
ঈদের ছুটি শুরু হতে আর কয়েক দিন বাকি। তাই বাড়ি যাওয়ার আগে শেষ সময়ের কেনাকাটা সারছেন অনেকে। জামাকাপড়ের সঙ্গে মিলিয়ে জুতাসহ নানা অনুষঙ্গ কিনতেই বেশি ব্যস্ত ক্রেতারা। তবে এখনো ভিড় আছে থ্রি-পিসের দোকানগুলোতে। শেষ সময়েও আসছে নতুন নতুন কালেকশন। আর সেগুলো দেখতে আর কিনতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। ক্রেতারা বলছেন, গরমে পাকিস্তানি কাপড়ে আরাম বেশি। আর বিক্রেতারা বলছেন, অন্য সময় ভারতীয় পোশাকের কদর বেশি থাকলেও এবার পাকিস্তানি থ্রি-পিসের চাহিদা বেশি।
রবিবার (২৩ মার্চ) ধানমন্ডির বিভিন্ন শপিংমল ঘুরে দেখা যায়, এখনো নতুন নতুন কালেকশন আসছে আনস্টিচড থ্রি-পিসের দোকানগুলোতে। ধানমন্ডির রাপা প্লাজা, আনাম র্যাংগস প্লাজা, সীমান্ত স্কয়ারের মতো শপিংমলগুলোতে রয়েছে বেশ কিছু থ্রি-পিসের দোকান। যেখানে আনস্টিচড ও স্টিচড সব ধরনের দেশি-বিদেশি থ্রি-পিস পাওয়া যাচ্ছে। সেখানকার ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিগত বছরগুলোতে ভারতীয় পোশাকের আমদানি বেশি থাকায় বিক্রিও বেশি ছিল। তবে এবার পাকিস্তানি থ্রি-পিসের চাহিদা বেশি।
সাবিহা ইলমা ও তাসলিমা ইসলাম। দুজন রুমমেট। আনাম র্যাংগস প্লাজার একটি দোকানে কথা হয় তাসলিমার সঙ্গে। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘ঈদের জন্য ১৫ রোজার আগেই আনস্টিচড থ্রি-পিস নেওয়া হয়েছে। কারণ ১৫ রোজার পর আর দর্জির দোকানগুলো নতুন অর্ডার নিচ্ছে না। তাই আগেই দুটো জামা বানাতে দিয়েছি। কিন্তু এখন আবার শুনলাম নতুন কালেকশন এসেছে তাই দেখতে এসেছি। পছন্দ হলে নিয়ে নেব।’
তাসলিমা ইসলাম আরও বলেন, গত ঈদে যেসব ডিজাইনের পোশাক এসেছিল, এবার অনেকটাই সে রকমই পোশাক এসেছে। কিন্তু দাম গতবারের থেকে প্রায় ৩-৪ হাজার টাকা বেশি।
ওই দোকানের বিক্রেতা রুবেল বলেন, ‘আমাদের এখানে পাকিস্তানি জামাগুলোই বেশি। তাই এগুলোর ক্রেতাই আসেন এখানে। আমি এখানে তিন বছর ধরে কাজ করি। গত দুই বছরের তুলনায় এ বছর বিক্রি ভালো হচ্ছে।’
ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডের বিভিন্ন শপিংমল ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পাকিস্তানি থ্রি-পিস এসেছে এবার। এগুলোর মধ্যে বেশি চাহিদা আছে মারিয়া বি, জারা, শাহজাহান, ফারাহ তালিব আজিজ, সায়রা রিজওয়ানের পোশাকগুলোর। এ ছাড়া নুর, কারিজমা, আগা নূরের পোশাকগুলো কিনছেন অনেকে। এ ছাড়া জোহরা, বিন হামিদ, সাদাবাহার, বিন সাঈদ, গুলজি, গুলাল, কোকো পোশাকগুলোর দাম তুলনামুলক কম থাকায় এগুলোর বিক্রি বেশি বলছেন বিক্রেতারা।
লালমাটিয়ার সানরাইজ প্লাজায় থ্রি-পিস কিনতে এসে শাহানা আলম বলেন, ‘এবার গরম থাকায় পাকিস্তানি কাপড়ই কিনছি। বিশেষ করে লন ও সুতির কাপড়গুলো অনেক আরামদায়ক। আর এগুলোর মধ্যে পাকিস্তানি থ্রি-পিসের ডিজাইন ও কালার কম্বিনেশন ভালো থাকে। তাই এবারের ঈদের জন্য আমি ও আমার মেয়ে দুজনই পাকিস্তানি থ্রি-পিস কিনেছি। আমার জন্য দুটি। আর আমার মেয়ে কিনেছে তিনটি। এর মধ্যে দুটি আনস্টিচড আর একটি টু-পিস রেডিমেড।’
শাহানা আলমের মেয়ে সাবিহা আলম বলেন, এখন পাকিস্তানি কাপড়ের সুন্দর ডিজাইন আসে। এগুলোতে নেক সুন্দর সুন্দর প্যানেল ও লেস ম্যাচ করা থাকে। অনেক সময় ওড়নাতেও লেস ও পার্লের কাজ করা থাকে। তাই নিজেদের কিছু আর ম্যাচ করে কিনতে হয় না। এ জন্য ঝামেলা কম। এ ছাড়া অনেকে রেডিমেড টু-পিস ও থ্রি-পিসও রাখেন। সেগুলো কিনলে বানানোর চিন্তা থাকে না। আর ওদের কাটিং ও ফিটিংও দারুণ।
এ নিয়ে বিক্রেতা মাসুম বিশ্বাস খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের এখানে রেডিমেড ও আনস্টিচড দুই ধরনেরই পাকিস্তানি জামা পাওয়া যায়। ক্রেতাদের সুবিধার্থে আমরা টেইলারিংয়ের ব্যবস্থাও রেখেছি। তবে এখন আর ঈদের আগের অর্ডার নিচ্ছি না। ১৭ রোজা পর্যন্ত অর্ডার নেওয়া হয়েছে।’
সানরাইজ প্লাজার একাধিক বিক্রেতা জানান, ব্র্যান্ড-কাজ ও কাপড়ভেদে দামের ভিন্নতা রয়েছে। এর মধ্যে মারিয়া বি’র পোশাক ৮ থেকে ১১ হাজার টাকা, জারা শাহজাহানের ৯ থেকে ১১ হাজার, ফারাহ তালিব আজিজের ৮ থেকে ১১ হাজার এবং সায়রা রিজওয়ানের পোশাকগুলো ১০ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। এ ছাড়া নুর, কারিজমা, আগা নূরের পোশাকগুলো পাওয়া যাচ্ছে ৮ থেকে ১৬ হাজার টাকায়। পাশাপাশি জোহরা, বিন হামিদ, সাদাবাহার, বিন সাঈদ, গুলজি, গুলাল, কোকো পোশাকগুলোর দাম পড়ছে ৩ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত।
তবে এই একই ব্র্যান্ডগুলোর কপি জামা পাওয়া যাচ্ছে নিউ মার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনীচকসহ এর আশপাশের মার্কেটগুলোতে। কাপড় ও ছাপার কোয়ালিটি ভেদে এসব থ্রি-পিসের দাম ১ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত।