
বিনা তদন্তে নতুন করে কাউকে চাকরিচ্যুত না করা, ইতোমধ্যে চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিতে পুনর্বহাল এবং চাকরির নিরাপত্তাসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বহাল রাখার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ইউনিয়ন ব্যাংকের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) গুলশানের ইউনিয়ন ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। এর আগের দিনও তারা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে কর্মীদের ‘বেতন কমানো যাবে না’, ‘চাকরির নিরাপত্তা চাই’, ‘বর্তমান বোর্ড মানি না’- এরকম বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এ সময় বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে নতুন পর্ষদ গঠন করার দাবিও জানান তারা।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা বলেন, ‘যথাযথ নিয়ম না মেনেই আমাদের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং হচ্ছে। কোনো রকম তদন্ত ছাড়া এবং আত্মপক্ষ সমর্থন ছাড়া অন্যায়ভাবে কাউকে চাকরিচ্যুত করা যাবে না। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ব্যাংকটা যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সে জন্য একটা বিজনেস পলিসি নেওয়া দরকার। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সেটি না করে চাকরিচ্যুতি, স্থানান্তর এবং শাস্তির দিকেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। এর মাধ্যমে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করছে। এতে আমরা চাইলেও ভালো কাজ করে ব্যাংকটিকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করতে পারছি না।’
কর্মীরা বলেন, ‘চাকরি থেকে আমাদের বাদ দেওয়া হলে আমরা আত্মহত্যা করব। আমরা সাধারণ নিরীহ কর্মী। আমরা কোনো লুটপাটের সঙ্গে জড়িত না। আমাদের কেন চাকরিচ্যুত করা হবে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রথমে জুনিয়র পর্যায়ের ২৬২ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, যাদের নিয়োগ হয়েছিল ২০২৪ সালে। এরপর সিনিয়র পর্যায়ে আরও ৭ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, যেখানে সর্বোচ্চ সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট পদমর্যাদার কর্মকর্তাও রয়েছেন। এরপর আরও ৯ জনের তালিকা করা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। এভাবে ধাপে ধাপে আরও ১০০ জনকে চাকরিচ্যুত করার পরিকল্পনা করা হয়েছে বলেও আমরা জানতে পেরেছি। এর প্রতিবাদেই আমাদের অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি।’
এর আগে গতকাল সোমবার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিক্ষোভের একপর্যায়ে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পরে ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং এমডি তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, আর কাউকে চাকরিচ্যুত করা হবে না। এ সময় সবাইকে স্বাভাবিকভাবে কাজ করারও আহ্বান জানান তারা। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের ফলে সবাই কাজে যোগ দেন। কিন্তু পরের দিন আজ আবারও কর্মকর্তারা এক ঘণ্টার জন্য অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এদিন ব্যাংকটির স্বাভাবিক কার্যক্রম একেবারে বন্ধ না হলেও ঢিলেঢালা পরিস্থিতি দেখা গেছে।
এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সফিউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সরাসরি এবং মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
আগামীকাল বুধবার কোনো কর্মসূচি আছে কি না জানতে চাইলে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বুধবার আমরা দাবিগুলো লিখিত আকারে এমডির কাছে জমা দেব। সেখানে যদি আমাদের সমস্যার সমাধান পাই, তাহলে কর্মসূচি প্রত্যাহার হবে। আর যদি সমাধান না পাই, তাহলে আমাদের কর্মসূচি চলমান থাকবে।’