
বরিশালে আগাম তরমুজ চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। চাষিরা ভালো দাম পাচ্ছেন। স্থানীয় বাজার ছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে এখানকার তরমুজ। ব্যবসায়ীরা জানান, ২০ হাজার কোটি টাকার তরমুজ বেচাকেনার সম্ভাবনা আছে। ফলন ভালো হলেও খুচরা বাজারে দাম বেশি। মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে কৃষকরা তেমন লাভবান হচ্ছেন না। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে চাষ হয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণ কঠোর হলে কৃষক ও ভোক্তা—দুজনই উপকৃত হবেন।
বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ হাজার ২০৭ হেক্টর বেশি জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। ২০২৩-২৪ মৌসুমে বরিশাল বিভাগে ৪৮ হাজার ৪৭ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছিল। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৮ হাজার ৩৪৪ হেক্টর। তবে আবাদ হয়েছে ৫৪ হাজার ৫৫১ হেক্টর। প্রতি হেক্টরে আবাদের হার ১১২ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে তরমুজ বাজারে এসেছে। চলতি মাস পর্যন্ত তা বাজারে থাকবে। ব্যবসায়ীরা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বরিশালে ১৫ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার তরমুজ বেচাকেনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ভোলার চরফ্যাশনের তরমুজ চাষি জাকির হোসেন বলেন, ‘এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। মৌসুমের তরমুজ এখনো তুলিনি। আগাম জাতের তরমুজে ভালো দাম পাচ্ছি। বড় ধরনের ঝড়-বন্যা না হলে লাভবান হবো।’
পটুয়াখালীর বাউফলের কৃষক শাহ আলম বলেন, ‘গত বছর ঝড়-বন্যায় তরমুজ গাছ নষ্ট হয়েছিল। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। আকার ও মানভেদে প্রতি ১০০ পিস তরমুজ ১৬-২৪ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। প্রথম ধাপে ৮ হাজার পিস তরমুজ বরিশাল পোর্টরোড বাজারে এনেছি।’
বাকেরগঞ্জের তরমুজ ব্যবসায়ী মিরাজ ঢালি বলেন, ‘৪০০ তরমুজ কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু দাম বেশি। মাঝারি সাইজের প্রতি ১০০ পিস তরমুজ ১৩ হাজার টাকা চাইছে। আমি ১২ হাজার পর্যন্ত বলেছি।’
আড়তদার ইমন বলেন, ‘এ বছর আগামজাত তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে প্রচুর তরমুজ উঠলেও দাম বেশি। আমরা চাষিদের সঙ্গে কমিশনে ব্যবসা করি। খুচরা বিক্রেতারা আমাদের কাছ থেকে কিনে কেজি দরে বিক্রি করেন।’
সুজন বলেন, ‘বাজার নিয়ন্ত্রণে আড়তদারদের হাত নেই। খুচরা বিক্রেতারা বেশি লাভের আশায় দাম বাড়ায়। এতে অস্থিরতা তৈরি হয়।’
সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা এস এম মাহবুব আলম বলেন, ‘এখন বাজারে আসা তরমুজ আগাম জাতের। এটি মূল লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে গণনা করা হবে না। তবে ফলন ভালো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, চলতি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে কয়েক হাজার কোটি টাকার তরমুজ বাণিজ্য হবে। তরমুজ এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।’
উদ্যান বিশেষজ্ঞ জি এম এম কবীর খান বলেন, ‘দেশের দুই-তৃতীয়াংশ তরমুজ বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় উৎপাদিত হয়। কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে কৃষকরা লাভবান হতে পারছে না। তাদের সুরক্ষা দিতে হলে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। বাজার ব্যবস্থাপনা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’