ঢাকা ১০ চৈত্র ১৪৩১, সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫
English

বিজিএমইএর সংস্কার জরুরি

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:২৯ এএম
বিজিএমইএর সংস্কার জরুরি
বিজিএমইএ

পোশাকশিল্পের অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে বিজিএমইএর অভ্যন্তরীণ সংস্কার জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট বিজিএমইএ ফোরামের প্যানেল লিডার রাইজিং গ্রুপের কর্ণধার মাহমুদ হাসান খান বাবু। তিনি বলেন, দেশের পোশাক খাতের হারানো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারে যোগ্য নেতৃত্ব প্রয়োজন। 

সম্প্রতি চট্টগ্রামের হোটেল রেডিসন ব্লুতে ‘পোশাকশিল্পের সমসাময়িক অবস্থা বিবেচনায় নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময়’ শীর্ষক আলোচনায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, ‘আমরা দুর্নীতি করি না, অন্যকে দুর্নীতি করতে দেব না। আপনারা সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন। যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকে ভোট দেবেন। এই বিজিএমইএর অভ্যন্তরীণ সংস্কার অবশ্যই করতে হবে। আমরা চাই সঠিক জায়গায় সঠিক নেতৃত্ব আসুক, তাহলে পোশাকশিল্প এগিয়ে যাবে, দেশ এগিয়ে যাবে। আমরা পোশাকশিল্পের অগ্রগতিতে কাজ করব। একতা, দক্ষতা ও সততার সঙ্গে যুক্তিসঙ্গতভাবে কাজ করব।

এর আগে মাহমুদ হাসান খান বাবুকে পরিচয় করিয়ে দেন ফোরাম সভাপতি এশিয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ সালাম। ফোরাম চট্টগ্রামের সহসভাপতি খন্দকার বেলায়েত হোসেনের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন ফোরাম চট্টগ্রামের সভাপতি কেডিএস গ্রুপ চেয়ারম্যান আলহাজ খলিলুর রহমান, ফোরাম বাংলাদেশের সাবেক প্যানেল লিডার ফয়সাল সামাদ, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ড. রশিদ আহমেদ হোসাইনী, ইনামুল হক খান বাবলু, ফোরাম চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক  মহিউদ্দিন চৌধুরী, ফোরাম চট্টগ্রামের সাবেক প্যানেল লিডার সেলিম রহমান, দেশ গার্মেন্টসের এমডি ভিদিয়া অমৃত খান, মোহাম্মদ আলী, সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।

সভায় পোশাকশিল্পের বর্তমান বাস্তবতা এবং ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়া পোশাকশিল্প মালিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর ও সমস্যা সমাধানে ফোরাম সবসময় মালিকদের পাশে থাকবে বলে আশ্বাস দেন নেতারা।

সভায় দুই শতাধিক পোশাকশিল্প মালিক অংশ নেন। উপস্থিত ছিলেন ফোরাম চট্টগ্রামের সিনিয়র সহসভাপতি আবদুল মান্নান রানা, মোহাম্মদ ফেরদৌস, যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ আতিক, চৌধুরী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিক চৌধুরী বাবলু, ট্রেজারার সাইফুল্লাহ মনসুর, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল আজিজ চৌধুরী, মির্জা আকবর খোকন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক রিয়াজ ওয়াইজ, মোরশেদ কাদের, ওয়াদুদ মোহাম্মদ চৌধুরী, আরশাদুর রহমান, বশির উদ্দিন আহমদ ও এম এ সিদ্দিক চৌধুরী।

ঈদের কেনাকাটা ক্রেতারা ঝুঁকছেন পাকিস্তানি থ্রি-পিসে

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৫, ০২:৫০ পিএম
আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৫, ০৩:০৪ পিএম
ক্রেতারা ঝুঁকছেন পাকিস্তানি থ্রি-পিসে
ছবি: সংগৃহীত

ঈদের ছুটি শুরু হতে আর কয়েক দিন বাকি। তাই বাড়ি যাওয়ার আগে শেষ সময়ের কেনাকাটা সারছেন অনেকে। জামাকাপড়ের সঙ্গে মিলিয়ে জুতাসহ নানা অনুষঙ্গ কিনতেই বেশি ব্যস্ত ক্রেতারা। তবে এখনো ভিড় আছে থ্রি-পিসের দোকানগুলোতে। শেষ সময়েও আসছে নতুন নতুন কালেকশন। আর সেগুলো দেখতে আর কিনতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। ক্রেতারা বলছেন, গরমে পাকিস্তানি কাপড়ে আরাম বেশি। আর বিক্রেতারা বলছেন, অন্য সময় ভারতীয় পোশাকের কদর বেশি থাকলেও এবার পাকিস্তানি থ্রি-পিসের চাহিদা বেশি।

রবিবার (২৩ মার্চ) ধানমন্ডির বিভিন্ন শপিংমল ঘুরে দেখা যায়, এখনো নতুন নতুন কালেকশন আসছে আনস্টিচড থ্রি-পিসের দোকানগুলোতে। ধানমন্ডির রাপা প্লাজা, আনাম র‌্যাংগস প্লাজা, সীমান্ত স্কয়ারের মতো শপিংমলগুলোতে রয়েছে বেশ কিছু থ্রি-পিসের দোকান। যেখানে আনস্টিচড ও স্টিচড সব ধরনের দেশি-বিদেশি থ্রি-পিস পাওয়া যাচ্ছে। সেখানকার ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিগত বছরগুলোতে ভারতীয় পোশাকের আমদানি বেশি থাকায় বিক্রিও বেশি ছিল। তবে এবার পাকিস্তানি থ্রি-পিসের চাহিদা বেশি।

সাবিহা ইলমা ও তাসলিমা ইসলাম। দুজন রুমমেট। আনাম র‌্যাংগস প্লাজার একটি দোকানে কথা হয় তাসলিমার সঙ্গে। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘ঈদের জন্য ১৫ রোজার আগেই আনস্টিচড থ্রি-পিস নেওয়া হয়েছে। কারণ ১৫ রোজার পর আর দর্জির দোকানগুলো নতুন অর্ডার নিচ্ছে না। তাই আগেই দুটো জামা বানাতে দিয়েছি। কিন্তু এখন আবার শুনলাম নতুন কালেকশন এসেছে তাই দেখতে এসেছি। পছন্দ হলে নিয়ে নেব।’ 
তাসলিমা ইসলাম আরও বলেন, গত ঈদে যেসব ডিজাইনের পোশাক এসেছিল, এবার অনেকটাই সে রকমই পোশাক এসেছে। কিন্তু দাম গতবারের থেকে প্রায় ৩-৪ হাজার টাকা বেশি।

ওই দোকানের বিক্রেতা রুবেল বলেন, ‘আমাদের এখানে পাকিস্তানি জামাগুলোই বেশি। তাই এগুলোর ক্রেতাই আসেন এখানে। আমি এখানে তিন বছর ধরে কাজ করি। গত দুই বছরের তুলনায় এ বছর বিক্রি ভালো হচ্ছে।’

ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডের বিভিন্ন শপিংমল ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পাকিস্তানি থ্রি-পিস এসেছে এবার। এগুলোর মধ্যে বেশি চাহিদা আছে মারিয়া বি, জারা, শাহজাহান, ফারাহ তালিব আজিজ, সায়রা রিজওয়ানের পোশাকগুলোর। এ ছাড়া নুর, কারিজমা, আগা নূরের পোশাকগুলো কিনছেন অনেকে। এ ছাড়া জোহরা, বিন হামিদ, সাদাবাহার, বিন সাঈদ, গুলজি, গুলাল, কোকো পোশাকগুলোর দাম তুলনামুলক কম থাকায় এগুলোর বিক্রি বেশি বলছেন বিক্রেতারা।

লালমাটিয়ার সানরাইজ প্লাজায় থ্রি-পিস কিনতে এসে শাহানা আলম বলেন, ‘এবার গরম থাকায় পাকিস্তানি কাপড়ই কিনছি। বিশেষ করে লন ও সুতির কাপড়গুলো অনেক আরামদায়ক। আর এগুলোর মধ্যে পাকিস্তানি থ্রি-পিসের ডিজাইন ও কালার কম্বিনেশন ভালো থাকে। তাই এবারের ঈদের জন্য আমি ও আমার মেয়ে দুজনই পাকিস্তানি থ্রি-পিস কিনেছি। আমার জন্য দুটি। আর আমার মেয়ে কিনেছে তিনটি। এর মধ্যে দুটি আনস্টিচড আর একটি টু-পিস রেডিমেড।’

শাহানা আলমের মেয়ে সাবিহা আলম বলেন, এখন পাকিস্তানি কাপড়ের সুন্দর ডিজাইন আসে। এগুলোতে নেক সুন্দর সুন্দর প্যানেল ও লেস ম্যাচ করা থাকে। অনেক সময় ওড়নাতেও লেস ও পার্লের কাজ করা থাকে। তাই নিজেদের কিছু আর ম্যাচ করে কিনতে হয় না। এ জন্য ঝামেলা কম। এ ছাড়া অনেকে রেডিমেড টু-পিস ও থ্রি-পিসও রাখেন। সেগুলো কিনলে বানানোর চিন্তা থাকে না। আর ওদের কাটিং ও ফিটিংও দারুণ। 
এ নিয়ে বিক্রেতা মাসুম বিশ্বাস খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের এখানে রেডিমেড ও আনস্টিচড দুই ধরনেরই পাকিস্তানি জামা পাওয়া যায়। ক্রেতাদের সুবিধার্থে আমরা টেইলারিংয়ের ব্যবস্থাও রেখেছি। তবে এখন আর ঈদের আগের অর্ডার নিচ্ছি না। ১৭ রোজা পর্যন্ত অর্ডার নেওয়া হয়েছে।’ 

সানরাইজ প্লাজার একাধিক বিক্রেতা জানান, ব্র্যান্ড-কাজ ও কাপড়ভেদে দামের ভিন্নতা রয়েছে। এর মধ্যে মারিয়া বি’র পোশাক ৮ থেকে ১১ হাজার টাকা, জারা শাহজাহানের ৯ থেকে ১১ হাজার, ফারাহ তালিব আজিজের ৮ থেকে ১১ হাজার এবং সায়রা রিজওয়ানের পোশাকগুলো ১০ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। এ ছাড়া নুর, কারিজমা, আগা নূরের পোশাকগুলো পাওয়া যাচ্ছে ৮ থেকে ১৬ হাজার টাকায়। পাশাপাশি জোহরা, বিন হামিদ, সাদাবাহার, বিন সাঈদ, গুলজি, গুলাল, কোকো পোশাকগুলোর দাম পড়ছে ৩ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত।
তবে এই একই ব্র্যান্ডগুলোর কপি জামা পাওয়া যাচ্ছে নিউ মার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনীচকসহ এর আশপাশের মার্কেটগুলোতে। কাপড় ও ছাপার কোয়ালিটি ভেদে এসব থ্রি-পিসের দাম ১ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত।

সঞ্চয়পত্রের সুদহার বাড়ানোর পরও বিনিয়োগ বাড়েনি

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৫, ০২:৪৪ পিএম
আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৫, ০৩:০৪ পিএম
সঞ্চয়পত্রের সুদহার বাড়ানোর পরও বিনিয়োগ বাড়েনি
ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে সঞ্চয়পত্রের সুদহার বাজারভিত্তিক করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। যা গত জানুয়ারি থেকেই কার্যকর করা হয়েছে। এতে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহারও আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু সুদহার বাড়ানোর পরও সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ বাড়েনি। বরং এ সময় নতুন সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে ভাঙানোর প্রবণতাই বেশি দেখা গেছে। জানুয়ারিতে নিট বিনিয়োগ হয়েছে ঋণাত্মক ৪ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ এ সময় নতুন বিক্রির চেয়ে আগের কেনা সঞ্চয়পত্র থেকে এই পরিমাণ ভাঙ্গানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।

এর আগে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম তিন মাস (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেলেও অক্টোবর মাস থেকে ভাটা পড়েছে। যা জানুয়ারিতেও অব্যাহত ছিল। এ সময় সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে নগদায়ন বেশি হয়েছে। অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণাত্মক নিট বিনিয়োগ হয়েছে। অর্থাৎ এ সময় সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে নতুন কোনো ঋণ নেয়নি। বরং আগের নেওয়া ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। যদিও অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে নিট বিনিয়োগ হয়েছিল ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুদহার বাড়লেই যে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ বাড়বে- এটা ঠিক নয়। বর্তমানে স্থিতিশীল উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে অধিকাংশ মানুষের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে গেছে। এই অবস্থায় তাদের পক্ষে নতুন করে সঞ্চয় বা বিনিয়োগ কোনোটাই করার সামর্থ্য নেই। বরং আগে বিনিয়োগ করা সঞ্চয়পত্র ভেঙে খাচ্ছেন অনেকে।

এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন,‘দেশের অর্থনীতির বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে বিনিয়োগ, মজুরি এবং শ্রমবাজার কোথাও খুব বেশি সুখবর নেই। শুধু রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি আয় বাদে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির কোনো খাতেই আয় বাড়ছে না। অন্যদিকে স্থিতিশীল রয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। অর্থাৎ মানুষের আয় না বাড়লেও ব্যয় বাড়ছে। এই অবস্থায় নতুন করে সঞ্চয় করার মতো সক্ষমতা অধিকাংশ মানুষেরই নেই। যে কারণে সুদহার বাড়ানোর পরও সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ বাড়ছে না।’
সরকার তা হলে কেন সঞ্চয়পত্রের সুদহার বাড়িয়েছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সরকার সঞ্চয়পত্রে যে সংস্কার করেছে সেটি মূলত সুদহার বাজারভিত্তিক করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। সুদহার বাড়ানোর জন্য নয়। কারণ সঞ্চয়পত্র থেকে বেশি ঋণ না নিতে আইএমএফেরও পরামর্শ রয়েছে।’

জানা গেছে, মূলত আইএমএফের পরামর্শে সঞ্চয়পত্রের সুদহার বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। অর্থাৎ সরকারি ট্রেজারি বিলের সুদহারের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। ছয় মাসের গড় ট্রেজারি বিলের সুদহারের ভিত্তিতে সঞ্চয়পত্রের সুদহার নির্ধারিত হবে। ট্রেজারি বিলের সুদহার বাড়লে সঞ্চয়পত্রের সুদহার বাড়বে। আর ট্রেজারি বিলের সুদহার কমলে সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমবে। বাংলাদেশের সঙ্গে আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলারের যে ঋণচুক্তি রয়েছে সেখানেও সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ কমানোর পরামর্শ রয়েছে। প্রতিবছর বাজেট ঘাটতি হিসেবে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকার যে পরিমাণ ঋণ করে, সঞ্চয়পত্র থেকে তার এক চতুর্থাংশের বেশি ঋণ নিতে পারবে না। সেই সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের সুদহার বাজারভিত্তিক করতে হবে।

একই বিষয়ে জানতে চাইলে সঞ্চয় অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে খবরের কাগজকে বলেন, অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে সবসময়ই সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ বেশি হয়। মূলত আয়কর রিটার্নে বেশি হারে কর রেয়াত পাওয়ার জন্যই গ্রাহকরা এই সময় সঞ্চয়পত্রে বেশি বিনিয়োগ করেন। পরের মাসগুলোতে সেটা আবার কমে যায়। আর এই কারণেই অর্থবছরের সাত মাসে নতুন সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে নগদায়নের প্রবণতা বেশি দেখা গেছে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগ হয়েছে ঋণাত্মক ৭ হাজার ১৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ এ সময় গ্রাহকরা নতুন বিনিয়োগ করার চেয়ে নগদায়ন বেশি করেছেন। সঞ্চয়পত্রের এই নিট বিনিয়োগই চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’।

নিয়ম অনুযায়ী, আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা থাকে। সরকার তা বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। এ কারণে অর্থনীতির ভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। গত অর্থবছর সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৮ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে নিট বিনিয়োগ হয়েছে ঋণাত্মক ২১ হাজার ১২৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ পুরো অর্থবছরে এ খাত থেকে সরকার এক টাকাও ঋণ নেয়নি। এই বিষয়টিকে মাথায় রেখেই ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা আরও কমানো হয়েছে। 

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, তিন বছর মেয়াদি তিন মাস অন্তর মুনাফা সঞ্চয়পত্রে সাড়ে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য সম্ভাব্য সুদহার হবে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর এর বেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সুদহার ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ। 

পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সাড়ে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য সুদহার হবে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। আর এর বেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ সুদ হবে। অন্যদিকে একই মেয়াদের পারিবারিক সঞ্চয়পত্রে সাড়ে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য সুদহার ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ হবে। আর এর বেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ সুদ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া তিন বছর মেয়াদি ডাকঘর স্থায়ী আমানতে সাড়ে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য সুদহার হবে ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ। আর এর বেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ।

এদিকে বর্তমানে ব্যাংকগুলো সাধারণত স্থায়ী আমানতে ৯ থেকে ১১ শতাংশ সুদ দেয়। তবে তারল্য সংকটে থাকা কিছু ব্যাংক ১৩ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিচ্ছে। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রে বর্তমানে ১১ থেকে সাড়ে ১১ শতাংশ সুদ পান গ্রাহক। অর্থাৎ আগে ব্যাংকের আমানত এবং ট্রেজারি বিল ও বন্ডের তুলনায় সঞ্চয়পত্রের সুদহার অনেক বেশি থাকলেও বর্তমানে সেটা অনেক কমে গেছে।

হাওরপাড়ে শতবর্ষী বাঁশের হাট

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৫, ১১:৪৮ এএম
হাওরপাড়ে শতবর্ষী বাঁশের হাট
হাওরপাড়ের কালারবাজারে বিক্রির জন্য সারি সারি বাঁশ সাজিয়ে রাখা হয়েছে। খবরের কাগজ

মৌলভীবাজারের রাজনগরের কাউয়াদীঘি হাওরপাড়ে শতবর্ষী বাঁশের হাট এখনো জমজমাট। বৃহত্তর সিলেটের অন্যতম এই হাটে প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও শুক্রবার বাঁশ কেনাবেচা হয়। সোমবারের হাটে ২ থেকে ৩ লাখ টাকার বাঁশ বিক্রি হয়। শুক্রবার তা বেড়ে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকায় পৌঁছায়।

রাজনগর, শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বাঁশ আসে। গ্রামে বাঁশঝাড় কমে যাওয়ায় সরবরাহ কমেছে। তবে নির্মাণ ও হস্তশিল্পের জন্য এখানকার বাঁশের চাহিদা এখনো বেশি।

সম্প্রতি রাজনগরের উত্তরভাগ ইউনিয়নের এই হাটে গিয়ে দেখা যায়, নানা ধরনের পণ্য থাকলেও বাঁশই মূল আকর্ষণ। চাঁদনীঘাট-হলদিগুল সড়কের উত্তরের নিচু জমিতে সারি সারি বাঁশ রাখা হয়েছে। ক্রেতারা এসে পছন্দসই বাঁশ বাছাই করছেন, দরদাম করে কিনছেন।

বাঁশ পরিবহনের জন্য কেউ ঠেলাগাড়ি, কেউ পিকআপ ভ্যান ব্যবহার করছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শত বছর আগে এই গ্রামীণ হাটটি গড়ে ওঠে। কাউয়াদীঘি হাওর ও কুশিয়ারা নদীর নৌপথ ছিল পণ্য পরিবহনের প্রধান মাধ্যম। একসময় এখানে লঞ্চও চলত, যা বাঁশসহ অন্যান্য পণ্য পরিবহন সহজ করেছিল।

এই হাটে বালাগঞ্জ, নবীগঞ্জ, আজমিরিগঞ্জ, সিলেট, সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা আসেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, আগের মতো বাঁশের জোগান নেই। গ্রামের ফাঁকা জায়গাগুলোতে এখন বাড়িঘর উঠেছে, ফলে বাঁশঝাড় কমে গেছে।

৩৫ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছেন বাছিত মিয়া। তিনি জানান, রাজনগর, শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ, কুলাউড়া থেকে বাঁশ আসে। প্রতিদিনই বাঁশ বেচাকেনা হয়, তবে প্রতি সপ্তাহে সোম ও শুক্রবার হাট বসে। সোমবারের হাটে ২ থেকে ৩ লাখ টাকার বাঁশ বিক্রি হয়। শুক্রবারে তা বেড়ে ৫-৬ লাখ টাকা পর্যন্ত পৌঁছায়।

বাঁশ ব্যবসায়ী কালাম মিয়া বলেন, ‘সোজা, লম্বা ও মজবুত বাঁশের সরবরাহ কম। আগে গ্রামেগঞ্জে প্রচুর বাঁশঝাড় ছিল, এখন তা কমে গেছে। তারপরও কালারবাজার বাঁশের জন্য পরিচিত।’

জেলা শহর থেকে বাঁশ কিনতে আসা নির্মাণ ঠিকাদার আবু তাহের বলেন, ‘ভবন নির্মাণে বাঁশ অপরিহার্য। প্রতিটি ফ্লোরে মাচা তৈরি ও খুঁটি হিসেবে এর ব্যবহার হয়। এখানে চাহিদামতো ও সস্তায় বাঁশ পাওয়া যায়।’

উত্তরভাগের রাজাপুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব মহেন্দ্র সরকার ৪০ বছর ধরে এই বাজার থেকে বাঁশ কিনে টুকরি, কুলা, খলই তৈরি করেন। তিনি বলেন, ‘এত বড় বাঁশের হাট আর কোথাও আছে কি না, জানি না।’

প্রবীণদের মতে, আগের মতো নৌপথের প্রচলন নেই, তবে বাজারের কদর কমেনি। এখনো বহু ব্যবসায়ী সারা বছর এখানে বাঁশ কেনাবেচা করেন। ঐতিহ্যবাহী এই হাট শতবর্ষ পেরিয়ে এখনো টিকে আছে বাঁশের জন্য।

সিল্ক শিল্পে বাণিজ্যের আশা ৫০ কোটি টাকা

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৫, ১১:৪২ এএম
আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৫, ১১:৪৭ এএম
সিল্ক শিল্পে বাণিজ্যের আশা ৫০ কোটি টাকা
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাজশাহীর একটি দোকানে সিল্ক কাপড় কেনাকাটা করছেন ক্রেতারা। খবরের কাগজ

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাজশাহীর সিল্কপাড়া জমে উঠেছে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ব্যস্ত সময় পার করছেন কেনাকাটায়। কারখানা ও শো-রুমগুলোতে বেড়েছে ব্যস্ততা। রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসছেন ক্রেতারা। পাইকারি ক্রেতার সংখ্যাও ভালো। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, এবারের বাণিজ্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

রাজশাহী দেশের প্রধান রেশম পণ্য উৎপাদনকেন্দ্র। এখানে রয়েছে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের সদর দপ্তর। তবে সরকারি কারখানাগুলো বেহাল দশায় থাকলেও বেসরকারি উদ্যোগে সিল্ক শিল্প বিকশিত হয়েছে। বিসিক সপুরা এলাকায় গড়ে উঠেছে সিল্কপাড়া। এখানে রয়েছে সপুরা সিল্ক, ঊষা সিল্ক, আমেনা সিল্ক, রাজশাহী সিল্কসহ বেশকিছু শো-রুম। ঈদ ও বাংলা নববর্ষকে সামনে রেখে শো-রুমগুলো সেজেছে বাহারি পোশাকে।

সিল্কপাড়ায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রেশম গুটি থেকে সুতা তৈরি করে মেশিনে কাপড় বুনছেন কারিগররা। পরে শিল্পীরা কাপড়ে বিভিন্ন নকশা তৈরি করছেন, বসানো হচ্ছে পুঁথি ও চুমকি। ফলে কাপড়ের বুনন, রং ও হাতের কাজ নিয়ে কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। শো-রুমগুলোতে সকাল থেকে ক্রেতাদের উপস্থিতি কম থাকলেও দুপুরের পর থেকে বাড়ছে ভিড়।

এবারের ঈদে সিল্কের পোশাকে এসেছে নতুন ডিজাইন ও বৈচিত্র্য। শাড়ি, পাঞ্জাবি, থ্রি-পিসসহ বিভিন্ন পণ্য কিনছেন ক্রেতারা। তবে দাম কিছুটা বেড়েছে। যেটা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। ব্যবসায়ীদের মতে, আমদানি করা সুতা ও রঙের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পোশাকের মূল্য বেড়েছে।

সিল্কের শো-রুমগুলোতে বিভিন্ন ধরনের শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। বলাকা, মক্কা, কাতান, ছিপ কাতান শাড়ির দাম ১ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা। পাঞ্জাবি ১ থেকে ৭ হাজার, শেরওয়ানি ৮ থেকে ২৫ হাজার, থ্রি-পিস ১ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া সিল্কের থ্রি-পিস, হিজাব, ওড়না, স্কার্ফ এবং মসলিন, মটকা, তসর কাতান, বলাকা কাতান, সাটিং সিল্ক ও এনডি প্রিন্টের শাড়িও বিভিন্ন দামে পাওয়া যাচ্ছে।

সপুরা সিল্ক শো-রুমে ঈদের পোশাক কিনতে আসা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী মাহমুদা খাতুন বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী সিল্ক ছাড়া ঈদের কেনাকাটা পূর্ণ হয় না।’ তিনি জানান, নতুন ডিজাইন ও রঙের বৈচিত্র্য মন কেড়েছে। আমেনা সিল্কের ক্রেতা নাজনিন সুলতানা বলেন, ‘ঈদে সিল্কের শাড়ি ও থ্রি-পিস খুব ভালো লাগে। তবে দাম একটু বেশি।’ ব্যাংক কর্মকর্তা রাহাত হোসেন বলেন, ‘সিল্কের কাপড় সব সময় অনন্য ও আরামদায়ক। তাই প্রতি ঈদেই কেনা হয়।’

সিল্ক শো-রুম মালিকরাও এবার বাড়তি প্রস্তুতি নিয়েছেন। বেচাকেনা জমে উঠেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদে তাদের বিক্রি ৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

রাজশাহী সিল্ক ফ্যাশন শো-রুমের মালিক খুরশিদা খাতুন খুশি বলেন, ‘এবার মসলিন কাপড় বেশি তৈরি করেছি। এ ছাড়া সফট সিল্ক, কাতান, তসর সিল্কও রয়েছে।’ তিনি জানান, সুতার দাম বাড়লেও ক্রেতাদের জন্য কিছুটা কম দাম রাখা হয়েছে। মসলিন শাড়ির দাম ১ হাজার ৭৫০ থেকে ৫ হাজার টাকা, কাতান শাড়ি ৩ হাজার ৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকা এবং থ্রি-পিস ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে রাখা হয়েছে।

সপুরা সিল্ক মিলস লিমিটেডের পরিচালক আশরাফ আলী বলেন, ‘ঈদ এবার শীত ও গরমের মাঝামাঝি পড়েছে। তাই আরামদায়ক মসলিন সিল্ক কাপড় তৈরি করেছি। এবার পাঞ্জাবি, থ্রি-পিসের পাশাপাশি নতুন ডিজাইনের শার্টও এনেছি।’

বাংলাদেশ রেশম শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি লিয়াকত আলী বলেন, ‘এবার আমাদের প্রস্তুতি ভালো ছিল। দুই মাস আগে থেকেই সিল্কের থান কাপড় তৈরি শুরু হয়েছে।’ তিনি জানান, পাওয়ার লুমগুলোতে এখনো দিনরাত কাজ চলছে। শো-রুমে বিক্রি কিছুটা কম থাকলেও বড় ছুটি থাকায় শেষ মুহূর্তে বেচাকেনা আরও বাড়বে। তিনি আশা করছেন, এবারের সিল্কের বাণিজ্য ৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

কৃষিঋণে খেলাপির হার কম

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৫, ১১:৩৭ এএম
আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৫, ১১:৪৬ এএম
কৃষিঋণে খেলাপির হার কম
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

ব্যাংক খাতে মোট বিতরণকৃত ঋণে খেলাপি ঋণের পাহাড় জমলেও কৃষিঋণে খেলাপি ঋণের হার খুব কম। চলতি অর্থবছরের সাত মাসে কৃষিঋণে খেলাপির হার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ। জানুয়ারি শেষে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা বকেয়া ঋণের পরিমাণ ৫৫ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে খেলাপির পরিমাণ মাত্র ৪ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এই তথ্য জানা গেছে।   

বাংলাদেশ ব্যাংকের অপর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। আগের বছর ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ লাখ ১৩২ কোটি টাকা। এই পরিমাণ খেলাপি ঋণের বেশির ভাগই আটকে আছে বড় বড় কিছু শিল্পগ্রুপের কাছে। যারা ঋণ নিয়ে ফেরত দিচ্ছেন না। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃষকরা কখনো ঋণ জালিয়াতি করেন না। প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন কারণে মাঝে মাঝে সমস্যায় পড়েন তারা। কিন্তু দেশের বৃহৎ শিল্পগ্রুপের মতো ঋণখেলাপির প্রবণতা তাদের মধ্যে একেবারেই নেই। তবুও কৃষকদের ঋণ বিতরণে এবং স্বল্প অর্থের ঋণ আদায়ে বেশি তৎপর ব্যাংকগুলো। যদিও ব্যাংকগুলোর উচিত বড় বড় শিল্পগ্রুপকে কম ঋণ দিয়ে কৃষি এবং এসএমই খাতে বেশি ঋণ বিতরণ করা।  

এই প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বড় ঋণের চেয়ে কৃষিঋণে তহবিল ব্যবস্থাপনা খরচ অনেক বেশি। সে কারণেই ব্যাংকগুলো কৃষিঋণ বিতরণে অনীহা দেখায়। এ ছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোর উপজেলা পর্যায়ে শাখাও নেই। আবার সরকারি ব্যাংকগুলোর অনেক শাখা বিস্তৃত থাকলেও বিভিন্ন ধরনের অনিয়মে জর্জড়িত হওয়ার কারণে তারাও প্রয়োজন অনুযায়ী ঋণ বিতরণ করতে পারছে না। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে এই খাতে ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলোকে কীভাবে আরও বেশি উদ্বুদ্ধ করা যায়, সেই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। 

একই বিষয়ে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ আলী খবরের কাগজকে বলেন, ব্যাংকগুলোর হাতে এখন পর্যাপ্ত তারল্য রয়েছে। যা এতদিন ট্রেজারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করে আসছিল। বর্তমানে ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহার কমায় ব্যাংকগুলো এখন বেসরকারি খাতে বিশেষ করে কৃষি এবং এসএমই খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াবে। কারণ সেখানে সুদহার বেশি। তাছাড়া এসব ঋণে খেলাপির পরিমাণও কম। তার পরও বেশ কয়েকটি ব্যাংক নির্ধারিত হারে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ করছে না- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগামীতে নিশ্চয়ই ব্যাংকগুলো তাদের নির্ধারিত হারে কৃষিঋণ বিতরণ করবে। কারণ কৃষকরা চেষ্টা করে সবসময়ই ঋণ ফেরত দিতে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগে পড়লে কেবল তারা সমস্যায় পড়ে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলোকে সবসময়ই তাগিদ দিয়ে থাকে। বছরের শুরুতেই তাদের একটা লক্ষ্য ঠিক করে দেওয়া হয়। এবং লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারলে ব্যাংকগুলোকে জরিমানা করারও বিধান রাখা হয়েছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ব্যাংকগুলোকে ৩৮ হাজার কোটি টাকার কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই থেকে জানুয়ারি) ব্যাংকগুলো ১৯ হাজার ২১৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। যা লক্ষ্যমাত্রার ৫০ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এ সময় ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা কৃষি ও পল্লীঋণের মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ৮ হাজার ৯৩ কোটি টাকা। বিদেশি ব্যাংকগুলো ৭৮৩ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। এ সময়ে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ১০ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা।

তথ্য বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে কৃষি খাতে বিতরণ করা ঋণের বিপরীতে আদায় হয়েছে ২০ হাজার ৩১০ কোটি টাকা। আর জানুয়ারি শেষে এই খাতে বকেয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা।  

জানা গেছে, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কৃষি ও কৃষিসংশ্লিষ্ট কাজে অর্থ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য মোট ঋণের অন্তত ২ শতাংশ কৃষি খাতে বিতরণ বাধ্যতামূলক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেসব ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কৃষিঋণ বিতরণ করবে না, তাদের জরিমানার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যেসব ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার অর্থ বিতরণে ব্যর্থ হবে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট তহবিলে ওই অর্থ জমা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। এর ফলে প্রতি বছরই বাড়ছে কৃষিঋণ বিতরণ। বছরের শুরুতে লক্ষ্যও ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে। যাতে ১২ মাসেই বিশেষ করে ফসল চাষের শুরুতে কৃষকরা সময় মতো ঋণ পান। 

প্রতিবেদন অনুযায়ী, আলোচিত ৭ মাসে ২০ শতাংশের কম ঋণ বিতরণ করেছে মোট ১৪টি ব্যাংক। এসব ব্যাংকের মধ্যে ১০ দশমিক ৫৯ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে শরিয়াহভিত্তিক ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ১১ দশমিক ৬২ শতাংশ বিতরণ করেছে আইএফআইসি ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক ১৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশ, শাহাজালাল ইসলামী ব্যাংক ১৭ শতাংশ এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক বিতরণ করেছে ১৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এ ছাড়া সিটিজেনস ব্যাংক ২০ শতাংশ এবং ২০ দশমিক ৮৩ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসের সবচেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। জুলাই-জানুয়ারি সময়ে মোট ৪ হাজার ৯১২ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকটি। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটি এক হাজার ৯৬২ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এ ছাড়া রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ১ হাজার ৪১৪ কোটি, সোনালী ব্যাংক ৮৮৩ কোটি, ব্র্যাক ব্যাংক ৬৫১ কোটি, এক্সিম ব্যাংক ৬১৭ কোটি এবং পূবালী ব্যাংক বিতরণ করেছে ৬০৭ কোটি টাকা। বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৪৫ কোটি টাকার কৃষি ও পল্লীঋণ বিতরণ করেছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক।