
নওগাঁয় এবার আগেই মুকুল আসতে শুরু করেছে। চলতি মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে প্রায় ৮০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাষিরা ভালো ফলনের আশা করছেন। তবে উৎপাদন ব্যয় বাড়ায় চাষিরা ঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন। কৃষি বিভাগের আশা, এ বছর আমের বাম্পার ফলন হবে। ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার আম বিক্রি হবে।
কৃষি অফিস সূত্র জানান, নওগাঁ গত কয়েক বছর ধরে আম উৎপাদনে দেশের শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। সাপাহার ও পোরশা উপজেলায় আমবাগানের পরিধি প্রায় ২০ হাজার হেক্টর। পাশের পত্নীতলা, ধামইরহাট, নিয়ামতপুর ও মান্দা উপজেলায় আমবাগান আরও ১০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ছড়িয়েছে। সব মিলিয়ে জেলায় এবার ৩০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আম উৎপাদিত হবে।
এ অঞ্চলের মাটি বিশেষত্বের কারণে নওগাঁর আমের স্বাদ ও গন্ধ অতুলনীয়। এক ফসলি জমিতে আমবাগান করে কৃষকরা অন্যান্য ফসলের তুলনায় বেশি লাভ পাচ্ছেন। এ কারণে আমবাগানের পরিধি বাড়ছে। আম উৎপাদনেও নওগাঁয়ের চাষিরা সফল। ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে গত কয়েক বছর ধরে আম রপ্তানি হচ্ছে।
নওগাঁয় আম্রপালি, বারি ফোর, গৌড়মতী ও নাগফজলি জাতের আম বেশি উৎপাদিত হয়। আম্রপালি এই জেলার সবচেয়ে জনপ্রিয় জাত। নাগফজলি এ অঞ্চলের নিজস্ব জাত। এটি বদলগাছী ও ধামইরহাট উপজেলায় বেশি উৎপাদিত হয়। গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত, ঝিনুক, হিমসাগর এসব গুটি জাতের আম বাজারে আগে আসে। পরে পাকে আম্রপালি, বারি ফোর, গৌড়মতী ও বানানা ম্যাঙ্গো। কয়েক বছর ধরে সূর্যডিমসহ নতুন জাতের আমও চাষ শুরু হয়েছে। কাটিমন জাতের আম সারা বছর পাওয়া যায়।
চলতি মৌসুমে গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। গুটি ও নাবি জাতের গাছে মুকুল এসেছে। চাষিরা বাগান ও মুকুলের পরিচর্যা বাড়িয়ে দিয়েছেন। পোরশা উপজেলার আমবাগানি রবিউল ইসলাম জানান, তিনি ৩০ বিঘা জমিতে আম্রপালি জাতের আম বাগান গড়ে তুলেছেন। রবিউল বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির শুরুতে গাছে মুকুল দেখা গেছে। সব গাছে একসঙ্গে মুকুল ফুটেছে। বালাইনাশক, তরল খাদ্য প্রয়োগ ও অন্যান্য পরিচর্যা করা হচ্ছে।’
সাপাহারের তিলনা গ্রামের আমবাগানি আজিম উদ্দিন বলেন, ‘আবহাওয়া ভালো থাকায় মুকুলে রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম।’ তিনি জানান, ১৫ দিন এই আবহাওয়া থাকলে আমের বাম্পার ফলন হবে। কারণ মুকুল বেরানো থেকে আমের গুটি আসতে ১৫ থেকে ১৮ দিন লাগে। এই সময়ে মুকুলে রোগবালাইয়ের আক্রমণ বেশি হয়। তবে এ বছর পরিস্থিতি ভালো।
চাষিরা বলছেন, আমবাগানের পরিচর্যা ও ফলনের যত্ন নিতে অনেক ধরনের সংকট রয়েছে। বিশেষ করে বালাইনাশক ও অন্যান্য উপকরণের দাম বাড়ায় তাদের মূলধন সংকটে পড়ছে। তারা জানান, বছরে প্রতি বিঘা বাগানে প্রায় ৩০ হাজার টাকা উৎপাদন ব্যয় হয়। অনেক চাষি মূলধন জোগাড় করতে মুকুলের আগাম বিক্রি করছেন। মাঝারি আকারের চাষিরা চড়া সুদে ঋণ করে সার ও কীটনাশক কিনছেন।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর মুকুল ফুটতে সঠিক সময় হয়েছে। মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে মুকুলের রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, ‘এই বছর বিদেশে আম রপ্তানির জন্য ৩০০ চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আশাবাদী, চলতি মৌসুমে আমের বাম্পার ফলন হবে। জেলা থেকে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার আম বিক্রির আশা করা হচ্ছে।