
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে বেগুন, শসা, লেবুসহ অন্যান্য পণ্যে ঠাসা থাকলেও কমছে না দাম। রমজানের মাঝামাঝি সময় এলেও ভালো মানের বেগুন, শসার কেজি ১০০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। বড় লেবুর হালিও সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে আছে। মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত। বাড়তি দামে খেজুর বিক্রি হচ্ছে। তবে কমেছে মাল্টা ও তরমুজের দাম। বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ বাড়লেও খোলা তেল মিলছে না।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সেঞ্চুরির ওপরেই বেগুন-শসা-লেবু
আগে কম দামে বিক্রি হলেও রমজান উপলক্ষে বেড়ে গেছে বেগুন, শসা, লেবুর দাম। দ্বাদশ রমজান চলে গেলেও কমেনি এসব পণ্যের দাম। অসাধু ব্যবসায়ীরা মিলে রাজধানীতে বেশি দামে এসব পণ্য বিক্রি করছে।
গতকালও বিভিন্ন বাজারে লম্বা বেগুন ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। তবে সবুজ বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। বড় লেবুর হালি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, ছোট লেবু ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাইব্রিড শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকায় মিললেও দেশি জাতের শসার দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকা ও টমেটো ৩০ থেকে ৫০ টাকা। করলা, পটোল ঢ্যাঁড়শের কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা। তবে আগের মতোই কাঁচা মরিচের কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, আলু ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি, পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫০ টাকা, দেশি আদা ১২০ থেকে ১৬০ টাকা, আমদানি করা আদা ২২০, দেশি রসুন ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, আমদানি করা রসুন ২৪০ টাকা কেজি বিক্রি করতে দেখা গেছে।
বাড়তি দামেই খেজুর বিক্রি
এবার প্রচুর খেজুর আমদানি হলেও কমেনি দাম। কারওয়ান বাজারের বিক্রমপুর ফল বিতানের শরিফুল ইসলামসহ অন্য বাজারের ফল বিক্রেতারা জানান, ‘রমজান শুরুর আগেই সব খেজুরের দাম বেড়েছে। গতকালও মেডজুল খেজুর ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি, জাহিদি ২০০ থেকে ২৪০ টাকা, মরিয়ম ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০, তিউনিসিয়ার খেজুর ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা।
অন্যদিকে ফলের মধ্যে মালটার কেজি ২৭০ থেকে ৩০০ টাকা, আপেল ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে তরমুজের দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
মুরগির দাম বাড়তি
মুরগি বিক্রেতারা বলছেন, রমজানে চাহিদা কমে গেলেও সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে ব্রয়লার ১৮০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও গতকাল বিভিন্ন বাজারে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা এবং ২৭০ টাকার সোনালি ২৮০ থেকে ২৯০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
টাউন হল বাজারের সোনালি ব্রয়লার হাউসের শাকিল মিয়া ও কারওয়ান বাজারের জননী ব্রয়লার হাউসের কবির হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে মুরগির দাম আবার বেড়েছে। ব্রয়লার ১৯০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৯০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।’ তবে আগের মতোই দেশি মুরগি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, খাসির মাংস ১১৫০ থেকে ১২০০ টাকা ডিমের ডজন ১২০ থেকে ১৩০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
কমেনি চালের দাম
রমজানে চালের চাহিদা কমে যাওয়ায় বিক্রিও কমে গেছে। তার পরও দাম কমেনি। আগের মতোই চড়া দামে মিনিকেট ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা, আটাশ ৬৫ টাকা ও মোটা চাল ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
তবে বিভিন্ন পণ্যে উত্তাপ ছড়ালেও একটু স্বস্তির বার্তা দিয়েছে চিনি, ছোলা ও ডাল। গতকাল পর্যন্ত ছোলা, চিনি, খেসারি ও বুটের ডালের দাম বাড়েনি। বিভিন্ন বাজারের খুচরা বিক্রেতারা বলেন, আগের মতোই ছোলা ১০০ থেকে ১১০ টাকা। ছোলার ডাল ১২০ টাকা কেজি, খেসারির ডাল ১১০, চিনি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে দেশি লাল চিনি ১৪০ টাকা কেজি হলেও সহজে মিলছে না। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী রং মিশিয়ে ১৪০ থেকে ১৭০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন।
এখনো ঠিকমতো মেলে না খোলা তেল
গত বছরের ৯ ডিসেম্বর প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৮ টাকা বাড়ানোর পরও চলে লুকোচুরি খেলা। প্রায় দুই মাস থেকে সয়াবিন ‘আছে-নেই’ চলতে থাকার পর কয়েক দিন থেকে সরবরাহ বেড়েছে বোতলজাত তেলের। নির্ধারিত ১৭৫ টাকা লিটারে বিক্রি হচ্ছে। তবে এখনো অধিকাংশ দোকানে খোলা তেল পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো কোনো দোকানে পাওয়া গেলেও নির্ধারিত ১৫৭ টাকা কেজি মেলে না। বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের ইউসুফ জেনারেল স্টোরের মো. ইউসুফ আলীসহ অন্য খুচরা বিক্রেতারা বলেন, ‘মিল থেকে তেল না দেওয়ায় কয়েক মাস হলো সংকট চলছে। তবে সরকার চাপাচাপি করার কারণে পরিস্থিতি আগের চেয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। অধিকাংশ কোম্পানির বোতলজাত তেল পাওয়া যাচ্ছে। তবে খোলা সয়াবিন তেল পাওয়া যায় না। এই বাজারের রব স্টোরের আব্দুর রব বলেন, ‘১৭০ টাকার ওপরে কেনা। তাহলে কীভাবে ১৫৭ টাকা লিটার বিক্রি করি।’