
২০১৯-২০২১ টানা তিন বছর লোকসান টানার পর ধারাবাহিক মুনাফায় দেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান বিকাশ লিমিটেড, যার ৫১ শতাংশ মালিকানায় আছে ব্র্যাক ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির ২০২৩ সালে মুনাফা হয়েছিল ১০৩ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের ৯ মাসে যে মুনাফা হয়েছে, তা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৭ গুণ বেশি।
সম্প্রতি ইবিএল সিকিউরিটিজ ব্র্যাক ব্যাংক-সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে বিকাশের আর্থিক অগ্রগতির বিষয়টি উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিকাশ শুধু মুনাফা করেনি, ২০২৪ সালের প্রথম ৯ মাসে ব্র্যাক ব্যাংক যে মুনাফা করেছে তার ২১ শতাংশের জোগান দিয়েছে বিকাশ লিমিটেড, যা ২০২৩ হিসাব বছরের তুলনায় ১২ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি।
পরিসংখ্যানে দেখে গেছে, ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত লোকসানে ছিল বিকাশ। এ সময়ের মধ্যে ২০১৯ সালে লোকসান হয়েছে ৬২ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ২০২০ সালে লোকসান ৬৭ কোটি টাকা এবং ২০২০ সালে লোকসান হয়েছিল ১২৩ কোটি টাকা।
বিকাশ জানিয়েছে, ২০২১ সালের আগে বিকাশ কৌশলগত বিনিয়োগে করেছে। এরপর নতুন বিনিয়োগ ও নতুন কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে। ফলে ২০২৩ সাল থেকে মুনাফায় ফিরেছে। ফলে ২০২৩ সালে বিকাশের কর-পরবর্তী নিট মুনাফা আগের বছরের তুলনায় ৫০৪ শতাংশ বেড়ে ১০৪ কোটি টাকা হয়েছে।
২০২২ হিসাব বছরে বিকাশের পরিচালন লোকসান হয়েছিল ৭৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। দুই বছরে ঘুরে দাঁড়ায় প্রতিষ্ঠানটি। ফলে ২০২৩ সালে পরিচালনা মুনাফা করেছে ৩০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। ২০২৪ সালের প্রথম ৯ মাসেও সেই মুনাফা অব্যাহত ছিল, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ গুণ। এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালন মুনাফা হয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিকাশের কাছ থেকে ২০২২ সালে মোট রেভিনিউ এসেছে ৩ হাজার ৪৩০ কোটি ৮১ লাখ টাকা। ২০২৩ সালে যা ছিল ৪ হাজার ১৯০ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং ২০২৪ সালের ৯ মাসে রেভিনিউ অর্জিত হয়েছে ৪ হাজার ৮৬০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।
২০১১ সালে ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানি অ্যান্ড মোশন এলএলসির যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিকাশ, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছে। এদের মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি), বিল অ্যান্ড মেলিন্ড গেটস ফাউন্ডেশন, অ্যান্ট ফাইন্যান্স গ্রুপ এবং সফটব্যাংক, যা পুরো প্রযুক্তিকে শক্তিশালী করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিকাশের প্রবৃদ্ধি মূলত নতুন নতুন ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস উদ্ভাবন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করা এবং গ্রাহক বৃদ্ধিতে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা। বিকাশ তার বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে শক্তিশালী আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর হয়েছে, যা এর মূল প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ব্যাংকের বছরের মোট আয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে।
ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসির গত ৫ বছরের আর্থিক প্রতিবেদনেও বেশ প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ হিসাব বছর পর্যন্ত ব্যাংকটির ঋণ প্রদানের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ এবং আমানত গ্রহণ বেড়েছে ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ। একই সঙ্গে ২০২৪ সালের ৯ মাসে আর্থিক সেক্টরের তারল্য সমস্যা থাকলেও ব্র্যাক ব্যাংকের ক্ষেত্রে আমানত ২২ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে।
২০২৪ সালের ৯ মাসে ব্যাংকটির পরিচালন আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। যদিও সুদ থেকে আয় ১৮ শতাংশ কমেছে। তবে বিনিয়োগ থেকে আয় ১১২ দশমিক ৪ শতাংশ। একই সময়ে ব্যাংকটির সরকারি সিকিউরিটিজে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৬ শতাংশ বেড়েছে, যার পরিমাণ ২ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা।
আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্র্যাক ব্যাংকের গত পাঁচ বছরে নিট মুনাফার ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। যেখানে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ২০২০ হিসাব বছরে ছিল আড়াই টাকা, সেখানে ২০২৪ সালের ৯ মাসে শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ৬ টাকা ৬০ পয়সায়।
২০২৪ সালের প্রথম ৯ মাসে ব্র্যাক ব্যাংকের নিট মুনাফা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৩ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৪৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্র্যাক ব্যাংক মূলত তিনটি খাতে সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করে থাকে। এর মধ্যে ২০২৪ সালের প্রথম ৯ মাসে এসএমই খাতে মোট বিরতণকৃত ঋণের ৪১ দশমিক ১ শতাংশ বিতরণ করা হয়েছে, টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ২ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা। ব্যাংকটি গত কয়েক বছর ধরে এসএমই খাতের ঋণের সুদের হার ৪ শতাংশে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে এবং এসএমই খাতের ঋণ আরও সম্প্রসারিত করতে ব্যাংক ২০২৪ সালের মে মাসে ব্রিটিশ ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্টের (বিআইআই) সঙ্গে ৫ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি করেছে।