
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, সরকার পরিবর্তন হলেও দেশে চাঁদাবাজি কমেনি। আগের মতো এখনো যাত্রাবাড়ী-কারওয়ানবাজারসহ অন্যান্য বাজারে চাঁদাবাজি হচ্ছে, এটি বন্ধ না করতে পারলে পণ্যের দাম কমবে না।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) কনফারেন্স হলে জাগো নিউজ আয়োজিত ‘ভোক্তার কাঁধে বাড়তি করের বোঝা: উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় ব্যবসায়ীরা এসব কথা বলেন। তারা বলেন, দেশের মধ্যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি অনেকটা সময় ধরেই চলমান রয়েছে। এটা কমানো সম্ভব হচ্ছে না। পরিবহন বাজারে চাঁদাবাজি বন্ধ হলে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে।
ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, পৃথিবীর কোথাও খাদ্যপণ্যের ওপর মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট নেই। আমরা এক মাস ধরে ভ্যাট কমানোর জন্য আন্দোলন করে আসছি। আশা করেছিলাম অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আমাদের দাবি মেনে নেবেন। কিন্তু তা করা হয়নি। খাদ্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে এ খাতকে ভ্যাটমুক্ত বা ভ্যাটের আওতার বাইরে রাখার দাবি জানান তারা।
জাগো নিউজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কে এম জিয়াউল হকের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন অর্থনীতিবিদ এবং সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ, অর্থনীতিবিদ ড. এম এম আকাশ, প্রাণ আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী, বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরী, রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য রেজাউল হাসান, বিকেএমই সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আশরাফ আহমেদ, ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট নাজের হোসাইন, এসিআই ফুডসের চিফ বিজনেস কর্মকর্তা ফারিয়া ইয়াসমিন, এসএমসি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফ উদ্দিন নাসির, বাংলাদেশ অটো বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড ম্যানুফ্যাকচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়া, বাপা সভাপতি এমএ হাশেম, ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা, সাবেক ব্যাংকার সাইফুল হোসেন ও সুপার মার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন।
মোহাম্মদ হাতেম বলেন, গণমাধ্যম থেকে শুনেছিলাম প্রতি রাতে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেড় কোটি টাকা চাঁদা পেতেন। এখন তো পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু চাঁদাবাজির কি পরিবর্তন হয়েছে? এখনো যাত্রাবাড়ীসহ অন্যান্য বাজারে চাঁদাবাজি হচ্ছে, কারা করছে, এটা বন্ধ করতে হবে। এটা বন্ধ না করা গেলে পণ্যের দাম কমবে না।
তিনি আরও বলেন, পরিবহনের চাঁদাবাজিও বন্ধ হয়নি। আমাদের রপ্তানিমুখী শিল্পের পণ্যের গাড়ি শরীফ মেলামাইন কাঁচপুর ব্রিজ নারায়ণগঞ্জের কয়েকটির পয়েন্টে আটকানো হয়। সেখানে হয়রানি করা হচ্ছে রপ্তানিকারকদের। এ পয়েন্টগুলোয় গাড়ি আটকে এলসির কপি, ইউডির কপি চাওয়া হচ্ছে অথচ সেগুলো সব সময় নিয়ে যাওয়া কি সম্ভব। এরপরই জরিমানা করা হচ্ছে, যার কোনো কারণ নেই। এভাবে অন্যায়ভাবে হয়রানি বন্ধ করা হোক। এ কারণে শিপমেন্ট বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, অনেক ব্যবসায়ী সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জানালেন আমি কথা বলি, সমাধানও হয়। সেটা কতজনের সমাধান হবে, গতকালও ৩৯টি কোম্পানির গাড়ি আটকানো হয়েছিল হয়তো পাঁচ-ছয়জনেরটা ছাড়ানো সম্ভব হয়েছে। এই হয়রানি বন্ধ করা হোক।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য জিরো ভ্যাট বলা হলেও নানা অজুহাতে ভ্যাট বসানো হয়। হঠাৎ এক ব্যবসায়ীর ১১ কোটি টাকার ভ্যাট হিসাব করছে কোনো সই ছাড়াই। পরে সেটার নেগোসিয়েশনের জন্য বলা হয়, পরে হয়তো সেটা দু-তিন কোটিতে দাঁড়ায়। রপ্তানির স্বার্থে, দেশের ভ্যাটের নামে হয়রানি চান না ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ অটো বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘ভ্যাট-ট্যাক্সের জাঁতাকলে বিস্কুটের প্যাকেট আর কত ছোট করব আমরা? প্যাকেটে বিস্কুটের পরিমাণ আর কত কমাব? এভাবে কমাতে কমাতে খালি প্যাকেট দিতে হবে। নিম্ন আয়ের মানুষের প্রধান খাবারে আর ভ্যাট-ট্যাক্স বসাবেন না।’
শফিকুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, দেশের নিম্নআয়ের পরিবারগুলোর জন্য বিস্কুট একটি পুষ্টিকর খাবার। ভ্যাট বাড়ার ফলে প্রস্তুতকারকরা আর কম দামে বিস্কুট উৎপাদন করতে পারবেন না। আর কত ছোট করতে হবে, বিস্কুটের পরিমাণ আর কত কমাতে হবে। এতে নিম্ন আয়ের অপরিহার্য উৎস বন্ধ হয়ে যাবে, ভ্যাট বাড়লে খালি প্যাকেট দিতে হবে।
‘আমরা এক মাস ধরে আন্দোলন করছি ভ্যাট কমানোর জন্য। এখনো মাঠে আছি। আশা করেছিলাম ড. ইউনূস সরকার এসে আমাদের বিষয়টা দেখবেন, কিন্তু সে আশাও ফিকে হয়ে যাচ্ছে। খাদ্যপণ্য ভ্যাটমুক্ত থাকা দরকার। অথচ উন্নত দেশ ইংল্যান্ডে খাদ্যপণ্য ভ্যাটমুক্ত’ বলেন তিনি।
মূল্য সংযোজন কর এবং সম্পূরক শুল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫-এ বিস্কুটসহ কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রীর ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন যে প্রতিষ্ঠান ১০ কোটি টাকা ভ্যাট দিচ্ছে, এর ফলে তাকে ৩০ কোটি টাকা দিতে হবে। তাহলে সে শিল্প কীভাবে টিকবে? এই ব্যবসায়ী নেতা আরও বলেন, দেশের মধ্যে যারা ভ্যাট দেন তাদের ওপরই এর বোঝা চাপানো হচ্ছে। অথচ একটা বড় অংশ ভ্যাট নেটের বাইরে। আমাদের নেট বাড়ানো উচিত। একই সঙ্গে অতি প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যে ভ্যাট কমানো জরুরি।