ঢাকা ১১ বৈশাখ ১৪৩২, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২

স্বস্তিদায়ক ও বাস্তবভিত্তিক বাজেট চান সম্পাদকরা

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৫, ১১:৩৬ পিএম
স্বস্তিদায়ক ও বাস্তবভিত্তিক বাজেট চান সম্পাদকরা
ছবি: সংগৃহীত

আগামী অর্থবছরের বাজেটে কর্মসংস্থান বাড়াতে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সম্পাদকরা। তাদের মতে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে রয়েছে। তাদের কষ্ট লাঘবে একটি স্বস্তিদায়ক ও বাস্তবভিত্তিক বাজেট প্রণয়নের দাবি জানান তারা। এ ছাড়া বয়স্ক, বিধবাসহ সামাজিক ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি ও ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেন সম্পাদকরা।

বুধবার (১৯ মার্চ) সচিবালয়ে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপলক্ষে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদকের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব পরামর্শ দেওয়া হয়।

আগামী বাজেট প্রণয়নে অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল সম্পাদকদের সঙ্গে আলোচনা সভার আয়োজন করে মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এতে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় অর্থ সচিব ড. খায়রুজ্জামান মজুমদার, আর্থিক বিভাগ সচিব নাজমা মোবারকসহ বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সম্পাদকরা বলেন, আগামী বাজেটটি এমনভাবে করতে হবে যাতে, জনগণের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত হয়। এ জন্য বাজেট হতে হবে জনবান্ধব ও কর্মসংস্থানমুখী। তারা বলেন, বাজেটে কর ও ভ্যাটের আওতা বৃদ্ধি, বিদেশগামী কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানো, শিক্ষা ও সামাজিক খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া, কর কাঠামো সহজ করা, সামাজিক ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া এলডিসি থেকে উত্তরণে এখন থেকে প্রস্ততি নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন সম্পাদকরা।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আগামী বাজেটটি এমনভাবে সাজানো হবে, যাতে সমতাভিত্তিক ও কল্যাণমুখী হয়। আমাদের সময় সংক্ষিপ্ত, এ সময়ের মধ্যে আমরা বাজেটের কিছুটা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করব। আমরা বাজেটে মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি বিষয়ে নজর দিতে পারব না। কারণ এটা আমাদের ম্যান্ডেট না। তিনি বলেন, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি নজরে আছে, এতে ভাতার পরিমাণ বাড়াব। আমরা গ্র্যাজুয়েশন (উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ) এড়াতে পারব না। আমরা যাব না- এটা কিন্তু খুব ভালো দিক নয়। কারণ, আরও পাঁচ থেকে ছয়টি দেশ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমরা উত্তরণ ঘটালে ওই সব দেশও সাহস পাবে। কর ব্যবস্থা অটোমেশন করতে হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, পৃথিবীর কোনো দেশে করদাতারা ট্যাক্স অফিসে যান না। জুনের প্রথম দিকে বাজেট ঘোষণা করা হবে বলেও জানান অর্থ উপদেষ্টা।

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আগামী বাজেটটা আমরা বাস্তবমুখী করব। প্রাইভেট সেক্টরে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যাতে প্রসার ঘটে সেই চেষ্টা করব। ট্যাক্সের বিষয় এসেছে, সেগুলো আমরা দেখব। তিনি বলেন, বাজেটে মূল্যস্ফীতি, কর্মসংস্থান, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, শিশুদের শিক্ষাসহ নানা বিষয় আসছে। বাজেটের আকার অহেতুক বড় করব না। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকারও খুব একটা বড় হবে না। কিন্তু আমরা কতগুলো বিষয় যেমন মূল্যস্ফীতি কমাব, একই সঙ্গে আয় যাতে বাড়ে এবং বেসরকারি খাতে যাতে কর্মসংস্থানের প্রসার ঘটে সেটার চেষ্টা করব।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমাদের সম্পদ সীমিত। তাই এর সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করতে হবে। সামাজিক খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। বাজেট গতানুগতিক হবে না, আমরা চেষ্টা করব বাস্তবভিত্তিক করার- এ কথা জানিয়ে সালেহউদ্দিন বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা এমন বাজেট দিয়ে যাব, যাতে নির্বাচিত সরকার এসে তা ছুঁড়ে না ফেলতে পারে।

এদিকে নিউজপ্রিন্টের আমদানি শুল্ক কমানোর দাবি জানান সম্পাদকরা। জবাবে অর্থ উপদেষ্টা এটি সক্রিয় বিবেচনার আশ্বাস দেন।

আমাদের কর দেওয়ার অভ্যাস নেই- মন্তব্য করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ডে ৭০ শতাংশ কর দেন। তারা ট্যাক্স দিলে সেবা পাবেন। আর না দিলে পাবেন না। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বাস্তবমুখী প্রকল্প নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। যাতে করে স্থানীয় জনগণের কাজের সুযোগ তৈরি হয়। 

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আগামী বাজেটে একটি বার্তা দেওয়া হবে গৃহস্থালি কাজে নারীদের অংশগ্রহণের ব্যাপারে। নারীরা যে কাজ করেন তার হিসাব আমরা রাখি না। জিডিপিতে নারীদের অবদান কত– তা হিসাব করে দেখানো হবে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে ইংরেজি দৈনিক দ্য ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ বলেন, রাজস্ব আয়ে বিশাল ঘাটতি রয়েছে। তাই এদিকে বেশি নজর দিতে হবে। কয়েক বছর ধরে বেসরকারি বিনিয়োগে খরা চলছে। বাজেটে বিনিয়োগ বাড়াতে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন তিনি। 

করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা থেকে উন্নীত করে পাঁচ লাখ টাকা নির্ধারণ, কর নেট বৃদ্ধি করে একটি বাস্তবমুখী বাজেট করার পরামর্শ দেন যুগান্তর সম্পাদক আব্দুল হাই সিকদার।

খবরের কাগজের সম্পাদক মোস্তফা কামাল দক্ষ কর্মীর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, বিদেশে দক্ষ কর্মী পাঠালে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় আরও বাড়বে। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও স্বস্তিদায়ক অবস্থানে পৌঁছাবে। এবার সরবরাহব্যবস্থা সহজ করা হয়েছে। ফলে রমজানে নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। এ জন্য অর্থ উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন মাসুম বলেন, প্রতিবছর কী পরিমাণ কর্মসংস্থান হয় তার কোনো হিসাব বাজেটে থাকে না। আসন্ন বাজেটে এ বিষয়ে একটি রূপরেখা তৈরির প্রস্তাব করেন তিনি। বাজেট বক্তৃতা সংক্ষিপ্ত করার কথা বলেন। জবাবে অর্থ উপদেষ্টা জানান, আগামী বাজেট বক্তৃতা ৫০ থেকে ৬০ পৃষ্ঠার হবে।

সাধারণ জনগণ যাতে উপকৃত হয় সে জন্য একটি স্বস্তিদায়ক বাজেট প্রণয়নের প্রস্তাব করেন জনকণ্ঠের উপসম্পাদক কাওসার রহমান। তিনি বলেন, আগামী বাজেটের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে প্রাধান্য দেওয়া।

সামাজিক ভাতার পরিমাণ তিন হাজার টাকা বৃদ্ধি এবং আমদানি করা নিউজপ্রিন্টের শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করেন সমকালের সহযোগী সম্পাদক জাকির হোসেন।

আরটিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশিক রহমান রাজস্ব আহরণ বাড়াতে কর ও ভ্যাটের আওতা আরও বাড়ানোর প্রস্তাব করেন। একই সঙ্গে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখে উন্নীত করার কথা বলেন। 

ইনডিপেনডেন্ট টিভির অ্যাসোসিয়েট এডিটর শামীম জাহেদী বলেন, কেবল অপারেটের খাত থেকে সরকার কোনো রাজস্ব পায় না। এখানে এনবিআরের নজর দেওয়া উচিত।

গতানুগতিক বাজেট না দিয়ে সাধারণ মানুষের পক্ষে যায়- এমন বাজেট দেওয়ার প্রস্তাব করেন ডিবিসি টিভির সম্পাদক লোটন একরাম।

কর আহরণ বাড়াতে পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন করার পরামর্শ দেন দ্য ডেইলি স্টারের মিজানুর রহমান। 

উচ্চাভিলাষী নয়, বাস্তবমুখী বাজেট দেওয়ার কথা বলেন এসএটিভির নির্বাহী পরিচালক রাশেদ কাঞ্চন।

টানা পতনে পুঁজিবাজারে অস্থিরতা

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:২৫ এএম
আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৮ এএম
টানা পতনে পুঁজিবাজারে অস্থিরতা

পুঁজিবাজারের পতন থামছেই না। গত ১৩ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া পতন বুধবারও হয়েছে। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিনিয়োগ ফিরে পাওয়া নিয়ে অস্থিরতা ক্রমেই বাড়ছে।

পতনের ধারা থেকে বের হয়ে আসতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বরাবর গত সপ্তাহে চিঠি দিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। তার পরও সুখকর কোনো সংবাদ না আসায় বুধবার বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে বিক্ষোভ করেছেন বিনিয়োগকারীরা।

বিক্ষোভে বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ এবং ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদের পদত্যাগ দাবি করেন।

তবে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ৫ আগস্টের পর পুঁজিবাজারে নতুন কোনো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়নি। ফলে বিনিয়োগকারীরা এখন নতুন কোনো বিনিয়োগে সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। এ ছাড়া মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসগুলোর ঋণাত্মক ইক্যুইটির কারণে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ তলানিতে নেমেছে।

তারা বলছেন, ‘আমাদের বিনিয়োগকারীরা অল্পতেই আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। সবচেয়ে বড় যে সমস্যা তা হচ্ছে, তারা আতঙ্কে নতুন বিনিয়োগ তো বন্ধ করেনই, পাশাপাশি শেয়ারও বিক্রি করে দেন। এতে পুঁজিবাজারের মন্দাবস্থা আরও প্রকট হয়।

গত ৬ থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে পুঁজিবাজারে মোট ১৩ দিন লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র দুই দিন সূচক বেড়েছে। ১১ দিনে পুঁজিবাজারে সূচক পড়েছে ২১৬ পয়েন্ট আর দুই দিনে সূচক বেড়েছে মাত্র ১৯ পয়েন্ট।

এ বিষয়ে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) চেয়ারম্যান আবু আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দেওয়া উচিত। এখানে একসময় নতুন বিনিয়োগ হবে, আবার একসময় মুনাফা উত্তোলনের সুযোগ আসবে। শুধু সূচক কমে যাচ্ছে এই ধারণা থেকে বের হয়ে বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের চিন্তা করা উচিত।’

তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ের যে মন্দা সেটি বিনিয়োগকারীদের আতঙ্ক থেকে তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে আছে- গ্যাসের দাম বাড়ার ঘোষণা, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ট্যারিফ, যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা, ৫ আগস্টের পর দেশের ব্যাংকিং খাতের অচলাবস্থা। তবে এসব কিছুর সমাধানে কিছুটা সময় প্রয়োজন। সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে এলে পুঁজিবাজারেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি শীর্ষস্থায়ীয় মার্চেন্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, পুঁজিবাজারে এখন কীভাবে নতুন বিনিয়োগ সম্ভব। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মার্জিন ঋণ দিয়ে থাকেন বা বিনিয়োগ করে থাকেন। এখন ব্যাংকগুলোর কী অবস্থা। তাদের কাছে ১০ লাখ টাকা চাইলে তারা ১ লাখ দিতে চায়। কিন্তু প্রতিষ্ঠান চালাতে হলে কর্মীদের বেতন দিতে হবে, অফিসের খরচ চালাতে হবে। সেই টাকা কোথা থেকে আসবে।

তিনি বলেন, সেই খরচ চালাতে এখন অনেকেই শেয়ার বিক্রির পথে হাঁটছেন। আর এর মধ্যে এখন থেকে নেগেটিভ ইক্যুইটি বা ঋণাত্মক ঋণের কারণে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে, যা বাজারে নতুন বিনিয়োগকে আরও প্রকট করেছে।

তিনি বলেন, প্রভিশন রাখা ও সমন্বয়, উভয় ক্ষেত্রেই পুঁজিবাজারে শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়াবে এবং বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

পুঁজিবাজারের এমন পতনে বুধবার বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টরস অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন বিনিয়োগকারীরা।

বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, গত কয়েক মাসে টানা দরপতন, শেয়ার ফোর্সড সেল এবং বাজারের অস্থিরতার কারণে তারা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বিক্ষোভকারীরা অভিযোগ করেন, পুঁজিবাজারের এই সংকটের জন্য দায়ী বিএসইসির চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদ এবং আবু আহমেদ। তাদের পদত্যাগ দাবি করেন তারা।

বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী বিনিয়োগকারীরা বলেন, পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতন ঘটছে এবং প্রতিদিন বিনিয়োগকারীরা তাদের শেয়ার ফোর্সড সেলে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাদের বিনিয়োগের ৮০-৯০ শতাংশ হারিয়ে গেছে। এখন তাদের কোনো আস্থা নেই বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি।

বুধবার পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে শৃঙ্খলা এবং বিনিয়োগের পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)। সংস্থাটির সেক্রেটারি মো. দিদারুল গনী স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়েছে।

পুঁজিবাজারের লেনদেন

বুধবার (২৩ এপ্রিল) লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৪ দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২২ পয়েন্টে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক দশমিক ৬৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১২১ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ৭ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৬৭ পয়েন্টে।

এদিন ডিএসইতে মোট ৩৯৫টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ১১৯টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের, কমেছে ২১৪টির এবং অপরিবর্তিত আছে ৬২টির।

এদিন ডিএসইতে মোট ৩০০ কোটি ৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৩৪০ কোটি ২৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। ফলে এক দিনের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৪০ কোটি ২২ লাখ টাকা।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সিএসসিএক্স সূচক আগের দিনের চেয়ে ৩৩ দশমিক ১২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৫৫০ পয়েন্টে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৫৪ দশমিক শূন্য ২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ১১ পয়েন্টে, শরিয়াহ সূচক ৩ দশমিক ৫৭ পয়েন্ট কমে ৯১১ পয়েন্টে এবং সিএসই ৩০ সূচক ৪৩ দশমিক শূন্য ২ পয়েন্ট কমে ১১ হাজার ৭৪৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

বুধবার সিএসইতে মোট ২০৭টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ৭২টির, কমেছে ১১৩টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ২২টির। এদিন মোট লেনদেন হয়েছে ৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা।

বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ: বিশ্বব্যাংক

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩১ পিএম
আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩১ পিএম
বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ: বিশ্বব্যাংক

তিন মাসের ব্যবধানে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে নির্ধারণ করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির মতে, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে। এর আগে, জানুয়ারিতে এই প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ৪ দশমিক ১ শতাংশ।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) প্রকাশিত বিশ্বব্যাংক তাদের সর্বশেষ দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদন ‘সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট: ট্যাক্সিং টাইমস’-এ জানিয়েছে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও দীর্ঘস্থায়ী আর্থিক সংকটের কারণেই এই প্রবৃদ্ধি হ্রাসের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের ১২ মাসের গড় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।

বিশ্বব্যাংক জানায়, গত গ্রীষ্মে সংঘটিত সামাজিক অস্থিরতা ও রাজনৈতিক উত্তেজনার ফলে সৃষ্ট বিঘ্নের প্রতিফলন এটি। এ ছাড়া বাণিজ্যে বিঘ্ন, দীর্ঘস্থায়ী মূল্যস্ফীতি, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা, সুশাসনের সংকট এবং রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ঘিরে অনিশ্চয়তা- সব মিলিয়ে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

এর এক দিন আগেই গত মঙ্গলবার রাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এবং ১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস দেয়। আর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) চলতি মাসের শুরুতে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ও ১০ দশমিক ২ শতাংশ মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস দেয়।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বাড়তে থাকা অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাও দুর্বল হয়ে পড়েছে। অঞ্চলটির অধিকাংশ দেশেরই প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে আনা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ জোরদার করা গেলে অর্থনৈতিক ভিত্তি আরও শক্তিশালী হবে এবং ভবিষ্যতের সংকট মোকাবিলায় সহায়ক হবে। ২০২৫ সালে দক্ষিণ এশিয়ার গড় প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে, যা অক্টোবরের পূর্বাভাসের চেয়ে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ কম। ২০২৬ সালে তা সামান্য বেড়ে ৬ দশমিক ১ শতাংশে দাঁড়াতে পারে।
তবে এই পূর্বাভাস অনেক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার পাশাপাশি অঞ্চলটির সীমিত আর্থিক সক্ষমতাও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও আর্থিক চাপের কারণে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমে ৩ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়াবে। তবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এটি ৪ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত হলেও পূর্বাভাস কমানো হয়েছে।

একই সময়ে ভারতের প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কিছুটা কমে ৬ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে আসবে। আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক সহায়তা হ্রাস পাওয়ায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে, যা জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার থেকেও কম। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এটি আরও কমে ২ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে।

ভুটানে কৃষি খাতে দুর্বলতার কারণে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জলবিদ্যুৎ নির্মাণ খাতে গতি আসায় এটি ৭ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।

মালদ্বীপে নতুন বিমানবন্দর টার্মিনাল উদ্বোধনের ফলে ২০২৫ সালে প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৭ শতাংশ হতে পারে। তবে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে।

নেপালে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বন্যা ও ভূমিধসের কারণে প্রবৃদ্ধি কমে ৪ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়াবে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এটি ৫ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বৈদেশিক চাপ ও মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব কাটিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পাকিস্তানে প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৩ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে।

ঋণ পুনর্গঠনের অগ্রগতির কারণে ২০২৫ সালে শ্রীলঙ্কার প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। তবে ২০২৬ সালে এটি কিছুটা কমে ৩ দশমিক ১ শতাংশ হবে বলে অনুমান করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজার বলেন, ‘গত এক দশকে একাধিক ধাক্কা অঞ্চলটি দুর্বল করে দিয়েছে। এখনই সময় বাণিজ্যের দ্বার উন্মুক্ত করা, কৃষি খাত আধুনিকীকরণ এবং বেসরকারি খাত আরও সক্রিয় করে দ্রুত প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার।’ প্রতিবেদন অনুসারে, টেকসই অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ঘরোয়া রাজস্ব বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। যদিও দক্ষিণ এশিয়ায় করের হার অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় তুলনামূলকভাবে বেশি, কিন্তু প্রকৃত কর আদায় অনেক কম।

কয়েক দফা বাড়ানোর পর কমল স্বর্ণের দাম

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৪৭ পিএম
আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৫১ পিএম
কয়েক দফা বাড়ানোর পর কমল স্বর্ণের দাম
ছবি : খবরের কাগজ

টানা চার দফায় বাড়ানোর পর অবশেষে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণ ৫ হাজার ৩৪২ টাকা কমিয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭২ হাজার ৫৪৬ টাকা।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে বাজুসের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এর আগে মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ভরিতে ৫ হাজার ৩৪২ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৮৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

তারও আগে গত বুধবার (১৬ এপ্রিল) ভরিতে ৩ হাজার ৩৩ টাকা বাড়ানো হয়। এরপর তিন দিনের মাথায় গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) আবারও স্বর্ণের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। ওই সময় ভরিতে ২ হাজার ৬২৪ টাকা বাড়ানো হয়।

তবে এর দুই দিনের মাথায় গত সোমবার (২১ এপ্রিল) এক লাফে ভরিতে ৪ হাজার ৭১৩ টাকা বাড়ানো হয় স্বর্ণের দাম। সবশেষ মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ফের ভরিতে এক লাফে ৫ হাজার ৩৪২ টাকা বাড়ানো হয়।

অমিয়/

হিলি বন্দরের সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা, কমেছে ট্রাক চলাচল ও রাজস্ব আদায়

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪৭ এএম
আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫৫ এএম
হিলি বন্দরের সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা, কমেছে ট্রাক চলাচল ও রাজস্ব আদায়
দিনাজপুরের হিলি বন্দরের প্রধান সড়কগুলোতে দীর্ঘদিন গর্ত ও খানাখন্দ থাকায় চলাচলে ভোগান্তি বাড়ছে। খবরের কাগজ

দিনাজপুরের হিলি বন্দরের প্রধান সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তায় গর্ত ও খানাখন্দ থাকায় চলাচলে ভোগান্তি বাড়ছে। এতে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে প্রভাব পড়ছে। কমেছে ট্রাক চলাচল ও রাজস্ব আদায়। স্থানীয়রা দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন। ২০১৯ সালে ফোর লেন করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও ভূমি অধিগ্রহণ সমস্যায় কাজ বন্ধ আছে। সড়ক ও জনপদ বিভাগ বলছে, কিছু জায়গায় কাজ শুরু হয়েছে। তবে কবে পুরো কাজ শেষ হবে, তা অনিশ্চিত।

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, আগে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাক পণ্য আমদানি হতো। এখন তা নেমে এসেছে ৮০ থেকে ১০০ ট্রাকে। এতে রাজস্ব কমে গেছে প্রায় দ্বিগুণ। প্রতি বছর হিলি বন্দর থেকে সরকার ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব পায়। এত রাজস্ব আদায়ের পরও অবহেলায় পড়ে আছে বন্দরের সড়ক।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জিরো পয়েন্ট থেকে বন্দরের প্রবেশমুখ পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের কিছু অংশে কাজ হলেও বাকি অংশে রয়েছে বড় বড় গর্ত। চারমাথা মোড় থেকে মহিলা কলেজ পর্যন্ত সড়কের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। সেখানে ছড়িয়ে আছে ছোট-বড় গর্ত। সড়ক ও জনপদ বিভাগের কাছে জানা যায়নি কাজ কবে শেষ হবে।

পথচারী এনামুল হক বলেন, ‘মহিলা কলেজ থেকে চারমাথা এবং সিপি থেকে বিরামপুর পর্যন্ত রাস্তা খারাপ। গর্তের কারণে চলাফেরা খুব কষ্টের।’ তিনি আরও বলেন, ‘সাবেক সরকার আমলে এই সড়ক ফোর লেন করার কথা থাকলেও এখনো কিছু হয়নি। দেখার যেন কেউ নেই।’

আরেক পথচারী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘হিলি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর। প্রতিদিন শত শত ট্রাক এখানে আসে। রাস্তায় গর্ত থাকার কারণে ট্রাক উল্টে যায়। পথচারী, শিক্ষার্থী, অ্যাম্বুলেন্স—সবাই ভোগে।’ তিনি বলেন, ‘গর্তের কারণে পরিবহন চালকদের সময়ও বেশি লাগে। দ্রুত রাস্তার কাজ শুরু করা জরুরি।’

ট্রাকচালক মিজানুর রহমান বলেন, ‘সব জায়গায় উন্নয়ন হলেও হিলির রাস্তার অবস্থা ভয়াবহ। পিচঢালা রাস্তার ওপর ইট দিয়ে সলিং করে কাজ চালানো হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বৃষ্টি হলে রাস্তা হয়ে যায় গর্তে ভরা। তখন রাস্তা হয়ে ওঠে মরণফাঁদ। দুর্ঘটনা লেগেই থাকে।’

হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন শিল্পী বলেন, ‘প্রতিদিন শত শত পণ্যবাহী ট্রাক এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। ভারী ট্রাক চলাচলের ফলে সড়ক ভেঙে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘হিলি-দিনাজপুর, হিলি-জয়পুরহাট সড়কও একইভাবে গর্তে ভরা। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সবাই ভোগান্তিতে পড়েছে।’

হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত রায় বলেন, ‘মহিলা কলেজ থেকে চারমাথা এবং সিপি থেকে বিরামপুর রাস্তায় গর্ত হয়েছে। সড়ক ও জনপদ বিভাগ সংস্কার কাজ শুরু করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জিরোপয়েন্ট থেকে পানামা পোর্ট এবং চারমাথা থেকে মহিলা কলেজ পর্যন্ত ২ দশমিক ২ কিলোমিটার রাস্তা ফোর লেন করার কথা। ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩ কোটি টাকা। তবে জমি অধিগ্রহণ সমস্যায় কাজ বন্ধ আছে।’

আরও ৫ লাখ পরিবারকে কম দামে চাল খাওয়াবে সরকার

প্রকাশ: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪৩ এএম
আরও ৫ লাখ পরিবারকে কম দামে চাল খাওয়াবে সরকার
প্রতীকী ছবি

গরিব মানুষকে সাশ্রয়ী দামে চাল খাওয়াতে সারা দেশে একটি কর্মসূচি চালু রয়েছে। ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি’ নামের আওতায় বর্তমানে ৫০ লাখ পরিবারের কাছে কম দামে চাল বিক্রি করা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতা আরও বাড়ানো হচ্ছে। ৫০ লাখ সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়িয়ে ৫৫ লাখে উন্নীত করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বর্তমানে চাল বিক্রি করা হয় বছরে পাঁচ মাস। এটা বাড়িয়ে ছয় মাস করা হচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বাড়ানোর মাধ্যমে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে বর্তমান সরকার। 

বর্তমানে প্রত্যেক পরিবারের কাছে ১৫ টাকা কেজি দরে মাসে ৩০ কেজি চাল বিক্রি করা হয়। চালের পরিমাণ ও দাম অবশ্য একই রাখা হচ্ছে। সূত্র জানায়, দেশের গ্রাম এলাকার গরিব মানুষের কথা মাথায় রেখে ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতায় চালু করা হয় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি। ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলায় এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৫০ লাখ পরিবারকে বছরে ৫ মাস ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার উদ্দেশ্যে কর্মসূচিটি চালু করা হয়, যা বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় খাদ্য অধিদপ্তর।

সরকারের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, প্রতিবছরের মার্চ ও এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর গরিব মানুষের কাজের অভাব থাকে। তাই এ পাঁচ মাস নামমাত্র দামে পরিবারগুলোকে চাল কেনার সুযোগ দেওয়া হয়। এখন তা ছয় মাস করা হচ্ছে।

কর্মসূচিটি বাস্তবায়নে ইউনিয়ন পর্যায়ে বসবাসরত বিধবা, বয়স্ক, পরিবারপ্রধান নারী, নিম্ন আয়ের দুস্থ পরিবারপ্রধানদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১০ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়ার একটি তালিকা করা হয় তখন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে অবশ্য কেজিতে ৫ টাকা বাড়িয়ে চালের দাম করা হয় ১৫ টাকা।

মাঝখানে করোনা আসার পর ২০১৯-২০ অর্থবছরে উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়িয়ে ৬২ লাখ ৫০ হাজার করা হয়েছিল। একই সঙ্গে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছিল তখন পাঁচ মাসের পরিবর্তে সাত মাস। করোনো চলে যাওয়ার পর উপকারভোগী কমিয়ে আবার নিয়ে আসা হয় ৫০ লাখে, আর কার্যক্রম চলে ৫ মাস।

উপকারভোগীদের কাছ থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করা হলেও তা সমতল এলাকার ডিলারদের কাছে ১৩ টাকা ৫০ পয়সা এবং দুর্গম এলাকার ডিলারদের কাছে ১৩ টাকা দরে চাল বিক্রি করে সরকার।

দেশে এখন মোট উপজেলা ৪৯৫টি। এর মধ্যে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি পরিচালিত হয় ৮ বিভাগের ২৫৬টি উপজেলায়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপ অনুযায়ী গরিব-প্রবণ অঞ্চল চিহ্নিত করার মাধ্যমে করা হয় তালিকা।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকতা বলেন, ‘খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি আমরা সম্প্রসারণ করতে চাই। সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে আপাতত উপকারভোগী পরিবার ৫৫ লাখে উন্নীত করছি। আর ৫ মাসের বদলে ৬ মাস দেওয়া হবে চাল। সম্ভব হলে পরে সুবিধা আরও বাড়ানো হবে।

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ৫০ লাখ উপকারভোগীর একটি তথ্যভান্ডার রয়েছে খাদ্য অধিদপ্তরে। সে অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি উপকারভোগী রয়েছেন রংপুর বিভাগে। এ বিভাগের ৮টি জেলায় উপকারভোগী ৮ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৫ জন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৪৪ হাজার ৫১০ জন রংপুর জেলায়, সর্বনিম্ন ৫০ হাজার ৯৫৪ জন পঞ্চগড় জেলায়।

বিভাগ অনুযায়ী সবচেয়ে কম উপকারভোগী সিলেটে, ২ লাখ ৩৮ হাজার ২৩০ জন। এ বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলায় সবচেয়ে বেশি ৮৯ হাজার ৫০৩ জন, সবচেয়ে কম সিলেট জেলায় ২৭ হাজার ৫১০ জন।

ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি উপকারভোগী টাঙ্গাইল জেলায়, ১ লাখ ৪৪ হাজার ৫৬৬ জন এবং কম মুন্সিগঞ্জ জেলায়, ৩৩ হাজার ৬৩৬ জন।

এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলায় উপকারভোগী ৫ লাখ ৯২ হাজার ৮৯৩ জন, যা ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলায় ৫ লাখ ৭৪ হাজার ৭৭৭ জন, খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ৬ লাখ ৩১ হাজার ৫৮৮ জন, বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ৪ লাখ ৮৩ হাজার ২০৫ জন এবং রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় ৭ লাখ ৭২ হাজার ৮৩২ জন।

দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুষ্টির চাহিদা পূরণে ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) নামের একটি কর্মসূচি চালু রয়েছে ২০১৩ সাল থেকে। খাদ্য অধিদপ্তর চাল সরবরাহ করলেও এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ভিডব্লিউবি কর্মসূচিও চলবে। এর আওতায় ১৭০টি উপজেলায় ১০ লাখ ৪০ হাজার পরিবারকে ভিটামিন এ, বি১, বি১২, ফলিক অ্যাসিড, আয়রন ও জিংক-সমৃদ্ধ চাল ৩০ কেজি করে সারা বছর বিনামূল্যে দেওয়া হবে।

চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরে এ কর্মসূচিতে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টন চাল বরাদ্দ রয়েছে। তবে প্রতিবছর কর্মসূচিটির আওতা ১০ শতাংশ করে বাড়ানোর কথা থাকলেও তা কার্যকর হচ্ছে না।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, কর্মসূচি চলবে। তবে আওতা বৃদ্ধি সার্বিক বাস্তবতার ওপর নির্ভর করবে। দুই বছর পরপর নতুন তালিকা তৈরি করা হয়।