
করব্যবস্থাকে সহজ করে করদাতার দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়ে করজাল সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সারা দেশে নতুনভাবে স্পট অ্যাসেসমেন্ট বা স্থান মূল্যায়ন কার্যক্রম শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
বুধবার (১৯ মার্চ) বিকেলে এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আল আমিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, যেসব করদাতার করযোগ্য আয় এবং রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, অথচ আয়কর রিটার্ন দাখিল করছেন না, তাদের ব্যবসাস্থলে উপস্থিত হয়ে সরাসরি সেবাপ্রদান করে সহজে রিটার্ন গ্রহণের জন্য স্পট অ্যাসেসমেন্ট একটি কার্যকরী পদক্ষেপ। এ কার্যক্রম নতুন করদাতাদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে আয়কর প্রদানে উৎসাহিত করছে।
এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন কর অঞ্চল এ কার্যক্রম শুরু করেছে। যা ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও সাধারণ জনগণের মধ্যে কর সচেতনতা বৃদ্ধি এবং কর দেওয়ার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলেও জানান তিনি।
এ কর্মকর্তা আরও বলেন, বর্তমানে কর অঞ্চলগুলো দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নতুন করে সক্রিয়ভাবে স্পট অ্যাসেসমেন্ট পরিচালনা শুরু করেছে। কর কমিশনাররা নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে এ কার্যক্রম তদারকি করছেন এবং নির্ধারিত স্থানে ক্যাম্প স্থাপন করে ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও সাধারণ করদাতাদের সরাসরি অনলাইনে রিটার্ন পূরণে সহায়তা করে আয়কর রিটার্ন দাখিলের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন।
করদাতারা প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিয়ে আয়কর সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের সুযোগ পাচ্ছেন জানিয়ে এনবিআরের এই জনসংযোগ কর্মকর্তা বলেন, চলমান স্পট অ্যাসেসমেন্ট কার্যক্রম সফল করতে দেশের সব ব্যবসায়ী সংগঠন, চেম্বার অব কমার্স, ব্যবসায়ী নেতা, স্থানীয় প্রশাসন, গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং করদাতাদের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য বিনীত আহ্বান জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, করদাতাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এ কার্যক্রমকে সফল করে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগ অব্যাহত রেখে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অন্য নাগরিক সুবিধাগুলো নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়নে প্রত্যক্ষভাবে ভূমিকা রাখবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বিশ্বাস করে যে, এই কার্যক্রমের মাধ্যমে করদাতাদের মধ্যে কর পরিশোধ প্রবণতা বাড়বে এবং করব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে।
কর ফাঁকি রোধ ও করযোগ্য ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে করের আওতায় আনার নতুন চ্যালেঞ্জে নেমেছে এনবিআর। প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে সরকারি-বেসরকারি অন্তত ১৬টি প্রতিষ্ঠানের সিস্টেমে আন্তসংযোগ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে ২৫ শতাংশ, ২০৩১ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে শতভাগ আন্তসংযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এনবিআরের বিদ্যমান সব সিস্টেমের সঙ্গে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে যুক্ত করার পরিকল্পনায় রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান ডিপিডিসি ও ডেসকো, বিআরটিএ, প্রধান আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের দপ্তর (সিসিআইঅ্যান্ডই), ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি), বিডা, বেপজা, বেজা, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বাংলাদেশ ব্যাংক, আইবাস++, বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংক, সিটি করপোরেশন, ভূমি মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসি ইত্যাদি।
এ বিষয়ে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারি ও বেসরকারি অন্তত ১৬ সংস্থার সিস্টেমে আন্তসংযোগ স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে। উদ্দেশ্য সেবাগ্রহীতাদের প্রযুক্তিনির্ভর সেবা, নির্ভুল তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধ ও রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার হার কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা। এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে করজাল আরও বড় হবে এবং রাজস্ব আদায় বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। বিদ্যমান ১ কোটি টিআইএন খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে দুই থেকে তিনগুণ হয়ে যাবে। বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় দ্রুতই এ কার্যক্রম শুরু হবে।
করের আওতা বাড়ানোর মাধ্যমে কর আদায় বাড়াতে এনবিআর জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। টিআইএনর আওতায় আনা হলেও রিটার্ন জমায় কাঙ্ক্ষিত সাড়া মেলেনি। এমন পরিস্থিতির মধ্যে প্রথমে ৩৮ খাতের সেবা নেওয়ার সময় রিটার্ন জমার প্রমাণ বা পিএসআর বাধ্যতামূলক করা হয়। কিন্তু তাতেও রিটার্ন জমার ক্ষেত্রে বড় ধরনের অগ্রগতি হয়নি। পরে আরও ছয়টি সেবা খাত যুক্ত করে ৪৪ ধরনের সেবা নিতে রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যার ইতিবাচক প্রভাব হিসেবে বর্তমানে টিআইএনধারীর সংখ্যা কোটি ছাড়িয়েছে।
করের আওতা বাড়াতে ও কর ফাঁকি বন্ধ করতে মোটরযান ও নৌযান নিবন্ধন, সব ধরনের ট্রেড লাইসেন্স এবং ঠিকাদার তালিকাভুক্তি কিংবা নবায়নে আয়কর রিটার্ন বাধ্যতামূলক করতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ২০২২ সাল থেকে চিঠি চালাচালি করে আসছে এনবিআর।
বর্তমানে বিআরটিএ থেকে গাড়ি মালিকদের আর জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর থেকে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীদের ডেটা নিয়ে তথ্য যাচাই করার সুযোগ পাচ্ছে এনবিআরের আয়কর বিভাগ।