
চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে জমে থাকা কনটেইনার জট এরই মধ্যে খুলে গেছে। এরপরও বন্দর কর্তৃপক্ষের চার গুণ মাশুল আদায়ের সিদ্ধান্ত বহাল থাকায় গার্মেন্টস মালিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। ব্যবসায়ী নেতারা জানিয়েছেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করলে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে বড় ধরনের সংকট তৈরি হবে। যদিও কর্তৃপক্ষ এখনো চার গুণ মাশুল আদায়ের সিদ্ধান্ত কার্যকর করেনি।
জানা গেছে, একজন ব্যবসায়ী মাশুল ছাড়া চার দিন বন্দর ইয়ার্ডে কনটেইনার রাখতে পারেন। এরপর ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের কনটেইনারের ক্ষেত্রে ১২ ডলার ও ৪০ ফুট কনটেইনারের ক্ষেত্রে ২৪ ডলার মাশুল দিতে হয়। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, যথাসময়ে পণ্য ডেলিভারি না নিলে চার গুণ হিসাবে, ২০ ফুট কনটেইনারের ক্ষেত্রে ৪৮ ডলার ও ৪০ ফুট কনটেইনারের ক্ষেত্রে ৯৬ ডলার গুনতে হবে। কিন্তু এ সিদ্ধান্তটি বহাল থাকায় দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন পোশাক কারখানা মালিকরা।
তারা বলছেন, ইয়ার্ডে কনটেইনার জট কমলে বন্দর কর্তৃপক্ষ চার গুণ মাশুল আদায়ের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে- এমনটাই আশা করেছিলেন তারা। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ এখনো তাদের সিদ্ধান্তে অনড়। পোশাক কারখানা মালিকদের দাবি, এবারের ঈদে তাদের কারখানা সাত থেকে ১০ দিন বন্ধ থাকবে। লম্বা ছুটির কারণে তারা তৈরি পোশাক রপ্তানির জন্য আগে ভাগে বিভিন্ন বেসরকারি ডিপোর পাশাপাশি বন্দরে রেখে আসে। পাশাপাশি আমদানি করা কাঁচামাল গুদামে না এনে বন্দরের শেডে ফেলে রাখা হয়। কিন্তু অতিরিক্ত মাশুল জারি থাকলে পোশাক কারখানা মালিকদের খরচ বেড়ে যাবে। অথচ কাজের অর্ডার নেওয়ার সময় বায়ারের (বিদেশি ক্রেতা) কাছ থেকে ওই বাড়তি অর্থ নেওয়া হয়নি। এতে করে বাড়তি মাশুল আদায় হলে পোশাক খাত ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমরা এ ব্যাপারে বন্দরকে চিঠি দিয়েছিলাম। আমরা তো বন্দরের ইয়ার্ডকে গুদাম হিসেবে ব্যবহার করছি না। গুটিকয়েক ব্যবসায়ীর জন্য আমাদের কেন এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। পোশাক খাত দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অথচ চার গুণ বাড়তি মাশুল আদায়ের বোঝা বন্দর আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এমনিতেই বর্তমানে আমরা প্রাইস (দাম) চ্যালেঞ্জ, রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এমন সময় বন্দর যদি চার গুণ মাশুল আদায়ের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করে, তা আমাদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কাজেই পোশাক খাতকে আলাদা সুবিধা দিতে হবে। তাই বন্দরকে আমরা তাদের এ সিদ্ধান্ত বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়েছি।’
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে ২০ ফুট ও ৪০ ফুট দৈর্ঘ্যের মোট ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউএস (একক) কনটেইনার রাখার ধারণক্ষমতা রয়েছে। ৩০ থেকে ৩২ হাজার টিইইউএস কনটেইনারকে স্বাভাবিক সংখ্যা হিসেবে বিবেচনা করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। গত ফেব্রুয়ারির শুরুতেও কনটেইনার সংখ্যা স্বাভাবিক পর্যায়ে ছিল। কিন্তু মাঝামাঝি সময়ে এসে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বন্দর ইয়ার্ডে কনটেইনার সংখ্যা দাঁড়ায় ৪১ হাজার ৫৫০ টিইইউএসে। ২০ ফেব্রুয়ারিও কনটেইনার সংখ্যা ছিল ৪০ হাজারের ঘরে।
বন্দর ইয়ার্ডে ভোগ্যপণ্য আটকে রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি এবং দাম বাড়ানোর জন্য ‘সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের’ পরিকল্পনা নস্যাৎ করতে গত ২০ ফেব্রুয়ারি চার গুণ মাশুল আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। সিদ্ধান্তটি ১০ মার্চ থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত ৩ মার্চের পর থেকে বন্দর ইয়ার্ডে কনটেইনারের সংখ্যা কমতে থাকে। বর্তমানে সে সংখ্যা একেবারে কমে দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৯১ টিইইউএসে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘কনটেইনার জাহাজ থেকে নামানোর ২১ দিন পরও ব্যবসায়ীরা তা খালাস করেননি। তাই চার গুণ বেশি মাশুল আদায়ের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। এ কারণে সফলতাও মিলছে। বন্দর ইয়ার্ডে কনটেইনার সংখ্যাও কমতে শুরু করেছে। এ সিদ্ধান্ত না নিলে তো পরিস্থিতির উন্নতি হতো না।’