ঢাকা ৩ বৈশাখ ১৪৩২, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
English

ঈদের কেনাকাটায় ব্যাংকগুলো দিচ্ছে আকর্ষণীয় অফার

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৫, ১১:২৪ এএম
ঈদের কেনাকাটায় ব্যাংকগুলো দিচ্ছে আকর্ষণীয় অফার

ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে নতুন জামা-জুতা। আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে চলছে জমজমাট বিকিকিনি। রাজধানী ঢাকাসহ শহরাঞ্চলের মানুষ বেশির ভাগই ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডে বেশি লেনদেন করছে। এতে একদিকে গ্রাহক ঝুঁকিবিহীনভাবে লেনদেন করতে পারছে। আর অন্যদিকে ব্যাংকগুলোর গ্রাহকের জীবনযাত্রাকে সহজ করতে এবং কার্ডের ব্যবহারে আগ্রহী করে তুলতে বিভিন্ন ধরনের ছাড় দিচ্ছে। ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডের পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিংয়ে অর্থাৎ বিকাশ, রকেট বা নগদে লেনদেন করলেও ছাড় দিচ্ছে। সব মিলিয়ে অনলাইনে লেনদেন করলেই ছাড়ের ছড়াছড়ি। 

ঈদের কেনাকাটাকে উৎসাহিত এবং নিরাপদ করতে ডেবিড-ক্রেডিট কার্ডে ব্যাংকগুলো দিচ্ছে আকর্ষণীয় সব অফার। শপিংয়ের বিল কার্ডে পরিশোধ করলেই মিলবে গিফটসহ নগদ মূল্যছাড়। দেশের বিভিন্ন ব্যাংক তাদের কার্ডধারীদের জন্য নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের শোরুমে কেনাকাটায় ১০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত নগদ ছাড়ের সুবিধা দিচ্ছে। অনলাইনে কেনাবেচা ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বিল পরিশোধে মিলছে নগদ মূল্যছাড়।

খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে কেনাকাটা বা লেনদেনে নগদ অর্থের পরিবর্তে কার্ডের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। আর কার্ডে কেনাকাটা সহজ ও সুলভমূল্যে পণ্য পেতে সহযোগিতা করছে ব্যাংকগুলো। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও ঈদের পোশাক, জুতা, জুয়েলারিসহ নির্দিষ্ট শোরুমে ও পণ্য কেনাকাটায় দিয়েছে নির্দিষ্ট অঙ্কের বিশেষ ছাড়। পাশাপাশি ইফতারে মূল্য ছাড়ের সঙ্গে রয়েছে একটি কিনলে একটি ফ্রিসহ বিভিন্ন ‘ঈদ অফার’। এ ছাড়া ঈদে ঘরে ফেরা ও বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে আকাশপথে বিমান ভাড়ায়ও ছাড়ের ব্যবস্থা রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত জানুয়ারি মাসে ডেভিড এবং ক্রেডিট কার্ডে ৪৩ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। এ থেকে অনুমান করা যায় দেশে কেনাকাটা বা লেনদেনে নগদ অর্থের পরিবর্তে কার্ডের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। আর কার্ডে কেনাকাটা সহজ ও সুলভমূল্যে পাওয়ার সহযোগিতা করছে ব্যাংকগুলো। এ ছাড়া ঈদে ঘরে ফেরা ও বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে আকাশপথে বিমান ভাড়ায়ও ছাড়ের ব্যবস্থা রয়েছে। রমজানে ইফতারেও দেওয়া হচ্ছে বিশেষ অফার।

ঈদ উপলক্ষে সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, জামাকাপড়, জুতাসহ সব ধরনের কেনাকাটায় ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডধারীদের জন্য নানা অফার নিয়ে এসেছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক। ইফতার, সাহরি ও ঈদ কেনাকাটায় কার্ডধারীদের বিশেষ অফার দিয়েছে। প্রায় ২০০০ পার্টনার মার্চেন্টে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট দিচ্ছে ব্যাংকটি। আড়ং, ইয়েলো, বাটা, এপেক্সসহ বিভিন্ন নামিদামি লাইফস্টাইল ব্র্যান্ডে গ্রাহকরা পাচ্ছেন সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক অফার। এ ছাড়াও ইফতার ও ডিনারে নামিদামি হোটেলগুলোতে বাই ওয়ান গেট ওয়ান, বাই ওয়ান গেট টু-থ্রিসহ বিভিন্ন অফার দেওয়া হচ্ছে। ইউএস-বাংলা, এয়ার আস্থাসহ বিভিন্ন বিমান টিকিটেও আছে বিশেষ মূল্য ছাড়।

পুরো রমজানজুড়ে ঈদের দিন পর্যন্ত ব্র্যাক ব্যাংকের গ্রাহকরা ১২০০টিরও বেশি আউটলেটে বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় অফার উপভোগ করতে পারবেন। সঙ্গে গ্রাহকদের জন্য থাকছে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়। এ ছাড়া গ্রাহকরা যাতে রমজানে পূর্ণ সুবিধা নিতে পারেন, সেজন্য ব্র্যাক ব্যাংক রেস্টুরেন্ট, লাইফস্টাইল, ট্রাভেল, ফার্নিচার, ইলেকট্রনিক্স এবং ই-কমার্স ক্যাটাগরিতে আকর্ষণীয় অফার দিচ্ছে। বিলাসবহুল ইফতার বুফে থেকে শুরু করে কেনাকাটা, বিমান টিকিট, ক্যাশব্যাক অফারসহ আরও অনেক কিছু গ্রাহকদের জন্য সহজলভ্য করা হয়েছে। পাশাপাশি এক্সক্লুসিভ ডাইনিংয়ে ব্যাংকটির ক্রেডিট এবং ডেবিট কার্ডধারীরা দেশের প্রিমিয়াম পাঁচ তারকা হোটেলে বাই-ওয়ান-গেট-ফোর ফ্রি ইফতার ও সাহরি উপভোগ করতে পারবেন।

ব্র্যাক ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহীয়ুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবারের মতো এবারও ব্র্যাক ব্যাংক রমজান ও ঈদ উপলক্ষে বিশেষ অফার ঘোষণা করেছে, যেখানে গ্রাহকদের নানা ধরনের সুবিধা ও ডিসকাউন্ট দেওয়া হচ্ছে। এ অফারের মাধ্যমে গ্রাহকরা তাদের পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন, সেই সঙ্গে তাদের দৈনন্দিন খরচে সহায়তা পাবেন।

ব্যাংক এশিয়া তাদের ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের ঈদ কেনাকাটায় সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে। পাঁচ তারকা ওয়েস্টিন, শেরাটনসহ নামিদামি হোটেলগুলোতে বাই ওয়ান গেট টু-থ্রিসহ বিভিন্ন অফার দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আড়ং, ইয়েলো, বাটা, এপেক্সসহ বিভিন্ন নামিদামি লাইফস্টাইল ব্র্যান্ডে গ্রাহকরা পাচ্ছেন সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক অফার। পাশাপাশি ব্যাংক এশিয়া মাস্টারকার্ডে (ডেবিট ও ক্রেডিট) গ্রোসারি শপিংয়ে দিচ্ছে সর্বোচ্চ ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক্স ভাউচার।

ডাচ্-বাংলা ব্যাংক তাদের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডধারীদের জন্য পাঁচ তারকা বিলাসবহুল হোটেলে রমজান মাসজুড়ে ইফতার ও ডিনারে বাই ওয়ান গেট ওয়ান, টু ও থ্রি অফার দিয়েছে। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ভিআইপি ব্যাংকিং ডেবিট কার্ড, ভিসা সিগনেচার ও মাস্টারকার্ড ওয়ার্ল্ড ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে অফার উপভোগ করার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া নেক্সাস মাস্টারকার্ড, নেক্সাস ভিআইপি ব্যাংকিং ডেবিট কার্ড ও ভিসা সিগনেচার কার্ডে বিভিন্ন ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠানে ঈদ কেনাকাটায় রয়েছে বিশেষ মূল্য ছাড়। নেক্সাস-পে ও রকেট অ্যাপ দিয়ে কিউআর কোড স্ক্যান করে পেমেন্ট করলেই গ্রাহকরা পাচ্ছেন ২০ শতাংশ ইনস্ট্যান্ট ক্যাশব্যাক। সুপারশপ স্বপ্ন, আগোরা, মীনা বাজার, ইউনিমার্ট, হোলসেল ক্লাবসহ বাটা, এপেক্স, লোটো ও বে-অ্যাম্পোরিয়ামে এ অফার পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া সেইলর, লা রিভ, ফিট এলিগেন্স, ইনিফিনিটি, সারাসহ বেশ কিছু লাইফস্টাইল ব্র্যান্ডেও একই সুবিধা পাচ্ছেন গ্রাহক।

রমজানে কার্ডধারীদের বিশেষ অফার দিয়েছে ইস্টার্ন ব্যাংক। ব্যাংকটির ৪০টিরও বেশি লাইফস্টাইল ব্র্যান্ডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত শোরুমে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ের সুযোগ দিয়েছে। আড়ং এপেক্সসহ বিভিন্ন নামিদামি লাইফস্টাইল ব্র্যান্ডের গ্রাহক পাচ্ছেন ১০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক অফার। ইফতার ও ডিনারে নামিদামি হোটেলগুলোতে বাই ওয়ান গেট ওয়ান, বাই ওয়ান গেট টু সুবিধাসহ বিভিন্ন ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ব্যাংকটি কার্ডধারীদের কিস্তিতেও কেনার সুযোগ দিয়েছে।

এই প্রসঙ্গে ইস্টার্ন ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনের প্রধান মুয়ীদ হাসনাত বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদ উপলক্ষে ইস্টার্ন ব্যাংক কার্ডে লেনদেনের ওপর বিশেষ ছাড় দিচ্ছে। মূলত গ্রাহকরা যেন নিরাপদে এবং স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করতে পারে সেই বিষয়টিকে লক্ষ্য রেখেই এই ছাড় দিচ্ছে। 

প্রাইম ব্যাংকের ভিসা কার্ড ও মাস্টার কার্ডধারীদের জন্য কেনাকাটায় বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে। লাইফস্টাইলে কেনাকাটায় ১০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য ছাড়ের পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন উপহার। এ ছাড়া রমজান উপলক্ষে ইফতার এবং সাহরির জন্য শীর্ষস্থানীয় রেস্তোরাঁগুলোতে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অফারের পাশাপাশি রয়েছে বাই-ওয়ান-গেট-ওয়ান/টু/থ্রী সুবিধা। এ ছারাও গ্রোসারি এবং রিটেইল দোকানগুলোতে রয়েছে বিশেষ মূল্যছাড় এবং ক্যাশব্যাক। 

প্রাইম ব্যাংকের ইভিপি ও হেড অব কার্ডস অ্যান্ড রিটেইল অ্যাসেট জোয়ার্দ্দার তানভীর ফয়সাল খবরের কাগজকে বলেন, এই বিশেষ সময়ে গ্রাহকদের চাহিদা মাথায় রেখে আমরা বিভিন্ন খাতে বিশেষ মূল্যছাড় এবং ক্যাশব্যাক প্রদান করছি। আমাদের কার্ডহোল্ডারা যাতে ঈদের এই আনন্দঘন মুহূর্ত তাদের পরিবারের সঙ্গে উদযাপন করতে পারে তাই প্রধান টিকিটিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে রয়েছে প্রাইম ব্যাংক কার্ডে এক্সক্লুসিভ ক্যাশব্যাক অফার।

ইসলামী ব্যাংক তাদের ভিসা, ডেবিট ও খিদমাহ কার্ড দিয়ে কেনাকাটায় ক্যাশ ব্যাকসহ বিভিন্ন উপহার দিচ্ছে। শরিয়াহ ধারার ব্যাংকটি তাদের কার্ডে ভাইব্রেন্ট, সারা, জারা, নয়ের, ইনফিনিটি, আর্টিসানসহ ৪০টির বেশি লাইফস্টাইল ব্র্যান্ডের শোরুমে ঈদের কেনাকাটায় ২৫ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক অফার ঘোষণা করেছে। ইফতার ও ডিনারে নামিদামি হোটেলগুলোতে বাই ওয়ার গেট ওয়ানসহ বিভিন্ন ছাড় দিচ্ছে। এ ছাড়া ব্যাংকটি কার্ড গ্রাহকদের কিস্তিতেও কেনার সুযোগ দিয়েছে।

এনআরবিসি ব্যাংকের কার্ডেও হোটেল শেরাটন, ওয়েস্টিন, ইন্টারকন্টিনেন্টাল, প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও, রেডিসন, লে মেরিডিয়ানসহ সব পাঁচ তারকা হোটেলে ইফতারসহ ডিনার ও সাহরিতে থাকছে একটি কিনলে তিনটি পর্যন্ত ফ্রি বুফেসহ আরও এক্সক্লুসিভ সব অফার। এ ছাড়াও ঈদের কেনাকাটায় আড়ংয়ের সব আউটলেটে এনআরবিসির সব কার্ডধারী পাবেন ১০ শতাংশ বিশেষ ক্যাশব্যাক।

১০ লাখ প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতায় আনা হবে

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৪৫ এএম
আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০২ এএম
১০ লাখ প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতায় আনা হবে
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

ভ্যাটযোগ্য সব প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতায় নিবন্ধন নিতে হবে। যোগ্য কোনো প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন না নিলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইতোমধ্যে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান সব কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটে কঠোর বার্তা দিয়ে ভ্যাটযোগ্য প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করতে নির্দেশ দিয়েছেন। ১ মে থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে অথাৎ আগামী আট মাসে নতুন নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ ১০ লাখ প্রতিষ্ঠান ভ্যাটের আওতায় আনতে বলা হয়েছে। 

এনবিআর চেয়ারম্যানের পাঠানো নির্দেশে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের মধ্যে প্রতিটি কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট থেকে ভ্যাটযোগ্য সব প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জরিপের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারিও করতে হবে। বিশেষ করে ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরকে গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করতে হবে। 

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান খবরের কাগজকে বলেন, দেশে ভ্যাটযোগ্য অনেক প্রতিষ্ঠান এখনো এনবিআরে নিবন্ধিত হয়নি। অথচ এসব প্রতিষ্ঠান ঠিকই সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করে থাকে। ভ্যাট আদায় করেও জমা না দেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ক্ষেত্রে এনবিআর কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ভ্যাটযোগ্য শতভাগ প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। ভ্যাট আদায় করেও সঠিক হিসাবে পরিশোধ না করলে চলমান রাজস্ব আইনে মামলা করা হবে। ভ্যাটযোগ্য হয়েও অনলাইনে নিবন্ধন না নিলেও ভ্যাট ফাঁকির দায়ে মামলা করা হবে। 

এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ভ্যাট প্রদানে সক্ষম প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২০ লাখের বেশি। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান সাধারণ মানুষের কাছ থেকে হিসাব কষে কড়ায় গণ্ডায় ভ্যাট আদায় করে থাকে। অথচ এনবিআরে অনলাইনে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। বাকিরা আদায় করেও ভ্যাট জমা দেয় না। আর যেসব প্রতিষ্ঠান ভ্যাট দেবে তাদের বেশির ভাগই হিসাবমতো ভ্যাট পরিশোধ করে না।

এনবিআরের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জুলাই-আগস্টের ধাক্কা সামলে এনবিআর অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধনে জোর দিয়েছে। এনবিআরের সাময়িক হিসাবে চলতি বছরের গত আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ভ্যাট আদায়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি, (৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ) হয়েছে। আগস্ট মাসেও এ হার নেতিবাচক ছিল, ২৫ শতাংশ। মার্চ পর্যন্ত এনবিআরের সাময়িক হিসাবেও ভ্যাট আদায়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি আছে। মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ অনুযায়ী ভ্যাটের আওতা বাড়ানো এবং নতুন নতুন ভ্যাট দাতাকে ভ্যাট নেটে অন্তর্ভুক্ত করতে এনবিআর চেয়ারম্যান নানা ধরনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জুলাই-আগস্ট-পরবর্তী সময়ে বর্তমান সরকার দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এর জন্য নতুন ভ্যাট নেট বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এনবিআরের নতুন প্রশাসন মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নতুন ভ্যাটদাতা শনাক্তকরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেন। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন ভ্যাট নিবন্ধন বাড়াতে এনবিআর ইতোমধ্যে ভ্যাটযোগ্য বার্ষিক টার্নওভার সীমা ৩ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ভ্যাটমুক্ত ও ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত টার্নওভারের আওতায় রাখা হয়েছে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মাঠপর্যায়ের সব কমিশনারকে নতুন নিবন্ধন প্রদান ও আইনানুগ রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে করদাতাদের সঙ্গে সেবামূলক মনোবৃত্তি বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সব কর্মকর্তাকে নতুন ভ্যাটদাতা বাড়ানো জন্য কাজ করতে বলা হয়েছে। কর্মকর্তাদের কর্মপ্রবণতা, দক্ষতা ও সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে নিবন্ধন সংখ্যা প্রবৃদ্ধিতে সফল কর্মকর্তাকে ‘বিশেষ স্বীকৃতি’ দেওয়া হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভ্যাট নেট বাড়াতে এনবিআরে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে পরবর্তী আট মাসে নতুন 

নিবন্ধন সংখ্যা ৫০ শতাংশে উন্নীত করার প্রত্যাশা এনবিআরের।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি অর্থবছরে গড়ে বড় ১১০ প্রতিষ্ঠান থেকে মোট আদায় করা ভ্যাটের ৪৯ শতাংশই আদায় হয়। বড় ১১০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সিগারেট, ঠিকাদার, নির্মাণপ্রতিষ্ঠান, তেল-গ্যাস কোম্পানি ও মোবাইল ফোন কোম্পানি রয়েছে। প্রতি অর্থবছর লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে তা পূরণে এনবিআরকে চাপ দেওয়া হলে ভ্যাটের আওতায় থাকা প্রতিষ্ঠানে ওপরই চাপ বাড়ানো হয়। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বড় ১১০ প্রতিষ্ঠান থেকে বেশি ভ্যাট আহরণ হয়।

এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভ্যাটের আওতায় বাড়ানোর পাশাপাশি ভ্যাট আদায়েও স্বচ্ছতা আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম তিন মাসে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার শুল্ক-কর ফাঁকি উদঘাটন করেছে এনবিআর। এ ছাড়া ছোট-বড় সব ধরনের করদাতার কর ফাঁকির তদন্ত কাজও করছে সংস্থাটি।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান খবরের কাগজকে বলেন, ভ্যাটের আওতা বাড়াতে এনবিআর সক্ষম হলে ভ্যাট আদায় কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। বহুদিন থেকে এনবিআর ভ্যাটের আওতা বাড়ানোর কথা বললেও সফল হতে পারছে না।

এনবিআরের প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ছাত্র-জনতা আন্দোলনের এই মাস (ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফাঁকির তথ্য পেয়েছে ভ্যাট খাতে। এই খাতে সব মিলিয়ে ২৫০ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য মিলেছে। এ জন্য ১৫৭টি ভ্যাট ফাঁকির মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব মামলার বিপরীতে ১০৯ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, সামিট গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপের ভ্যাট ফাঁকির তদন্তে নেমেছে এনবিআর। এসব প্রতিষ্ঠানের অনেকের ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভ্যাট পরিশোধের পর তা যথাযথভাবে সরকারি কোষাগারে জমা না দিলেও ভোক্তারা অভিযোগ জানাতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে জিআরএস (গ্রিভেন্স রিড্রেস সিস্টেম বা অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা) পদ্ধতি চালু করা হয়েছে, যা একজন ভোক্তা মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ থেকে অভিযোগ জানাতে পারবে। এ ছাড়া কোনো ব্যবসায়ী সঠিকভাবে ভ্যাট পরিশোধ করতে এলেও কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর দ্বারা হয়রানির শিকার হলে এনবিআর কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারবেন। 

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, জিআরএস পদ্ধতির মাধ্যমে ভোক্তা বা ব্যবসায়ী যে কেউ অভিযোগ জানাতে পারবেন। আশা করি এতে স্বচ্ছভাবে ভ্যাট আদায় সম্ভব হবে।

শিল্পগ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে বিনিয়োগ কমবে

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩৪ এএম
শিল্পগ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে বিনিয়োগ কমবে
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ঘোষিত গ্যাসের নতুন মূল্যহারকে বৈষম্যমূলক আখ্যায়িত করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। সংগঠনটির মতে, নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন গ্রাহক, প্রতিশ্রুত গ্রাহক ও বিদ্যমান গ্রাহকদের জন্য আলাদা আলাদা গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি জানায়, সরকারের টেকসই ও নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহের যে লক্ষ্য রয়েছে তাতে পূর্ণ সমর্থন জানালেও বিইআরসি ঘোষিত প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্যহারের ফলে নতুন বিনিয়োগ ও শিল্প সম্প্রসারণ চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। বিইআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী বিদ্যমান গ্রাহকদের চেয়ে নতুন গ্রাহক, নতুন গ্যাস সেলস অ্যাগ্রিমেন্ট, অনুমোদিত লোডের চেয়ে অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহারকারী এবং প্রতিশ্রুত গ্রাহকদের বেশি মূল্য পরিশোধ করতে হবে, এমনকি তা একই খাতের কোম্পানি হলেও। এই দ্বৈত-মূল্যনীতি কেবল ন্যায্য প্রতিযোগিতার নীতিকে লঙ্ঘন করে না বরং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি অনিশ্চিত করে।

ভিন্ন ভিন্ন মূল্যের যে মডেলটি বিইআরসি ঘোষণা করেছে তা নজিরবিহীন এবং এর কারণে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। একই খাতে পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে আলাদা আলাদা জ্বালানি খরচের কারণে উৎপাদন খরচে পার্থক্য তৈরি হবে এবং এ ধরনের মূল্য কাঠামো সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরির নীতির পরিপন্থি। সর্বোপরি, বাংলাদেশ সরকার যখন বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে নানাবিধ পদক্ষেপ নিচ্ছে, তখন শুধু নতুন শিল্প কিংবা নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত একটি বিপরীতমুখী আচরণ। এ ধরনের সিদ্ধান্ত সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট করবে, ভবিষ্যৎ বিনিয়োগকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে এবং ইনভেস্টমেন্ট সামিটের মতো ইতিবাচক পদক্ষেপের মাধ্যমে অর্জনকে ধ্বংস করবে।

ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি জাভেদ আখতার বলেন, ‘শিল্পের প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনে একটি স্বচ্ছ ও সামঞ্জস্যপূর্ণ জ্বালানি মূল্য নির্ধারণ কাঠামো আবশ্যক। আমরা জ্বালানি চাহিদা ও তা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বিইআরসিকে নতুন এই গ্যাসের মূল্য কাঠামো পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানাচ্ছি এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের মতো বৃহৎ লক্ষ্যগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে নীতি নির্ধারণে দাবি জানাই।

সংগঠনটির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, সবশেষ ঘোষণা অনুযায়ী যেকোনো নতুন গ্যাস সেলস অ্যাগ্রিমেন্ট নতুন সংযোগ হিসেবে বিবেচিত হবে। অর্থাৎ, দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস ব্যবহার করে আসা শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও চলতি চুক্তি শেষ হলে কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করলে অতিরিক্ত গ্যাস ট্যারিফের স্ল্যাবে ফেলতে পারবে। এ ধরনের বিধান শুধু অযৌক্তিক ও অন্যায্যই নয়, বরং নিয়ন্ত্রকদের হাতে স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ তৈরি করে দেয়। যার মাধ্যমে তারা আগের চুক্তি জোরপূর্বক বাতিল করে নতুন চুক্তি সই করতে বাধ্য করার মাধ্যমে অতিরিক্ত গ্যাস ট্যারিফ আরোপ করতে পারে। এ ধরনের বিধান ক্ষমতার অপব্যবহার ও ভবিষ্যতে দুর্নীতির সুযোগ তৈরি করে।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারির বিইআরসি গ্যাস ট্যারিফ পুনরায় নির্ধারণের জন্য একটি গণশুনানির আয়োজন করেছিল, যেখানে উপস্থিত সবাই এর বিরোধিতা করেছিল। সংগঠনটি দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীসহ সব অংশীদারদের সঙ্গে সেই আলোচনা পুনরায় চালু করার দাবি জানিয়েছে এবং এর মাধ্যমে যে সংস্কার আসবে তার মাধ্যমেই কেবল শিল্প খাতে একটি টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে মতামত দিয়েছে। বিইআরসি এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়কে এ ধরনের বৈষম্যমূলক মূল্যহার অতিসত্বর পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এই সংগঠন। সেই সঙ্গে এ ধরনের জরুরি সংস্কারের আগে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার আহ্বান জানানো হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে। সেখানে বলা হয়, বিইআরসি এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে এবং একটি প্রতিযোগিতামূলক ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে সহায়ক জ্বালানি মূল্য ঘোষণা করবে সরকার।

শিগগির চালের দাম সহনীয় হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:২৭ এএম
আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:২৯ এএম
শিগগির চালের দাম সহনীয় হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। ছবি: সংগৃহীত

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, দুই সপ্তাহের মধ্যে বাজারে বোরো ধানের চাল আসবে। আশা করি নতুন ধান উঠলে চালের বাজার আরও সহনীয় হয়ে উঠবে।

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) ভোজ্যতেলের আমদানি ও সরবরাহসহ সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা-সংক্রান্ত এক সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, দুঃখজনকভাবে বেশ কিছু দিন ধরে চালের দাম বেড়েছে। দুই সপ্তাহের মধ্যে বাজারে বোরো ধানের চাল আসবে। চিকন যে চাল বিশেষ করে নাজিরশাইল বা মিনিকেট এটা কিন্তু বোরো মৌসুমের চাল থেকেই আসে।

তিনি বলেন, এ বছর আমাদের আবহাওয়া ও বিদ্যুতের অবস্থা ভালো ছিল। তাছাড়া সারের সরবরাহসহ সামগ্রিক বিষয় ভালো ছিল। আমরা মনে করছি আল্লাহর রহমতে আমাদের ফসল তথা ধানেও একটা বরকত আসবে। আশা করি নতুন ধান উঠলে চালের বাজার আরও সহনীয় হয়ে উঠবে।

তিনি আরও বলেন, কৃষিপণ্য একটা গতিশীল জিনিস। তবে সব পণ্যে আমরা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখে যে ব্যবস্থাপনা করা যায় সেটাই করছি।
ট্রাম্পের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এলে দুই দেশের বাণিজ্য নিয়ে কথা বলার সম্ভাবনা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, একমাত্র এ বিষয়টিই গুরুত্ব পাবে।

ভ্যাট অব্যাহতি, বিনিয়োগবান্ধব করনীতি চায় বিজিএমইএ-বিকেএমইএ

প্রকাশ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:২৩ এএম
আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০২ এএম
ভ্যাট অব্যাহতি, বিনিয়োগবান্ধব করনীতি চায় বিজিএমইএ-বিকেএমইএ
ছবি: সংগৃহীত

স্থানীয়ভাবে রিসাইকেল ফাইবার (পুনর্ব্যবহারযোগ্য সুতা) উৎপাদনে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট অব্যাহতি চেয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। পাশাপাশি সংগঠনটি রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য করপোরেট কর হার ১২ শতাংশ, লিড কারখানার জন্য ১০ শতাংশ হারে রাখার প্রস্তাব দিয়েছে। আর বাজেট প্রস্তাবে এনবিআরকে বিনিয়োগবান্ধব করনীতি প্রণয়ন করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)।

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট সামনে রেখে মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের রাজস্ব বোর্ড ভবনে অনুষ্ঠিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

বিকেএমইএ-এর অন্যান্য প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে-রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানার জন্য প্রয়োজন পণ্য ও সেবায় ভ্যাট অব্যাহতি ও বিভিন্ন অগ্নিনিরাপত্তা সরঞ্জামাদি পুনঃস্থাপনের ক্ষেত্রে আমদানির ওপর কর রেয়াত করা ইত্যাদি।
বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ছাড়াও বিটিএমএ, এসএমই ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনায় অংশ নেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান ও এনবিআরের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

বিজিএমইএর সহায়ক কমিটির সদস্য এনামুল হক বলেন, গ্যাসের দাম বেড়েছে। এই মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কা কীভাবে সামলাব জানি না। আবার যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ নিয়ে ব্যবসায়ীরা বিপদে আছেন। আমাদের হাতে মাত্র তিন মাস সময় আছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ নিয়ে সমাধানে যেতে হবে। তৈরি পোশাকশিল্পে করপোরেট করহার পরিবর্তন করা হলে স্থানীয় ও বিদেশি উদ্যোক্তাদের আস্থার ঘাটতি দেখা দেবে।

বিকেএমই সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, সোলার সিস্টেমের ওপর কর মওকুফ প্রয়োজন। সরকার আমাদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। আমরা সেখানে সরকারের সহযোগী ভূমিকা চাচ্ছি। আমরা সোলার প্যানেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চাই। এটার ওপর সরকার কোনো কিছু না রেখে, সম্পূর্ণ ফ্রি করা উচিত। তা হলে ব্যবসায়ীরা উৎসাহিত হবেন। খরচ কমে আসবে, আমরা শিল্পের লোকজন এটাতে যেতে চাই।
তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস করনীতির পরিবর্তন হবে। বর্তমান করনীতি নিয়ে আমি অনেক কথা বলেছি যে কোনোভাবেই এটা বিনিয়োগ বা ব্যবসার জন্য সহায়ক নয়।

বিটিএমএ ফেব্রিকের স্থানীয় উৎপাদন খরচ আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য বিবেচনায় নিয়ে ফেব্রিকের ট্যারিফ ভ্যালু বাংলাদশে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ ও পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদানের আলোকে ফেব্রিকের মিনিমাম ট্যারিফ ভ্যালু নির্ধারণ, আগের মতো বিটিএমএ থেকে প্রত্যয়নপত্র নিয়ে বন্ড ছাড়া পণ্য খালাসের ব্যবস্থা করা, পুনঃচক্র আঁশ বা রিসাইকেল ফাইবার উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে তৈরি পোশাকশিল্পের বর্জ্য বা ঝুট স্থানীয়ভাবে সংগ্রহের জন্য উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে এবং উৎপাদিত পণ্য স্থানীয়ভাবে সুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বা কম্পোজিট মিলে সরবরাহের ক্ষেত্রে উৎপাদন পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি ইত্যাদি।

এসএমই ফাউন্ডেশনের প্রস্তাবে মধ্যে রয়েছে- নতুন এসএমইদের জন্য ১০ বছর পর্যন্ত টার্নওভার বা গ্রস রিসিপ্টের ওপর ন্যূনতম করারোপ না করা, যেসব এসএমইর বাৎসরিক টার্নওভার পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত, তাদের ভ্যাট রিটার্ন প্রতি মাসের পরিবর্তে ষাণ্মাসিক ভিত্তিতে জমা দেওয়ার বিধান করা, উৎপাদনকারীদের শতভাগ রপ্তানিমুখী শিল্পে স্থানীয় মুদ্রায় সরাসরি উপকরণ সরবরাহের ক্ষেত্রে মূসক অব্যাহতি দেওয়া, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজ শিল্পে ব্যাকওয়ার্ড লিংকড ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে ১০ বছরের জন্য কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া ইত্যাদি।

সবার প্রস্তাব শুনে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আমরা এবার ব্যবসাবান্ধব বাজেট প্রণয়ন করব। ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে কর সুবিধা নিচ্ছেন। তার ধারাবাহিকতা চান। কিন্তু আমরা অভিযোগ পাই যে, করহারের চেয়ে ইফেক্টিভ করহারের যোজন যোজন ফারাক। এগুলোকে আমরা যতটা সম্ভব সহজ করব।

সবাই করহার কমানোর প্রস্তাব দেয় জানিয়ে তিনি বলেন, সবার কথা শুনতে গেলে ট্যাক্স জিডিপি রেশিও এখন আছে ৭.১ সেটা ৫ এ নেমে যাবে।

ভারতীয় যেসব পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিল এনবিআর

প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২০ পিএম
ভারতীয় যেসব পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিল এনবিআর
ছবি: সংগৃহীত

সুতা, দুধসহ বেশ কিছু ভারতীয় পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) এবং গত রবিবার দুই দফায় এসব প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ডুপ্লেক্স বোর্ড, নিউজপ্রিন্ট, ক্রাফট পেপার, সিগারেট পেপার, মাছ, সুতা, আলু, গুঁড়া দুধ, টোব্যাকো, রেডিও-টিভি পার্টস, সাইকেল ও মোটর পার্টস, ফরমিকা শিট, সিরামিকওয়্যার, স্যানিটারিওয়্যার, স্টেইনলেস স্টিলওয়্যার, মার্বেল স্ল্যাব ও টাইলস এবং মিক্সড ফেব্রিক্স আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে ভারত থেকে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ করা হয়েছে। ফলে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা ও বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুবিধা বাতিল হয়েছে। ওই সব স্থলবন্দর দিয়ে মূলত ভারত থেকে সুতা আমদানি হতো। তবে স্থলপথ ছাড়া সমুদ্রপথে বা অন্য কোনো পথে সুতা আমদানি করা যাবে। 

এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা আল-আমিন শেখ খবরের কাগজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট জারি করা প্রজ্ঞাপন সংশোধন করে নতুন এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এই আদেশ তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করা হয়। 

এর আগে গত রবিবার এনবিআর আরেক প্রজ্ঞাপনে ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে আমদানিযোগ্য সুতা, গুঁড়া দুধ, টোব্যাকো, নিউজপ্রিন্ট, বিভিন্ন ধরনের পেপার ও পেপার বোর্ডসহ একাধিক পণ্য আমদানিতে সীমাবদ্ধতা জারি করে।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, “নেপাল ও ভুটানে উৎপাদিত এবং প্রক্রিয়াজাত সুতা ও আলু ছাড়া অন্য সব পণ্য আমদানি করা যাবে। তবে ভারতের ক্ষেত্রে আরও বিস্তৃত নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ডুপ্লেক্স বোর্ড, নিউজপ্রিন্ট, ক্রাফট পেপার, সিগারেট পেপার, মাছ, সুতা, আলু, গুঁড়া দুধ, টোব্যাকো, রেডিও-টিভি পার্টস, সাইকেল ও মোটর পার্টস, ফরমিকা শিট, সিরামিকওয়্যার, স্যানিটারিওয়্যার, স্টেইনলেস স্টিলওয়্যার, মার্বেল স্ল্যাব ও টাইলস এবং মিক্সড ফেব্রিক্স—এই পণ্যগুলো ভারত থেকে আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।” 

তবে মূসক নিবন্ধিত বিড়ি উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো কাঁচামাল হিসেবে তামাক ডাঁটা আমদানি করতে পারবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ রয়েছে।
এর আগে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং স্থানীয় খামারীদের পক্ষ থেকে এনবিআরে আবেদন করে জানানো হয়, স্থানীয় বাজারে চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট পরিমাণ দুধ উৎপাদন হচ্ছে দেশে। এমন পরিস্থিতিতে ভর্তুকিপ্রাপ্ত দেশ থেকে নিম্নমানের গুঁড়া দুধ আমদানি বন্ধ করার দাবি জানান খামারিরা। নিম্নমানের গুঁড়া দুধ আমদানির কারণে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে উল্লেখ করা হয়। তাদের দাবি ভর্তুকি পাওয়া দেশ থেকে নিম্নমানের গুঁড়া দুধ কম শুল্কে আমদানি বন্ধ করতে হবে। এই খাতে খামারিদের ভর্তুকি দিতে হবে। তা না হলে তারা অসম প্রতিযোগিতায় পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। 

গত ফেব্রুয়ারিতে স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে বস্ত্র খাতের অন্যতম কাঁচামাল সুতা আমদানি বন্ধের দাবি জানায় বস্ত্রশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। এরপর গত মার্চ মাসে এক চিঠিতে পোশাকশিল্পে দেশে তৈরি সুতার ব্যবহার বাড়াতে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ করার জন্য এনবিআরকে ব্যবস্থা নিতে বলে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।

তখন ট্যারিফ কমিশন থেকে এনবিআর চেয়ারম্যানকে পাঠানো চিঠিতে দেশীয় টেক্সটাইল শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণে সব সীমান্ত সংলগ্ন সড়ক ও রেলপথ এবং স্থলবন্দর ও কাস্টমস হাউসের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে সুতা কাউন্ট নির্ণয়ে যথাযথ অবকাঠামো প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত আগের মতো সমুদ্রবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুপারিশ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেন।

জানা গেছে, ভারতের উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলে উৎপাদিত সুতা কলকাতায় গুদামজাত করা হয়। এরপর সেখান থেকে সুতা বাংলাদেশে পাঠানো হয়। এসব সুতা তুলনামূলক কম দামে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এ কারণে দেশি সুতার পরিবর্তে স্থলবন্দর দিয়ে আসা সুতা বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ কারণে দেশের বস্ত্রশিল্প কারখানাগুলো বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছে বলে দাবি করে বিটিএমএ।

মিল মালিকরা বলছেন-চীন, তুরস্ক, উজবেকিস্তান এবং দেশে উৎপাদিত সুতার দাম প্রায় একই রকম হলেও স্থলবন্দর দিয়ে আসা ভারতীয় সুতার দাম অনেক কম থাকে। অর্থাৎ, স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা সুতা চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে ঘোষিত দামের চেয়ে অনেক কম দামে আসে। এতে দেশের সুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না।