ঈদ আসতে আরও ১০ দিন বাকি রয়েছে। তার পরও তিন দিনের ব্যবধানে মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ১৭৫ টাকার ব্রয়লার মুরগি ২৩০ টাকা, ২৬০ টাকার সোনালি মুরগি ৩২০ টাকায় ঠেকেছে। গরুর মাংসের দামও বেড়েছে। কেজি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। চালের দাম রেকর্ড চড়া। ১৯টি রোজা চলে গেলেও কমেনি খেজুর, বেগুন, লেবুর দাম। বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। তবে এখনো খোলা সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) রাজধানীর হাতিরপুল, মোহাম্মদপুরের টাউন হলসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
হঠাৎ মুরগির দাম বাড়ল কেন? জানতে চাইলে হাতিরপুল বাজারের ব্রয়লার হাউসের স্বত্বাধিকারী মো. জাকির হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে প্রতিদিনই বাড়ছে দাম। আমরা দাম বাড়াচ্ছি না। খামারিরা ঈদে বেশি দামে বিক্রি করবেন। এ জন্য তারা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে বাজারে দাম বাড়ছে। কয়েক দিন আগে ব্রয়লার ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। বর্তমানে ২২০ টাকায় ঠেকেছে। ২৬০ টাকার সোনালি মুরগি ৩২০ টাকা হয়েছে। দেশি মুরগি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।’ এই বাজারের অন্য মুরগি বিক্রেতারাও একই তথ্য জানান। এ সময় জসিম উদ্দিন নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘যে যা ইচ্ছা তাই করছে। এ জন্য বাজার নিয়ন্ত্রণে নেই। কয়েক দিন কমার পর হুট করে বাড়ছে মুরগির দাম।’
অন্য বাজারেও একই অবস্থা। বিক্রেতারা বলছেন, খামার থেকে বাড়াচ্ছে দাম। টাউন হল বাজারের ব্রয়লার হাউসের মো. বেল্লাল হোসেন, সোনালি চিকেন হাউসের ইব্রাহিম আলীসহ অন্য মুরগি বিক্রেতারা বলেন, ‘ঈদ আসতে এখনো ১০ দিন বাকি। প্রথমে দাম কমই ছিল। কিন্তু তিন দিন ধরে দাম বাড়তেই আছে। খামারিরা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। ব্রয়লার ২১৫ টাকা ও সোনালি ২৯০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’ নিউ মার্কেট, কারওয়ান বাজারেও বেড়েছে মুরগির দাম। মুরগির মতো গরুর মাংসের দামও বাড়তি বলে খুচরা বিক্রেতারা জানান। আগে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও গতকাল বিভিন্ন বাজারে ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।
মাংসে উত্তাপ ছড়ালেও ডিমে মিলেছে স্বস্তির বার্তা। গতকালও বিভিন্ন বাজারে ১২০ থেকে ১২৫ টাকা ডজন বিক্রি করতে দেখা গেছে। আগের মতোই রুই, কাতলা আকারভেদে ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি, পাবদা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি, তেলাপিয়া ও পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৫০, ট্যাংরা ৫০০ থেকে ১ হাজার, চিংড়ি ৭০০ থেকে ১ হাজার, ইলিশ ১ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মিনিকেট চালের দামও লাগামহীন
রমজানে চালের বিক্রি অনেক কমে গেছে। আমদানিও বেড়েছে। তার পরও মিনিকেট চালের দাম ৮৬ থেকে ৮৮ টাকা, সবচেয়ে ভালো মোজাম্মেল মিনিকেট ৯৬ টাকায় ঠেকেছে। তবে আটাশ ও মোটা চালের দাম বাড়েনি। খুচরা চাল বিক্রেতারা বলছেন, বোরো ধান না উঠলে কমবে না চালের দাম। টাউন হল বাজারের আনোয়ার রাইস এজেন্সির আব্দুল মান্নান, হাতিরপুল বাজারের মাসুম স্টোরের মো. মাসুম মিয়াসহ অন্য বিক্রেতারা বলেন, ‘মিনিকেট চালের দাম থামানো যাচ্ছে না। রশিদ ৭৮ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করা হলেও ডায়মন্ড, হরিণ, মনজুর, এরফান ৮৬ থেকে ৯০ টাকায় ঠেকেছে।’
কারওয়ান বাজারের বরিশাল রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী সোহেল রানা ও আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘রমজানে চাল বিক্রি কমে গেছে। তার পরও মিল থেকে বাড়ছে দাম। আমাদেরও বাড়তি দামে মিনিকেট ৮২ থেকে ৮৬ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে আগের মতোই আটাশ চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা এবং মোটা চাল ৫২ থেকে ৫৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলেন, আগের মতোই ছোলা ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি, ছোলার ডাল ১২০ টাকা, খেসারির ডাল ১১০, চিনি ১২০, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা লিটার ও পাম অয়েল ১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এখনো চড়া দামে বেগুন, লেবু বিক্রি
রমজানের শুরুতে বেগুন, শসা, লেবুর দাম সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে যায়। গতকাল ১৯তম রমজানেও এসব পণ্যের দাম তেমন কমেনি। লম্বা বেগুনের কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, বড় লেবুর হালি ১০০ থেকে ১২০ টাকার কমে মেলে না। টাউন হল বাজারের সবজি বিক্রেতা রমজান আলীসহ অন্যরা বলেন, ‘লম্বা বেগুন ১০০ থেকে ১২০ টাকা, সবুজ বেগুন ৬০ থেকে ৭০, ছোট লেবুর হালি ৪০ থেকে ৭০, তবে বড় লেবু ৮০ থেকে ১২০ টাকা। হাইব্রিড শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও দেশি জাতের শসা ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা সবজি বিক্রেতারা জানান, আগের মতোই বিভিন্ন বাজারে কাঁচা মরিচের কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, আলু ২০ থেকে ২৫, পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫০, দেশি আদা ১৩০, আমদানি করা আদা ২২০, দেশি রসুন ১০০ থেকে ১২০, আমদানি করা রসুন ২৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে বিভিন্ন পাড়ায় এসব সবজি কেজিতে ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে।
বাড়তি দামেই খেজুর বিক্রি
রমজান মাস উপলক্ষে এবার প্রচুর আমদানি হলেও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে খেজুর। ফল বিক্রেতারা বলেন, রমজান শুরুর আগেই সব খেজুরের দাম বেড়েছে।
গতকালও মেডজুল খেজুর ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি, মরিয়ম ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০, বরই খেজুর ৪৫০ টাকা, জাহিদি ২০০ থেকে ২৪০ টাকা। মালটার কেজি ৩০০ টাকা, আপেল ৩২০ থেকে ৩৫০, আঙুর ৩৫০ থেকে ৪৫০, তরমুজ ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।