ঢাকা ১১ বৈশাখ ১৪৩২, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২

ঈদের আগেই মাংসের বাজার লাগামহীন

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ১১:১৫ এএম
ঈদের আগেই মাংসের বাজার লাগামহীন

ঈদ আসতে আরও ১০ দিন বাকি রয়েছে। তার পরও তিন দিনের ব্যবধানে মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ১৭৫ টাকার ব্রয়লার মুরগি ২৩০ টাকা, ২৬০ টাকার সোনালি মুরগি ৩২০ টাকায় ঠেকেছে। গরুর মাংসের দামও বেড়েছে। কেজি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। চালের দাম রেকর্ড চড়া। ১৯টি রোজা চলে গেলেও কমেনি খেজুর, বেগুন, লেবুর দাম। বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। তবে এখনো খোলা সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না।

গতকাল বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) রাজধানীর হাতিরপুল, মোহাম্মদপুরের টাউন হলসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

হঠাৎ মুরগির দাম বাড়ল কেন? জানতে চাইলে হাতিরপুল বাজারের ব্রয়লার হাউসের স্বত্বাধিকারী মো. জাকির হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে প্রতিদিনই বাড়ছে দাম। আমরা দাম বাড়াচ্ছি না। খামারিরা ঈদে বেশি দামে বিক্রি করবেন। এ জন্য তারা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে বাজারে দাম বাড়ছে। কয়েক দিন আগে ব্রয়লার ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। বর্তমানে ২২০ টাকায় ঠেকেছে। ২৬০ টাকার সোনালি মুরগি ৩২০ টাকা হয়েছে। দেশি মুরগি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।’ এই বাজারের অন্য মুরগি বিক্রেতারাও একই তথ্য জানান। এ সময় জসিম উদ্দিন নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘যে যা ইচ্ছা তাই করছে। এ জন্য বাজার নিয়ন্ত্রণে নেই। কয়েক দিন কমার পর হুট করে বাড়ছে মুরগির দাম।’

অন্য বাজারেও একই অবস্থা। বিক্রেতারা বলছেন, খামার থেকে বাড়াচ্ছে দাম। টাউন হল বাজারের ব্রয়লার হাউসের মো. বেল্লাল হোসেন, সোনালি চিকেন হাউসের ইব্রাহিম আলীসহ অন্য মুরগি বিক্রেতারা বলেন, ‘ঈদ আসতে এখনো ১০ দিন বাকি। প্রথমে দাম কমই ছিল। কিন্তু তিন দিন ধরে দাম বাড়তেই আছে। খামারিরা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। ব্রয়লার ২১৫ টাকা ও সোনালি ২৯০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’ নিউ মার্কেট, কারওয়ান বাজারেও বেড়েছে মুরগির দাম। মুরগির মতো গরুর মাংসের দামও বাড়তি বলে খুচরা বিক্রেতারা জানান। আগে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও গতকাল বিভিন্ন বাজারে ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। 

মাংসে উত্তাপ ছড়ালেও ডিমে মিলেছে স্বস্তির বার্তা। গতকালও বিভিন্ন বাজারে ১২০ থেকে ১২৫ টাকা ডজন বিক্রি করতে দেখা গেছে। আগের মতোই রুই, কাতলা আকারভেদে ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি, পাবদা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি, তেলাপিয়া ও পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৫০, ট্যাংরা ৫০০ থেকে ১ হাজার, চিংড়ি ৭০০ থেকে ১ হাজার, ইলিশ ১ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। 

মিনিকেট চালের দামও লাগামহীন

রমজানে চালের বিক্রি অনেক কমে গেছে। আমদানিও বেড়েছে। তার পরও মিনিকেট চালের দাম ৮৬ থেকে ৮৮ টাকা, সবচেয়ে ভালো মোজাম্মেল মিনিকেট ৯৬ টাকায় ঠেকেছে। তবে আটাশ ও মোটা চালের দাম বাড়েনি। খুচরা চাল বিক্রেতারা বলছেন, বোরো ধান না উঠলে কমবে না চালের দাম। টাউন হল বাজারের আনোয়ার রাইস এজেন্সির আব্দুল মান্নান, হাতিরপুল বাজারের মাসুম স্টোরের মো. মাসুম মিয়াসহ অন্য বিক্রেতারা বলেন, ‘মিনিকেট চালের দাম থামানো যাচ্ছে না। রশিদ ৭৮ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করা হলেও ডায়মন্ড, হরিণ, মনজুর, এরফান ৮৬ থেকে ৯০ টাকায় ঠেকেছে।’ 

কারওয়ান বাজারের বরিশাল রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী সোহেল রানা ও আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘রমজানে চাল বিক্রি কমে গেছে। তার পরও মিল থেকে বাড়ছে দাম। আমাদেরও বাড়তি দামে মিনিকেট ৮২ থেকে ৮৬ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে আগের মতোই আটাশ চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা এবং মোটা চাল ৫২ থেকে ৫৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলেন, আগের মতোই ছোলা ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজি, ছোলার ডাল ১২০ টাকা, খেসারির ডাল ১১০, চিনি ১২০, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা লিটার ও পাম অয়েল ১৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

এখনো চড়া দামে বেগুন, লেবু বিক্রি

রমজানের শুরুতে বেগুন, শসা, লেবুর দাম সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে যায়। গতকাল ১৯তম রমজানেও এসব পণ্যের দাম তেমন কমেনি। লম্বা বেগুনের কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, বড় লেবুর হালি ১০০ থেকে ১২০ টাকার কমে মেলে না। টাউন হল বাজারের সবজি বিক্রেতা রমজান আলীসহ অন্যরা বলেন, ‘লম্বা বেগুন ১০০ থেকে ১২০ টাকা, সবুজ বেগুন ৬০ থেকে ৭০, ছোট লেবুর হালি ৪০ থেকে ৭০, তবে বড় লেবু ৮০ থেকে ১২০ টাকা। হাইব্রিড শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও দেশি জাতের শসা ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা সবজি বিক্রেতারা জানান, আগের মতোই বিভিন্ন বাজারে কাঁচা মরিচের কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, আলু ২০ থেকে ২৫, পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫০, দেশি আদা ১৩০, আমদানি করা আদা ২২০, দেশি রসুন ১০০ থেকে ১২০, আমদানি করা রসুন ২৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে বিভিন্ন পাড়ায় এসব সবজি কেজিতে ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। 

বাড়তি দামেই খেজুর বিক্রি

রমজান মাস উপলক্ষে এবার প্রচুর আমদানি হলেও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে খেজুর। ফল বিক্রেতারা বলেন, রমজান শুরুর আগেই সব খেজুরের দাম বেড়েছে। 

গতকালও মেডজুল খেজুর ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি, মরিয়ম ৭০০ থেকে ১ হাজার ২০০, বরই খেজুর ৪৫০ টাকা, জাহিদি ২০০ থেকে ২৪০ টাকা। মালটার কেজি ৩০০ টাকা, আপেল ৩২০ থেকে ৩৫০, আঙুর ৩৫০ থেকে ৪৫০, তরমুজ ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

যশোরে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও শঙ্কায় কৃষক

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৯ এএম
যশোরে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হলেও শঙ্কায় কৃষক
যশোরে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে দুলছে বোরো ধানের শীষ। ছবিটি সদর উপজেলার এড়েন্দা গ্রামের মাঠ থেকে তোলা। খবরের কাগজ

যশোরে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। মাঠজুড়ে দুলছে সোনালি শীষ। ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। তবে কৃষকের চিন্তা আবহাওয়া নিয়ে। ঝড়বৃষ্টি হলে নষ্ট হবে ধান। বাড়ছে শ্রমিকসংকটও। চলতি বছর আবাদ হয়েছে দেড় লাখ হেক্টরের বেশি জমিতে। উৎপাদন হবে ৭ লাখ ২৮ হাজার টন চাল। বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষক লাভবান হবেন।

যশোর কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে এ জেলায় গত বছরের তুলনায় ৩ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এ বছর ১ লাখ ৬০ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে উচ্চফলনশীল জাতের আবাদ হয়েছে। আর বাদবাকি আবাদ হয়েছে হাইব্রিড জাতের ধান। এসব জমিতে যে ধান উৎপাদন হবে তা থেকে ৭ লাখ ২৮ হাজার টন চাল উৎপাদন হবে। যার বাজারমূল্যে ধরা হয়েছে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। আর এ ধান উৎপাদনের জন্য জেলায় বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করা হয় ৭ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে। গত মৌসুমে যশোরে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ১ লাখ ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টরেরও বেশি জমিতে উচ্চফলনশীল জাতের আবাদ হয়।

কৃষি বিভাগ সূত্রে আরও জানা গেছে, যশোর জেলায় মাত্র ৫ ভাগ ধান কাটার কাজ শেষ হয়েছে। চলতি সপ্তাহে আরও ৪০ ভাগ ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শেষ হবে। আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে বোরো ধান কাটা ও মাড়াই শেষ হবে।

এদিকে দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে মাঠের সোনালি ধান ঘরে আসতে শুরু হওয়ায় কিষান-কিষানির চোখেমুখে হাসির ঝিলিক বইছে। আর ফসলের ম ম গন্ধে ভরে উঠছে সারা বাড়ি। বৈশাখে যেকোনো সময় ঝড়বৃষ্টি হতে পারে, তাই ধান তুলতে ব্যস্ত সবাই।

যশোর সদর উপজেলার কৃষক রেজাউল বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে চিকন জাতের (ব্রি-২৮) ধান আবাদ করেছিলাম। ফলন বেশ ভালো হয়েছে। তিন দিন আগে ধান কাটা হয়েছে। মাড়াই কাজ শেষ হয়েছে। প্রতি কাঠায় দেড় মণ (৬০ কেজি) করে ধান পেয়েছি। 

বাঘারপাড়া উপজেলার কৃষক আব্দুর রহমান জানান, আবহাওয়া ভালো থাকায় বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। তিনি প্রায় পাঁচ বিঘা জমিতে এ ধান চাষ করেছেন। ধান কাটা শুরু করলেও এখনো কাটা শেষ হয়নি। এ সপ্তাহেই সব ধান ঘরে চলে আসবে বলে জানান।  তিনি বলেন, ‘বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের প্রস্তুতি নিয়েছেন যশোরের চাষিরা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ও বাজারে ভালো দাম পেলে লাভবান হবেন চাষিরা।’ 

যশোর সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক ফসিয়ার রহমান। এ বছর এক বিঘার বেশি জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছিলেন তিনি। তাতে খরচ হয় প্রায় ৬৫ হাজার টাকা। তিনি বলেন, মাঠে যে ধান হয়েছে তা বর্তমান দাম অনুযায়ী ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হবে। আর দাম কম হলে লোকসান হবে। 
ঝিকরগাছা উপজেলার ফুলবাড়ি গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম সোহেল জানান, বীজ, সেচ, ইউরিয়া সার, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম, দস্তা, জৈব সার, বালাইনাশক, পারিবারিক শ্রম, শ্রমিক ও জমির ভাড়া হিসাব করলে ধান চাষ করা লোকসান। কোনো উপায় নেই, তাই বাধ্য হয়ে ধান চাষ করতে হয়।  

ঝিকরাগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, ‘বিনামূল্যে বীজ, সার ও কৃষক প্রশিক্ষণ, জলবায়ুর ওপর প্রশিক্ষণ, ধানের বাজারমূল্য বৃদ্ধি, ন্যায্যমূল্য, সারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা, আধুনিক প্রযুক্তির প্রসার ও কৃষি বিভাগের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবার বোরো উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ধানের বাম্পার ফলন হবে।’

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘যশোর জেলায় এবার বোরোর বীজতলা তৈরির সময়ই চাষিদের উন্নত জাতের ধানের বীজতলা তৈরির জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। এতে ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা থাকে। নরমাল বীজ বপন করলে ধানের চারা অসুস্থ হয়ে যায়। ফলে ফলন কম হয়। কৃষকরা উন্নতমানের বীজ ব্যবহার করায় ধানের ফলন এবার ভালো হচ্ছে।’

বাংলাদেশে জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর  আহ্বান

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১৫ এএম
বাংলাদেশে জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর  আহ্বান
ছবি: সংগৃহীত

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এবারের সফরে কাতারের জ্বালানিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সাদ বিন শেরিদা আল কাবির সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশে জ্বালানি খাতে আরও বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। 

এ ছাড়া সে দেশের সরকারি নীতিনির্ধারক এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানানো হয়েছে। বিনিয়োগ বাড়াতে অন্তর্বর্তী সরকার কী কী সুবিধা বাড়িয়েছে, তাও জানানো হয়েছে। কাতার থেকে বাংলাদেশে জ্বালানিসহ বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দেওয়ার বিষয় নিয়েও আলোচনা করেছেন। 

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ও কাতারের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী শেখ ফয়সাল বিন আল থানির সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকেও বিনিয়োগ বাড়াতে আলোচনা হয়েছে। 

এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার এবারের সফরে বাংলাদেশ কাতারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ কাতারের বিনিয়োগ বাড়ানো নিয়ে কথা হয়েছে। এসব বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। 
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত সোমবার চার দিনের সফরে কাতার সফরে গেছেন। সফরকালে আর্থনা (আমাদের পৃথিবী) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেওয়াসহ কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন ড. ইউনূস। এরই মধ্যে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন বৈঠকে দুই দেশের বাণিজ্য বাড়াতে আলোচনা হয়েছে।  

এসব বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে কাতারে জনশক্তি রপ্তানি, কাতার থেকে এলএনজি আমদানি, ব্যবস্যা-বাণিজ্য বৃদ্ধি, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ইত্যাদি বিষয় আলোচনা হয়েছে। 

এর আগে গত বছর ২৩ এপ্রিল ঢাকা সফরে এসেছিলেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি। সে সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কাতারের আমির বৈঠক করেছিলেন। বৈঠকের পর বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে ১০টি চুক্তি ও সমঝোতা সই হয়। এবার প্রধান উপদেষ্টার কাতার সফরে সেসব চুক্তি ও সমঝোতার অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা আছে। 

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই)  সভাপতি ও ইফাদ গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান তাসকীন আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানোর অনেক সম্ভাবনা আছে। বাংলাদেশে কাতারের বিনিয়োগ আনা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি উদ্যাগে কাজ করতে হবে। আমাদের বোঝাতে হবে যে, বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত স্থান। 

এবারের সফরে এরই মধ্যে অনুষ্ঠিত বাণিজ্যবিষয়ক চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ ও কাতারের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের বাণিজ্য, বিনিয়োগ, প্রযুক্তি হস্তান্তর, সেবা এবং অন্যান্য শিল্প খাতে বাণিজ্য কার্যক্রম আরও জোরদার করা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।  

বাণিজ্য বাড়াতে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং পরিষেবা-সম্পর্কিত তথ্য বিনিময় বাড়াতে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি দুই দেশের ব্যবসায়িক তথ্যের আদান-প্রদান, বাণিজ্য বাড়াতে সংশ্লিষ্ট সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দেওয়া, প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করার বিষয়ও বৈঠকে স্থান পেয়েছে। বৈঠকে বাণিজ্য উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে দুই দেশের সংশ্লিষ্টদের সাব-কমিটি ও টাস্কফোর্স গঠনের বিষয় নিয়েও কথা হয়েছে।  

প্রধান  উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্র জানায়, ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার সফরসঙ্গীদের সঙ্গে কাতার সরকারের সংশ্লিষ্টদের বিভিন্ন বৈঠকে সম্প্রতি বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত বিনিয়োগ সম্মেলন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে শিল্প-বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে আগ্রহ দেখিয়েছেন, তাও গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে।  

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. আবুল বাশার মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, সরকার থেকে আগে নির্ধারণ করতে হবে যে কোন খাতে কাতার থেকে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের সুফল বেশি পাওয়া যাবে। কাতার থেকে জ্বালানি ও আইটি খাতে বিনিয়োগ আনা যেতে পারে। এ জন্য সরকারকে ওই দেশের সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। 

শুধু বেসরকারি বিনিয়োগ নয়, প্রধান উদেষ্টার এবারের সফরে বাংলাদেশে কাতার সরকার ও ওই দেশের বেসরকারি খাতের যৌথ বিনিয়োগেরও আহ্বান জানানো হয়েছে।  

বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের পাশাপাশি ব্যবসায়িক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে জয়েন্ট বিজনেস কাউন্সিলের (জেবিসি) নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে দুই দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে বাণিজ্য জোরদার করতে বিভিন্ন চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। 

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিগত সরকারের সময়কার অনেক সমস্যা এখন আর নেই। বর্তমান সরকার চেষ্টা করছে বিনিয়োগের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দিতে। এসব সুবিধা কাতারের ব্যবসায়ীদের জানাতে হবে। তা হলে তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে বলে আমি মনে করি।’ 

প্রধান উপদেষ্টার কাতার সফর উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় প্রণীত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবারের সফর দুই দেশের জন্য নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন হবে। কাতারের ব্যবসায়ীরা যেমন উপকৃত হবেন, তেমনি বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের পক্ষেও কাতারের রপ্তানি বাজার ধরা  সহজ হবে। কাতার থেকে জ্বালানিসহ শিল্প খাতের কাঁচামাল আমদানি বাড়ানো হলে দুই দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো হবে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে উভয় দেশের ব্যবসায়ী সংগঠনের মধ্যে বৈঠক ও যোগাযোগ বাড়াতে হবে। 

প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, বাংলাদেশে কাতারের বিনিয়োগ আকর্ষণের বিপুল সম্ভাবনা আছে। বাংলাদেশ ও কাতারের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য মূলত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), সার বা পেট্রোকেমিক্যাল পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। এই পণ্যগুলো বাংলাদেশ কাতার থেকে আমদানি করে থাকে। প্রতি অর্থবছরে গড়ে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং আমদানির পরিমাণ এর কয়ক গুণ বেশি, গড়ে ২ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ডলার। কাতারের জাতীয় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি নির্ভর করে মূলত দেশের বাইরে তাদের যে বিনিয়োগ রয়েছে তার দক্ষতার ওপর। কীভাবে কাতারের বিনিয়োগ বাংলাদেশে আনা যায়, সেদিকে অধিক গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজন আছে। 

সূত্র জানায়, এবারের সফরে বিভিন্ন চুক্তি ও  সমঝোতা স্মারকে কর পরিহার, বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা এবং যৌথ ব্যবসা বাড়ানোয় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এসব চুক্তি বাংলাদেশের সঙ্গে কাতারের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়ক হবে বলেও খবরের কাগজকে জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কাতার থেকে জ্বালানি, সার বা পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য আমদানি বাড়াতে হবে। আমদানির তুলনায় রপ্তানির পরিমাণ কম। কাতারের নির্মাণ খাতসহ আরও বেশ কিছু সেবা খাতে বাণিজ্য বাড়ানোর সুযোগ আছে। দুই দেশের বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে, যার মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ করা যেতে পারে। কাতারে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ কম থাকলেও সে দেশের বিনিয়োগ নিয়ে আসার সম্ভাবনা অনেক। সেখানকার উদ্যোক্তারা বিদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। বাংলাদেশের জ্বালানি ও ব্যাংকিং খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা বেশি। বাংলাদেশের বিশেষায়িত শিল্পাঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগ আসতে পারে। কাতার যদি বাংলাদেশি পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য সে দেশে ব্যবসা করার প্রক্রিয়া সহজ করে, তবে কাতারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা ওভারসিজ অফিস স্থাপনের মাধ্যমে সেখানে সহজে পোশাক রপ্তানি বাড়তে পারে। কাতারে একই রকম সুবিধা পেলে সেখানে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বাড়বে।

আমদানি-রপ্তানি আরও সহজের আহ্বান

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৫৫ এএম
আমদানি-রপ্তানি আরও সহজের আহ্বান
ছবি: সংগৃহীত

ফল, সবজি, মসলাসহ বেশ কিছু কৃষিপণ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণের সম্ভাবনা দেখছেন বাংলাদেশ ও ভুটানের ব্যবসায়ীরা। এ ক্ষেত্রে উভয় দেশের মধ্যে অংশীদারত্ব এবং পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক আরও এগিয়ে নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তারা। 

বুধবার (২৩ এপ্রিল) মতিঝিল কার্যালয়ে দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এবং ভুটানের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের মধ্যে সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের অনাবিষ্কৃত খাতগুলো নিয়ে আলোচনা করেন উভয় দেশের ব্যবসায়ী নেতারা।

ভুটানের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলে নেতৃত্ব দেন রেজিওনাল অ্যাগ্রিকালচারাল মার্কেটিং অ্যান্ড কো-অপারেটিভ অফিসের রিজিয়নাল ডিরেক্টর মি. দাওয়া ডাকপা। এ সময় এফবিসিসিআইয়ের ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স উইংয়ের প্রধান মো. জাফর ইকবাল এনডিসি এবং ঢাকায় নিযুক্ত ভুটান দূতাবাসের মিনিস্টার কাউন্সেলর (বাণিজ্য) মি. দাওয়া শেরিং উপস্থিত ছিলেন। 

সভায় পারস্পরিক বাজার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে বাংলাদেশ এবং ভুটানের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া আরও সহজ করার আহ্বান জানান দুই দেশের ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি সরবরাহব্যবস্থা ও অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বন্দর সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক হাজি মো. এনায়েতউল্লাহ, ফেরদৌসী বেগম, বাংলাদেশ অ্যাগ্রো ফিড ইনগ্রিডিয়েন্টস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ এম আমিরুল ইসলাম ভূঁইয়া, এফবিসিসিআইয়ের সাধারণ পরিষদের সদস্য মো. জাকির হোসেন, শেখ আল মামুন এবং অন্যরা।

বাড়ির মালিকও টিসিবির কার্ড পেয়েছিলেন: বাণিজ্য উপদেষ্টা

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৫১ এএম
বাড়ির মালিকও টিসিবির কার্ড পেয়েছিলেন: বাণিজ্য উপদেষ্টা
বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সরকারি বিপণনকারী সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ফ্যামিলি কার্ড নিয়ে নানা অনিয়ম হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন। তিনি বলেছেন, পাঁচতলা বাড়ি আছে- এমন লোকও টিসিবির কার্ড পেয়েছিলেন। এমনকি প্রশাসনে কাজ করা একজনের বাড়িতেও ছিল তিনটি কার্ড। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে এমন তথ্য পেয়েছেন বলে জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) ঢাকার আর্মি গলফ ক্লাবের গলফ গার্ডেনে ‘টিসিবির সঙ্গে বাণিজ্য’ শীর্ষক এক সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য উপদেষ্টা এ তথ্য জানান। টিসিবি আয়োজিত ‘কোটি মানুষের পাশে’ শীর্ষক এই সংলাপে আলাদা তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির দুই পরিচালক এস এম শাহীন পারভেজ ও আবেদ আলী এবং যুগ্ম পরিচালক আল আমিন হাওলাদার। প্রবন্ধ উপস্থাপনের পর মুক্ত আলোচনায় ছাত্র প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীরা অংশ নেন। অনুষ্ঠানে টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ফয়সল আজাদ এতে স্বাগত বক্তব্য ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী সমাপনী বক্তব্য দেন।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আগস্ট বিপ্লবের আগে দুর্বৃত্তদের কাছ থেকে রেহাই পায়নি টিসিবি। এক কোটি পরিবারের জন্য নির্ধারিত টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড করার ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছিল। অনিয়ম চিহ্নিত করে প্রায় ৪০ লাখ কার্ডধারী কমানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সরকারী ব্যবস্থাপনা বা প্রশাসনের ওপর আস্থা কখনোই আসবে না, যখন মানুষ দেখবে যে সবকিছুতে আছে দুর্বৃত্তায়ন। সে জন্য আমরা টিসিবিকে দুর্বৃত্তায়ন থেকে বের করে সঠিক পর্যায়ে আনতে চাই।’

বছরে ১২ থেকে ১৪ হাজার কোটি টাকার যে কেনাকাটা করে টিসিবি তাতে ৬ থেকে ৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয়- এ তথ্য উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘একটা দুর্বৃত্তায়িত ব্যবস্থা অনেক দুর্বৃত্ত তৈরি করেছে। এ ব্যবস্থা থেকে আমরা সরে আসতে চাই। এখন থেকে নিম্ন আয়ের উপযুক্ত পরিবারগুলোই কার্ড পাবে।’

ভর্তুকি মূল্যে ডাল, তেল, চিনি ইত্যাদির পাশাপাশি কার্ডধারী পরিবারকে ভবিষ্যতে সাবানও দেওয়া হবে বলে জানান টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ফয়সল আজাদ। টিসিবির কার্যক্রমে পরিবর্তন আনার আকাঙ্ক্ষা উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আমার কর্মকালে টিসিবিকে একটি যৌক্তিক পর্যায়ে আনতে চাই। এক কোটি পরিবারের জন্য সরকার ১২ বা ১৪ হাজার কোটি টাকার পণ্য কেনে। আমরা এটির সর্বোত্তম ব্যবহার দেখতে চাই।

এর জন্য যোগ্য উপকারভোগী নির্বাচন করতে চাই এবং একই সঙ্গে এই টাকায় অধিক পণ্য কিনতে চাই। সে জন্য ব্যবসায়ীদের টিসিবির কাজের সঙ্গে অংশগ্রহণ দেখতে চাই। এর মধ্য দিয়ে বাণিজ্য সম্ভাবনা বাড়বে, মানুষ তার যোগ্য স্থান ফিরে পাবে।

তিনি বলেন, ‘সামগ্রিক প্রচেষ্টার কারণে গত রমজানে বাজার ব্যবস্থা ভালো ছিল। একটি দুর্বৃত্তায়িত ব্যবস্থা, যা অনেক দুর্বৃত্ত তৈরি করেছিল। সেখান থেকে বাজারের যে উত্তরণ তার জন্য অনেক দপ্তর ও সংস্থা কাজ করেছে। অর্থাৎ আমরা একটা সরকার হিসেবে কাজ করেছি। ফলে বাজারে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্থা ও আস্থা তৈরি হয়েছে। দুর্বৃত্তায়িত ব্যবস্থা থেকে আমরা সরে আসতে চাই।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টিসিবির ডিরেক্টর (কমার্শিয়াল) এস এম শাহীন পারভেজ। প্রকিউরমেন্ট প্রক্রিয়া সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন ডাইরেক্টর (প্রকিউরমেন্ট ও ফিন্যান্স ম্যানেজমেন্ট) মো. আবেদ আলী এবং সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট নিয়ে বক্তব্য রাখেন টিসিবির অতিরিক্ত পরিচালক আল-আমীন হাওলাদার।

আটাবকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের শোকজ

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৪৩ এএম
আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৪৫ এএম
আটাবকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের শোকজ
ছবি: সংগৃহীত

অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল অ্যাজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ বাতিলপূর্বক প্রশাসক নিয়োগের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

গত মঙ্গলবার  জারি করা এক অফিস আদেশে বাণিজ্য সংগঠন আইন, ২০২২-এর ১৭ ধারা অনুসারে আটাবে প্রশাসক নিয়োগ কেন করা হবে না, তা সাত কর্মদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রমাণসহ জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব তাহসিনা বেগম।

এর আগে, গত মার্চ মাসে আটাবের বর্তমান কমিটি বাতিল করে সেখানে প্রশাসক নিয়োগের দাবি তোলে ‘আটাব সংস্কার পরিষদ’। সংগঠনটির আহ্বায়ক গোফরান চৌধুরী বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে আলাদা আলাদা চিঠি পাঠিয়ে এ দাবি জানান।
চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমান কমিটি ভৌতিক ভোটার তালিকা, কেন্দ্র দখল, জাল ভোট প্রদান এবং প্রতিপক্ষকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার মতো নানা অনিয়মের মাধ্যমে নির্বাচনে জয়লাভ করেছে। তাই এই কমিটিকে আজীবনের জন্য যেকোনো বাণিজ্য সংগঠনে নিষিদ্ধ করার দাবিও তোলা হয়েছে।