ঢাকা ৫ বৈশাখ ১৪৩২, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫
English
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২

মোবাইলে আর্থিক সেবায় এক মাসে ১ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা লেনদেন

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৫, ১১:৩১ এএম
মোবাইলে আর্থিক সেবায় এক মাসে ১ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা লেনদেন

হাতে থাকা মুঠোফোন এখন আর্থিক লেনদেনের বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে। যোগাযোগের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় আর্থিক লেনদেনে ব্যবহৃত হচ্ছে মুঠোফোন। বিকাশ, নগদ ও রকেটের মতো মোবাইলে আর্থিক সেবায় (এমএফএস) এক মাসে ১ লাখ ৭১ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে, অর্থাৎ দেশে মুঠোফোনের মাধ্যমে প্রতিদিন লেনদেন হয়েছে ৫ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা।

এসব লেনদেনে অনেক সময় কারও সহায়তার প্রয়োজন হচ্ছে না। কারণ, গ্রাহক নিজেই নিজের হিসাবে টাকা জমা করে অন্যকে পাঠানোর পাশাপাশি কেনাকাটাও করতে পারেন। যেমন- মুঠোফোনে রিচার্জ; বিভিন্ন কেনাকাটা, হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাওয়াদাওয়া ও পরিষেবার বিল পরিশোধ, টিকিট ক্রয় ইত্যাদি। পাশাপাশি এখন অর্থ স্থানান্তর, প্রবাসী আয় গ্রহণ, সরকারি ভাতা ও বৃত্তি বিতরণ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-বোনাস প্রদান এবং ব্যবসায়িক লেনদেনের বড় মাধ্যম হয়ে উঠছে এসব সেবা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, গত জানুয়ারিতে এসব সেবায় লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা। এর আগের মাস ডিসেম্বরে লেনদেন হয়েছিল ১ লাখ ৬৪ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা। এর আগে ২০২২ সালের এপ্রিলে এসব সেবায় প্রথমবারের মতো লেনদেন ১ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। এরপর ২০২৪ সালের মার্চে তা দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়ায়।

আর্থিক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আনুষ্ঠানিক মাধ্যমের কারণে এসব লেনদেনের হিসাব থাকছে। কে কাকে কখন কত টাকা টাকা দিয়েছেন, সে তথ্য জমা থাকছে। ফলে দিন দিন অবৈধ অর্থায়ন কিংবা ঘুষের মতো অপরাধ কমাতে এসব সেবা বড় মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

জানুয়ারিতে এমএফএস-সেবায় সব মিলিয়ে গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ২৩ কোটি ৯৩ লাখ ২৯৯। এর মধ্যে সক্রিয় হিসাব ৮ কোটি ৮৫ লাখ। একজন ব্যক্তি একাধিক সেবা ব্যবহার করতে পারেন, তাই প্রকৃত হিসাবধারী ঠিক কতজন, তা অবশ্য জানা যায়নি। গ্রাহকসেবা দিতে সারা দেশে এজেন্ট রয়েছে ১৮ লাখ ৪১ হাজার ৯৭৯টি।

জানুয়ারিতে লেনদেনের মধ্যে টাকা জমা ও উত্তোলন হয়েছে যথাক্রমে ৪৮ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা ও ৫৫ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। গ্রাহকরা পরস্পরকে পাঠিয়েছেন ৪৪ হাজার ১০৯ কোটি টাকা। 

কেনাকাটায় খরচ হয়েছে ৮ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা, সরকারি ভাতা দেওয়া হয়েছে ২ হাজার ১৮ কোটি টাকা, বেতন-ভাতা দেওয়া হয়েছে ৫ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া মুঠোফোনে রিচার্জ করা হয়েছে ১ হাজার ১১৫ কোটি টাকা ও পরিষেবা বিল দেওয়া হয়েছে ২ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা। জানুয়ারিতে এ সেবায় সব মিলিয়ে ৭২ কোটি ১৮ লাখ বার লেনদেন হয়েছে।

এমএফএস-সেবার শীর্ষে রয়েছে বিকাশ। তাদের নিবন্ধিত গ্রাহকসংখ্যা প্রায় আট কোটি। বিকাশে দিনে লেনদেন হয় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা।

বিকাশের করপোরেট কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, দেশের মানুষের মধ্যে মুঠোফোনে লেনদেনে অভ্যস্ততা তৈরি হচ্ছে এবং আস্থা বাড়ছে। এখন সাধারণ গ্রাহকদের লেনদেনের পাশাপাশি প্রবাসী আয় গ্রহণ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের হিসাবেও ভালো লেনদেন হচ্ছে। এ ছাড়া উৎসবকেন্দ্রিক চাহিদা ও নানা ছাড়ের কারণে কেনাকাটা বেড়েছে। কার্যকর ইকোসিস্টেম তৈরির মাধ্যমে মুঠোফোনে লেনদেনের পরিসর আরও শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করতে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে বিকাশ।

এ সেবায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে নগদ। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দৈনিক লেনদেন ইতোমধ্যে হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এ সেবা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে চালু হলেও এখন শহরে বসবাসকারী নাগরিকরাও এর বড় ব্যবহারকারী। ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে এ সেবা এখন শুধু টাকা পাঠানো ও গ্রহণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বিল পরিশোধ, কেনাকাটা, মুঠোফোনে রিচার্জ, টাকা জমানো, ঋণ গ্রহণসহ নানা ধরনের লেনদেনে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশেষ করে উৎসবে-পার্বণে এসব সেবার ব্যবহার ১৫-২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। ফলে রোজা ও ঈদ উপলক্ষে চলতি মাসে লেনদেনে বড় উল্লম্ফন ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে এমএফএস চালুর ফলে শুধু কম আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে বড় করপোরেট ও বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এবং শিল্পমালিকরাও এর সুবিধা পেয়েছেন। এখন দেশের সব বড় ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য বিক্রির টাকা এ সেবার মাধ্যমে সংগ্রহ করছে, যেটাকে কালেকশন সেবা বলছে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো। আবার অনেক বড় শিল্পগোষ্ঠী তাদের শ্রমিকের বেতন দিচ্ছে এমএফএসের মাধ্যমে।

শুধু তা-ই নয়, সরকারি ভাতা, বৃত্তি, কেনাকাটা, পরিষেবা বিল পরিশোধ- সবই করা যাচ্ছে এমএফসের মাধ্যমে। আবার ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ ও আদায় এবং বিদেশি সংস্থার তহবিল বিতরণও হচ্ছে এসব সেবার মাধ্যমে।

বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত ও ডাক বিভাগের সেবা নগদসহ দেশে এখন এমএফএস প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১৩টি। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিকাশ, নগদ, রকেট, উপায়, এমক্যাশ, মাইক্যাশ, ট্যাপ প্রভৃতি।

দেশে মুঠোফোনের মাধ্যমে আর্থিক সেবার যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালের মার্চে। বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক প্রথম এ সেবা চালু করে। পরে সেবাটির নাম বদলে রাখা হয় রকেট। এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এমএফএস-সেবা চালু করে বিকাশ।

আইএমএফের ঋণের বাকি ২ কিস্তির সিদ্ধান্ত জুনে

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২৩ পিএম
আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪২ পিএম
আইএমএফের ঋণের বাকি ২ কিস্তির সিদ্ধান্ত জুনে
ছবি: সংগৃহীত

সফররত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দুটি শর্ত নিয়ে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা হয়নি এখনো। এর মধ্যে একটি হচ্ছে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায় বাড়ানো এবং অন্যটি বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা। এই দুটি ইস্যুতে আইএমএফ যা চেয়েছে তা পূরণ করতে পারেনি সরকার। ফলে চলমান ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির টাকা ছাড়ের বিষয়টি আপাতত ঝুলে গেছে। তবে বাংলাদেশ সঠিক পথেই রয়েছে। আলোচনা অব্যাহত থাকবে। চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড় হবে কি না, তা জানা যাবে আগামী জুনের শেষে আইএমএফের বোর্ডসভায় চূড়ান্ত আলোচনার পর।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় আইএমএফের প্রতিনিধিদল। 

চলমান ঋণ কর্মসূচির আওতায় বাকি দুই কিস্তির অর্থছাড়ের আগে বাংলাদেশের আর্থিক খাতের নানা দিক পর্যালোচনা করতে আইএমএফের একটি মিশন গত ৫ এপ্রিল ঢাকা আসে। এনবিআর, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা ও দপ্তরের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনার পর গতকাল তাদের সফর শেষ হয়। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন আইএমএফের গবেষণা বিভাগের উন্নয়ন সামষ্টিক অর্থনীতি শাখার প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও। সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতি পাঠ করেন তিনি।

ঋণের চতুর্থ কিস্তির টাকা পাওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। এরপর এটি পিছিয়ে নেওয়া হয় মার্চে। তখন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন এপ্রিলে মিশন আসার পর সরকারের সঙ্গে আলোচনা হবে। আমরা আশা করছি, ঋণের দুই কিস্তি (চতুর্থ ও পঞ্চম) এক সঙ্গে পাব। কিন্তু গতকালের সংবাদ সম্মেলনে সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদল এ বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলেনি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, ‘২১ এপ্রিল থেকে ওয়াশিংটন ডিসিতে বসন্তকালীন সভা শুরু হচ্ছে। সেখানে ঋণের বাকি দুই কিস্তি নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই, বাংলাদেশে রাজস্ব আদায় খুবই কম। এটি জিডিপির মাত্র ৮ শতাংশের নিচে। অথচ অনেক উন্নয়নশীল দেশে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ জিডিপির ১০ থেকে ১২ শতাংশ। কাজেই, বাংলাদেশকে রাজস্ব আয় বাড়াতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’ 

তিনি বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার পুরোপরি বাজারভিত্তিক করা উচিত। বাজারভিত্তিক করার এখনি সময়। কারণ, বর্তমানে বাংলাদেশে রিজার্ভ সন্তোষজনক অবস্থানে রয়েছে। প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স প্রবাহও ভালো। কাজেই এখন বিনিময় হারকে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার সময় এসেছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে বিনিময় হার এখনি পুরোপুরি বাজারের ওপর দেওয়া ঠিক হবে না।’ 

উল্লেখ্য, এই দুটি শর্ত ছাড়া বাকি শর্তগুলো পূরণ করতে পেরেছে বাংলাদেশ। 

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বর্তমান সরকার রাজস্ব আদায়ে কর সংস্কার, বিনিময় হারে নমনীয়তা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠন ও ব্যাংক খাত সংস্কারে জোর দিয়েছে। তবে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর বিষয়ে আরও জোর দিতে হবে। কর অব্যাহতি বাতিল করতে হবে। যোগ্য সবাইকে করের আওতায় আনতে হবে। রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। তবে আইএমএফ এনবিআরের করনীতি ও কর প্রশাসন আলাদা করার উদ্যোগের প্রশংসা করেছে। 

আইএমএফের সঙ্গে চলমান ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে পাওয়া গেছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তিতে পাওয়া গেছে ১১৫ কোটি ডলার। তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে মোট ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। কর্মসূচিটির আওতায় এখন বাকি আছে ২৩৯ কোটি ডলার। 

মিশনপ্রধান পাপাজর্জিও বলেন, ‘স্বচ্ছতা, সুশাসন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।’ ব্যাংক খাতে সুসংগঠিত সংস্কার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘সুশাসন ও স্বচ্ছতা বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়নে ও রপ্তানি খাতের বৈচিত্র্য আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’ জলবায়ু-সহনশীল অর্থনীতিতেও বিনিয়োগ বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি। 

বিবৃতিতে আইএমএফ বলেছে, বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তার মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৩.৩ শতাংশে নেমে এসেছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫.১ শতাংশ। এর কারণ হলো, গণ-অভ্যুত্থান এবং বিনিয়োগের ওপর অনিশ্চয়তার প্রভাব। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ১১.৭ শতাংশে পৌঁছানোর পর, ২০২৫ সালের মার্চ মাসে তা কমে ৯.৪ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে, বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ৫-৬ শতাংশের চেয়ে এখনো অনেক বেশি। 

অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য রাজস্ব আয় বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে আইএমএফ। বাংলাদেশের জিডিপির তুলনায় করের পরিমাণ অত্যন্ত কম। এটি বাড়াতে হলে একটি ন্যায়সংগত কর কাঠামো গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে এই উন্নয়ন সহযোগী। 

মেঘনা গ্রুপের বিরুদ্ধে ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ তদন্তে দুদক

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:০৭ পিএম
আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:১০ পিএম
মেঘনা গ্রুপের বিরুদ্ধে ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ তদন্তে দুদক
মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ ও এর মালিক মোস্তফা কামাল

ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের বিরুদ্ধে ৮০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা পাচারের অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের একটি দল গঠন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গত ৮ এপ্রিল দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এক চিঠির মাধ্যমে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

চিঠিতে বলা হয়, কমিশনের অনুমোদনের ভিত্তিতে উপপরিচালক আহসানুল কবির পলাশকে দলনেতা করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে। অন্যান্য সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক আব্দুল মালেক ও উপসহকারী পরিচালক নিজাম উদ্দিন।

চিঠিতে কমিশনের সিদ্ধান্তের আলোকে অভিযোগটি বিধি মোতাবেক অনুসন্ধান করে সুনির্দিষ্ট মতামতসহ (মতামত/সুপারিশের সপক্ষে রেকর্ডপত্র পতাকা চিহ্নিত করে) নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়।

তদন্ত দল গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপপরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত-১) মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন।

উল্লেখ্য, মেঘনা গ্রুপের বিরুদ্ধে বিশাল অঙ্কের অর্থ বিদেশে পাচারের অভিযোগ ওঠায় এটি এখন দেশের অন্যতম আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে। দুদকের তদন্তের ফলাফল কী হয়, তা দেশের অর্থনৈতিক খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তাছাড়া, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক মোস্তফা কামাল, তার স্ত্রী বিউটি আক্তার এবং তাদের সন্তানের ব্যাংক হিসাবও ইতোমধ্যে জব্দ করা হয়েছে।

গত ১০ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠায়।

চিঠিতে বলা হয়, মোস্তফা কামাল, তার স্ত্রী বিউটি আক্তার ও তাদের সন্তানদের ব্যক্তি হিসাব আগামী ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখতে হবে। একইসঙ্গে এসব ব্যক্তি ও তাদের সন্তানদের লেনদেন বিবরণী, হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসিসহ যাবতীয় তথ্য বিএফআইইউতে পাঠাতে হবে।

জানা যায়, মেঘনা গ্রুপের ৫৫টি প্রতিষ্ঠানে ৩১টি ব্যাংক ও তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ঋণের পরিমাণ ১৬ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা।

অমিয়/

মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:০৮ পিএম
আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:০৭ পিএম
মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ
মেঘনা গ্রুপ


ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করেছে  বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। একইসঙ্গে তাদের লেনদেনসহ যাবতীয় তথ্য চাওয়া হয়েছে। 

গত ১০ এপ্রিল বিএফআইইউ দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, মোস্তফা কামাল, তার স্ত্রী বিউটি আক্তার ও তাদের সন্তানদের ব্যক্তি হিসাব আগামী ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখতে হবে। একইসঙ্গে এসব ব্যক্তি ও তাদের সন্তানদের লেনদেন বিবরণী, হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসিসহ যাবতীয় তথ্য বিএফআইইউতে পাঠাতে হবে।

অমিয়/

স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড, ভরিতে বাড়ল ৩০৩৩ টাকা

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৪৬ পিএম
আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৫২ পিএম
স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড, ভরিতে বাড়ল ৩০৩৩ টাকা
ছবি : সংগৃহীত

দেশের বাজারে ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম। সর্বশেষ ৩ হাজার ৩৩ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ২০৯ টাকা, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। 

নতুন মূল্য আজ বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়।

বাজুস জানায়, স্থানীয় বাজারে পিওর গোল্ড বা তেজাবি স্বর্ণের দামে ঊর্ধ্বগতির কারণে এ দাম পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৩ এপ্রিল রাতে স্বর্ণের দাম ভরিপ্রতি সর্বোচ্চ ১ হাজার ৩৮ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৬২ হাজার ১৭৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়, যা গতকাল রাত পর্যন্ত কার্যকর ছিল।

খবরে বলা হয়েছে, বিশ্ববাজারেও চলছে স্বর্ণের দামের উল্লম্ফন। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা ও পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের প্রতি আউন্সের দাম ৩ হাজার ৩০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা সর্বকালের সর্বোচ্চ।

স্বর্ণের দামে বড় ধরনের পরিবর্তন এলেও রুপার দামে কোনো পরিবর্তন হয়নি। বাজুসের নির্ধারিত দর অনুযায়ী ২২ ক্যারেট রুপা ২ হাজার ৫৭৮ টাকা, ২১ ক্যারেট ২ হাজার ৪৪৯ টাকা, ১৮ ক্যারেট ২ হাজার ১১১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রুপার দাম ১ হাজার ৫৮৬ টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, নিরাপদ বিনিয়োগের ঝোঁক এবং স্থানীয় বাজারে সরবরাহ সংকট মিলিয়ে স্বর্ণের দামে এই রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। দাম আরও বাড়তে পারে এমন শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন অনেক ব্যবসায়ী।

রপ্তানির বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে: রেহমান সোবহান

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৩৭ পিএম
আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:০১ পিএম
রপ্তানির বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে: রেহমান সোবহান
ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কে বাংলাদেশে প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া নিয়ে আয়োজিত সংলাপে বক্তব্য রাখছেন রেহমান সোবহান। ছবি: খবরের তকাগজ

আগামী পাঁচ বছর রপ্তানির বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান।

তিনি বলেন,  ‘আগামী পাঁচ বছর বাংলাদেশের উচিত হবে, রপ্তানির বিকল্প বাজার খোঁজা। ট্রাম্পের শুল্ক নীতি নিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।  যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রপ্তানির একক বৃহত্তম বাজার। সেখানে এত অনিশ্চয়তা থাকলে ইউরোপীয় ইউনিয়নে আমাদের বাজার বড় করার পাশাপাশি বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে।’ 

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাজধানীর একটি হোটেলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) আয়োজনে ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কে বাংলাদেশে প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া নিয়ে আয়োজিত সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। 

সংলাপে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সিপিডির ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন সংলাপ সঞ্চালনা করেন। 

মূল প্রবন্ধে মোস্তাফিজুর বলেন, ‘২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানিতে ১৮ কোটি ডলার আমদানি শুল্ক পাওয়া গেছে। তার বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি পণ্যে ১২৭ কোটি ডলার শুল্ক আদায় করেছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হওয়া শীর্ষ তিন পণ্যে শুল্ক শূন্য করলে অন্য দেশকে সমান সুবিধা দিতে হবে। এতে বাংলাদেশের মোট শুল্ক লোকসান হবে ১৭ কোটি ডলার। ফলে নিছক শুল্ক হ্রাস করে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যাবে, বিষয়টি তেমন নয়।’ 

রেহমান সোবহান বলেন,  ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতির প্রধান লক্ষ্যবস্তু চীন। তাদের মধ্যকার সম্পর্ক কেমন হবে, তা এখনো নির্ধারিত হয়নি। আরও সময় লাগবে। বিশ্ব অর্থনীতিতে সেটাই হবে সবচেয়ে বড় বিষয়। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের যে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা আছে, তার মধ্যে থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে আমাদের বাজার বড় করার চেষ্টা করতে হবে। কেননা সেখানে আরও কয়েক বছর বাংলাদেশের জন্য শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা আছে। সেই সঙ্গে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের বাজার অনুসন্ধান করতে হবে। এশিয়ার বাজারও আছে; এই মহাদেশ আগামী দিনে বিশ্বের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক প্রবৃদ্ধির মূল কেন্দ্র হবে। আগামী ২৫ বছরের মধ্যে এশিয়াই হবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সবচেয়ে বড় জায়গা।’

আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ট্যারিফ অ্যান্ড ট্রেড কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তফা আবিদ খান বলেন, ‘প্রথমেই বুঝতে হবে, এটা পারস্পরিক শুল্ক নয়। ফলে আমরা যতই সাড়া দিই না কেন, লাভ নেই। আমাদের বুঝতে হবে, যুক্তরাষ্ট্র কী চায়। সে জন্য আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।’ 

তিনি বলেন, ‘কোনো পণ্যে শুল্ক কমালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আমদানি বাড়বে, তা নিশ্চিত নয়। আরেকটি উপায় হলো, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করা যায়।’

মৃত্তিকা/পপি/