ঢাকা ১০ বৈশাখ ১৪৩২, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫
English
বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

বরিশালে ২০ হাজার কোটি টাকার তরমুজ বেচাকেনার সম্ভাবনা

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ১১:৪৫ এএম
বরিশালে ২০ হাজার কোটি টাকার তরমুজ বেচাকেনার সম্ভাবনা
বরিশাল নগরীর পোর্টরোড এলাকায় পাইকারি তরমুজের বাজার। খবরের কাগজ

বরিশালে আগাম তরমুজ চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। চাষিরা ভালো দাম পাচ্ছেন। স্থানীয় বাজার ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে এখানকার তরমুজ। ব্যবসায়ীরা জানান, ২০ হাজার কোটি টাকার তরমুজ বেচাকেনার সম্ভাবনা আছে। ফলন ভালো হলেও খুচরা বাজারে দাম বেশি। মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে কৃষকরা তেমন লাভবান হচ্ছেন না। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে চাষ হয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণ কঠোর হলে কৃষক ও ভোক্তা—দুজনই উপকৃত হবেন।

বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ হাজার ২০৭ হেক্টর বেশি জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। ২০২৩-২৪ মৌসুমে বরিশাল বিভাগে ৪৮ হাজার ৪৭ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছিল। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৮ হাজার ৩৪৪ হেক্টর। তবে আবাদ হয়েছে ৫৪ হাজার ৫৫১ হেক্টর। প্রতি হেক্টরে আবাদের হার ১১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে তরমুজ বাজারে এসেছে। চলতি মাস পর্যন্ত তা বাজারে থাকবে। ব্যবসায়ীরা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বরিশালে ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার তরমুজ বেচাকেনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভোলার চরফ্যাশনের তরমুজ চাষি জাকির হোসেন বলেন, ‘এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। মৌসুমের তরমুজ এখনো তুলিনি। আগাম জাতের তরমুজে ভালো দাম পাচ্ছি। বড় ধরনের ঝড়-বন্যা না হলে লাভবান হবো।’

পটুয়াখালীর বাউফলের কৃষক শাহ আলম বলেন, ‘গত বছর ঝড়-বন্যায় তরমুজ গাছ নষ্ট হয়েছিল। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। আকার ও মানভেদে প্রতি ১০০ পিস তরমুজ ১৬-২৪ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। প্রথম ধাপে ৮ হাজার পিস তরমুজ বরিশাল পোর্টরোড বাজারে এনেছি।’

বাকেরগঞ্জের তরমুজ ব্যবসায়ী মিরাজ ঢালি বলেন, ‘৪০০ তরমুজ কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু দাম বেশি। মাঝারি সাইজের প্রতি ১০০ পিস তরমুজ ১৩ হাজার টাকা চাইছে। আমি ১২ হাজার পর্যন্ত বলেছি।’ 

আড়তদার ইমন বলেন, ‘এ বছর আগামজাত তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে প্রচুর তরমুজ উঠলেও দাম বেশি। আমরা চাষিদের সঙ্গে কমিশনে ব্যবসা করি। খুচরা বিক্রেতারা আমাদের কাছ থেকে কিনে কেজি দরে বিক্রি করেন।’

সুজন বলেন, ‘বাজার নিয়ন্ত্রণে আড়তদারদের হাত নেই। খুচরা বিক্রেতারা বেশি লাভের আশায় দাম বাড়ায়। এতে অস্থিরতা তৈরি হয়।’
সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা এস এম মাহবুব আলম বলেন, ‘এখন বাজারে আসা তরমুজ আগাম জাতের। এটি মূল লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে গণনা করা হবে না। তবে ফলন ভালো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, চলতি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে কয়েক হাজার কোটি টাকার তরমুজ বাণিজ্য হবে। তরমুজ এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।’

উদ্যান বিশেষজ্ঞ জি এম এম কবীর খান বলেন, ‘দেশের দুই-তৃতীয়াংশ তরমুজ বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় উৎপাদিত হয়। কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে কৃষকরা লাভবান হতে পারছে না। তাদের সুরক্ষা দিতে হলে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। বাজার ব্যবস্থাপনা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’

সোনার দামে রেকর্ডের পর রেকর্ড, বাড়ল রূপার দামও

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১৪ পিএম
আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১৪ পিএম
সোনার দামে রেকর্ডের পর রেকর্ড, বাড়ল রূপার দামও
ছবি: সংগৃহীত

এক দিনের ব্যবধানে দেশের বাজারে আবার বেড়েছে সোনার দাম। এ দফায় ভরিপ্রতি বেড়েছে ৫ হাজার ৩৪১ টাকা। তাতে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৮৭ টাকা। দেশের বাজারে এটিই এখন স্বর্ণের সর্বোচ্চ দাম।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সোনার দাম বাড়ানোর কথা জানায়। বাজুসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় বাজারে তেজাবি সোনার (পিওর গোল্ড) দাম বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে আবার দাম সমন্বয় করা হয়েছে। নতুন দাম আজ বুধবার থেকে কার্যকর হবে। এর আগে গত সোমবার প্রতি ভরি সোনার দাম ৪ হাজার ৭১৩ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৭২ হাজার ৫৪৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

নতুন দাম অনুযায়ী, সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনায় ৫ হাজার ৩৪১ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৮৭ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় ৫ হাজার ১০৯ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৮০৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ ছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনায় ৪ হাজার ৩৭৪ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম ১ লাখ ৪৫ হাজার ৫৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনায় ৩ হাজার ৭৩২ টাকা বাড়িয়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৫১২ টাকা।

এর আগে গত সোমবার ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনায় ৪ হাজার ৭১৩ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৭২ হাজার ৫৪৬ টাকা, ২১ ক্যারেটের ভরিতে ৪ হাজার ৪৯১ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৬৯৬ টাকা দাম নির্ধারণ করা হয়। এ ছাড়া ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনায় ৩ হাজার ৮৬০ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৪১ হাজার ১৬৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনার ভরিতে ৩ হাজার ২৮৯ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৮০ টাকা। গতকাল এ দামেই সোনা কেনাবেচা হয়েছে।

সোনার দাম বাড়ানোর পাশাপাশি রূপার দামও বাড়ানো হয়েছে। ২২ ক্যারেটের এক ভরি রূপায় ২৮৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৮৪৬ টাকা। ২১ ক্যারেটের রূপার ভরিতে ২৬৯ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২ হাজার ৭১৮ টাকা। এ ছাড়া ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি রূপায় ২২২ টাকা বাড়িয়ে ২ হাজার ৩৩৩ টাকা আর সনাতন পদ্ধতির রূপায় ভরিপ্রতি ১৬৪ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৭৫০ টাকা।

সিপিডির গবেষণা আগামী বাজেটে রপ্তানিতে ভর্তুকি না দেওয়ার পরামর্শ

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৪২ পিএম
আগামী বাজেটে রপ্তানিতে ভর্তুকি না দেওয়ার পরামর্শ

করহার কমিয়ে দিয়েও কর ন্যায্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব। অর্থাৎ কর আদায় বাড়ানো সম্ভব হবে। এ জন্য কর ফাঁকি রোধ করতে হবে, কর প্রশাসনের কাজ সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হবে এবং করের ব্যয়গুলো যৌক্তিকভাবে কমিয়ে আনতে হবে। বর্তমানে বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থার আকাঙ্ক্ষার জায়গা থেকেই আয়বৈষম্য দূর করতে কর ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হবে। আগামী বাজেটেই এর প্রতিফলন দেখতে চায় সংস্থাটি। সেই সঙ্গে আগামী বাজেটে রপ্তানিতে ভর্তুকি তুলে দেওয়ার সুপারিশ করেছে সিপিডি। 

সোমবার (২১ এপ্রিল) রাজধানীর ধানমন্ডিতে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ‘করপোরেট আয়কর সংস্কার ও কর ন্যায্যতার দৃষ্টিকোণ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হয়। মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী তামিম আহমেদ। এরপর সংবাদ ব্রিফিংয়ে গবেষণা প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

সিপিডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর ফাঁকির কারণে ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ২ লাখ ২৬ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ হারিয়েছে করপোরেট কর ফাঁকির কারণে। ২০২৩ সালে আনুমানিক করপোরেট কর ফাঁকির পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ১৩ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১১ সাল থেকে কর ফাঁকির পরিমাণ বেড়েছে, ২০১২ সালে ৯৬ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা এবং ২০১৫ সালে তা ১ লাখ ৩৩ হাজার ৬৭৩ কোটি টাকায় পৌঁছায়।

প্রতিবেদন উপস্থাপন করার সময় তামিম আহমেদ বলেন, বৈশ্বিক অবস্থার মতো বাংলাদেশেও করপোরেট কর কমতির দিকে। পোশাক, আইসিটিসহ অনেক খাত কর সুবিধা পেয়ে থাকে। ২ লাখ ৮৮ হাজার কোম্পানি রেজিস্ট্রার্ড, কিন্তু ট্যাক্স রিটার্ন সাবমিশন করেছে মাত্র ৯ শতাংশ কোম্পানি বা ২৪ হাজার ৩৮১ কোম্পানি। এটা একটা বড় বৈষম্য। যারা কর দিচ্ছে তাদের ওপর করের বোঝা বাড়ছে।

সিপিডি বাংলাদেশের ক্রমাগত কর ফাঁকি সমস্যার পেছনে বেশ কয়েকটি মূল কারণ চিহ্নিত করেছে- যার মধ্যে রয়েছে উচ্চ করের হার, দুর্বল প্রয়োগ, জটিল আইনি কাঠামো এবং করব্যবস্থার মধ্যে ব্যাপক দুর্নীতি। সিপিডি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, কর ন্যায়বিচারের দৃষ্টিকোণ থেকে, উচ্চমাত্রার কর ফাঁকি সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহিত করে এবং যারা আইন অনুসরণ করে তাদের ওপর বোঝা বাড়িয়ে দেয়।

গবেষণা প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘এনবিআর এখন অনেক সংস্কার উদ্যোগ নিচ্ছে। যেখানে রাজস্ব আদায় বাড়ানোই মূল বিষয়। ফলে এখনই এই বিষয়গুলো নিয়ে আরও বেশি প্রশ্ন তুলতে হবে। কর কাঠামোর ডিজিটালাইজেশন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আমরা বলে আসছি। কিন্তু এ বিষয়ে এনবিআরের কর্মকর্তাদের অনীহা দেখা গেছে। শুধু কর্মকর্তারাই নয়, ব্যবসায়ীদের মধ্যেও এ্কই অনীহা রয়েছে। যদিও সামগ্রিক স্বার্থেই এনবিআরের ডিজিটালাইজেশন খুব জরুরি।’ 

সেই সঙ্গে বাংলাদেশের সব আর্থিক লেনদেন একক ডিজিটাল সিস্টেমের মধ্যে নিয়ে আসার প্রস্তাব দিয়েছে সিপিডি। এতে দেশের যেকোনো প্রান্তে লেনদেন হলেও সেটা কর কাঠামোর মধ্যে সহজে যুক্ত করা যাবে। 

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘প্রতিবছর ৭১ হাজার কোটি টাকা এনবিআরকে শুধু কর প্রণোদনার কাজেই ব্যয় করতে হয়। যেটা আসলে সত্যিকার অর্থে কোনো কাজে আসছে না। বিনিয়োগ কখনোই প্রণোদনার নিয়ামক হতে পারে না। একটা বিশেষ সময়ে বিনিয়োগ বাড়াতে প্রণোদনা দেওয়া হলেও সেটা আজীবন বহাল থাকতে পারে না। বাংলাদেশের প্রণোদনার সংস্কৃতি পুরোটাই রাজনৈতিক। এই রাজনৈতিক এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রভাব থেকে প্রণোদনাকে বের করতে হবে এবং খাতভিত্তিক ঢালাও প্রণোদনা থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। তা না হলে আমাদের এলডিসি উত্তরণের পর বড় রকমের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। খাতভিত্তিক বিনিয়োগে প্রণোদনা দিতে গিয়ে আমাদের শিক্ষা এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে প্রয়োজনীয় ব্যয় করতে পারছে না সরকার। তাই শুধু এলডিসি উত্তরণের জন্যই নয়, সামগ্রিকভাবেই এনবিআরের কর কাঠামোর পরিবর্তন দরকার।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আগামী দিনে সরকার যদি উচ্চমাত্রায় রাজস্ব না পায় তাহলে ভর্তুকি, রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ, দক্ষ জনবল তৈরি করা সরকারের পক্ষে সহজ হবে না। প্রত্যক্ষ কর, অপ্রত্যক্ষ কর ও করবহির্ভূত আয় এই তিন উৎস থেকে মূল রাজস্ব আদায় করি। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আসে করপোরেট খাত থেকে। প্রায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত রাজস্ব এখান থেকে আসে। আর ভ্যাট থেকে আসে ৪০ শতাংশ রাজস্ব। এই দুই উৎস থেকে প্রায় ৬০ শতাংশ রাজস্ব প্রতিবছর আসছে। এ জন্য করপোরেট কর ও ভ্যাটের সংস্কার নিয়েও আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে।’

বেনাপোল বন্দরে স্ক্যানিং কার্যক্রম বন্ধ, বাড়ছে চোরাচালান

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪১ এএম
আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪২ এএম
বেনাপোল বন্দরে স্ক্যানিং কার্যক্রম বন্ধ, বাড়ছে চোরাচালান
ছবি: খবরের কাগজ

দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দরে ভারত থেকে আসা পণ্যবোঝাই ট্রাক স্ক্যানিং কার্যক্রম এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ। এতে বাড়ছে চোরাচালান।

বন্দর ব্যবহারকারীদের দাবি, স্ক্যানিং কার্যক্রম বন্ধ থাকায় দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন। কিন্তু সাধারণ ব্যবসায়ীরা পড়ছেন হয়রানিতে। নিরাপদ বাণিজ্যঝুঁকিতে থাকলেও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নীরব।

বাণিজ্যসংশ্লিষ্টরা জানান, যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বেশি বাণিজ্য হয়। কাস্টমস, বন্দর, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্বে রয়েছে। চোরাচালান ঠেকাতে বেনাপোল বন্দরের বাইপাস সড়কে একটি মোবাইল স্ক্যানিং মেশিন ছিল। এটিv পরিচালনায় ছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাসোসিয়েটস।

তবে যান্ত্রিক ত্রুটিতে মেশিনটি প্রায় এক বছর বন্ধ। পরে বেনাপোল বন্দর কার্গো ভেহিকেল টার্মিনালে নতুন স্ক্যানিং মেশিন বসানো হয়। এটি পরীক্ষামূলকভাবে কার্যক্রম শেষে তিন মাস আগেই প্রস্তুত। তারপরও কোনো ট্রাক স্ক্যানিং হচ্ছে না। এতে চোরাচালান ও অনিয়ম বেড়ে যাচ্ছে। নিরাপদ বাণিজ্য হুমকির মুখে।

ভারতের পেট্রাপোল সীমান্ত সূত্র জানায়, এক বছরে ট্রাক থেকে ১৬টি স্বর্ণের চালান আটক করেছে বিএসএফ। এপারের নিরাপত্তা দুর্বল হওয়ায় চোরাই পণ্য সহজেই ওপারে ধরা পড়ছে। স্ক্যানিং মেশিন বন্ধ থাকায় মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আসছে চোরাই পণ্য। এতে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

আমদানিকারক আল মামুন বলেন, ‘স্ক্যানিং মেশিন বন্ধ থাকায় দুর্নীতিবাজরা মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে অতিরিক্ত পণ্য আনছে। এতে অপরাধ বাড়ছে, সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্ক্যানিং মেশিন সচল রাখা জরুরি।’

ট্রাকচালক শাহ আলম বলেন, ‘স্ক্যানিং সচল থাকলে কেউ ট্রাকে চোরাই পণ্য তুলত না। জরুরি ভিত্তিতে স্ক্যানিং চালু করা দরকার।’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাসোসিয়েটসের বেনাপোল অফিসের ব্যবস্থাপক বনি আমিন বলেন, ‘পুরোনো মোবাইল স্ক্যানিং মেশিন সচল না থাকায় ট্রাক স্ক্যানিং সম্ভব হয়নি। নতুন মেশিন প্রস্তুত থাকলেও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ট্রাক পাঠাচ্ছে না।’

বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আলহাজ মহসিন মিলন বলেন, ‘চোরাচালান রোধে স্ক্যানিং মেশিন বসানো হলেও তা এক বছরের বেশি সময় বন্ধ। অথচ কর্তৃপক্ষ নিশ্চুপ। ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার জন্য এটি চালু করা জরুরি।’

বেনাপোল স্থলবন্দরের ডেপুটি ডিরেক্টর মামুন কবীর তরফদার বলেন, ‘বন্দরে স্ক্যানিং পরিচালনায় কাস্টমস দায়িত্বে। মেশিন বন্ধ থাকায় চোরাচালান বাড়ছে। নিরাপদ বাণিজ্যের জন্য স্ক্যানিং দ্রুত চালু হওয়া প্রয়োজন। আশা করি, দ্রুত সমাধান হবে।’

দ্রুত বাড়ছে সরকারের ব্যাংক ঋণ

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩০ এএম
আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪২ এএম
দ্রুত বাড়ছে সরকারের ব্যাংক ঋণ
ছবি: খবরের কাগজ

রাজস্ব আদায় এবং বৈদেশিক ঋণ ছাড় কাঙ্ক্ষিত হারে না হওয়ায় অর্থবছরের শেষ সময়ে সরকারের ব্যাংক ঋণ দ্রুত বাড়ছে। তবে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিবর্তে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকেই বেশি ঋণ নিচ্ছে। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে পরিশোধ করছে সরকার। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ ৯৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। তবে একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ নেয়নি সরকার। উল্টো আগের নেওয়া ঋণের ৪১ হাজার কোটি টাকার বেশি পরিশোধ করেছে। ফলে আলোচ্য সময়ে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নেওয়া নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বিশ্লেষণে এসব তথ্য জানা গেছে।

এর আগে, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ৬৮ হাজার ৯৩০ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আগের নেওয়া ঋণ পরিশোধ করায় সরকারের নিট ব্যাংক ঋণ ছিল ১৩ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা। আর ৯ মাস শেষে সরকারের ব্যাংক ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫২ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ, গত দুই মাসে সরকারের নিট ব্যাংক ঋণ বেড়েছে প্রায় চারগুণ। 

চলতি অর্থবছর বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল সরকার। সম্প্রতি সেটা কমিয়ে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৯৯ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে যে গতিতে সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে তাতে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, আশানুরূপ রাজস্ব আদায় না হওয়া এবং এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত বিদেশি ঋণ না পাওয়ায় ঘাটতি সংস্থানে ব্যাংকেই নজর দিচ্ছে সরকার। ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ বাড়লেও সঞ্চয়পত্র থেকে কাঙ্ক্ষিত হারে ঋণ পাচ্ছে না। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের জুন শেষে বাণিজ্যিক ব্যাংকে সরকারের ঋণের স্থিতি ছিল ৩ লাখ ১৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। গত ৩১ মার্চ শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ১১ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা। ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ দাঁড়িয়েছে ৯৩ হাজার ৩৭১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। 

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ করেনি সরকার। গত জুন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ স্থিতি ছিল ১ লাখ ৫৬ হাজার ৪৮ কোটি। গত ৩১ মার্চ শেষে স্থিতি কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৬৫৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ, এই ৯ মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সরকার উল্টো পরিশোধ করেছে ৪১ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে পরিশোধের পরিমাণ ছিল ২৯ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা। 

এদিকে, গত ৩১ মার্চ শেষে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ২৬ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা। গত বছরের জুনে সরকারের নিট ঋণস্থিতি ছিল ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে সরকারের নিট ব্যাংক ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ৯৮২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৯ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়েছে দেড়গুণের বেশি। 

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, রাজস্ব আদায়ে এত নাজুক পরিস্থিতি এর আগে কখনোই হয়নি। ৯ মাসে রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চলতি অর্থবছর ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) সার্বিকভাবে শুল্ক ও কর আদায় হয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। আর ৯ মাসে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা। সেই হিসাবে আলোচ্য সময়ে ঘাটতির পরিমাণ হয়েছে ৬৫ হাজার কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ের কোনো মাসেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি এনবিআর। ফলে চলতি অর্থবছরের রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। 

এদিকে, ব্যাংক থেকে সরকার বেশি ঋণ নেওয়ায় বিদায়ি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বেশির ভাগ সময়েই বেসরকারি খাতে কমেছে ঋণ প্রবৃদ্ধি। চলতি অর্থবছরেও একই ধারা বহাল রয়েছে। অর্থবছরের প্রথম আট মাস ফেব্রুয়ারি শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ, যা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। সেই সঙ্গে কমছে মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের প্রয়োজনীয় মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি। এতে দেশে বিনিয়োগ স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থনীতিবিদরা সরকারকে ব্যাংকমুখী না হয়ে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলেছেন, সাধারণত বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ বাড়লে বেসরকারি খাত প্রয়োজনীয় ঋণের জোগান থেকে বঞ্চিত হয়। এ কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে যত সম্ভব কম ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দেন তারা। 

এই বিষয়ে জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ব্যাংকিং খাত থেকে সরকার যদি বেশি ঋণ নেয় তাহলে বেসরকারি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে বিনিয়োগ কম হবে, আর বিনিয়োগ কম হলে কর্মসংস্থান কম হবে। ফলে প্রবৃদ্ধির ওপর চাপ সৃষ্টি হবে। এমন অবস্থায় সরকারকে ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ না নিয়ে রাজস্ব আয় বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। 

সরকারের ঋণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূরুল আমীন খবরের কাগজকে বলেন, বর্তমানে বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা কম থাকায় ব্যাংকগুলো সরকারের ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করছেন। এর মাধ্যমেই উচ্চ সুদে সরকারকে ঋণ দিয়ে ব্যাংকগুলো আয় করছে। কারণ, ব্যক্তি ঋণে ঝুঁকি থাকলেও সরকারি ঋণে কোনো ঝুঁকি নেই। কিন্তু এই পরিস্থিতি দীর্ঘদিন চলতে থাকলে দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনীতিতে বড় ধরনের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার দাবি

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২৬ এএম
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার দাবি
খবরের কাগজ

এবার শিল্প খাতে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতা ও শিল্প উদ্যোক্তারা। তারা বলেন, গ্যাসের এমন মূল্যবৃদ্ধি অযৌক্তিক ও অন্যায্য। গ্যাসের দাম বাড়ায় শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের মারাত্মক ক্ষতি হবে। এ জন্য অবিলম্বে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত স্থগিত রেখে মূল্যহার পুনর্নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে লেখা এক চিঠিতে এসব দাবি জানিয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ১১টি ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতা ও দুটি শিল্পগোষ্ঠীর উদ্যোক্তা।

চিঠিতে তারা বলেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি কার্যকর হলে দেশের শিল্প খাতে তথা অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। এই পরিস্থিতিতে দেশের শিল্পমালিকরা শিল্প সম্প্রসারণে সাহসী হবেন না; বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন না। দেশের শিল্পক্ষেত্রে কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হবে।

ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর নেতা ও উদ্যোক্তারা গত রবিবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ চিঠি জমা দেন। চিঠিতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী, শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন, বস্ত্র কল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, মেট্রো চেম্বারের সভাপতি কামরান টি রহমান, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকিন আহমেদ, নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, চামড়া পণ্য ও জুতা প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (এলএফএমইবি) সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, সিরামিকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিসিএমইএর সভাপতি মইনুল ইসলাম, প্লাস্টিক শিল্পের মালিকদের সমিতি বিপিজিএমইএর সভাপতি শামীম আহমেদ, তৈরি পোশাকশিল্পের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও মোড়কপণ্য সরবরাহকারী কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএপিএমইএর সভাপতি মো. শাহরিয়ার ও মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ও উত্তরা মোটরসের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান।

প্রধান উপদেষ্টার কাছে লেখা চিঠিতে ব্যবসায়ীরা বলেন, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের নানা অনিয়মের কারণে সৃষ্ট দায় মেটানোর জন্য বিগত সরকার ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে কোনো পক্ষের সঙ্গে আলোচনা না করে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম একলাফে ১২ টাকা থেকে ৩০ টাকা করে। এটি দেশের উৎপাদন শিল্পের জন্য মারাত্মক আঘাত ছিল। অন্যদিকে বাড়তি দাম দিয়েও শিল্পকারখানায় গ্যাসের চাপ ঠিকভাবে পায়নি। এতে স্বাভাবিক উৎপাদনের চেয়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কম উৎপাদন করতে বাধ্য হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর শিল্পকারখানা নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। সেই পরিস্থিতি মোটামুটি কাটিয়ে ওঠার মাঝেই পুনরায় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির আলোচনা ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের বিপক্ষে জোরালো ও তথ্যভিত্তিক বক্তব্য দেন। তারা প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ২৪ টাকা ৩৯ পয়সা নির্ধারণের দাবি জানান।

ব্যবসায়ীরা বলেন, দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, শিল্পপ্রতিষ্ঠান টিকে থাকা, কর্মসংস্থান ঠিক রাখা প্রভৃতি বিষয় বিবেচনা না নিয়ে শুধু সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ১৩ এপ্রিল গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এটি একেবারেই অযৌক্তিক ও বর্তমান প্রেক্ষাপটে অন্যায্য।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগে সমর্থন জানিয়ে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, দেশি-বিদেশি যেকোনো বিনিয়োগকারীর জন্য জ্বালানি ব্যয় অন্যতম বিবেচ্য বিষয়। এ ক্ষেত্রে বিইআরসি সম্প্রতি গ্যাসের যে মূল্যহার নির্ধারণ করেছে, তা কোনোভাবেই বিনিয়োগের জন্য সহায়ক নয়, বরং এটি বিনিয়োগের জন্য প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা দেবে।

ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, গ্যাসের দাম বাড়লে শিল্প খাতে ও অর্থনীতিতে বিভিন্ন ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়বে। যেমন গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি হলে দেশের শিল্পমালিকরা শিল্প সম্প্রসারণে সাহসী হবেন না। বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন না। ফলে দেশের শিল্পক্ষেত্রে কর্মসংস্থান না বেড়ে কমার পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। বর্তমানে ব্যাংক ঋণের সুদের হার অনেক বেশি। শ্রমিকের মজুরিসহ ব্যবসার অন্যান্য খরচও অনেক বেড়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা শুল্কের ঘোষণা দিয়েছে, যা দেশের রপ্তানিকে নতুন চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলেছে। এসবের মধ্যে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি ব্যবসা-বাণিজ্য ও রপ্তানিতে বাড়তি চাপ তৈরি করবে এবং পরিণতিতে দেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমবে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, বর্তমান মূল্যবৃদ্ধির বিজ্ঞপ্তিতে অতি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্রশিল্পের ক্ষেত্রেও একই হার রাখা হয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে স্বল্প পুঁজির উদ্যোক্তারা ব্যবসায় আসতে সাহস পাবেন না। নতুন উদ্যোক্তা তৈরির পথে এটি প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করবে।

এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব যাচাই করার জন্য প্রধান উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ জানান ব্যবসায়ী নেতারা। তারা প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব সম্পর্কে নিজে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বিইআরসির গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বিজ্ঞপ্তি স্থগিত করে মূল্য হার পুনর্নির্ধারণের নির্দেশনা দেবেন, এটি সব ব্যবসায়ী সমাজের পক্ষ থেকে আপনার নিকট প্রত্যাশা।’