
স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের আওতায় চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) তথা উন্নয়নকাজে বরাদ্দ নিয়েছিল প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। জুলাই থেকে ফেব্রুযারি পর্যন্ত আট মাসে খরচ করেছে মাত্র ২০ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এই সময়ে ১ শতাংশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি। অন্যদিকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ বরাদ্দ নিয়েছিল ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি। এ সময়ে মাত্র ৬১২ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ খরচ করতে পেরেছে। এ ছাড়া এনবিআর ৭৫৪ কোটি টাকা ও জননিরাপত্তা বিভাগ ১ হাজার ৫৭৯ কোটি, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় ৯৯৫ কোটি, পার্বত্য মন্ত্রণালয় ৮৫৭ কোটি, ভূমি মন্ত্রণালয় ৬৬৬ কোটি ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয় সোয়া কোটি টাকা বরাদ্দ নিয়েও ১০ শতাংশও বাস্তবায়ন করতে পারেনি আলোচ্য অর্থবছরের আট মাসে।
আইএমইডির হালনাগাদ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৫৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ চলতি। অর্থবছরে (২০২৪-২৫) গত আট মাসে খরচ করেছে মাত্র ৬৭ হাজার কোটি টাকা। এডিপি বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই হার ছিল ৩১ দশমিক ১৭ শতাংশ। গত ১০ বছরে এডিপি বাস্তবায়নের হার সবচেয়ে কম হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মোট প্রকল্পের সংখ্যা ১ হাজার ৩৫৩টি।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরে উন্নয়ন বাজেটে মোট বরাদ্দ দেওয়ো হয়েছিল ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। পরে সংশোধন করে নির্ধারণ করা হয় ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আট মাসে খরচ হয়েছে মাত্র ৬৭ হাজার ৫৫৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। ফলে আগামী চার মাসে খরচের টার্গেট ২ লাখ ১০ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে ৩১ দশমিক ১৭ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল। এ ছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩২ দশমিক ১০, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩৫ দশমিক ৮০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ এডিবি বাস্তবায়ন হয়েছিল।
আট মাসে উন্নয়ন ব্যয়ে সব থেকে পিছিয়ে স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই বিভাগে বরাদ্দ ৪ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা, অথচ খরচ হয়েছে মাত্র ২০ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, এডিপি বাস্তবায়নের হার মাত্র ০ দশমিক ৪১ শতাংশ।
এ ছাড়া কিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগ গত আট মাসে তাদের বরাদ্দের মাত্র ১০ শতাংশ খরচ করতে পারেনি। এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ হলো- স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে ৫ দশমিক ৪৮, জননিরাপত্তা বিভাগে ৮ দশমিক ৩৬, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ৯ দশমিক ১৬,
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ৬ দশমিক ৭৭, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ৯ দশমিক ২৮, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে ৩ দশমিক ৭২ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। এ ছাড়া ভূমি মন্ত্রণালয় ৬ দশমিক ৪১ ও জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে ২ দশমিক ১৮ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি প্রায় ৩৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ খরচ করেছে ১৩ হাজার ২২৪ কোটি টাকা বা ৩৪ দশমিক ৮২ শতাংশ। এরপরই বিদ্যুৎ বিভাগ ৩৩ হাজার ৭১৭ কোটি টাকার বিপরীতে খরচ করেছে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা বা ৩৫ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে ৩০ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকার মধ্যে খরচ করেছে ৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা বা ১৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ১৩ হাজার ৩১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও খরচ করেছে ৩ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা বা ২৬ দশমিক ৮০ শতাংশ।
প্রতিবেদনে জানা গেছে, সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে গত ৮ মাসে খরচ করা হয়েছে ৩৮ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা বা ২১ দশমিক ১৩ শতাংশ। বিদেশি ঋণ ও অনুদান ২৭ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা বা ২৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং বিভিন্ন স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা থেকে ৫ হাজার ২২২৪ কোটি টাকা খরচ করেছে। এখাতে বাস্তবায়নের হার হচ্ছে ৩৯ দশমিক ৩১ শতাংশ।