
চট্টগ্রামে নির্ধারিত দরে মিলছে না খোলা সয়াবিন তেল। এদিকে খোলা সয়াবিনের বাজার যাচাই করতে নগরীর কাজীর দেউড়ি বাজারে অভিযানে যান চট্টগ্রামের সিটি মেয়র। মেয়রের অভিযান দেখে মুদি দোকানগুলো বোতলজাত সয়াবিনে সয়লাব হয়ে যায়। এটা দেখে রীতিমতো অবাক হন খোদ মেয়র।
এর আগে মঙ্গলবার (৪ মার্চ) দুপুরে ভোজ্যতেল এবং নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে সার্কিট হাউসে ব্যবসায়ীদের উপস্থিতিতে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। সেখানে মিলাররা জানান, তারা প্রতি মণ খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন ৬ হাজার ৩৪৫ টাকা দরে। অর্থাৎ মিল পর্যায়ে লিটারপ্রতি দাম পড়ে ১৫৩ টাকা। এর ওপর ভিত্তি করে খাতুনগঞ্জে লিটারপ্রতি ১৫৫ টাকা এবং খুচরায় ১৬০ টাকা দাম নির্ধারণ করা হয়।
গতকাল বুধবার (৫ মার্চ) চট্টগ্রাম মহানগরীর হালিশহর, উত্তর আগ্রাবাদ, নাসিরাবাদ, ঈদগা ও কাজীর দেউড়ি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা দোকানগুলোতে বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ খুব একটা নেই। তবে কিছু দোকানে পলিব্যাগে সয়াবিন তেল দেখা গেছে। লিটারপ্রতি দাম ১৭৫ টাকা। এদিকে খুচরা পর্যায়ে খোলা সয়াবিন তেলের পর্যাপ্ত সরবরাহ দেখা গেছে। একেক দোকানে একেক দামে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি। সব মিলিয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় লিটারপ্রতি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে খোলা সয়াবিন। দাম নির্ধারণের ব্যাপারে জানেন না- এমন কথাও জানালেন অনেক খুচরা বিক্রেতা।
নগরীর উত্তর আগ্রাবাদ এলাকায় আল মদিনা স্টোরের মালিক মো. নাছিরউদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘গতকাল খোলা সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের কাছে যে তেল আছে তা আগের কেনা। ক্রেতারাও এ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডা করছে। কিন্তু আমরা তো আর লোকসানে তেল বিক্রি করতে পারব না। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (আজ) খাতুনগঞ্জ থেকে খোলা তেলের নতুন চালান আসবে। তখন নির্ধারিত দরে বিক্রি করতে পারব।’
নগরীর কাজীর দেউড়ি ব্যাটারি গলি এলাকার বাসিন্দা মো. আফতাবউদ্দিন বলেন, ‘গতকাল গণমাধ্যমে বলা হয়েছে চট্টগ্রামে খোলা তেলের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টা জানার পর স্বস্তি পেয়েছিলাম। কিন্তু আজ তেল কিনতে গিয়ে দেখি বোতলজাত তেল নেই। তার ওপর খোলা সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি দাম চাচ্ছে ১৮০ টাকা। তাহলে দাম নির্ধারণ করে কী লাভ হলো? আমরা তো কোনো সুফল পাচ্ছি না।’
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের আইনবিষয়ক সম্পাদক ও চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘আজ (বুধবার) সকালে আমরা ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। সেখানে নির্ধারিত দরে অর্থাৎ খোলা সয়াবিন লিটারপ্রতি ১৫৫ টাকা দরে মেনে ব্যবসা করার জন্য বলা হয়েছে। পাইকারিতে সে দরেই বিক্রি হচ্ছে।’
এদিকে খোলা সয়াবিন তেলের নির্ধারিত দাম পুরো চট্টগ্রাম জেলার জন্য প্রযোজ্য বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সীতাকুণ্ড সংবাদদাতা জানিয়েছেন, কয়েক মাস ধরে চলা অতি প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য সয়াবিন তেলের সংকট সেখানে আরও তীব্র হয়েছে। এতদিন খুচরা বাজারে পরিমাণে কম এবং ছোট বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া গেলেও রোজার ঠিক আগে তা উধাও হয়ে গেছে। গ্রামগঞ্জ কিংবা খুচরা বাজারের অধিকাংশ দোকানে একেবারেই বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে বাড়তি- প্রতি লিটার ১৮০ টাকা দরে। একই অবস্থা সাতকানিয়া উপজেলায় দেখা গেছে। সেখানে মিলছে না বোতলজাত সয়াবিন। খোলা সয়াবিন লিটারপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ থেকে ২০০ টাকা দরে।
এদিকে নির্ধারিত দর বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে গতকাল দুপুরে নগরীর কাজীর দেউড়ি বাজার পরিদর্শনে যান সিটি মেয়র। মেয়রের উপস্থিতি দেখেই দোকানগুলো বোতলজাত সয়াবিন তেলে ভরে যায়। এ সময় মেয়র ব্যবসায়ীদের বলেন, ‘এতদিন বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট ছিল। আমরা তাই খোলা তেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছি। এখন বোতলজাত তেল এল কোথা থেকে?’ তখন ব্যবসায়ীরা মেয়রকে জানান, কিছু কিছু কোম্পানি বোতলজাত তেল দিয়ে গেছে। কাজীর দেউড়ি বাজারে খোলা তেল বিক্রি হয় না। এক লিটার ও দুই লিটার ওজনের পর্যাপ্ত বোতলজাত সয়াবিন আছে বলে মেয়রকে জানান ব্যবসায়ীরা। এই সময় মেয়র ব্যবসায়ীদের নির্ধারিত দরে ভোজ্যতেল বিক্রির পরামর্শ দেন।
মেয়রের কাজীর দেউড়ি বাজারে অভিযানের পর পরই ওই এলাকার ব্যাটারি গলিতে যান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। সেখানে বাড়তি দরে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রির প্রমাণ মেলে। এ সময় মূল্যতালিকা না থাকা এবং বাড়তি দরে খোলা সয়াবিন বিক্রি করায় ১২ জন খুচরা ব্যবসায়ীকে ১৪ হাজার টাকা জরিমানা এবং সতর্ক করা হয়।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, জেলা প্রশাসন যে উদ্যোগ মঙ্গলবার (৪ মার্চ) নিয়েছে, তা যদি আরও আগে নিত তাহলে ভোক্তারা এর সুফল পেতেন। এখন খোলা সয়াবিনের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এর বাস্তবায়নে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করতে হবে। পাশাপাশি যারা কারসাজি করবে তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনার কোনো বিকল্প নেই।