
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ সার কারখানায় গ্যাস সংকট ও পুরোনো যন্ত্রপাতির কারণে উৎপাদন বন্ধ থাকে বেশির ভাগ সময়। ফলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে কারখানাটি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১ লাখ টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মাত্র ৪৮ হাজার টন ইউরিয়া সার উৎপাদিত হয়েছে। কারখানাটি চালু রাখতে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি ও যন্ত্রপাতি সংস্কারের প্রয়োজন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি সঠিকভাবে চালু হলে লাভজনক হয়ে দেশের সার আমদানি নির্ভরতা কমানো সম্ভব।
আশুগঞ্জ সার কারখানা ১৯৮০ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার চরচারতলা এলাকায় মেঘনা নদীর তীরে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮১ সালের ১৫ ডিসেম্বর এটি পরীক্ষামূলকভাবে ইউরিয়া সার উৎপাদন শুরু করে। পরবর্তী সময়ে ১৯৮৩ সালের জুলাই থেকে বাণিজ্যিকভাবে এর উৎপাদন শুরু হয়। গুণগত মানসম্পন্ন ইউরিয়া সার উৎপাদন করে আশুগঞ্জ সার কারখানা দ্রুত কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বর্তমানে সাড়ে ৭০০ সার ডিলারের মাধ্যমে সাতটি জেলার কৃষকদের মধ্যে ইউরিয়া সরবরাহ করা হয়।
যে সময় কারখানাটি চালু হয়, তখন এর দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১ হাজার ৬০০ টন। তবে যন্ত্রপাতির অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় উৎপাদন ক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে কারখানাটি প্রতিদিন ১ হাজার ১৫০ টন ইউরিয়া সার উৎপাদন করতে সক্ষম।
গ্যাস সংকটের কারণে বছরের অর্ধেক সময় কারখানাটির উৎপাদন বন্ধ থাকে। সর্বশেষ ২০২৩ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ বন্ধ ছিল। শ্রমিকদের আন্দোলনের পর, ১৫ নভেম্বর গ্যাস সরবরাহ শুরু হলেও উৎপাদন শুরু হতে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় লেগে যায়। এই গ্যাস সংকট ও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বারবার ব্যর্থ হয়েছে কারখানাটি।
২০২০-২১ অর্থবছরে ২ লাখ ৪০ হাজার টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১ লাখ ৪২ হাজার ৫৫৭ টন সার উৎপাদন হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯৬ হাজার ৪৬ টন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৪২০ টন ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪৮ হাজার ৪৫৩ টন ইউরিয়া সার উৎপাদন হয়েছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একটি চক্রের মাধ্যমে আশুগঞ্জসহ অন্য দেশীয় সার কারখানাগুলোর গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এতে বিদেশ থেকে সার আমদানি করে ব্যবসা শুরু করা হয়েছিল। এখনো আশুগঞ্জ সার কারখানায় গ্যাসের চাপ কম থাকায় উৎপাদন পর্যাপ্ত হয় না।
বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গ্যাস সরবরাহের জন্য বিসিআইসি কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী চাপ দেওয়া হয়। তবে জাতীয় গ্রিডে গ্যাসের সংকটের কারণে আশুগঞ্জ সার কারখানাকে প্রয়োজনীয় চাপ সরবরাহ করা সম্ভব হয় না।
আশুগঞ্জ সার কারখানার এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু কাউসার জানান, কারখানাটির কোনো আর্থিক দায় নেই। যদি সারা বছর গ্যাস সরবরাহ করা যায়, কিছু যন্ত্রপাতি নতুন করে সংযোজন করা যায়, তবে এটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারবে।
আশুগঞ্জ সার কারখানার অ্যামোনিয়া প্লান্টের ইনচার্জ মো. ফারুক হোসেন জানান, কারখানাটি ৪০ বছরেরও বেশি পুরোনো এবং গ্যাসের পাশাপাশি যন্ত্রপাতি সমস্যার মুখোমুখি। তবে বিসিআইসি কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় এই সমস্যাগুলো সমাধান করা হচ্ছে। গ্যাসের চাপ বাড়লে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে এবং লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে, বলে আশাবাদী কারখানা কর্তৃপক্ষ।