
মৌলভীবাজারের রাজনগরের কাউয়াদীঘি হাওরপাড়ে শতবর্ষী বাঁশের হাট এখনো জমজমাট। বৃহত্তর সিলেটের অন্যতম এই হাটে প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও শুক্রবার বাঁশ কেনাবেচা হয়। সোমবারের হাটে ২ থেকে ৩ লাখ টাকার বাঁশ বিক্রি হয়। শুক্রবার তা বেড়ে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকায় পৌঁছায়।
রাজনগর, শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বাঁশ আসে। গ্রামে বাঁশঝাড় কমে যাওয়ায় সরবরাহ কমেছে। তবে নির্মাণ ও হস্তশিল্পের জন্য এখানকার বাঁশের চাহিদা এখনো বেশি।
সম্প্রতি রাজনগরের উত্তরভাগ ইউনিয়নের এই হাটে গিয়ে দেখা যায়, নানা ধরনের পণ্য থাকলেও বাঁশই মূল আকর্ষণ। চাঁদনীঘাট-হলদিগুল সড়কের উত্তরের নিচু জমিতে সারি সারি বাঁশ রাখা হয়েছে। ক্রেতারা এসে পছন্দসই বাঁশ বাছাই করছেন, দরদাম করে কিনছেন।
বাঁশ পরিবহনের জন্য কেউ ঠেলাগাড়ি, কেউ পিকআপ ভ্যান ব্যবহার করছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শত বছর আগে এই গ্রামীণ হাটটি গড়ে ওঠে। কাউয়াদীঘি হাওর ও কুশিয়ারা নদীর নৌপথ ছিল পণ্য পরিবহনের প্রধান মাধ্যম। একসময় এখানে লঞ্চও চলত, যা বাঁশসহ অন্যান্য পণ্য পরিবহন সহজ করেছিল।
এই হাটে বালাগঞ্জ, নবীগঞ্জ, আজমিরিগঞ্জ, সিলেট, সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা আসেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, আগের মতো বাঁশের জোগান নেই। গ্রামের ফাঁকা জায়গাগুলোতে এখন বাড়িঘর উঠেছে, ফলে বাঁশঝাড় কমে গেছে।
৩৫ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছেন বাছিত মিয়া। তিনি জানান, রাজনগর, শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ, কুলাউড়া থেকে বাঁশ আসে। প্রতিদিনই বাঁশ বেচাকেনা হয়, তবে প্রতি সপ্তাহে সোম ও শুক্রবার হাট বসে। সোমবারের হাটে ২ থেকে ৩ লাখ টাকার বাঁশ বিক্রি হয়। শুক্রবারে তা বেড়ে ৫-৬ লাখ টাকা পর্যন্ত পৌঁছায়।
বাঁশ ব্যবসায়ী কালাম মিয়া বলেন, ‘সোজা, লম্বা ও মজবুত বাঁশের সরবরাহ কম। আগে গ্রামেগঞ্জে প্রচুর বাঁশঝাড় ছিল, এখন তা কমে গেছে। তারপরও কালারবাজার বাঁশের জন্য পরিচিত।’
জেলা শহর থেকে বাঁশ কিনতে আসা নির্মাণ ঠিকাদার আবু তাহের বলেন, ‘ভবন নির্মাণে বাঁশ অপরিহার্য। প্রতিটি ফ্লোরে মাচা তৈরি ও খুঁটি হিসেবে এর ব্যবহার হয়। এখানে চাহিদামতো ও সস্তায় বাঁশ পাওয়া যায়।’
উত্তরভাগের রাজাপুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব মহেন্দ্র সরকার ৪০ বছর ধরে এই বাজার থেকে বাঁশ কিনে টুকরি, কুলা, খলই তৈরি করেন। তিনি বলেন, ‘এত বড় বাঁশের হাট আর কোথাও আছে কি না, জানি না।’
প্রবীণদের মতে, আগের মতো নৌপথের প্রচলন নেই, তবে বাজারের কদর কমেনি। এখনো বহু ব্যবসায়ী সারা বছর এখানে বাঁশ কেনাবেচা করেন। ঐতিহ্যবাহী এই হাট শতবর্ষ পেরিয়ে এখনো টিকে আছে বাঁশের জন্য।