
অন্যান্য বছরের মতো এবারও রমজানের আগেই সয়াবিন তেল, খেজুর, চালসহ অনেক নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফার লোভে এ কাজ করছে। ভোক্তা অধিদপ্তর অধিকাংশ দিনই ঢাকা শহরে অভিযান পরিচালনা করছে। তারপরও ঠেকানো যাচ্ছে না। তাই আসন্ন রমজান মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাজার তদারকি বাড়াচ্ছে।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) থেকে ঢাকা মহানগরীর বাজার তদারকিতে কাজ শুরু করবে তিনটি টিম।
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ঢাকা মহানগরীর বাজারগুলোতে নিত্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে গঠিত টিমের টিম লিডারদের নিয়ে আয়োজিত কর্মশালায় বাণিজ্যসচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো. আব্দুর রহিম এসব তথ্য জানান।
কর্মশালায় বাণিজ্যসচিব প্রধান অতিথি ছিলেন।
আন্তর্জাতিক বাজারের অজুহাতে এবার রমজানের আগেই গত ৯ ডিসেম্বর সয়াবিন তেলের লিটারে ৮ টাকা বাড়িয়ে বোতলজাত ১৭৫ টাকা ও খোলা তেল ১৫৭ টাকায় বিক্রি করার ঘোষণা দেয় সরকার। কিন্তু মিল থেকে ঠিকমতো তেল সরবরাহ না করায় খুচরা বিক্রেতারাও চাহিদামতো তেল পাচ্ছেন না। এ সুযোগ অনেকেই বেশি দরে তেল বিক্রি করছেন। ফলে সেই দরে ভোক্তারা তেল পাচ্ছেন না।
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ২০০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত লিটার তেল কিনতে হচ্ছে। ভোক্তা অধিদপ্তরের বাজার অভিযানে এসব ধরা পড়ছে। প্রায় দিন ৬ থেকে ৭টা টিম বাজারে অভিযান করছে। এ ছাড়া সারা দেশেও ৪৫ থেকে ৪৮টা বাজার অভিযান করছে। এসব অভিযানে লাখ লাখ টাকা জরিমানা করা হচ্ছে।
এদিকে সরকার নিত্যপণ্যের মধ্যে ডিম ও মুরগির দাম বেঁধে দিলেও সেই দরে পাচ্ছেন না ভোক্তারা। ১৪২ টাকার কমে ডিম পাওয়া গেলেও মুরগি পাওয়া যায় না। ২০০ টাকার কমে ব্রয়লার ও ৩০০ টাকার কমে সোনালি মুরগি মেলে না।
বিভিন্ন বাজারে চালের দামও বেশি রাখা হচ্ছে। ধানের দাম বাড়তি অজুহাতে মিলমালিকরা ইচ্ছামতো দামে চাল বিক্রি করছে। ফলে ভোক্তাদের বেশি দরেই তা কিনতে হচ্ছে। ৮০ থেকে ৮৫ টাকার কমে মিনিকেট, ৬০ টাকার কমে আটাশ ও ৫০ টাকার কমে পাওয়া যায় না মোটা চাল। কয়েক দিনের ব্যবধানে খেজুরের দাম এক কার্টনে (৫ কেজি) ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়ে গেছে। রমজানের ১৩ দিন বাকি রয়েছে। তাই আরও দাম বাড়বে বলে খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন।
এদিকে রমজানের ইফতারির উপকরণ বেগুন, শসা, লেবুর দামও বাড়তে শুরু করেছে। কয়েক দিনের ব্যবধানে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে গেছে। বেগুনের কেজি ৮০ টাকা, শসার কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, লেবুর হালি ৫০ থেকে ৬০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ৬০ থেকে ৭০ টাকার কাঁচা মরিচও ১০০ টাকা ছুঁয়ে গেছে। তাই বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখছে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে।
টিম লিডারদের উদ্দেশে বাণিজ্যসচিব বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার তদারকি টিম নিয়মিতভাবে ঢাকা মহানগর এবং জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় স্পেশাল টাস্কফোর্সের মাধ্যমে বাজার তদারকি করে থাকে। এর পাশাপাশি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও বাজার তদারকি করে থাকে। এতে করে অবৈধ মজুতদার ও অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজার অস্থিতিশীল করতে পারে না। রমজানকে কেন্দ্র করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের আরও নিবিড়ভাবে তদারকি করতে হবে।’
মো. আব্দুর রহিম বলেন, ঢাকা মহানগরে নিয়মিত দুটি টিম বাজার মনিটরিং করলেও রমজান উপলক্ষে আজ থেকে প্রতিদিন তিনটি টিম বাজার মনিটরিং বা তদারকি করবে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে নিয়মিতভাবে ছয়টি টিম কাজ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আসন্ন রমজানে তদারকিতে থাকবে তাদের ১০টি টিম। এর পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় লিফলেট বিতরণ ও স্থানীয় বাজার কমিটির মাধ্যমে মাইকিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে কাঁচাবাজার, মুদি দোকান ও সুপারশপগুলোতে তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।