ঢাকা ৭ চৈত্র ১৪৩১, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫
English
শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দিকনির্দেশনা নেই

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:২৭ এএম
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দিকনির্দেশনা নেই
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে, তাতে নীতিগত মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রত্যাশিত দিকনির্দেশনা নেই বলে জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট বা বিল্ড। সংস্থাটির মতে, শুধু তাই নয়, এই মুদ্রানীতির কারণে মূল্যস্ফীতি দীর্ঘায়িত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

সম্প্রতি গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে গবেষণা সংস্থা বিল্ড।

এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্ধবার্ষিক মুদ্রানীতির মাধ্যমে যে দিকনির্দেশনা দিয়েছে, তার প্রধান লক্ষ্য হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা, বৈদেশিক মুদ্রার বাজার স্থিতিশীল করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ-ব্যবস্থা পুনর্গঠন এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণের বৃদ্ধির প্রবণতা মোকাবিলা করা। এতে মূলত অর্থবাজারের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, যা এই মুদ্রানীতির ভালো দিক, তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এবং কর্মসংস্থান বাড়াতে এবারের মুদ্রানীতি খুব বেশি কার্যকর হবে না।  

বিল্ডের মতে, নতুন ও চলমান বিনিয়োগের জন্য বেসরকারি খাত স্বল্প সুদে ঋণ প্রত্যাশা করেছিল। নীতি সুদহার ১০ শতাংশ রাখায় উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি করবে, কাঁচামাল আমদানি ব্যয় বাড়াবে, মজুরি বাড়াবে, যন্ত্রপাতির ব্যয় বৃদ্ধি করবে, যা নীতিগতভাবে মূল্যস্ফীতি কমানোর কৌশলের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। শুধু উচ্চ সুদের হার দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়; সরবরাহ সংকট, আমানতকারীদের আস্থার অভাবসহ অন্যান্য কারণও বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন। যেন প্রতিযোগিতামূলক বাজার ও সুশাসন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে সমন্বিতভাবে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। 

সংস্থাটির মতে, ২০২৪ ও ২০২৫ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ২ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারে বলে মুদ্রানীতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে ২০২৫ অর্থবছরের দ্বিতিয়ার্ধের মুদ্রানীতির মাধ্যমে কীভাবে এই সুবিধা কাজে লাগানো হবে সে বিষয়ে কোনো নতুন নীতিগত নির্দেশনা স্পষ্ট করেনি।

সম্প্রসারিত রাজস্ব নীতি ও সংকোচিত মুদ্রানীতির প্রয়োগ সত্ত্বেও মুদ্রাস্ফীতি এখনো ১০ শতাংশের ওপরে রয়েছে, যদিও ২০২৪ সালের ডিসেম্বর ও ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে এটি কিছুটা কমেছে, যা প্রধানত খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমার কারণেই হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী দিনে মুদ্রাস্ফীতি ৭-৮ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। 

বিল্ডের এক গবেষণায় দেখা গেছে, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজম্যান্ট সুশৃঙ্খল না থাকা, মাঠপর্যায়ে চাঁদাবাজির আধিপত্য, ব্যাপক ইনফরমাল অর্থনীতির উপস্থিতি, রাজনৈতিক খাতে কনফিডেন্সের অভাব মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে না নিয়ে আসার পেছনে কাজ করছে। বর্তমানে ভোগ্যপণ্যের বাজার মাত্র ৮-৯টি প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে অলিগোপলি বাজার কাঠামো তৈরি হয়েছে। উচ্চ সুদের হার উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি করছে, যা মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দিচ্ছে। আবার সম্প্রতি প্রকাশিত অর্থনৈতিক শুমারি অনুযায়ী, বাংলাদেশের অর্থনীতির ৪২ শতাংশ হচ্ছে ইনফরমাল বা অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতি।  অন্যদিকে সম্প্রতি ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক নীতিতে বড় পরিবর্তন এসেছে যা মূল্যস্ফীতির একটি কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এনবিআর, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে সমন্বয় জোরদার করা প্রয়োজন। 

এতে বলা হয়েছে, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার ১০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। যেখানে স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) ১১ দশমিক ৫ শতাংশ এবং স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) ৮ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারিত হয়েছে, যার ফলে নীতিগত সুদের হার পরিসীমা (+-)১৫০ বেসিস পয়েন্ট নির্ধারিত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত সুদহার বাণিজ্যিক ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য উচ্চ সুদহার নির্ধারণে নীতিগত নির্দেশনা দিচ্ছে, যেখানে স্প্রেড রেট প্রায় ৬ শতাংশ। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় এই স্প্রেড ধাপে ধাপে কমানো যেতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজার পরিচালনার জন্য ‘ক্রলিং পেগ’ বিনিময় হার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং আন্তব্যাংক বাজারে হস্তক্ষেপ বন্ধ রেখেছে, যাতে রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রপ্তানি বাড়ানো যায়। তবে ব্যাংকগুলোর জন্য স্থিতিশীল বিনিময় হার বজায় রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ আন্তব্যাংক বাজারের নির্ধারিত হার অন্যান্য বাজারমূল্যের তুলনায় কম। বাংলাদেশ বর্তমানে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহের জন্য ছয়টি ভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহার করছে, যা নির্দিষ্ট মুদ্রাভিত্তিক বাণিজ্যের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করলে বাংলাদেশ ব্যাংক সহজেই চাহিদা ও সরবরাহ বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিভিন্ন বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণে করতে পারবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট বৈদেশিক সম্পদ (এনএফএ) ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে, যার প্রধান কারণ বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ। চলমান বাজেটে ঋণ গ্রহণের পরিমাণ ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন টাকা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা সংশোধিত ৯৯ হাজার কোটি টাকার তুলনায় অনেক বেশি। রাজস্ব ঘাটতি প্রথমার্ধে ৫৮ হাজার কোটি টাকা হয়েছে (এনবিআর তথ্য অনুসারে)। এমতাবস্থায় স্থানীয় উৎস থেকে ঘাটতি পূরণ করাই মূল চ্যালেঞ্জ। কারণ ব্যাংকিং খাতে আমানতের পরিমাণ কমার প্রবণতা রয়েছে। মুদ্রানীতিতে এই বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

এ ছাড়া সব শেষ ডিসেম্বর মাসে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার (৯ দশমিক ৮ শতাংশ) নিচে রয়েছে।  শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি ২০২৩-২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকে ৮ দশমিক ২২ শতাংশ  থাকলেও, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-অক্টোবর) তা ২ দশমিক ১৩ শতাংশে নেমে এসেছে। গত নভেম্বর পর্যন্ত মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির প্রবণতা ২৫ দশমিক ১ শতাংশ কমে ১ দশমিক ০৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা বিনিয়োগের ধীরগতির ইঙ্গিত দেয়। কর্মসংস্থান পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য একটি শক্তিশালী কৌশল প্রণয়ন করা প্রয়োজন, যা মুদ্রানীতিতে উল্লেখ নেই।

করপোরেট কর ও ভ্যাট কমানোর প্রস্তাব বিসিআই’র

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ০৭:৪৫ পিএম
করপোরেট কর ও ভ্যাট কমানোর প্রস্তাব বিসিআই’র
ছবি: সংগৃহীত

শর্ত আরোপ ছাড়াই করহার ২.৫ শতাংশ হারে কমিয়ে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির জন্য ২৫ শতাংশ এবং পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির জন্য ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। এছাড়া সংগঠনটি করমুক্ত আয় সীমা ৫ লাখ টাকা করার, সরবরাহ পর্যায়ে উৎসে কর কমানোর, রপ্তানি আয়ের উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.৫০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) প্রাক বাজেট আলোচনায় সংগঠনটির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) এসব প্রস্তাব দিয়েছেন।

তিনি বলেন, গ্রস-প্রফিট খাতভিত্তিক নির্ধারণ করা হয়ে থাকে, যা যুক্তিসঙ্গত নয়। আবার গ্রস-প্রফিট কমে গেলে বা ব্যবসায় লস হলে তা বিবেচনায় নেওয়া হয় না। এমনকি পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় বিক্রয় কম হলেও কর কর্তৃপক্ষ তা বিবেচনায় নেয় না। এটি নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন। ব্যবসায় ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও টার্নওভার কর নির্ধারণ করা হয়, যা প্রতিষ্ঠানের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

সংগঠনটির অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে অনুন্নত এলাকার শিল্পে বিশেষ কর অবকাশ দেওয়া, নিম্নতম শুল্ক হারে পণ্যের কাঁচামাল, উপকরণ, মেশিনারিজ যন্ত্রপাতি আমদানির সুযোগ দেওয়া ইত্যাদি।

নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স পাইকারি ব্যবসায়ীদের টার্নওভারের ওপর ১.৫ শতাংশ ভ্যাটের পরিবর্তে ০.৫ শতাংশ করার, বিভিন্ন সূতায় করহার কমানোর, আগাম কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে।

বাংলাদেশ পেপার মিলস অ্যাসোসিয়েশন ছাপা কাগজ আমদানিতে সিডি ও আরডি মওকুফের সিদ্ধান্ত বাতিল করার, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানসমূহ কর্তৃক বিনাশুল্কে প্রাপ্যতার অতিরিক্ত কাগজ ও বোর্ড আমদানি কঠোর হস্তে দমন এবং খোলা বাজারে বিক্রি বন্ধে তদারকির ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দিয়েছে।

এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান বলেন, ভ্যাট আদায়ে প্রতিষ্ঠানগুলো সহযোগিতা করে না। তারা প্রকৃত তথ্য লুকায়, আমরাও চেপে ধরি। এভাবে চলতে পারে না। 

এমএ/

প্রবাসী আয়ে সুবাতাস, ১৯ দিনে এল ২৭ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ০৬:০৫ পিএম
প্রবাসী আয়ে সুবাতাস, ১৯ দিনে এল ২৭ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা

মার্চ মাসের প্রথম ১৯ দিনে দেশে এসেছে ২২৫ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স)। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে) যার পরিমাণ ২৭ হাজার ৪৭৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে দেশে এসেছে ১১ কোটি ৮৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স।

বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে আরও জানায়, শুধু ১৯ মার্চ একদিনেই রেমিট্যান্স এসেছে ১৩ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার।

এতে বলা হয়, মার্চের প্রথম ১৯ দিনে দেশে এসেছে ২২৫ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। আর গত বছরের একই সময়ে এসেছিল ১২৬ কোটি ২০ লাখ টাকা। বছর ব্যবধানে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৭৮.৪ শতাংশ

এদিকে গত ফেব্রুয়ারি ও জানুয়ারির প্রথম ১৯ দিনে প্রবাসী আয় এসেছিল যথাক্রমে ১৬৬ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ও ১২৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এ হিসাবে মার্চে বেড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদকে সামনে রেখে দেশে স্বজনদের কাছে বিপুল পরিমাণে অর্থ পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। এতে বাড়ছে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ। এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি মাসে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে আসতে পারে।

এদিকে গত ফেব্রুয়ারি ও জানুয়ারি মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল যথাক্রমে ২৫২ কোটি ৭৬ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার ও ২১৮ কোটি ৫২ লাখ মার্কিন ডলার।

গত বছর ২০২৪ সালে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ৬৮৮ কোটি ৯১ লাখ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে গত বছরের জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার, ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার, মার্চে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ ৭০ হাজার, এপ্রিলে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ ৩০ হাজার, মে মাসে ২২৫ কোটি ৪৯ লাখ ৩০ হাজার, জুনে ২৫৩ কোটি ৮৬ লাখ, জুলাইতে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার, আগস্টে ২২২ কোটি ৪১ লাখ ৫০ হাজার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪৭ লাখ ৯০ হাজার, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ৮ হাজার, নভেম্বরে ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ ১০ হাজার ও ডিসেম্বরে এসেছে ২৬৩ কোটি ৮৭ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার।

এমএ/

ঈদ উপলক্ষে কর্মচঞ্চল জামদানি পল্লি

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৫ এএম
ঈদ উপলক্ষে কর্মচঞ্চল জামদানি পল্লি
ছবি: খবরের কাগজ

আসন্ন ঈদ উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের নোয়াপাড়া বিসিক জামদানি পল্লি কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে। তাঁত বোনার খটখট শব্দে মুখর চারদিক। কারিগরদের ব্যস্ততা তুঙ্গে, কেনাবেচাও জমজমাট। এই ব্যস্ততা চলবে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত। ব্যবসায়ীরা আশাবাদী, বিক্রি ৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা কাজে লাগিয়ে অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে প্রচুর জামদানি। বিভিন্ন পেজ খুলে ছবি আপলোড করলেই অর্ডার আসছে।
প্রায় ৬ হাজার তাঁতি কাজ করেন বিসিক জামদানি পল্লিতে। যুগ যুগ ধরে এ এলাকাটি জামদানি তৈরির ঐতিহ্য বহন করছে। শুধু শাড়ি নয়, তৈরি হচ্ছে পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস, লুঙ্গিসহ নানা পোশাক। তারাব পৌরসভার রূপসী, খাদুন, কাজীপাড়া, মুড়গাকুল, পবনকুল ও বরাব এলাকায় জামদানি বোনা হয়।

তাঁতিরা সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকেন সুতা তৈরি, রং করা, বুনন ও নকশার কাজে। ঐতিহ্যবাহী জামদানির মধ্যে বল, প্লেন, বটপাতা, পানসি, ময়ূরপঙ্খী ও জলপাড় ডিজাইন জনপ্রিয়। এসব শাড়ি ভারত, নেপাল, ভুটান, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। দাম শুরু হয় কয়েক হাজার টাকা থেকে। যেটি ২ লাখ পর্যন্ত হয়ে থাকে।

হাছিনা জামদানি ঘরের স্বত্বাধিকারী ইয়াছিন ভূঁইয়া বলেন, ‘৩৫ বছর ধরে জামদানি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছি। বর্তমানে ২০ জন কারিগর কাজ করছেন। অনেক সময় শাড়ির খরচ তুলতেই কষ্ট হয়, কখনো কখনো বাকিতে বিক্রি করতে হয়। অনলাইনে নগদে বিক্রি করায় এখন সমস্যা কিছুটা কমেছে। সরকার যদি সরাসরি জামদানি সংগ্রহ করত, তাহলে আমরা উপকৃত হতাম। ঈদে বিক্রি ভালো, আশা করি পরিবার নিয়ে সুন্দর ঈদ কাটাতে পারব।’

আরেক ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কারিগর আনতে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা অগ্রিম দিতে হয়। পুঁজিসংকটে বড় পরিসরে ব্যবসা সম্ভব হয় না। ব্যাংক যদি কম সুদে ঋণ দিত, তাহলে ব্যবসা আরও সম্প্রসারিত করা যেত। সুতা ও রঙের দাম বাড়ছে, সরকারকে এদিকে নজর দিতে হবে।’

জামদানি কারিগর শফিকুল জানান, ‘সামনে ঈদ, তাই দিনরাত ব্যস্ত। ২৫ বছর ধরে এই পেশায় আছি। ঈদ ছাড়া প্রতি শুক্রবার ভোর ৫টা থেকে ৮টা পর্যন্ত হাট বসে, যেখানে শাড়ি বিক্রি করতে হয়। তাই সারা সপ্তাহ ব্যস্ত থাকতে হয়।’

রূপগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরীর কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী জামদানি ছড়িয়ে দিতে কাজ করছি। করোনার পর অনলাইনে বিক্রি বেড়েছে। এখন বিক্রির প্রায় অর্ধেক অনলাইনে হয়, বাকিটা হাট ও অন্যান্য মাধ্যমে।’

দিনাজপুরে ১ হাজার টন মধু উৎপাদন লক্ষ্য

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ১১:৪৯ এএম
দিনাজপুরে ১ হাজার টন মধু উৎপাদন লক্ষ্য
দিনাজপুরের মাউদপাড়া লিচুবাগানে মৌ-বাক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করছেন মৌখামারিরা। খবরের কাগজ

দিনাজপুর লিচুর জেলা হিসেবে পরিচিত। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারির শুরুতেই লিচুগাছে মুকুল আসে। মুকুল আসার আগেই বাগানিরা পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তারা গাছে পানি দেওয়া, স্প্রে করাসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করেন। 

মার্চের শুরু থেকে মাসের শেষ পর্যন্ত প্রতিটি গাছে মুকুলে ভরে যায়। এ সময় মধু আহরণের লক্ষ্যে মৌখামারিরা লিচুবাগানে শত শত মৌ-বাক্স স্থাপন করেন। দিনাজপুরের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকেও মৌখামারিরা এখানে আসেন।

মুকুল থাকাকালে মৌখামারিরা মধু সংগ্রহে ব্যস্ত থাকেন। তাদের অতিরিক্ত শ্রমিক প্রয়োজন হয়। এ বছর দিনাজপুরের বিভিন্ন লিচুবাগানে সহস্রাধিক মৌখামারি মৌ-বাক্স স্থাপন করেছেন। তাদের লক্ষ্য ১ হাজার টন মধু উৎপাদন। এর বাজারমূল্য ২০০-২২০ কোটি টাকা।

দিনাজপুর শহরের প্রমথতরী মাউদ পাড়ার লিচুবাগানে মৌ-বাক্স স্থাপন করে তাক লাগিয়েছেন মৌখামারি মাহবুবুর রহমান। এতে মধু সংগ্রহ যেমন হচ্ছে, তেমনি মৌমাছির মাধ্যমে পরাগায়নের ফলে লিচুর ফলনও বাড়ছে। এতে বাগানিরা খুশি।

জেলার সদর, বিরল, চিরিরবন্দরসহ ১৩টি উপজেলায় লিচু চাষ হচ্ছে। এ বছর লিচু চাষের জমির পরিমাণ ৫ হাজার ৬৮৯ হেক্টর এবং বাগানের সংখ্যা সাড়ে ৪ হাজারের বেশি। মাসিমপুর ও বিরলের মাদববাটিতে মৌ-বাক্স স্থাপনকারী খামারির সংখ্যা বেশি।
আউলিয়াপুর ইউনিয়নের মাউদ পাড়ার লিচুবাগানে রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও মাহবুবুর রহমান মিলে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি মৌ-বাক্স স্থাপন করেছেন। তাদের কাজে আরও পাঁচজন যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে।

রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘সারা বছর আমরা লিচুর মুকুল থেকে মধু আহরণের অপেক্ষায় থাকি। এবার মার্চের শুরুতেই ৪৫০ বাক্স স্থাপন করেছি। মাসে ২০০ মণ মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। প্রতি বাক্স থেকে ছয়-সাত কেজি মধু সংগ্রহ হচ্ছে।’
মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের খামারে পাঁচ-সাতজন শ্রমিক কাজ করছেন। আমরা ছয়-সাত দিন পর মধু হারভেস্ট করি। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি মধু সংগ্রহ সম্ভব।’

লিচু বাগানি মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার এক একর জমিতে লিচু বাগান রয়েছে। মৌখামারিরা মৌ-বাক্স স্থাপন করায় ৩০-৩৫ শতাংশ ফলন বৃদ্ধি পায়। আলাদা পাহারাদারের দরকার হয় না।’

মাসিমপুরের লিচু বাগানি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘মৌ-বাক্স স্থাপন করায় মৌমাছির মাধ্যমে পরাগায়ন হয়। ফলে লিচুর আকৃতি, মিষ্টতা ও উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। স্প্রের প্রয়োজন কম হয়, খরচও কমে যায়।’

মধু ক্রেতা লুৎফর রহমান বলেন, ‘লিচুর ফুলের খাঁটি মধু সরাসরি খামারিদের কাছ থেকে কিনতে পারছি। বাজারের তুলনায় কম দামে পাচ্ছি।’

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক জাফর ইকবাল বলেন, ‘দিনাজপুর লিচুর জেলা। পরাগায়নের জন্য মৌ-বাক্স স্থাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে লিচুর উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং বিপুল পরিমাণ মধু আহরণ সম্ভব হয়। এতে অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। মৌ-বাক্স স্থাপন দুপক্ষের জন্যই লাভজনক।’

বরিশালে ২০ হাজার কোটি টাকার তরমুজ বেচাকেনার সম্ভাবনা

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ১১:৪৫ এএম
বরিশালে ২০ হাজার কোটি টাকার তরমুজ বেচাকেনার সম্ভাবনা
বরিশাল নগরীর পোর্টরোড এলাকায় পাইকারি তরমুজের বাজার। খবরের কাগজ

বরিশালে আগাম তরমুজ চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। চাষিরা ভালো দাম পাচ্ছেন। স্থানীয় বাজার ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে এখানকার তরমুজ। ব্যবসায়ীরা জানান, ২০ হাজার কোটি টাকার তরমুজ বেচাকেনার সম্ভাবনা আছে। ফলন ভালো হলেও খুচরা বাজারে দাম বেশি। মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে কৃষকরা তেমন লাভবান হচ্ছেন না। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে চাষ হয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণ কঠোর হলে কৃষক ও ভোক্তা—দুজনই উপকৃত হবেন।

বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ হাজার ২০৭ হেক্টর বেশি জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। ২০২৩-২৪ মৌসুমে বরিশাল বিভাগে ৪৮ হাজার ৪৭ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছিল। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৮ হাজার ৩৪৪ হেক্টর। তবে আবাদ হয়েছে ৫৪ হাজার ৫৫১ হেক্টর। প্রতি হেক্টরে আবাদের হার ১১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে তরমুজ বাজারে এসেছে। চলতি মাস পর্যন্ত তা বাজারে থাকবে। ব্যবসায়ীরা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বরিশালে ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার তরমুজ বেচাকেনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভোলার চরফ্যাশনের তরমুজ চাষি জাকির হোসেন বলেন, ‘এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। মৌসুমের তরমুজ এখনো তুলিনি। আগাম জাতের তরমুজে ভালো দাম পাচ্ছি। বড় ধরনের ঝড়-বন্যা না হলে লাভবান হবো।’

পটুয়াখালীর বাউফলের কৃষক শাহ আলম বলেন, ‘গত বছর ঝড়-বন্যায় তরমুজ গাছ নষ্ট হয়েছিল। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। আকার ও মানভেদে প্রতি ১০০ পিস তরমুজ ১৬-২৪ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। প্রথম ধাপে ৮ হাজার পিস তরমুজ বরিশাল পোর্টরোড বাজারে এনেছি।’

বাকেরগঞ্জের তরমুজ ব্যবসায়ী মিরাজ ঢালি বলেন, ‘৪০০ তরমুজ কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু দাম বেশি। মাঝারি সাইজের প্রতি ১০০ পিস তরমুজ ১৩ হাজার টাকা চাইছে। আমি ১২ হাজার পর্যন্ত বলেছি।’ 

আড়তদার ইমন বলেন, ‘এ বছর আগামজাত তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে প্রচুর তরমুজ উঠলেও দাম বেশি। আমরা চাষিদের সঙ্গে কমিশনে ব্যবসা করি। খুচরা বিক্রেতারা আমাদের কাছ থেকে কিনে কেজি দরে বিক্রি করেন।’

সুজন বলেন, ‘বাজার নিয়ন্ত্রণে আড়তদারদের হাত নেই। খুচরা বিক্রেতারা বেশি লাভের আশায় দাম বাড়ায়। এতে অস্থিরতা তৈরি হয়।’
সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা এস এম মাহবুব আলম বলেন, ‘এখন বাজারে আসা তরমুজ আগাম জাতের। এটি মূল লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে গণনা করা হবে না। তবে ফলন ভালো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, চলতি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে কয়েক হাজার কোটি টাকার তরমুজ বাণিজ্য হবে। তরমুজ এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।’

উদ্যান বিশেষজ্ঞ জি এম এম কবীর খান বলেন, ‘দেশের দুই-তৃতীয়াংশ তরমুজ বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় উৎপাদিত হয়। কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে কৃষকরা লাভবান হতে পারছে না। তাদের সুরক্ষা দিতে হলে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। বাজার ব্যবস্থাপনা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’