ঢাকা ৭ চৈত্র ১৪৩১, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫
English
শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১

ছোলার প্রচুর আমদানি, দামও কমেছে

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:৩৬ এএম
ছোলার প্রচুর আমদানি, দামও কমেছে
ছবি: সংগৃহীত

রোজাদারের জন্য খেজুরের মতো ছোলাও ইফতারির জন্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হয়ে গেছে। অভিজাত পরিবার থেকে শুরু করে নিম্ন আয়ের মানুষেরও ইফতারির থালায় ছোলা থাকে। রমজান মাসে এর চাহিদা বেড়ে যায়। এ সুযোগে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী দাম বাড়ানোর সুযোগ নেয়।

গত রমজানে হঠাৎ কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে যায়। রমজান সামনে রেখে এবার প্রচুর ছোলা আমদানি হওয়ায় বাজারে ছোলার সরবরাহ বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলেছেন, আসন্ন রমজানে ছোলার দাম বাড়বে না। বরং কমবে। 

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও বর্তমানে ১০৫ থেকে ১১০ টাকায় নেমেছে। এক মাসের ব্যবধানে ১০ থেকে ১৭ শতাংশ কমেছে। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে বার্ষিক ছোলার চাহিদা দেড় লাখের মতো। সে হিসাবে মাসে লাগে সাড়ে ১২ হাজার টন। কিন্তু দেশে খুবই কম উৎপাদন হয়। আমদানি করেই চাহিদা মেটাতে হয়। রমজানে চাহিদা দ্বিগুণ অর্থাৎ ২৫ হাজার টনে দাঁড়ায়। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘নাবিল গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপসহ চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা ছোলা আমদানি করে। তারা দাম বাড়ালেই বাজারে বেড়ে যায়। 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবারে আমদানি বেশি হওয়ায় দাম কমেছে ছোলার। সরকারি সংস্থা টিসিবিও বলছে, গত বছরের রমজানের আগে ৮৫-৯০ টাকা কেজি ছোলা বিক্রি হয়েছে। কিন্তু রমজানে বেড়ে ৯৫ থেকে ১১০ টাকায় ঠেকে। রমজান শেষে চাহিদা কমে গেলেও দাম কমেনি। বরং ডলারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণে ছোলার দাম ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় পৌঁছে। টিসিবির তথ্য বলছে, জানুয়ারি মাসেও ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে ছোলা। কিন্তু রমজান ঘনিয়ে আসায় আমদানিও প্রচুর বেড়েছে। এ জন্য দাম কমতে শুরু করেছে। পাইকারি পর্যায়ে ৯৫ টাকায় নেমেছে। সেই ছোলা বাজারে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।  

অস্ট্রেলিয়া থেকে চাহিদার ৮০ শতাংশ ছোলা আমদানি হয়। বাকি ছোলা ভারত, পাকিস্তান, ইথিওপিয়া, রাশিয়া, ইউক্রেন, তানজানিয়া, মায়ানমার ও কানাডা থেকে আমদানি করা হয়। আমদানিকারকরা এবার বিশ্ববাজার থেকে কম দামে ছোলা সংগ্রহ করছে। এ জন্য দামও কমেছে। 

গত বছর থেকেই নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীন হয়ে পড়ে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি রেকর্ড ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। তাই আসন্ন রোজায় আট ধরনের খাদ্যপণ্য আমদানিতে ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে ন্যূনতম পর্যায়ে নগদ মার্জিন রাখতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত ১৭ জানুয়ারি এক নির্দেশনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দেশ দেয়, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মতো ব্যাংক-গ্রাহকের সম্পর্কের ভিত্তিতে নগদ এ মার্জিনের হার নির্ধারণ করতে হবে। ভোজ্যতেল, ছোলা, ডাল, মটর, পেঁয়াজ, মসলা, চিনি এবং খেজুর আমদানির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনা প্রযোজ্য হবে। 

অভ্যন্তরীণ বাজারে এসব পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমদানির ঋণপত্র খোলায় অগ্রাধিকার দিতে বলা হয় নির্দেশনায়। তা কাজে লাগিয়ে আমদানিকারকরা প্রচুর ছোলা আনেন। 

আগামী ১ মার্চ থেকে রোজার মাস শুরু হতে পারে। এই সময়ে ইফতারের জন্য বিভিন্ন পদের খাবার তৈরিতে বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের চাহিদা বছরের অন্য সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে বাড়ে ছোলার চাহিদাও। 

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ এবং রাজধানীর লালবাগের পাইকারি বাজারেও কমেছে ছোলার দাম। মাস খানেক আগে পাইকারিতে প্রতি মণ ছোলার দাম ছিল ৪ হাজার ২০০ টাকা, যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৭০০ টাকায়। অর্থাৎ মণে কমেছে ৫০০ টাকা। কেজিতে ১২ টাকার বেশি। তার প্রভাবে খুচরা বাজারেরও ছোলার দাম কমেছে।

চট্টগ্রামের এবারে প্রচুর ছোলা আমদানি হয়েছে। বাজারে ছোলার কোনো সংকট নেই। সরবরাহও আগের চেয়ে বেড়েছে। নারায়নগঞ্জের নিতাইগঞ্জ, ঢাকার লালবাগের রহমতগঞ্জ থেকেও পাইকারি পর্যায়ে ছোলা বিক্রি হয়। 

এ ব্যাপারে রহমতগঞ্জের ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শফি মাহমুদ বলেন, ‘আমরা দাম বাড়াই না। আমদানিকারকরা বেশি দামে বিক্রি করলে আমাদের বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হয়। কেজিতে সামান্য লাভ থাকে। এবারে রমজান উপলক্ষে প্রচুর ছোলা আমদানি হয়েছে। আগে বেশি দামে বিক্রি করা হলেও বর্তমানে ৩ হাজার ৭০০ টাকা বস্তা (৪০ কেজি), ৯৫ টাকার মধ্যে ছোলা বিক্রি করা হচ্ছে।’ 

পাইকারিতে দাম কমায় খুচরা বাজারেও কমতে শুরু করেছে। নিউমার্কেটের সাথী এন্টারপ্রাইজের মো. মোক্তার হোসেন বলেন, ‘আগের চেয়ে ছোলার দাম কমেছে। এক মাস আগেও ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি করতাম। পাইকারিতে কমেছে। এ জন্য আমরাও কম দামে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা কেজি বিক্রি করছি।’ 

মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের মনির স্টোরের আনোয়ার হোসেনও বলেন, ‘আগের চেয়ে ছোলার দাম কমেছে, ১১০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। কম দামে কেনা। তাই কম দামেই বিক্রি করতে পারছি।’ কৃষি মার্কেটের মুদি বিক্রেতা নাইম শেখও জানান, আগের চেয়ে কমেছে ছোলার দাম। বর্তমানে ১১০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। সেটা আগে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি ছিল। 

কারওয়ান বাজারের মেসার্স একতা ট্রেডার্সের বিক্রয়কর্মী রায়হান বলেন, ‘এক মাস ধরে ধাপে ধাপে কমছে ছোলার দাম। বর্তমানে ১০০ টাকার মধ্যেই বিক্রি করা হচ্ছে।’ একই বাজারের খুচরা বিক্রেতা ফরিদগঞ্জ স্টোরের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘গত রমজানের আগে কম দামে ৮০-৯০ টাকা কেজি ছোলা বিক্রি করেছি। রমজানে বেড়ে ১১০ টাকা কেজি বিক্রি করা হয়। রমজানের পর আরও বেড়ে যায়। তবে কয়েক দিন ধরে কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে ১১০ টাকা কেজি বিক্রি করছি।’  

শুধু বড় বড় বাজারে নয়, বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার দোকানেও কম দামে ছোলা বিক্রি করা হচ্ছে বলে খুচরা বিক্রেতারা জানান। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের জনতা মার্কেটের আক্তার হোসেনও বলেন, ‘মাস খানেক থেকে ছোলার দাম কমেছে। আগে ১২০ টাকার বেশি বিক্রি করা হলেও কয়েক দিন ধরে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা কেজি বিক্রি করছি।’

করপোরেট কর ও ভ্যাট কমানোর প্রস্তাব বিসিআই’র

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ০৭:৪৫ পিএম
করপোরেট কর ও ভ্যাট কমানোর প্রস্তাব বিসিআই’র
ছবি: সংগৃহীত

শর্ত আরোপ ছাড়াই করহার ২.৫ শতাংশ হারে কমিয়ে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির জন্য ২৫ শতাংশ এবং পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির জন্য ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। এছাড়া সংগঠনটি করমুক্ত আয় সীমা ৫ লাখ টাকা করার, সরবরাহ পর্যায়ে উৎসে কর কমানোর, রপ্তানি আয়ের উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.৫০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) প্রাক বাজেট আলোচনায় সংগঠনটির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) এসব প্রস্তাব দিয়েছেন।

তিনি বলেন, গ্রস-প্রফিট খাতভিত্তিক নির্ধারণ করা হয়ে থাকে, যা যুক্তিসঙ্গত নয়। আবার গ্রস-প্রফিট কমে গেলে বা ব্যবসায় লস হলে তা বিবেচনায় নেওয়া হয় না। এমনকি পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় বিক্রয় কম হলেও কর কর্তৃপক্ষ তা বিবেচনায় নেয় না। এটি নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন। ব্যবসায় ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও টার্নওভার কর নির্ধারণ করা হয়, যা প্রতিষ্ঠানের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

সংগঠনটির অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে অনুন্নত এলাকার শিল্পে বিশেষ কর অবকাশ দেওয়া, নিম্নতম শুল্ক হারে পণ্যের কাঁচামাল, উপকরণ, মেশিনারিজ যন্ত্রপাতি আমদানির সুযোগ দেওয়া ইত্যাদি।

নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স পাইকারি ব্যবসায়ীদের টার্নওভারের ওপর ১.৫ শতাংশ ভ্যাটের পরিবর্তে ০.৫ শতাংশ করার, বিভিন্ন সূতায় করহার কমানোর, আগাম কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে।

বাংলাদেশ পেপার মিলস অ্যাসোসিয়েশন ছাপা কাগজ আমদানিতে সিডি ও আরডি মওকুফের সিদ্ধান্ত বাতিল করার, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানসমূহ কর্তৃক বিনাশুল্কে প্রাপ্যতার অতিরিক্ত কাগজ ও বোর্ড আমদানি কঠোর হস্তে দমন এবং খোলা বাজারে বিক্রি বন্ধে তদারকির ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দিয়েছে।

এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান বলেন, ভ্যাট আদায়ে প্রতিষ্ঠানগুলো সহযোগিতা করে না। তারা প্রকৃত তথ্য লুকায়, আমরাও চেপে ধরি। এভাবে চলতে পারে না। 

এমএ/

প্রবাসী আয়ে সুবাতাস, ১৯ দিনে এল ২৭ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ০৬:০৫ পিএম
প্রবাসী আয়ে সুবাতাস, ১৯ দিনে এল ২৭ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা

মার্চ মাসের প্রথম ১৯ দিনে দেশে এসেছে ২২৫ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স)। দেশীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে) যার পরিমাণ ২৭ হাজার ৪৭৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে দেশে এসেছে ১১ কোটি ৮৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স।

বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে আরও জানায়, শুধু ১৯ মার্চ একদিনেই রেমিট্যান্স এসেছে ১৩ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার।

এতে বলা হয়, মার্চের প্রথম ১৯ দিনে দেশে এসেছে ২২৫ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। আর গত বছরের একই সময়ে এসেছিল ১২৬ কোটি ২০ লাখ টাকা। বছর ব্যবধানে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৭৮.৪ শতাংশ

এদিকে গত ফেব্রুয়ারি ও জানুয়ারির প্রথম ১৯ দিনে প্রবাসী আয় এসেছিল যথাক্রমে ১৬৬ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ও ১২৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এ হিসাবে মার্চে বেড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদকে সামনে রেখে দেশে স্বজনদের কাছে বিপুল পরিমাণে অর্থ পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। এতে বাড়ছে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ। এ ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি মাসে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে আসতে পারে।

এদিকে গত ফেব্রুয়ারি ও জানুয়ারি মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল যথাক্রমে ২৫২ কোটি ৭৬ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার ও ২১৮ কোটি ৫২ লাখ মার্কিন ডলার।

গত বছর ২০২৪ সালে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ৬৮৮ কোটি ৯১ লাখ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে গত বছরের জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার, ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার, মার্চে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ ৭০ হাজার, এপ্রিলে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ ৩০ হাজার, মে মাসে ২২৫ কোটি ৪৯ লাখ ৩০ হাজার, জুনে ২৫৩ কোটি ৮৬ লাখ, জুলাইতে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার, আগস্টে ২২২ কোটি ৪১ লাখ ৫০ হাজার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪৭ লাখ ৯০ হাজার, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ ৮ হাজার, নভেম্বরে ২১৯ কোটি ৯৫ লাখ ১০ হাজার ও ডিসেম্বরে এসেছে ২৬৩ কোটি ৮৭ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার।

এমএ/

ঈদ উপলক্ষে কর্মচঞ্চল জামদানি পল্লি

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ১১:৫৫ এএম
ঈদ উপলক্ষে কর্মচঞ্চল জামদানি পল্লি
ছবি: খবরের কাগজ

আসন্ন ঈদ উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের নোয়াপাড়া বিসিক জামদানি পল্লি কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে। তাঁত বোনার খটখট শব্দে মুখর চারদিক। কারিগরদের ব্যস্ততা তুঙ্গে, কেনাবেচাও জমজমাট। এই ব্যস্ততা চলবে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত। ব্যবসায়ীরা আশাবাদী, বিক্রি ৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা কাজে লাগিয়ে অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে প্রচুর জামদানি। বিভিন্ন পেজ খুলে ছবি আপলোড করলেই অর্ডার আসছে।
প্রায় ৬ হাজার তাঁতি কাজ করেন বিসিক জামদানি পল্লিতে। যুগ যুগ ধরে এ এলাকাটি জামদানি তৈরির ঐতিহ্য বহন করছে। শুধু শাড়ি নয়, তৈরি হচ্ছে পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস, লুঙ্গিসহ নানা পোশাক। তারাব পৌরসভার রূপসী, খাদুন, কাজীপাড়া, মুড়গাকুল, পবনকুল ও বরাব এলাকায় জামদানি বোনা হয়।

তাঁতিরা সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকেন সুতা তৈরি, রং করা, বুনন ও নকশার কাজে। ঐতিহ্যবাহী জামদানির মধ্যে বল, প্লেন, বটপাতা, পানসি, ময়ূরপঙ্খী ও জলপাড় ডিজাইন জনপ্রিয়। এসব শাড়ি ভারত, নেপাল, ভুটান, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। দাম শুরু হয় কয়েক হাজার টাকা থেকে। যেটি ২ লাখ পর্যন্ত হয়ে থাকে।

হাছিনা জামদানি ঘরের স্বত্বাধিকারী ইয়াছিন ভূঁইয়া বলেন, ‘৩৫ বছর ধরে জামদানি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছি। বর্তমানে ২০ জন কারিগর কাজ করছেন। অনেক সময় শাড়ির খরচ তুলতেই কষ্ট হয়, কখনো কখনো বাকিতে বিক্রি করতে হয়। অনলাইনে নগদে বিক্রি করায় এখন সমস্যা কিছুটা কমেছে। সরকার যদি সরাসরি জামদানি সংগ্রহ করত, তাহলে আমরা উপকৃত হতাম। ঈদে বিক্রি ভালো, আশা করি পরিবার নিয়ে সুন্দর ঈদ কাটাতে পারব।’

আরেক ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কারিগর আনতে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা অগ্রিম দিতে হয়। পুঁজিসংকটে বড় পরিসরে ব্যবসা সম্ভব হয় না। ব্যাংক যদি কম সুদে ঋণ দিত, তাহলে ব্যবসা আরও সম্প্রসারিত করা যেত। সুতা ও রঙের দাম বাড়ছে, সরকারকে এদিকে নজর দিতে হবে।’

জামদানি কারিগর শফিকুল জানান, ‘সামনে ঈদ, তাই দিনরাত ব্যস্ত। ২৫ বছর ধরে এই পেশায় আছি। ঈদ ছাড়া প্রতি শুক্রবার ভোর ৫টা থেকে ৮টা পর্যন্ত হাট বসে, যেখানে শাড়ি বিক্রি করতে হয়। তাই সারা সপ্তাহ ব্যস্ত থাকতে হয়।’

রূপগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরীর কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী জামদানি ছড়িয়ে দিতে কাজ করছি। করোনার পর অনলাইনে বিক্রি বেড়েছে। এখন বিক্রির প্রায় অর্ধেক অনলাইনে হয়, বাকিটা হাট ও অন্যান্য মাধ্যমে।’

দিনাজপুরে ১ হাজার টন মধু উৎপাদন লক্ষ্য

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ১১:৪৯ এএম
দিনাজপুরে ১ হাজার টন মধু উৎপাদন লক্ষ্য
দিনাজপুরের মাউদপাড়া লিচুবাগানে মৌ-বাক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করছেন মৌখামারিরা। খবরের কাগজ

দিনাজপুর লিচুর জেলা হিসেবে পরিচিত। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারির শুরুতেই লিচুগাছে মুকুল আসে। মুকুল আসার আগেই বাগানিরা পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তারা গাছে পানি দেওয়া, স্প্রে করাসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করেন। 

মার্চের শুরু থেকে মাসের শেষ পর্যন্ত প্রতিটি গাছে মুকুলে ভরে যায়। এ সময় মধু আহরণের লক্ষ্যে মৌখামারিরা লিচুবাগানে শত শত মৌ-বাক্স স্থাপন করেন। দিনাজপুরের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকেও মৌখামারিরা এখানে আসেন।

মুকুল থাকাকালে মৌখামারিরা মধু সংগ্রহে ব্যস্ত থাকেন। তাদের অতিরিক্ত শ্রমিক প্রয়োজন হয়। এ বছর দিনাজপুরের বিভিন্ন লিচুবাগানে সহস্রাধিক মৌখামারি মৌ-বাক্স স্থাপন করেছেন। তাদের লক্ষ্য ১ হাজার টন মধু উৎপাদন। এর বাজারমূল্য ২০০-২২০ কোটি টাকা।

দিনাজপুর শহরের প্রমথতরী মাউদ পাড়ার লিচুবাগানে মৌ-বাক্স স্থাপন করে তাক লাগিয়েছেন মৌখামারি মাহবুবুর রহমান। এতে মধু সংগ্রহ যেমন হচ্ছে, তেমনি মৌমাছির মাধ্যমে পরাগায়নের ফলে লিচুর ফলনও বাড়ছে। এতে বাগানিরা খুশি।

জেলার সদর, বিরল, চিরিরবন্দরসহ ১৩টি উপজেলায় লিচু চাষ হচ্ছে। এ বছর লিচু চাষের জমির পরিমাণ ৫ হাজার ৬৮৯ হেক্টর এবং বাগানের সংখ্যা সাড়ে ৪ হাজারের বেশি। মাসিমপুর ও বিরলের মাদববাটিতে মৌ-বাক্স স্থাপনকারী খামারির সংখ্যা বেশি।
আউলিয়াপুর ইউনিয়নের মাউদ পাড়ার লিচুবাগানে রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও মাহবুবুর রহমান মিলে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি মৌ-বাক্স স্থাপন করেছেন। তাদের কাজে আরও পাঁচজন যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে।

রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘সারা বছর আমরা লিচুর মুকুল থেকে মধু আহরণের অপেক্ষায় থাকি। এবার মার্চের শুরুতেই ৪৫০ বাক্স স্থাপন করেছি। মাসে ২০০ মণ মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। প্রতি বাক্স থেকে ছয়-সাত কেজি মধু সংগ্রহ হচ্ছে।’
মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের খামারে পাঁচ-সাতজন শ্রমিক কাজ করছেন। আমরা ছয়-সাত দিন পর মধু হারভেস্ট করি। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি মধু সংগ্রহ সম্ভব।’

লিচু বাগানি মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার এক একর জমিতে লিচু বাগান রয়েছে। মৌখামারিরা মৌ-বাক্স স্থাপন করায় ৩০-৩৫ শতাংশ ফলন বৃদ্ধি পায়। আলাদা পাহারাদারের দরকার হয় না।’

মাসিমপুরের লিচু বাগানি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘মৌ-বাক্স স্থাপন করায় মৌমাছির মাধ্যমে পরাগায়ন হয়। ফলে লিচুর আকৃতি, মিষ্টতা ও উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। স্প্রের প্রয়োজন কম হয়, খরচও কমে যায়।’

মধু ক্রেতা লুৎফর রহমান বলেন, ‘লিচুর ফুলের খাঁটি মধু সরাসরি খামারিদের কাছ থেকে কিনতে পারছি। বাজারের তুলনায় কম দামে পাচ্ছি।’

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক জাফর ইকবাল বলেন, ‘দিনাজপুর লিচুর জেলা। পরাগায়নের জন্য মৌ-বাক্স স্থাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে লিচুর উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং বিপুল পরিমাণ মধু আহরণ সম্ভব হয়। এতে অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। মৌ-বাক্স স্থাপন দুপক্ষের জন্যই লাভজনক।’

বরিশালে ২০ হাজার কোটি টাকার তরমুজ বেচাকেনার সম্ভাবনা

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ১১:৪৫ এএম
বরিশালে ২০ হাজার কোটি টাকার তরমুজ বেচাকেনার সম্ভাবনা
বরিশাল নগরীর পোর্টরোড এলাকায় পাইকারি তরমুজের বাজার। খবরের কাগজ

বরিশালে আগাম তরমুজ চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। চাষিরা ভালো দাম পাচ্ছেন। স্থানীয় বাজার ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে এখানকার তরমুজ। ব্যবসায়ীরা জানান, ২০ হাজার কোটি টাকার তরমুজ বেচাকেনার সম্ভাবনা আছে। ফলন ভালো হলেও খুচরা বাজারে দাম বেশি। মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে কৃষকরা তেমন লাভবান হচ্ছেন না। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে চাষ হয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণ কঠোর হলে কৃষক ও ভোক্তা—দুজনই উপকৃত হবেন।

বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ হাজার ২০৭ হেক্টর বেশি জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। ২০২৩-২৪ মৌসুমে বরিশাল বিভাগে ৪৮ হাজার ৪৭ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছিল। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৮ হাজার ৩৪৪ হেক্টর। তবে আবাদ হয়েছে ৫৪ হাজার ৫৫১ হেক্টর। প্রতি হেক্টরে আবাদের হার ১১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে তরমুজ বাজারে এসেছে। চলতি মাস পর্যন্ত তা বাজারে থাকবে। ব্যবসায়ীরা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বরিশালে ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার তরমুজ বেচাকেনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভোলার চরফ্যাশনের তরমুজ চাষি জাকির হোসেন বলেন, ‘এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। মৌসুমের তরমুজ এখনো তুলিনি। আগাম জাতের তরমুজে ভালো দাম পাচ্ছি। বড় ধরনের ঝড়-বন্যা না হলে লাভবান হবো।’

পটুয়াখালীর বাউফলের কৃষক শাহ আলম বলেন, ‘গত বছর ঝড়-বন্যায় তরমুজ গাছ নষ্ট হয়েছিল। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। আকার ও মানভেদে প্রতি ১০০ পিস তরমুজ ১৬-২৪ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। প্রথম ধাপে ৮ হাজার পিস তরমুজ বরিশাল পোর্টরোড বাজারে এনেছি।’

বাকেরগঞ্জের তরমুজ ব্যবসায়ী মিরাজ ঢালি বলেন, ‘৪০০ তরমুজ কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু দাম বেশি। মাঝারি সাইজের প্রতি ১০০ পিস তরমুজ ১৩ হাজার টাকা চাইছে। আমি ১২ হাজার পর্যন্ত বলেছি।’ 

আড়তদার ইমন বলেন, ‘এ বছর আগামজাত তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে প্রচুর তরমুজ উঠলেও দাম বেশি। আমরা চাষিদের সঙ্গে কমিশনে ব্যবসা করি। খুচরা বিক্রেতারা আমাদের কাছ থেকে কিনে কেজি দরে বিক্রি করেন।’

সুজন বলেন, ‘বাজার নিয়ন্ত্রণে আড়তদারদের হাত নেই। খুচরা বিক্রেতারা বেশি লাভের আশায় দাম বাড়ায়। এতে অস্থিরতা তৈরি হয়।’
সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা এস এম মাহবুব আলম বলেন, ‘এখন বাজারে আসা তরমুজ আগাম জাতের। এটি মূল লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে গণনা করা হবে না। তবে ফলন ভালো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, চলতি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে কয়েক হাজার কোটি টাকার তরমুজ বাণিজ্য হবে। তরমুজ এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।’

উদ্যান বিশেষজ্ঞ জি এম এম কবীর খান বলেন, ‘দেশের দুই-তৃতীয়াংশ তরমুজ বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় উৎপাদিত হয়। কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে কৃষকরা লাভবান হতে পারছে না। তাদের সুরক্ষা দিতে হলে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। বাজার ব্যবস্থাপনা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’