ঢাকা ৪ বৈশাখ ১৪৩২, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২

দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণের রেকর্ড

প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫৫ পিএম
আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:২০ এএম
দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণের রেকর্ড
খবরের কাগজ ইনফোগ্রাফ

ব্যাংকিং খাতের অন্যতম সমস্যা হিসেবে বিবেচিত খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছেই। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে যা বেড়ে প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকা হয়েছে। এটা মোট বিতরণ করা ঋণের ২০ শতাংশ। এ সময় পর্যন্ত মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ১৭ লাখ ১১ হাজার ৪০১ কোটি টাকা।

বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘আমি আগেই বলেছিলাম, খেলাপি ঋণের পরিস্থিতি ভালোর দিকে যাবে না। ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের হার বেশ কিছুটা বেড়ে ২০ শতাংশ হয়েছে। এটা আগামীতে আরও বাড়বে। খেলাপি ঋণের যে সর্বোচ্চ চূড়া, সেখানে আমরা এখনো পৌঁছাইনি। আরও কিছুটা সময় লাগবে। আমাদের কাছে যতই নতুন তথ্য আসছে, ততই বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ।’ তিনি বলেন, ‘নতুন আইন কার্যকর হলে অর্থাৎ ১৮০ দিনের পরিবর্তে ৯০ দিন করা হলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বাড়বে। এটা আশঙ্কা না বাস্তবতা, আগামীতে আমরা সেদিকেই যাব।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। আগের বছর ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ লাখ ১৩২ কোটি টাকা। আর আগের প্রান্তিক সেপ্টেম্বর শেষে ছিল ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬০ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা। এর আগের তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছিল ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। এর মানে গত ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা। তথ্যে আরও দেখা যায়, গত ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকে মোট বিতরণ করা ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণের হার কিছুটা বেড়েছে। এই হার আগের প্রান্তিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) থেকে কিছুটা বেড়ে হয়েছে ৪২ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে এই হার ১৫ দশমিক ৬০ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংকগুলো থেকে গত দেড় দশকে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে যেসব ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, তার বেশির ভাগই এখন আর ফেরত আসছে না। এর প্রভাবে সরকারি-বেসরকারি প্রায় সব ব্যাংকেরই খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। এতদিন খেলাপি ঋণের তথ্য লুকিয়ে রাখার যে প্রবণতা ছিল, এখন সেটা নেই। ফলে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র প্রকাশিত হচ্ছে। এতে আগামীতে খেলাপি ঋণের হার আরও বাড়বে। এতে সার্বিকভাবে সংকটে পড়বে ব্যাংক খাত তথা অর্থনীতি। 

এর আগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত মুদ্রানীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, দেশের ব্যাংক খাতের জন্য গুরুতর উদ্বেগের বিষয় হলো খেলাপি ঋণ। এ ঋণের হার ৩০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত দুর্বলতা, নিয়ন্ত্রণগত ঘাটতি ও অর্থ পাচারের মতো অপরাধ তথা শোষণমূলক অনুশীলন বড় ভূমিকা রেখেছে।

জানা গেছে, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের পর শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি। ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা। আর শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরের মাস তথা গত সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকায় ঠেকে, যা প্রায় ১৩ গুণ বেশি। এ ঋণের বাইরেও প্রায় ৬৪ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ অবলোপন করা হয়। আর খেলাপি কম দেখাতে গত কয়েক বছরে বাছবিচার ছাড়াই লাখ লাখ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল ও ঋণ পুনর্গঠন করা হয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের বিতরণ করা ঋণের এক-চতুর্থাংশ তথা ৫ লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ আগে থেকেই ‘দুর্দশাগ্রস্ত’।

অর্থনীতিবিদরা অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করছেন, তৎকালীন সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটপাট হয়েছে, যার একটা বড় অংশই বিদেশে পাচার হয়েছে। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র বের হতে শুরু করেছে। সাবেক সরকারের আমলে ব্যাংক থেকে প্রভাবশালীদের বড় অঙ্কের ঋণ দিতে নানা সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ কাগজে-কলমে কম দেখাতে নেওয়া হয়েছিল একের পর এক নীতি। সরকার পরিবর্তনের পর সেই নীতি থেকে সরে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পরই দেশের ব্যাংক খাতের ক্ষত ফুটে উঠতে শুরু করে। ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত খেলাপি ঋণের হার দেখানো হয়েছে ১১ দশমিক ১১ শতাংশ। জুনে সেটি ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশে উন্নীত হয়। সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের হার ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশে ঠেকে। আর ডিসেম্বরে এসে খেলাপি ঋণের এ হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। 

এই প্রসঙ্গে অভিজ্ঞ ব্যাংকার ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নূরুল আমিন খবরের কাগজকে বলেন, খেলাপি ঋণ বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। কারণ প্রথমত, এখন তথ্য গোপন করা হয় না, অর্থাৎ তথ্যে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ব্যবসা বাণিজ্যের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো না। কারণ ব্যবসায়ীদের অনেকে জেলে আবার অনেকে পলাতক। যার ফলে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশে নেমে গেছে। অর্থাৎ নতুন ঋণ বিতরণ হচ্ছে কম, খেলাপি হচ্ছে বেশি। তিনি বলেন, ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বাড়লে প্রভিশনের পরিমাণ বাড়ে। এটা যদি মুনাফা থেকে মেটানো না যায়, তাহলে মূলধনের ওপর প্রভাব পড়ে। অর্থাৎ মূলধন কমে যায়। তখন ব্যাংকের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো ডিভিডেন্ড দিতে পারে না। ফলে শেয়ারের দাম কমে যায়। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণের নতুন নিয়ম কার্যকর হলে এর পরিমাণ আরও বাড়বে, যা ৩০-৩৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। 

একই বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, গভর্নর নিজেই বলেছেন খেলাপি ঋণ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে খেলাপি ঋণের হার এর চেয়েও বেশি হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে যে ১২টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেয়া হয়েছে, সেগুলোয় এখন নিরীক্ষা চলছে। ওই ব্যাংকগুলোর কত শতাংশ ঋণ নিয়মিত থাকবে, সেটিই বড় বিষয়। 

মৃত্তিকা/অমিয়/

দুবাইয়ের বাজারে স্বর্ণের দামে রেকর্ড

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০২:০৩ পিএম
দুবাইয়ের বাজারে স্বর্ণের দামে রেকর্ড
ছবি : সংগৃহীত

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে স্বর্ণের দামে রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি দেখা গেছে, যা ক্রেতাদের মধ্যে বাড়তি উদ্বেগ তৈরি করেছে। দুবাইয়ে মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৬ দশমিক ৭৫ দিরহাম। এর আগের দিন এই দাম ছিল ৩৫৮ দশমিক ৫০ দিরহাম।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) ২২ ক্যারেট স্বর্ণের গ্রাম প্রতি দাম ৩৬৫ দশমিক ২৫ দিরহাম। যা বাংলাদেশি টাকায় দাম পড়ে ১২ হাজার ৯০ টাকা (প্রতি দিরহামে ৩৩.১০ টাকা হিসেবে)।

গত ২১ মার্চ দুবাইয়ের বাজারে প্রতি গ্রাম সোনার দাম ছিল ৩৩৫ দশমিক ২৫ দিরহাম। তখন থেকে আজ পর্যন্ত ৩০ দিরহাম দাম বেড়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বৃদ্ধিকে ‘ব্যতিক্রমী’ বলা যায়, কারণ সাধারণত প্রতিদিন স্বর্ণের দামের ওঠানামা ২-৩ দিরহামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।

এক অভিজ্ঞ জুয়েলারি বিক্রেতা জানান, ‘এত কম সময়ে এত বড় লাফ সচরাচর দেখা যায় না। এখন প্রতি ঘণ্টায় আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্সে ১০ থেকে ৫০ ডলারের হেরফের হচ্ছে।’

আন্তর্জাতিক বাজারেও স্বর্ণের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী। বর্তমানে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৩ হাজার ২৬৭ মার্কিন ডলার, যা মঙ্গলবারের তুলনায় প্রায় ৬০ ডলার বেশি।

অনেক বিশ্লেষকের মতে, মূল্য ৩ হাজার ৩০০ ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।

স্বর্ণের বাজারের এই চাঙাভাবের পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ। তার মধ্যে অন্যতম হলো ৩০ এপ্রিল ভারতের ঐতিহ্যবাহী উৎসব ‘অক্ষয় তৃতীয়া’ যেটিকে স্বর্ণ কেনার জন্য সবচেয়ে শুভ দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দুবাইয়ের বিশাল ভারতীয় সম্প্রদায় এই উৎসবে স্বর্ণ কিনতে ব্যাপক আগ্রহী। বছরের পর বছর ধরে এটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের ক্যালেন্ডারে খুচরা সোনা কেনার সবচেয়ে বড় দিনগুলোর মধ্যে একটি।

এক জুয়েলার্স বলেন, ‘অবশ্যই ২০২৫ সালের ৩০ এপ্রিল ভারতীয়রা সোনা কিনবেন। তবে আমরা উদ্বিগ্ন যে, এ বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতের সোনার দোকানে স্বাভাবিক সংখ্যক ক্রেতা আসবে কিনা। কেউ কেউ দাম লক করার জন্য আগে থেকে বুকিং করেছেন, তবে বিপুল সংখ্যক ক্রেতা আশা করছিলেন যে তারা ৩০ এপ্রিলের আগে কিছু দামের ছাড় পাবেন। তারা নিশ্চিতভাবে সেই ছাড় পাচ্ছেন না। অন্তত এখন পর্যন্ত নয়।’

বিশ্বজুড়ে চলমান অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা এবং বিনিয়োগের নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে স্বর্ণের প্রতি ক্রমবর্ধমান আস্থা-এই সবকিছু মিলিয়েই স্বর্ণের দামে এই উল্লম্ফনের পেছনে কাজ করছে বলে মত বিশ্লেষকদের। সূত্র: গালফ নিউজ

অমিয়/

প্রসঙ্গ: বিদেশি বিনিয়োগ স্থানীয় বিনিয়োগে নজর দরকার

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০২:০২ পিএম
স্থানীয় বিনিয়োগে নজর দরকার
বিদেশি বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে স্থানীয় বিনিয়োগে নজর দরকার। ছবি: সংগৃহীত

সদ্য সমাপ্ত বিনিয়োগ সম্মেলনে বিদেশি বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ইতিবাচক আশ্বাসও পাওয়া গেছে। তবে স্থানীয় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উল্টো চিত্র বিরাজ করছে। দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় বিনিয়োগে খরা চলছে। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে এই সম্মেলন অবশ্যই একটি ভালো উদ্যোগ। তবে স্থানীয় বিনিয়োগ বাড়লেই বিদেশি বিনিয়োগের পালে হাওয়া দ্রুত বাড়ে। এ জন্য চিহ্নিত বাধাগুলো দূর করে বিনিয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। শিল্পে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বিনিয়োগে চলমান অচলাবস্থাকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। অবস্থা এরকম চলতে থাকলে দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। 

এই বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এখনো সন্তোষজনক না হওয়ায়, অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায়, অবকাঠামোগত সুবিধা না বাড়ায় বিনিয়োগ হচ্ছে না। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ অনেকদিন ধরেই জিডিপির আনুপাতিক হারে একই পর্যায়ে অর্থাৎ ২২-২৩ শতাংশেই রয়ে গেছে। বর্তমান সরকার এসব বিষয়ে সচেতন। তবে দৃশ্যমান তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আমি দীর্ঘদিন কাজ করেছি। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি, একটা জিনিস পরিষ্কার, যে দেশে স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করে না, সেই দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আসে না। কারণ দেশি বিনিয়োগকারীরা যদি বিনিয়োগ না করে তাহলে, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মনে করে যে, এখানে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ নেই। কাজেই বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হলে আগে স্থানীয় বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে। সে জন্য বিনিয়োগের অন্যতম বাধা সুশাসন, দুর্নীতি, ঋণের উচ্চ সুদহার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, অবকাঠামোগত সমস্যা এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট দূর করতে হবে।’

এদিকে বিনিয়োগের অন্যতম নিয়ামক হিসেবে পরিচিত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমছে অস্বাভাবিক হারে। গত কয়েক বছর ধরেই এমন পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। গত সাত মাসে তা আরও সংকুচিত হয়েছে। সবশেষ গত ফেব্রুয়ারি মাসে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ, যা সর্বনিম্ন। সেই সঙ্গে কমছে মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের প্রয়োজনীয় মধ্যবর্তী কাঁচামাল আমদানি। এতে দেশে বিনিয়োগ স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে ২০০৫-০৬ অর্থবছর থেকে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির তথ্য রয়েছে। দীর্ঘ এ সময়ে কেবল ২০২১ সালের মে মাসে একবার ঋণ প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের নিচে নেমে ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ হয়েছিল। সেই হিসেবে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ২০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অপর এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বিনিয়োগের অপর এক গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ২৫ শতাংশ। সেই সঙ্গে শিল্পের প্রয়োজনীয় মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি কমেছে ৮ শতাংশ। তবে এ সময় শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি বেড়েছে ১০ শতাংশ। এদিকে, বিদ্যমান শিল্পে অপরিবর্তিত রেখে বাড়ল নতুন শিল্পের ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম। শিল্প কারখানার বয়লারে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ঘনমিটার প্রতি ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা এবং ক্যাপটিভে ৩১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪২ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। গতকাল রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন এ দর ঘোষণা করেন বিইআরসির চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ। এই সিদ্ধান্তকে শিল্প খাতে বিনিয়োগে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে অভিহিত করেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন এত বেশি দাম দিয়ে আমাদের পক্ষে শিল্প স্থাপন করা সম্ভব না।

এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) উদ্যোগে গত ৭ এপ্রিল বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে চার দিনব্যাপী যে সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে, সেখানে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে বিনিয়োগের উপযুক্ত স্থান হিসেবে বাংলাদেশকে তুলে ধরা হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও এদেশে বিনিয়োগে ব্যাপক আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ এক ধাপ এগিয়ে বিনিয়োগ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করেছেন। 

বিনিয়োগ সম্মেলন সফলভাবে শেষ হয়েছে উল্লেখ করে বিডার বাণিজ্য উন্নয়ন প্রধান নাহিয়ান রহমান রোচি বলেন, এই সম্মেলনে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংযোগ স্থাপন হয়েছে। তিনি বলেন, এবারের বিনিয়োগ সম্মেলনে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ করা হয়েছে। যেসব বিদেশি বিনিয়োগকারী এসেছেন তাদের তালিকা করে যোগাযোগ করা হবে, যেন তারা সব বাধা পেরিয়ে দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে বিনিয়োগ করতে পারে। বিনিয়োগ সম্মেলনের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগের পাইপলাইন তৈরি হয়েছে। 

এদিকে, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তারা ব্যবসা সম্প্রসারণ নয়, বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন বলে জানান ডিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আমরা যারা ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত আছি, তারা বিদ্যমান ব্যবসা কীভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায়, সে চেষ্টা করছি। ব্যবসা সম্প্রসারণ বা নতুন কোনো প্রকল্প নেওয়ার কথা কেউ ভাবছে বলে আমার জানা নেই। সরকারের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা নেই। ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ কিংবা কর্মসংস্থান সৃষ্টির বিষয়ে সরকার কারও সঙ্গে আলোচনায়ও বসছে না। তিনি আরও বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া এখন অনেকটাই দুর্লভ বিষয়। আর এত উচ্চ সুদ আর ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে নতুন ব্যবসা করাও অনেক কঠিন। তার ওপর নতুন শিল্পে গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হবে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। এমন বাস্তবতায় সরকারের বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর যে প্রচেষ্টা, সেটা কতটুকু ফলপ্রসূ হবে সেই বিষয়টি আরও গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে।’

বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমায় চিন্তিত নয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর কারণ জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বিনিয়োগের নামে ব্যাংক থেকে প্রচুর টাকা বের করে নেওয়া হয়েছে। যা এখন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। এখন প্রকৃত ব্যবসায়ীরাই ঋণ পাচ্ছে। তাই বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কম দেখা যাচ্ছে। 

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘বর্তমানে দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতিতে অবশ্যই প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য যে সম্মেলন হয়ে গেল তার সুফল ভবিষ্যতে হয়তো কোনো এক সময়ে আসবে। এই সম্মেলনে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনাগুলো তাদেরকে দেখানো হয়েছে। এই সম্ভাবনাগুলোকে বাস্তবে রূপ দিতে সরকার কী করবে, সেসব বিষয় তাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। যেহেতু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে, তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে সেখানে সম্পৃক্ত করা হয়েছে, যেখানে তারা তাদের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সামনে তুলে ধরেছেন।

এই সম্মেলনে ব্র্যান্ডিংয়ের কাজটা করা হয়েছে। যা ভিন্ন আঙ্গিকে পারস্পরিক অংশগ্রহণমূলক এবং সৃজনশীলভাবে করা হয়েছে। তবে সম্মেলন চলার সময় গাজাকে কেন্দ্র করে যে আন্দোলন এবং বিদেশি কিছু প্রতিষ্ঠানে যে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে, সেটি বিনিয়োগকারীদের কাছে ভালো বার্তা দেয়নি। সেই সঙ্গে ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের ঘোষণাও তাদেরকে উদ্বিগ্ন করবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগে যেসব বাধা রয়েছে সেগুলো এখনো দূর করা সম্ভব হয়নি। যা আমাদের বড় ব্যর্থতা। এই সরকার সেগুলো দূর করার অঙ্গীকার করেছে। সেটা করতে পারলে আগামী দিনে স্থানীয় বিনিয়োগ বাড়ার পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগও বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। 

১০ লাখ প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতায় আনা হবে

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৪৫ এএম
আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০২ এএম
১০ লাখ প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতায় আনা হবে
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

ভ্যাটযোগ্য সব প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতায় নিবন্ধন নিতে হবে। যোগ্য কোনো প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন না নিলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইতোমধ্যে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান সব কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে কঠোর বার্তা দিয়ে ভ্যাটযোগ্য প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করতে নির্দেশ দিয়েছেন। ১ মে থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে অথাৎ আগামী আট মাসে নতুন নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ ১০ লাখ প্রতিষ্ঠান ভ্যাটের আওতায় আনতে বলা হয়েছে। 

এনবিআর চেয়ারম্যানের পাঠানো নির্দেশে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের মধ্যে প্রতিটি কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট থেকে ভ্যাটযোগ্য সব প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জরিপের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারিও করতে হবে। বিশেষ করে ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরকে গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করতে হবে। 

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান খবরের কাগজকে বলেন, দেশে ভ্যাটযোগ্য অনেক প্রতিষ্ঠান এখনো এনবিআরে নিবন্ধিত হয়নি। অথচ এসব প্রতিষ্ঠান ঠিকই সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করে থাকে। ভ্যাট আদায় করেও জমা না দেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ক্ষেত্রে এনবিআর কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ভ্যাটযোগ্য শতভাগ প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। ভ্যাট আদায় করেও সঠিক হিসাবে পরিশোধ না করলে চলমান রাজস্ব আইনে মামলা করা হবে। ভ্যাটযোগ্য হয়েও অনলাইনে নিবন্ধন না নিলেও ভ্যাট ফাঁকির দায়ে মামলা করা হবে। 

এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ভ্যাট প্রদানে সক্ষম প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২০ লাখের বেশি। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হিসাব কষে কড়ায় গণ্ডায় ভ্যাট আদায় করে থাকে। অথচ এনবিআরে অনলাইনে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। বাকিরা আদায় করেও ভ্যাট জমা দেয় না। আর যেসব প্রতিষ্ঠান ভ্যাট দেবে তাদের বেশির ভাগই হিসাবমতো ভ্যাট পরিশোধ করে না।

এনবিআরের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জুলাই-আগস্টের ধাক্কা সামলে এনবিআর অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধনে জোর দিয়েছে। এনবিআরের সাময়িক হিসাবে চলতি বছরের গত আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ভ্যাট আদায়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি, (৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ) হয়েছে। আগস্ট মাসেও এ হার নেতিবাচক ছিল, ২৫ শতাংশ। মার্চ পর্যন্ত এনবিআরের সাময়িক হিসাবেও ভ্যাট আদায়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি আছে। মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ অনুযায়ী ভ্যাটের আওতা বাড়ানো এবং নতুন নতুন ভ্যাট দাতাকে ভ্যাট নেটে অন্তর্ভুক্ত করতে এনবিআর চেয়ারম্যান নানা ধরনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জুলাই-আগস্ট-পরবর্তী সময়ে বর্তমান সরকার দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এর জন্য নতুন ভ্যাট নেট বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এনবিআরের নতুন প্রশাসন মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নতুন ভ্যাটদাতা শনাক্তকরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেন। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন ভ্যাট নিবন্ধন বাড়াতে এনবিআর ইতোমধ্যে ভ্যাটযোগ্য বার্ষিক টার্নওভার সীমা ৩ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ভ্যাটমুক্ত ও ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত টার্নওভারের আওতায় রাখা হয়েছে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মাঠপর্যায়ের সব কমিশনারকে নতুন নিবন্ধন প্রদান ও আইনানুগ রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে করদাতাদের সঙ্গে সেবামূলক মনোবৃত্তি বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সব কর্মকর্তাকে নতুন ভ্যাটদাতা বাড়ানো জন্য কাজ করতে বলা হয়েছে। কর্মকর্তাদের কর্মপ্রবণতা, দক্ষতা ও সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে নিবন্ধন সংখ্যা প্রবৃদ্ধিতে সফল কর্মকর্তাকে ‘বিশেষ স্বীকৃতি’ দেওয়া হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভ্যাট নেট বাড়াতে এনবিআরে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে পরবর্তী আট মাসে নতুন 

নিবন্ধন সংখ্যা ৫০ শতাংশে উন্নীত করার প্রত্যাশা এনবিআরের।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি অর্থবছরে গড়ে বড় ১১০ প্রতিষ্ঠান থেকে মোট আদায় করা ভ্যাটের ৪৯ শতাংশই আদায় হয়। বড় ১১০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সিগারেট, ঠিকাদার, নির্মাণপ্রতিষ্ঠান, তেল-গ্যাস কোম্পানি ও মোবাইল ফোন কোম্পানি রয়েছে। প্রতি অর্থবছর লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে তা পূরণে এনবিআরকে চাপ দেওয়া হলে ভ্যাটের আওতায় থাকা প্রতিষ্ঠানে ওপরই চাপ বাড়ানো হয়। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বড় ১১০ প্রতিষ্ঠান থেকে বেশি ভ্যাট আহরণ হয়।

এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভ্যাটের আওতায় বাড়ানোর পাশাপাশি ভ্যাট আদায়েও স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম তিন মাসে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার শুল্ক-কর ফাঁকি উদঘাটন করেছে এনবিআর। এ ছাড়া ছোট-বড় সব ধরনের করদাতার কর ফাঁকির তদন্ত কাজও করছে সংস্থাটি।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান খবরের কাগজকে বলেন, ভ্যাটের আওতা বাড়াতে এনবিআর সক্ষম হলে ভ্যাট আদায় কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। বহুদিন থেকে এনবিআর ভ্যাটের আওতা বাড়ানোর কথা বললেও সফল হতে পারছে না।

এনবিআরের প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ছাত্র-জনতা আন্দোলনের এই মাস (ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফাঁকির তথ্য পেয়েছে ভ্যাট খাতে। এই খাতে সব মিলিয়ে ২৫০ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য মিলেছে। এ জন্য ১৫৭টি ভ্যাট ফাঁকির মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব মামলার বিপরীতে ১০৯ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, সামিট গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপের ভ্যাট ফাঁকির তদন্তে নেমেছে এনবিআর। এসব প্রতিষ্ঠানের অনেকের ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভ্যাট পরিশোধের পর তা যথাযথভাবে সরকারি কোষাগারে জমা না দিলেও ভোক্তারা অভিযোগ জানাতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে জিআরএস (গ্রিভেন্স রিড্রেস সিস্টেম বা অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা) পদ্ধতি চালু করা হয়েছে, যা একজন ভোক্তা মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ থেকে অভিযোগ জানাতে পারবে। এ ছাড়া কোনো ব্যবসায়ী সঠিকভাবে ভ্যাট পরিশোধ করতে এলেও কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর দ্বারা হয়রানির শিকার হলে এনবিআর কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারবেন। 

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, জিআরএস পদ্ধতির মাধ্যমে ভোক্তা বা ব্যবসায়ী যে কেউ অভিযোগ জানাতে পারবেন। আশা করি এতে স্বচ্ছভাবে ভ্যাট আদায় সম্ভব হবে।

শিল্পগ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে বিনিয়োগ কমবে

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩৪ এএম
শিল্পগ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে বিনিয়োগ কমবে
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ঘোষিত গ্যাসের নতুন মূল্যহারকে বৈষম্যমূলক আখ্যায়িত করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। সংগঠনটির মতে, নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন গ্রাহক, প্রতিশ্রুত গ্রাহক ও বিদ্যমান গ্রাহকদের জন্য আলাদা আলাদা গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি জানায়, সরকারের টেকসই ও নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহের যে লক্ষ্য রয়েছে তাতে পূর্ণ সমর্থন জানালেও বিইআরসি ঘোষিত প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্যহারের ফলে নতুন বিনিয়োগ ও শিল্প সম্প্রসারণ চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। বিইআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী বিদ্যমান গ্রাহকদের চেয়ে নতুন গ্রাহক, নতুন গ্যাস সেলস অ্যাগ্রিমেন্ট, অনুমোদিত লোডের চেয়ে অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহারকারী এবং প্রতিশ্রুত গ্রাহকদের বেশি মূল্য পরিশোধ করতে হবে, এমনকি তা একই খাতের কোম্পানি হলেও। এই দ্বৈত-মূল্যনীতি কেবল ন্যায্য প্রতিযোগিতার নীতিকে লঙ্ঘন করে না বরং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি অনিশ্চিত করে।

ভিন্ন ভিন্ন মূল্যের যে মডেলটি বিইআরসি ঘোষণা করেছে তা নজিরবিহীন এবং এর কারণে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। একই খাতে পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে আলাদা আলাদা জ্বালানি খরচের কারণে উৎপাদন খরচে পার্থক্য তৈরি হবে এবং এ ধরনের মূল্য কাঠামো সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরির নীতির পরিপন্থি। সর্বোপরি, বাংলাদেশ সরকার যখন বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে নানাবিধ পদক্ষেপ নিচ্ছে, তখন শুধু নতুন শিল্প কিংবা নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত একটি বিপরীতমুখী আচরণ। এ ধরনের সিদ্ধান্ত সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট করবে, ভবিষ্যৎ বিনিয়োগকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে এবং ইনভেস্টমেন্ট সামিটের মতো ইতিবাচক পদক্ষেপের মাধ্যমে অর্জনকে ধ্বংস করবে।

ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি জাভেদ আখতার বলেন, ‘শিল্পের প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনে একটি স্বচ্ছ ও সামঞ্জস্যপূর্ণ জ্বালানি মূল্য নির্ধারণ কাঠামো আবশ্যক। আমরা জ্বালানি চাহিদা ও তা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বিইআরসিকে নতুন এই গ্যাসের মূল্য কাঠামো পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানাচ্ছি এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের মতো বৃহৎ লক্ষ্যগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে নীতি নির্ধারণে দাবি জানাই।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, সবশেষ ঘোষণা অনুযায়ী যেকোনো নতুন গ্যাস সেলস অ্যাগ্রিমেন্ট নতুন সংযোগ হিসেবে বিবেচিত হবে। অর্থাৎ, দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস ব্যবহার করে আসা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও চলতি চুক্তি শেষ হলে কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করলে অতিরিক্ত গ্যাস ট্যারিফের স্ল্যাবে ফেলতে পারবে। এ ধরনের বিধান শুধু অযৌক্তিক ও অন্যায্যই নয়, বরং নিয়ন্ত্রকদের হাতে স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ তৈরি করে দেয়। যার মাধ্যমে তারা আগের চুক্তি জোরপূর্বক বাতিল করে নতুন চুক্তি সই করতে বাধ্য করার মাধ্যমে অতিরিক্ত গ্যাস ট্যারিফ আরোপ করতে পারে। এ ধরনের বিধান ক্ষমতার অপব্যবহার ও ভবিষ্যতে দুর্নীতির সুযোগ তৈরি করে।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারির বিইআরসি গ্যাস ট্যারিফ পুনরায় নির্ধারণের জন্য একটি গণশুনানির আয়োজন করেছিল, যেখানে উপস্থিত সবাই এর বিরোধিতা করেছিল। সংগঠনটি দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীসহ সব অংশীদারদের সঙ্গে সেই আলোচনা পুনরায় চালু করার দাবি জানিয়েছে এবং এর মাধ্যমে যে সংস্কার আসবে তার মাধ্যমেই কেবল শিল্প খাতে একটি টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে মতামত দিয়েছে। বিইআরসি এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়কে এ ধরনের বৈষম্যমূলক মূল্যহার অতিসত্বর পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এই সংগঠন। সেই সঙ্গে এ ধরনের জরুরি সংস্কারের আগে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার আহ্বান জানানো হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে। সেখানে বলা হয়, বিইআরসি এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে এবং একটি প্রতিযোগিতামূলক ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে সহায়ক জ্বালানি মূল্য ঘোষণা করবে সরকার।

শিগগির চালের দাম সহনীয় হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:২৭ এএম
আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:২৯ এএম
শিগগির চালের দাম সহনীয় হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। ছবি: সংগৃহীত

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, দুই সপ্তাহের মধ্যে বাজারে বোরো ধানের চাল আসবে। আশা করি নতুন ধান উঠলে চালের বাজার আরও সহনীয় হয়ে উঠবে।

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) ভোজ্যতেলের আমদানি ও সরবরাহসহ সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা-সংক্রান্ত এক সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, দুঃখজনকভাবে বেশ কিছু দিন ধরে চালের দাম বেড়েছে। দুই সপ্তাহের মধ্যে বাজারে বোরো ধানের চাল আসবে। চিকন যে চাল বিশেষ করে নাজিরশাইল বা মিনিকেট এটা কিন্তু বোরো মৌসুমের চাল থেকেই আসে।

তিনি বলেন, এ বছর আমাদের আবহাওয়া ও বিদ্যুতের অবস্থা ভালো ছিল। তাছাড়া সারের সরবরাহসহ সামগ্রিক বিষয় ভালো ছিল। আমরা মনে করছি আল্লাহর রহমতে আমাদের ফসল তথা ধানেও একটা বরকত আসবে। আশা করি নতুন ধান উঠলে চালের বাজার আরও সহনীয় হয়ে উঠবে।

তিনি আরও বলেন, কৃষিপণ্য একটা গতিশীল জিনিস। তবে সব পণ্যে আমরা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখে যে ব্যবস্থাপনা করা যায় সেটাই করছি।
ট্রাম্পের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এলে দুই দেশের বাণিজ্য নিয়ে কথা বলার সম্ভাবনা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, একমাত্র এ বিষয়টিই গুরুত্ব পাবে।