রেখে দেশে স্বজনদের কাছে বিপুল পরিমাণে অর্থ পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। এতে বাড়ছে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ। এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি মাসে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে আসতে পারে।

এদিকে গত ফেব্রুয়ারি ও জানুয়ারি মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল যথাক্রমে ২৫২ কোটি ৭৬ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার ও ২১৮ কোটি ৫২ লাখ মার্কিন ডলার।

গত বছর ২০২৪ সালে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ৬৮৮ কোটি ৯১ লাখ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে গত বছরের জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার, ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার, মার্চে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ ৭০ হাজার, এপ্রিলে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ ৩০ হাজার, মে মাসে ২২৫ কোটি ৪৯ লাখ ৩০ হাজার, জুনে ২৫৩ কোটি ৮৬ লাখ, জুলাইতে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার, আগস্টে ২২২ কোটি ৪১ লাখ ৫০ হাজার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪৭ লাখ ৯০ হাজার, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ৮ হাজার, নভেম্বরে ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ ১০ হাজার ও ডিসেম্বরে এসেছে ২৬৩ কোটি ৮৭ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার।

এমএ/

ঈদ উপলক্ষে কর্মচঞ্চল জামদানি পল্লি

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৫ এএম
ঈদ উপলক্ষে কর্মচঞ্চল জামদানি পল্লি
ছবি: খবরের কাগজ

আসন্ন ঈদ উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের নোয়াপাড়া বিসিক জামদানি পল্লি কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে। তাঁত বোনার খটখট শব্দে মুখর চারদিক। কারিগরদের ব্যস্ততা তুঙ্গে, কেনাবেচাও জমজমাট। এই ব্যস্ততা চলবে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত। ব্যবসায়ীরা আশাবাদী, বিক্রি ৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা কাজে লাগিয়ে অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে প্রচুর জামদানি। বিভিন্ন পেজ খুলে ছবি আপলোড করলেই অর্ডার আসছে।
প্রায় ৬ হাজার তাঁতি কাজ করেন বিসিক জামদানি পল্লিতে। যুগ যুগ ধরে এ এলাকাটি জামদানি তৈরির ঐতিহ্য বহন করছে। শুধু শাড়ি নয়, তৈরি হচ্ছে পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস, লুঙ্গিসহ নানা পোশাক। তারাব পৌরসভার রূপসী, খাদুন, কাজীপাড়া, মুড়গাকুল, পবনকুল ও বরাব এলাকায় জামদানি বোনা হয়।

তাঁতিরা সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকেন সুতা তৈরি, রং করা, বুনন ও নকশার কাজে। ঐতিহ্যবাহী জামদানির মধ্যে বল, প্লেন, বটপাতা, পানসি, ময়ূরপঙ্খী ও জলপাড় ডিজাইন জনপ্রিয়। এসব শাড়ি ভারত, নেপাল, ভুটান, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। দাম শুরু হয় কয়েক হাজার টাকা থেকে। যেটি ২ লাখ পর্যন্ত হয়ে থাকে।

হাছিনা জামদানি ঘরের স্বত্বাধিকারী ইয়াছিন ভূঁইয়া বলেন, ‘৩৫ বছর ধরে জামদানি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছি। বর্তমানে ২০ জন কারিগর কাজ করছেন। অনেক সময় শাড়ির খরচ তুলতেই কষ্ট হয়, কখনো কখনো বাকিতে বিক্রি করতে হয়। অনলাইনে নগদে বিক্রি করায় এখন সমস্যা কিছুটা কমেছে। সরকার যদি সরাসরি জামদানি সংগ্রহ করত, তাহলে আমরা উপকৃত হতাম। ঈদে বিক্রি ভালো, আশা করি পরিবার নিয়ে সুন্দর ঈদ কাটাতে পারব।’

আরেক ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কারিগর আনতে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা অগ্রিম দিতে হয়। পুঁজিসংকটে বড় পরিসরে ব্যবসা সম্ভব হয় না। ব্যাংক যদি কম সুদে ঋণ দিত, তাহলে ব্যবসা আরও সম্প্রসারিত করা যেত। সুতা ও রঙের দাম বাড়ছে, সরকারকে এদিকে নজর দিতে হবে।’

জামদানি কারিগর শফিকুল জানান, ‘সামনে ঈদ, তাই দিনরাত ব্যস্ত। ২৫ বছর ধরে এই পেশায় আছি। ঈদ ছাড়া প্রতি শুক্রবার ভোর ৫টা থেকে ৮টা পর্যন্ত হাট বসে, যেখানে শাড়ি বিক্রি করতে হয়। তাই সারা সপ্তাহ ব্যস্ত থাকতে হয়।’

রূপগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরীর কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী জামদানি ছড়িয়ে দিতে কাজ করছি। করোনার পর অনলাইনে বিক্রি বেড়েছে। এখন বিক্রির প্রায় অর্ধেক অনলাইনে হয়, বাকিটা হাট ও অন্যান্য মাধ্যমে।’

দিনাজপুরে ১ হাজার টন মধু উৎপাদন লক্ষ্য

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ১১:৪৯ এএম
দিনাজপুরে ১ হাজার টন মধু উৎপাদন লক্ষ্য
দিনাজপুরের মাউদপাড়া লিচুবাগানে মৌ-বাক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করছেন মৌখামারিরা। খবরের কাগজ

দিনাজপুর লিচুর জেলা হিসেবে পরিচিত। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারির শুরুতেই লিচুগাছে মুকুল আসে। মুকুল আসার আগেই বাগানিরা পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তারা গাছে পানি দেওয়া, স্প্রে করাসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করেন। 

মার্চের শুরু থেকে মাসের শেষ পর্যন্ত প্রতিটি গাছে মুকুলে ভরে যায়। এ সময় মধু আহরণের লক্ষ্যে মৌখামারিরা লিচুবাগানে শত শত মৌ-বাক্স স্থাপন করেন। দিনাজপুরের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকেও মৌখামারিরা এখানে আসেন।

মুকুল থাকাকালে মৌখামারিরা মধু সংগ্রহে ব্যস্ত থাকেন। তাদের অতিরিক্ত শ্রমিক প্রয়োজন হয়। এ বছর দিনাজপুরের বিভিন্ন লিচুবাগানে সহস্রাধিক মৌখামারি মৌ-বাক্স স্থাপন করেছেন। তাদের লক্ষ্য ১ হাজার টন মধু উৎপাদন। এর বাজারমূল্য ২০০-২২০ কোটি টাকা।

দিনাজপুর শহরের প্রমথতরী মাউদ পাড়ার লিচুবাগানে মৌ-বাক্স স্থাপন করে তাক লাগিয়েছেন মৌখামারি মাহবুবুর রহমান। এতে মধু সংগ্রহ যেমন হচ্ছে, তেমনি মৌমাছির মাধ্যমে পরাগায়নের ফলে লিচুর ফলনও বাড়ছে। এতে বাগানিরা খুশি।

জেলার সদর, বিরল, চিরিরবন্দরসহ ১৩টি উপজেলায় লিচু চাষ হচ্ছে। এ বছর লিচু চাষের জমির পরিমাণ ৫ হাজার ৬৮৯ হেক্টর এবং বাগানের সংখ্যা সাড়ে ৪ হাজারের বেশি। মাসিমপুর ও বিরলের মাদববাটিতে মৌ-বাক্স স্থাপনকারী খামারির সংখ্যা বেশি।
আউলিয়াপুর ইউনিয়নের মাউদ পাড়ার লিচুবাগানে রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও মাহবুবুর রহমান মিলে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি মৌ-বাক্স স্থাপন করেছেন। তাদের কাজে আরও পাঁচজন যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে।

রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘সারা বছর আমরা লিচুর মুকুল থেকে মধু আহরণের অপেক্ষায় থাকি। এবার মার্চের শুরুতেই ৪৫০ বাক্স স্থাপন করেছি। মাসে ২০০ মণ মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। প্রতি বাক্স থেকে ছয়-সাত কেজি মধু সংগ্রহ হচ্ছে।’
মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের খামারে পাঁচ-সাতজন শ্রমিক কাজ করছেন। আমরা ছয়-সাত দিন পর মধু হারভেস্ট করি। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি মধু সংগ্রহ সম্ভব।’

লিচু বাগানি মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার এক একর জমিতে লিচু বাগান রয়েছে। মৌখামারিরা মৌ-বাক্স স্থাপন করায় ৩০-৩৫ শতাংশ ফলন বৃদ্ধি পায়। আলাদা পাহারাদারের দরকার হয় না।’

মাসিমপুরের লিচু বাগানি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘মৌ-বাক্স স্থাপন করায় মৌমাছির মাধ্যমে পরাগায়ন হয়। ফলে লিচুর আকৃতি, মিষ্টতা ও উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। স্প্রের প্রয়োজন কম হয়, খরচও কমে যায়।’

মধু ক্রেতা লুৎফর রহমান বলেন, ‘লিচুর ফুলের খাঁটি মধু সরাসরি খামারিদের কাছ থেকে কিনতে পারছি। বাজারের তুলনায় কম দামে পাচ্ছি।’

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক জাফর ইকবাল বলেন, ‘দিনাজপুর লিচুর জেলা। পরাগায়নের জন্য মৌ-বাক্স স্থাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে লিচুর উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং বিপুল পরিমাণ মধু আহরণ সম্ভব হয়। এতে অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। মৌ-বাক্স স্থাপন দুপক্ষের জন্যই লাভজনক।’