ঢাকা ৬ বৈশাখ ১৪৩২, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
English

ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ছে, কমেছে ভারতে

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৫, ১১:২৮ এএম
আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৫, ১১:৩৭ এএম
ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ছে, কমেছে ভারতে
প্রতীকী ছবি

গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে অর্থাৎ গত আগস্ট থেকে দেশের বাইরে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রে, আর কমেছে ভারতে। যদিও জুলাই পর্যন্ত হিসাবে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের লেনদেন ভারতেই সবচেয়ে বেশি হতো। সেই সঙ্গে গত জানুয়ারি মাসে দেশের ভেতরে ও বাইরে ক্রেডিট কার্ডের লেনদেন কিছুটা কম হয়েছে। তবে দেশের ভেতরে বিদেশিদের ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বেড়েছে। দেশে-বিদেশে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি বছর ডিসেম্বরে ক্রেডিট কার্ডের লেনদেন সবচেয়ে বেশি হয়। কারণ এ সময় স্কুল বন্ধ থাকে। ফলে অনেকে পরিবারসহ ভ্রমণ করতে বা চিকিৎসা করাতে বিদেশে যান। আর জানুয়ারি হচ্ছে বছরের প্রথম মাস। এ সময় বাচ্চাদের স্কুল শুরু হয়। তখন বিশেষ প্রয়োজন থাকলেও কেউ দেশের বাইরে যেতে পারে না। আবার এ সময় বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি, বই জামা, জুতা সহ প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে হয় তাই এ সময় চাইলেও কেউ ক্রেডিট কার্ডে বেশি লেনদেন করতে পারেন না। এসব কারণেই জানুয়ারিতে ক্রেডিট কার্ডের লেনদেন কিছুটা কম হয়েছে। তবে ফেব্রুয়ারি এবং মার্চে তা আবার বাড়বে। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগ দেশের ক্রেডিট কার্ড ইস্যুকারী ৪৪টি ব্যাংক ও ১টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তথ্য নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। প্রতিবেদনে দেশের অভ্যন্তর ও বিদেশে বাংলাদেশের নাগরিকদের এবং দেশের ভেতরে বিদেশি নাগরিকদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের তথ্য তুলে ধরা হয়। 

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসে দেশের অভ্যন্তরে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডে খরচ করেছেন ৩ হাজার ১২৫ কোটি টাকা। যা আগের মাস ডিসেম্বরে ছিল ৩ হাজার ২১৫ কোটি টাকা। 

অর্থাৎ মাসের ব্যবধানে দেশের ভেতরে ক্রেডিট কার্ডের লেনদেন কমেছে ২ দশমিক ৮০ শতাংশ। 

একইভাবে জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডধারীরা বিদেশে খরচ করেছেন ৪৪৫ কোটি টাকা। যা ডিসেম্বরে ছিল ৪৯১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারিতে বিদেশে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডে খরচ কমেছে ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ডিসেম্বর মাসে বিদেশে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। ওই মাসে দেশটিতে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে খরচ করা হয়েছে ৬৮ কোটি টাকা। মোট খরচের ১৫ দশমিক ৪৪ শতাংশই এখানে খরচ করা হয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে থাইল্যান্ড। এখানে খরচ করেছেন ৬৪ কোটি টাকা। যা মোট খরচের ১৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুর। সেখানে ব্যয় করেছেন ৩৮ কোটি টাকা। আর চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে মালয়েশিয়া। সেখানে খরচ করেছেন ৩৫ কোটি টাকা। পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য। সেখানে ব্যয় করা হয়েছে ৩৩ কোটি টাকা। ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে ভারত। সেখানে ব্যয় করা হয়েছে ৩২ কোটি টাকা। 
যা আগের মাসেও চতুর্থ অবস্থানে ছিল। তখন সেখানে ব্যয় করা হয়েছিল ৪০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ভারতে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। গত জুলাইয়ের পর থেকেই ভারতে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার কমতে থাকে। 

গত কয়েক মাসের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, সাধারণত দেশের বাইরে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করেন ভারতে; কিন্তু গত জুলাই মাসে তার ব্যতিক্রম দেখা গেছে। বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারণে জুলাইয়ে দেশটি ভিসা কার্যক্রম সীমিত করে ফেলে। এর ফলে জুলাইয়ে বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা বা ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশিরা ভারত যেতে পারেননি। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এ কারণেই দেশটিতে ক্রেডিট কার্ডে বাংলাদেশিদের খরচ কমেছে বলে মনে করছেন ব্যাংক খাত-সংশ্লিষ্টরা।

বিদেশে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করেন ডিপার্টমেন্ট স্টোরে। জানুয়ারিতে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে খরচের পরিমাণ ছিল ১৩২ কোটি টাকা। বিদেশের মাটিতে ক্রেডিট কার্ডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবহার ছিল রিটেইল আউটলেট সার্ভিসে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে জানুয়ারিতে বাংলাদেশিরা খরচ করেছেন ৭৪ কোটি টাকা। 

দেশে-বিদেশে জানুয়ারিতে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার কমলেও দেশে অবস্থানকারী বিদেশি নাগরিকদের ক্রেডিট কার্ডে খরচ বেড়েছে। বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশিরা গত জানুয়ারিতে ক্রেডিট কার্ডে খরচ করেছেন ২৫৩ কোটি টাকা, যা ডিসেম্বরে ছিল ২৪১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক মাসে বাংলাদেশে বিদেশিদের ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বেড়েছে ১২ কোটি টাকার। জানুয়ারিতে এ দেশে অবস্থানকারী যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেডিট কার্ডে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ হয়েছে, যার পরিমাণ ৬৭ কোটি টাকা। এর পরের অবস্থানে ছিল যুক্তরাজ্য, দেশটির ক্রেডিট কার্ডে খরচ হয়েছে ২৮ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশের মানুষও এখন অনেক বেশি সচেতন হয়েছেন। এখন আর কেউ ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে বিল জমা দেয় না বা নগদ টাকা দিয়ে কেনাকাটার পরিমাণও অনেক কমে গেছে। বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ কার্ড কিংবা অ্যাপ ব্যবহার করে কেনাকাটার বিল, বিভিন্ন ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করছেন। 

লেনদেন বাড়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগামী দিনে এই লেনদেন আরও বাড়বে। কেননা কার্ড লেনদেনে উৎসাহিত করতে ব্যাংকগুলো ছাড়সহ নানা অফার দিচ্ছে। ‘ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে কেনাকাটার বিল পরিশোধে মিলছে ছাড়। অনেক ব্যাংকের কার্ডের ধরনভেদে ফ্রিতে বিভিন্ন বিমানবন্দরের লাউঞ্জ ব্যবহারের সুযোগও রয়েছে।’

আমন ধান-চাল সংগ্রহে চাষি-মিলারদের ক্ষতি ৩৩০ কোটি

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:০৪ পিএম
আমন ধান-চাল সংগ্রহে চাষি-মিলারদের ক্ষতি ৩৩০ কোটি
ছবি: সংগৃহীত

সরকারি মূল্যের চেয়ে খোলাবাজারে দর বেশি হওয়ায় এবার চাষি আর চালকল মালিকদের সরকারি গুদামে আমন ধান-চাল দিতে গিয়ে লোকসান গুনতে হয়েছে কমপক্ষে ৩৩০ কোটি টাকা।

ব্যবসায়ীদের আনুমানিক হিসাবে এবং খাদ্য বিভাগের প্রাথমিক তথ্যে বলা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি লোকসান গুনতে হয়েছে ১৫৪ কোটি ২১ লাখ টাকারও বেশি চুক্তি অনুযায়ী সেদ্ধ চাল সরবরাহ করতে গিয়ে। তবে আতপ চালে লোকসান হয়েছে কিছুটা কম ৯৪ কোটি ৩৪ লাখ আর ধানে লোকসান হয়েছে ৯৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। পরিবহন খরচ এর মধ্যে ধরা হয়নি। 

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ২০১৯ সালের পর থেকে গত আমন সংগ্রহ অভিযান পর্যন্ত প্রতিটি মৌসুমেই প্রতি কেজি (কিলোগ্রাম) ধান ও চালে গড়ে ৩ টাকা করে লোকসান হয়েছে। সবচেয়ে বেশি লোকসান হয়েছে এ বছর। কোনো কোনো এলাকায় চালে কেজিতে ৪ টাকা আর ধানে ৩ টাকা পর্যন্ত। এ হিসাব পরিবহন খরচ বাদে।  

খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মৌসুমের শুরুতে ধানের দর কিছুটা কম থাকায় চাষি আর ব্যবসায়ীদের লোকসান কিছুটা কম হয়েছে। পরে মৌসুমের মাঝামাঝি থেকে সরকারি সংগ্রহ কর্মসূচি শেষ হওয়া পর্যন্ত খেলা বাজারে ধান-চালের দাম ছিল সরকারি মূল্যের অনেক চেয়ে বেশি। মৌসুমের মাঝামাঝি সরকারি ও খোলা বাজারে প্রতি কেজি ধানের দরে পার্থক্য ছিল ৩ টাকা থেকে ৩ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত; আর চালের মানভেদে ৪ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত। মৌসুমের শেষ দিকে এসে দরের এ পার্থক্য আরও বেড়ে যায়। কোথাও কোথায় গুদামে পৌঁছানো পর্যন্ত চালে কেজিতে খরচ বেড়ে যায় আরও ২ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত। এ অবস্থায় সরকারি ধান-চাল সংগ্রহ লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। 

খাদ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, গত আমন মৌসুমে ৩৩ টাকা কেজি দরে ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ ৫০ হাজার টন। কিন্তু গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে ধান কেনা হয় মাত্র ২৬ হাজার ৭১৪ টন। এটা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ। একই সময়ে আতপ ও সেদ্ধ চালও কেনা শুরু করে সরকার। ৪৬ টাকা দরে ১ লাখ টন আমন আর ৪৭ টাকা দরে ৫ লাখ ৫০ হাজার টন সেদ্ধ চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলে আতপ চাল পাওয়া যায় ৯৪ হাজার ৩৪৩ টন আর সেদ্ধ চাল পাওয়া যায় ৫ লাখ ১৪ হাজার ৫৬ টন। আতপ সংগ্রহ হয় লক্ষ্যমাত্রার ৯৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ আর সেদ্ধ চাল সংগ্রহ হয় লক্ষ্যমাত্রার ৯৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ। 

বগুড়ার অন্যতম খাদ্য উদ্ধৃত্ত এলাকা নন্দীগ্রাম। এ এলাকার বড় চাল ব্যবসায়ী মো. মিজানুর রহমান। ২০০ টন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ‘মায়ামনি’ চালকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। সরকারি গুদামে চাল দিতে গিয়ে গত পাঁচ বছর ধরেই লোকসান গুনছেন। গত আমন মৌসুমে তিনি সরকারি গুদামে চাল দেননি। মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘চার বছর ধরেই চুক্তিবদ্ধ চালকল মালিকদের লোকসানে সরকারি গুদামে চাল দিতে হচ্ছে। ২০১৯ সাল থেকে ৩ বছর আমার লোকসান হয়েছে বছরে গড়ে ৫০ লাখ টাকার মতো।’ কীভাবে এ সমস্যার সমাধান করেন, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সরকার খাদ্য আমদানি করতে গিয়ে যে পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি দেয়, সেই অর্থ দেশের চালকল মালিক ও চাষিদের দিলেই অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’ 

নন্দীগ্রাম বগুড়ার অন্যতম ধানপ্রধান এলাকা হলেও গত আমন মৌসুমে এক ছটাকও ধান পায়নি খাদ্য বিভাগ। নন্দীগ্রাম উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মো. ফারুক আলমগীর বলেন, ‘নন্দীগ্রামে সরকারি গুদামে চাল দেওয়ার সক্ষমতা ২২টি চালকল মালিকের থাকলেও চুক্তি করেছে মাত্র ছয় মিলার আর চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৬০০ টনের বেশি ধরা হলেও চাল পাওয়া গেছে ৩০০ টন।’ বগুড়ার ১২ উপজেলার মধ্যে শুধু বগুড়া সদর উপজেলায় সংগ্রহ হয়েছে ৩ টন আর সারিয়াকান্দিতে ৬৮ টন। সারিয়াকান্দি উপজেলার খাদ্য কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘জমি থেকেই চাষিরা যখন প্রতি মণ ধান ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করেন, তখন শুকনো এবং মানসম্মত ধানের সরকারি দর প্রতি কেজি ৩৩ টাকা। এ অবস্থায় সরকারকে ধান দিতে গেলে প্রতি কেজিতে চাষিদের লোকসান হয় ১ থেকে দেড় টাকা পর্যন্ত।’ 

খাদ্য অধিদপ্তরের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, গত আমন মৌসুমে সারা দেশে চুক্তি করার মতো চালকল মিল ছিল ১২ হাজার ৫০৪টি। কিন্তু খাদ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে চাল সরবরাহের চুক্তি করে ৮ হাজার ১৬৪ মিল। লোকসানের আশঙ্কায় চাল দেয়নি ৪ হাজার ১৪০টি চালকল।   

রাজবাড়ীতে জনপ্রিয় হচ্ছে এয়ার ফ্লো মেশিন

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩৮ এএম
আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪৬ এএম
রাজবাড়ীতে জনপ্রিয় হচ্ছে এয়ার ফ্লো মেশিন
পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে এয়ার ফ্লো মেশিন। রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা থেকে তোলা। ছবি: খবরের কাগজ

রাজবাড়ীতে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য জনপ্রিয় হচ্ছে এয়ার ফ্লো মেশিন। চাষিরা এই মেশিনের সাহায্যে মাসের পর মাস পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারছেন। এভাবে পেঁয়াজ সংরক্ষণে খরচও অনেক কম। এ করণে জেলার বিভিন্ন উপজেলার চাষিরা এয়ার ফ্লো মেশিনের দিকে ঝুঁকছেন।    

জানা গেছে, এয়ার ফ্লো মেশিন বসানোর জন্য ১২ বর্গফুটের একটি পাকা ঘর তৈরি করতে হয়। ঘরের ভেতর ১০ ইঞ্চি উঁচু করে বাঁশের মাচা বানাতে হয়। ঘরের মাঝে বসাতে হয় এয়ার ফ্লো মেশিন। এরপর ঘরে রাখা হয় পেঁয়াজ। পেঁয়াজের তাপমাত্রা ঠিক রাখার জন্য দেওয়া হয় এয়ার ফ্লো মেশিনের সাহায্যে বাতাস। বাতাস মেশিনের সাহায্যে বাঁশের মাচার নিচে ছড়িয়ে পড়ে এবং আস্তে আস্তে ওপরে ওঠে। ফলে পেঁয়াজের তাপমাত্র ঠিক থাকে। এ কারণে পেঁয়াজ শুকিয়ে যায় না এবং পচেও না। পাংশা উপজেলা সদরে অবস্থিত শাহীন মেশিনারিজ এই এয়ার ফ্লো মেশিন তৈরি করছে। যার দাম পড়ছে প্রায় ১৬ হাজার টাকা। 

পাংশা ও কালুখালী উপজেলার বিভিন্ন কৃষকের বাড়িতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অনেকে শোবার ঘরের একটি কক্ষেই এয়ার ফ্লো মেশিন বসিয়ে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করছেন। অনেক কৃষক একাধিক মেশিনও বসিয়েছেন।

কালুখালী উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের শ্যামসুন্দরপুর গ্রামের কৃষক মজনু বিশ্বাস বলেন, ‘এ বছর আমি ৩০০ মণ পেঁয়াজ এয়ার ফ্লো মেশিনের সাহায্যে ঘরে রেখেছি। আর কিছু পেঁয়াজ মাচা করে রেখেছি। এয়ার ফ্লো মেশিনের সুবিধা হলো, এ পদ্ধতিতে বাড়তি কোনো লোকের প্রয়োজন হয় না। সব দিক থেকে এই মেশিনের কার্যকারিতা ভালো। আগামী বছর আমি আরও একটি মেশিন বসাব।’

পাংশা উপজেলার মৌরাট ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক কুরবান মিঞা বলেন, ‘গত বছর পরীক্ষা করার জন্য আমি একটি মেশিন বসিয়েছিলাম। গত বছরের শুরুতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে আমি ডিসেম্বরে বিক্রি করেছি। একটি পেঁয়াজও পচেনি। বিদ্যুৎ বিলও খুব একটা আসেনি। এ জন্য এ বছর আমি আরও দুটি মেশিন বসিয়ে ৬০০ মণ পেঁয়াজ রেখেছি। মাচায় এভাবে পেঁয়াজ রাখার খরচ অনেক কম। আবার দীর্ঘদিনও সংরক্ষণ করা যায়।’

পাংশা পৌরসভার রঘুনাথপুর এলাকার কৃষক আনিছুর রহমান বলেন, ‘আমার নিজের কিছু পেঁয়াজ ছিল। আর কিছু পেঁয়াজ কিনেছি। আমি এক হাজার মণ পেঁয়াজ রাখব। এ জন্য তিনটি মেশিন বসিয়েছি। গত বছর যারা ব্যবহার করেছেন এমন ৪-৫ জনের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, এ মেশিনের কার্যকারিতা অনেক ভালো।’

শাহীন মেশিনারিজের মালিক শাহীন মণ্ডল বলেন, ‘আমি দুই বছর আগে ১০টি মেশিন বানিয়ে বিক্রি করেছিলাম। গত বছর ৪০টি বিক্রি করেছি। এ বছর অনেক বেশি বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া পাবনা থেকেও অনেকে এই মেশিন কিনে নিয়ে গেছে। গত দুই বছর যারা ব্যবহার করেছেন, তারা খারাপ বলেননি। কৃষি বিভাগ এই এয়ার ফ্লো মেশিন বিভিন্ন মেলায় প্রদর্শন করেছে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক বছর আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড সদর উপজেলার কৃষকদের এই এয়ার ফ্লো মেশিন সরবরাহ করে। কিন্তু ওই সময় এটি এমন সাড়া ফেলতে পারেনি। শাহীন ওই মেশিন দেখেই বানানো শিখেছিলেন।  এ পদ্ধতিতে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা হয়। আমরা চাষিদের এই পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, চাষিদের মাঝে এই এয়ার ফ্লো মেশিন বিনামূল্যে দেব।’

বেনাপোল বন্দরে পাঁচ মাসে ২১ হাজার ৩৬০ টন চাল আমদানি

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:২১ পিএম
বেনাপোল বন্দরে পাঁচ মাসে ২১ হাজার ৩৬০ টন চাল আমদানি
বেনাপোল স্থলবন্দর। ছবি: খবরের কাগজ

দেশের পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম সহনীয় রাখতে চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করেছিল সরকার। এ ঘোষণার পর বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে গত পাঁচ মাসে ভারত থেকে ২১ হাজার ৩৬০ টন চাল আমদানি হয়েছে। সর্বশেষ ১৩ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ২০০ টন চাল আমদানি হয়েছে। এরপর এই বন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ করেছে সরকার।।

বেনাপোল বন্দরের ডেপুটি ডিরেক্টর মামুন কবীর তরফদার এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি জানান, গত বছরের ১৭ নভেম্বর থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি শুরু হয়ে শেষ হয় মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল)। এ সময়ে তিন লাখ ৯২ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমোদন দেয় সরকার। সর্বশেষ রবিবার (১৩ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত আমদানি করা ২০০ টন নন-বাসমতী চালবোঝাই ছয়টি ট্রাক বন্দরের ৩১নং ট্রান্সশিফমেন্ট ইয়ার্ডে প্রবেশ করে। এ নিয়ে ১৭ নভেম্বর থেকে রবিবার (১৩ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ভারত থেকে ২১ হাজার ৩৬০ টন চাল আমদানি হয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক পত্রে বেসরকারিভাবে ৯২টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে দুই লাখ ৭৩ হাজার মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল এবং এক লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হলেও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো সময় স্বল্পতার কারণে চাল আমদানি করতে পারেনি। প্রথমে সরকারঘোষিত আমদানির মেয়াদ শেষ হয় গত বছরের ২২ ডিসেম্বর। এই সময়ের মধ্যে আশানুরূপ চাল আমদানি না হওয়ায় সময় ৪ দফা বাড়ানো হয়। যা সর্বশেষ মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বন্ধ করা হয়।

যেসব চাল আমদানি হয়েছে তার মধ্যে মোটা চাল প্রতি টন ৩৯০-৪০০ মার্কিন ডলার, চিকন চাল প্রতি টন ৪৫০-৪৭০ ডলার মূল্যে আমদানি হয়। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ শুল্কমুক্ত সুবিধায় এসব চাল খালাস দেয়। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এখন আর চাল আমদানি করতে পারবেন না ব্যবসায়ীরা।

চাল আমদানিকারক আলাউদ্দিন জানান, সরকারি চুক্তি অনুযায়ী ১৫ এপ্রিল চাল আমদানির শেষ সময় ছিল। এখনো ওপারে তার এক হাজার টন চাল দেশে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে।

আরেক চাল আমদানিকারক রুহুল আমিন জানান, বেনাপোল বন্দর থেকে আমদানি করা মোটা চাল প্রতি কেজি ৫২- ৫৩ টাকা, চিকন চাল ৭০-৭২ টাকা দরে পাইকারি বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে।

বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার মো. কামরুজ্জামান জানান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় মঙ্গলবার থেকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে চাল আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। চাল আমদানির বর্ধিত চতুর্থ ধাপের সর্বশেষ সময় ছিল ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। গত ৫ মাসে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ২১ হাজার ৩৬০ চাল আমদানি হয়েছে।

নজরুল/সালমান/

আইএমএফের ঋণের বাকি ২ কিস্তির সিদ্ধান্ত জুনে

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২৩ পিএম
আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪২ পিএম
আইএমএফের ঋণের বাকি ২ কিস্তির সিদ্ধান্ত জুনে
ছবি: সংগৃহীত

সফররত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দুটি শর্ত নিয়ে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা হয়নি এখনো। এর মধ্যে একটি হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় বাড়ানো এবং অন্যটি বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা। এই দুটি ইস্যুতে আইএমএফ যা চেয়েছে তা পূরণ করতে পারেনি সরকার। ফলে চলমান ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির টাকা ছাড়ের বিষয়টি আপাতত ঝুলে গেছে। তবে বাংলাদেশ সঠিক পথেই রয়েছে। আলোচনা অব্যাহত থাকবে। চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড় হবে কি না, তা জানা যাবে আগামী জুনের শেষে আইএমএফের বোর্ডসভায় চূড়ান্ত আলোচনার পর।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় আইএমএফের প্রতিনিধিদল। 

চলমান ঋণ কর্মসূচির আওতায় বাকি দুই কিস্তির অর্থছাড়ের আগে বাংলাদেশের আর্থিক খাতের নানা দিক পর্যালোচনা করতে আইএমএফের একটি মিশন গত ৫ এপ্রিল ঢাকা আসে। এনবিআর, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা ও দপ্তরের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনার পর গতকাল তাদের সফর শেষ হয়। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন আইএমএফের গবেষণা বিভাগের উন্নয়ন সামষ্টিক অর্থনীতি শাখার প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও। সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতি পাঠ করেন তিনি।

ঋণের চতুর্থ কিস্তির টাকা পাওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। এরপর এটি পিছিয়ে নেওয়া হয় মার্চে। তখন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন এপ্রিলে মিশন আসার পর সরকারের সঙ্গে আলোচনা হবে। আমরা আশা করছি, ঋণের দুই কিস্তি (চতুর্থ ও পঞ্চম) এক সঙ্গে পাব। কিন্তু গতকালের সংবাদ সম্মেলনে সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদল এ বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলেনি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, ‘২১ এপ্রিল থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে বসন্তকালীন সভা শুরু হচ্ছে। সেখানে ঋণের বাকি দুই কিস্তি নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, বাংলাদেশে রাজস্ব আদায় খুবই কম। এটি জিডিপির মাত্র ৮ শতাংশের নিচে। অথচ অনেক উন্নয়নশীল দেশে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ জিডিপির ১০ থেকে ১২ শতাংশ। কাজেই, বাংলাদেশকে রাজস্ব আয় বাড়াতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’ 

তিনি বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার পুরোপরি বাজারভিত্তিক করা উচিত। বাজারভিত্তিক করার এখনি সময়। কারণ, বর্তমানে বাংলাদেশে রিজার্ভ সন্তোষজনক অবস্থানে রয়েছে। প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স প্রবাহও ভালো। কাজেই এখন বিনিময় হারকে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার সময় এসেছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে বিনিময় হার এখনি পুরোপুরি বাজারের ওপর দেওয়া ঠিক হবে না।’ 

উল্লেখ্য, এই দুটি শর্ত ছাড়া বাকি শর্তগুলো পূরণ করতে পেরেছে বাংলাদেশ। 

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বর্তমান সরকার রাজস্ব আদায়ে কর সংস্কার, বিনিময় হারে নমনীয়তা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠন ও ব্যাংক খাত সংস্কারে জোর দিয়েছে। তবে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর বিষয়ে আরও জোর দিতে হবে। কর অব্যাহতি বাতিল করতে হবে। যোগ্য সবাইকে করের আওতায় আনতে হবে। রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। তবে আইএমএফ এনবিআরের করনীতি ও কর প্রশাসন আলাদা করার উদ্যোগের প্রশংসা করেছে। 

আইএমএফের সঙ্গে চলমান ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে পাওয়া গেছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তিতে পাওয়া গেছে ১১৫ কোটি ডলার। তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে মোট ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। কর্মসূচিটির আওতায় এখন বাকি আছে ২৩৯ কোটি ডলার। 

মিশনপ্রধান পাপাজর্জিও বলেন, ‘স্বচ্ছতা, সুশাসন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।’ ব্যাংক খাতে সুসংগঠিত সংস্কার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘সুশাসন ও স্বচ্ছতা বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়নে ও রপ্তানি খাতের বৈচিত্র্য আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’ জলবায়ু-সহনশীল অর্থনীতিতেও বিনিয়োগ বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি। 

বিবৃতিতে আইএমএফ বলেছে, বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তার মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৩.৩ শতাংশে নেমে এসেছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫.১ শতাংশ। এর কারণ হলো, গণ-অভ্যুত্থান এবং বিনিয়োগের ওপর অনিশ্চয়তার প্রভাব। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ১১.৭ শতাংশে পৌঁছানোর পর, ২০২৫ সালের মার্চ মাসে তা কমে ৯.৪ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে, বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ৫-৬ শতাংশের চেয়ে এখনো অনেক বেশি। 

অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য রাজস্ব আয় বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে আইএমএফ। বাংলাদেশের জিডিপির তুলনায় করের পরিমাণ অত্যন্ত কম। এটি বাড়াতে হলে একটি ন্যায়সংগত কর কাঠামো গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে এই উন্নয়ন সহযোগী। 

মেঘনা গ্রুপের বিরুদ্ধে ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ তদন্তে দুদক

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:০৭ পিএম
আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:১০ পিএম
মেঘনা গ্রুপের বিরুদ্ধে ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ তদন্তে দুদক
মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ ও এর মালিক মোস্তফা কামাল

ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের বিরুদ্ধে ৮০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাচারের অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের একটি দল গঠন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গত ৮ এপ্রিল দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এক চিঠির মাধ্যমে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

চিঠিতে বলা হয়, কমিশনের অনুমোদনের ভিত্তিতে উপপরিচালক আহসানুল কবির পলাশকে দলনেতা করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে। অন্যান্য সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক আব্দুল মালেক ও উপসহকারী পরিচালক নিজাম উদ্দিন।

চিঠিতে কমিশনের সিদ্ধান্তের আলোকে অভিযোগটি বিধি মোতাবেক অনুসন্ধান করে সুনির্দিষ্ট মতামতসহ (মতামত/সুপারিশের সপক্ষে রেকর্ডপত্র পতাকা চিহ্নিত করে) নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়।

তদন্ত দল গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপপরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত-১) মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন।

উল্লেখ্য, মেঘনা গ্রুপের বিরুদ্ধে বিশাল অঙ্কের অর্থ বিদেশে পাচারের অভিযোগ ওঠায় এটি এখন দেশের অন্যতম আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে। দুদকের তদন্তের ফলাফল কী হয়, তা দেশের অর্থনৈতিক খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তাছাড়া, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক মোস্তফা কামাল, তার স্ত্রী বিউটি আক্তার এবং তাদের সন্তানের ব্যাংক হিসাবও ইতোমধ্যে জব্দ করা হয়েছে।

গত ১০ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠায়।

চিঠিতে বলা হয়, মোস্তফা কামাল, তার স্ত্রী বিউটি আক্তার ও তাদের সন্তানদের ব্যক্তি হিসাব আগামী ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখতে হবে। একইসঙ্গে এসব ব্যক্তি ও তাদের সন্তানদের লেনদেন বিবরণী, হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসিসহ যাবতীয় তথ্য বিএফআইইউতে পাঠাতে হবে।

জানা যায়, মেঘনা গ্রুপের ৫৫টি প্রতিষ্ঠানে ৩১টি ব্যাংক ও তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ ১৬ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা।

অমিয়/