ঢাকা ১৬ বৈশাখ ১৪৩২, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

রোজার পরও পণ্যমূল্য বেশি

প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩৫ এএম
রোজার পরও পণ্যমূল্য বেশি
ছবি: সংগৃহীত

ঈদ শেষ হয়েছে ১০ দিন। রমজানে বেড়ে থাকা মাংস বেগুন, শসা লেবুর দাম এখনো কমেনি। বরং এক মাসের ব্যবধানে মুরগির মাংসের দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা। চিকন চালের দামও কেজিতে বেড়েছে ৫ টাকা। চাহিদা কমলেও বেগুন, শসা সেঞ্চুরির ওপরে। ফুলকপির দাম দ্বিগুণ হয়ে ৮০ টাকা পিস বিক্রি হচ্ছে। অন্য সবজির দামও কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। তবে আলু, পেঁয়াজ, ডিম, চিনি, আটা, সয়াবিন তেলের দাম বাড়েনি। 

বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

ব্রয়লারের কেজি ২১০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩২০ টাকা

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, মোকামের (আড়ৎ) দামের ওপর বাজার নির্ভর করে। আমরা দাম কম পেলে কম দামেই বিক্রি করতে পারি, বেশি হলে ভোক্তাদের টাকা বেশি লাগে। 

এ ব্যাপারে হাতিপুল বাজারের সবুজ পোলট্রি ফার্মের আবুল বাশার খবরের কাগজকে বলেন, ‘দামের ব্যাপারে আমাদের করার কিছু নেই। যেভাবে কেনা, সেভাবেই বিক্রি করা হয়। রমজান মাসের প্রথমে চাহিদা বেশি ছিল। তার পরও ব্রয়লার ১৭৫ থেকে ১৮০, সোনালি ২৭০-২৮০ টাকা, দেশি মুরগি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা বিক্রি হয়েছে। কিন্তু মাসখানেক পরে সেই দর আর নেই। ব্রয়লার মুরগি ২১০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।’ 

এদিকে টাউন হল বাজারের গাজীপুর ব্রয়লার হাউসের স্বত্বাধিকারী মো. রানা মাসুদসহ অন্যরাও বলেন, ‘আগের চেয়ে মুরগির দাম বেড়েছে। তাই ব্রয়লার মুরগি ২০০ ও সোনালি ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, খাসির মাংস ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।’ 

তবে মুরগির দাম চড়লেও ডিমে একটু স্বস্তি দেখা গেছে। আগের মতোই ১২০ থেকে ১২৫ টাকা ডজনে বিক্রি হচ্ছে। আকারভেদে আগের মতোই রুই, কাতল মাছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি, পাবদা ৪০০, চিংড়ি ৮০০-১০০০ টাকা পাঙাশ ১৮০ থেকে ২২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। 

চোখ রাঙাচ্ছে সবজি

রমজানের প্রথম দিকে বেগুন, শসা, লেবুর চাহিদা বাড়তে থাকায় সেগুলোর দাম সেঞ্চুরি ছাড়িয়ে যায়। ঈদের আগের দিন বাজারে আরও উত্তাপ ছড়ায়। ঈদ শেষে দাম একটু কমেছে। কিন্তু যেভাবে বেড়েছে সেইভাবে আর কমেনি। হাতিরপুল বাজারের সবজি বিক্রেতা তাজুল ইসলাম ও টাউন হল বাজারের সবজি বিক্রেতা ইব্রাহীম শেখ প্রায় একই সুরে কথা বলেন। 

তাদের কথায় উঠে আসে, ‘অধিকাংশ সবজির দাম বেড়ে গেছে। লম্বা বেগুন ১০০ থেকে ১২০ টাকা, সবুজ বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, হাইব্রিড শসার কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা ও দেশিজাতের শসা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, বড় লেবুর হালি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ছোট লেবু ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। কাঁচা মরিচের কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। তবে ফুলকপির দাম দ্বিগুণ হয়েছে। প্রতি পিস ৮০ থেকে ১০০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ থেকে ৬০ টাকা পিস, করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি, পটোল ও ঢ্যাঁড়শ ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, টমেটো ৫০ থেকে ৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।’ 

খুচরা বিক্রেতারা বলেন, আলু ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি, পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫০ টাকা, দেশি আদা ১৩০ টাকা, আমদানি করা আদা ২২০, দেশি রসুন ১২০ টাকা, আমদানি করা রসুন ২৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এদিকে রমজানকে কেন্দ্র করে দেশে এবার প্রচুর আমদানি হলেও রমজানে খেজুরের দাম কমেনি। ঈদ শেষেও তা কমেনি। 

চাহিদা কমলেও চিকন চালের দাম চড়া

রমজানে চালের চাহিদা কমে যাওয়ায় বিক্রি কমে যায়। তার পরও কিন্তু দাম কমেনি। বরং এক মাসের ব্যবধানে চিকন চালের দাম কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে ভালো মানের মোজাম্মেল কোম্পানির চাল ৯০ টাকা থেকে বেড়ে ৯৬ টাকা কেজি হয়ে গেছে। তবে রশিদ, সাগরসহ অন্য মিনিকেট চাল ৭৫ থেকে ৯০ টাকা কেজি, আটাশ ৬০ থেকে ৬৫ টাকা ও মোটা চাল ৫২ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটার ১৭৫ টাকা, ২ কেজির আটা ১২০ টাকা, ছোলার কেজি ১০৫ টাকা, মসুর ডাল ১২০ থেকে ১৩৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। 

নকশাবহির্ভূত রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০২ এএম
নকশাবহির্ভূত রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল
দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)

নকশাবহির্ভূত রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। 

সোমবার (২৮ এপ্রিল) গণমাধ্যমে এক গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করার বিষয়টি জানায় ডিএসসিসি।

গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় কিছু আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের অভ্যন্তরে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদিত নকশায় না থাকলেও বিধিবহির্ভূতভাবে রেস্তোরাঁ (রেস্টুরেন্ট) পরিচালনা করা হচ্ছে এবং ভবনের ছাদে অবৈধভাবে রুফটপ রেস্তোরাঁ পরিচালিত হচ্ছে, যা জনজীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বিধিবহির্ভূতভাবে রেস্তোরাঁ পরিচালনা করায় ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ও সম্পদহানির ঘটনা ঘটছে। এসব ক্ষেত্রে অনেক অবৈধ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অনৈতিক উপায়ে করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ করেছে।

ডিএসসিসির গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সম্পদ ও জানমালের ঝুঁকি এড়াতে নকশাবহির্ভূত সব রেস্তোরাঁ এবং ভবনের ছাদে স্থাপিত রুফটপ রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল ঘোষণা করা হলো। বাতিল করা লাইসেন্স দিয়ে কোনো ব্যবসা পরিচালনা করা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘যেসব রেস্তোরাঁ সঠিক তথ্য না দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছে, সেগুলো বাতিল করা হয়েছে। তবে ভবনের অনুমোদন কিন্তু বাতিল করা হয়নি। ভবনের নকশায় রেস্তোরাঁ থাকলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা সশরীর উপস্থিত হয়ে আমাদের কাছে তথ্য-উপাত্ত দিলে সেগুলো সচল করা হবে।’ অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিটি রেস্তোরাঁকে আলাদা করে চিঠি পাঠাব।’

ডিএসসিসির এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান। তিনি বলেন, কোনো প্রকার আলোচনা না করেই ডিএসসিসি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের ওপর জুলুম চলছে। ব্যবসাগুলো একদিনে গড়ে ওঠেনি। রাজউকের পাস করা ভবনের নকশায় রেস্তোরাঁ নেই বললেই চলে। বিগত সরকারের সময় এই জটিলতা নিরসনে একটা টাস্কফোর্স করা হয়েছিল। সেই টাস্কফোর্সের দুটি বৈঠক হয়েছিল। তারপর তো সরকার বদল হয়ে গেল।

ইমরান হাসান বলেন, ‘ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করে এখন যদি ডিএসসিসি অভিযানে নামে, তাহলে নতুন করে হয়রানিতে পড়বেন ব্যবসায়ীরা। এমন পরিস্থিতি হলে আমাদের রেস্তোরাঁ বন্ধ করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।’

গত বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনে ভয়াবহ আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর রেস্তোরাঁর অনুমোদন ও অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থার ঘাটতি সামনে আসে। ওই ভবনে আটটি রেস্তোরাঁ ছিল, তবে ভবনটিতে রেস্তোরাঁ প্রতিষ্ঠার কোনো অনুমোদনই ছিল না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) চার বছর আগে দেশের রেস্তোরাঁ খাত নিয়ে একটি জরিপ করে। সেই জরিপের তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালে দেশে মোট হোটেল ও রেস্তোরাঁ ছিল ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭৪টি, যা ২০০৯-১০ অর্থবছরের চেয়ে ৫৮ শতাংশ বেশি। সরকারি সংস্থার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৮৫২টি। বাকি সব ব্যক্তি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন।

রেস্তোরাঁ ব্যবসা করতে চাইলে একজন বিনিয়োগকারীকে সরকারের সাতটি সংস্থার অনুমোদন ও ছাড়পত্র নিতে হয়। রেস্তোরাঁর জন্য প্রথমে নিবন্ধন ও পরে লাইসেন্স নিতে হয় সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে। ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ২০২৪ সালের মার্চ মাসের তথ্য অনুযায়ী, সরকারের সব সংস্থার প্রয়োজনীয় অনুমোদন ও ছাড়পত্র নিয়ে ঢাকায় রেস্তোরাঁ ব্যবসা করছে মাত্র ১৩৪টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় রয়েছে ১২৮টি রেস্তোরাঁ।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি ঢাকা জেলায় পাঁচটি উপজেলা রয়েছে। সাভার, ধামরাই, কেরানীগঞ্জ, দোহার ও নবাবগঞ্জ- এই পাঁচ উপজেলার মধ্যে শুধু সাভারের ছয়টি রেস্তোরাঁর লাইসেন্স রয়েছে।

বেইলি রোডের আগুনের পর রাজধানীজুড়ে অভিযান শুরু করে সরকারের পাঁচ সংস্থা- রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও উত্তর সিটি করপোরেশন, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। মাঝে মাঝে সংস্থাগুলোর ‘বিচ্ছিন্ন’ অভিযানে রেস্তোরাঁ ভেঙে ফেলা, সিলগালা করে দেওয়া, কর্মীদের গ্রেপ্তার ও জরিমানার ঘটনা ঘটে। এর বাইরে সারা বছরই রেস্তোরাঁয় অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন সংস্থা। রেস্তোরাঁর মালিকদের অভিযোগ, সারা বছর সংস্থাগুলোর অসাধু কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করেই তাদের চলতে হয়।

তখন নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতিরা বলেছেন, রেস্তোরাঁয় উদ্যোক্তাদের কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। এতে লাখো মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। রেস্তোরাঁগুলোকে নিয়মের মধ্যে আনা দরকার। কিন্তু বিচ্ছিন্ন অভিযানে কোনো সমাধান আসবে না।

শ্রমক্ষেত্রে সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৯ এএম
শ্রমক্ষেত্রে সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে
রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর আয়োজিত ‘পেশাগত স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা’ সম্মেলনে প্যানেল আলোচনায় অতিথিরা

শ্রমক্ষেত্রে সমন্বয়ের ঘাটতি আছে বলে  জানিয়েছেন বক্তারা। তারা বলেন, পেশাগত নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় ও তাদের তদারকি কার্যক্রম আরও বাড়ানো প্রয়োজন। এ ছাড়া পরিবহনসহ যেসব খাতে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে, সেগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করতে হবে।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীর একটি হোটেলে পেশাগত স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিয়ে আয়োজিত ‘ওএসএইচ সম্মেলন ২০২৫’-এ বক্তারা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শিল্প খাতে যখনই কোনো সংকট তৈরি হয়, তখন কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। তেমন পরিস্থিতিতে নিজেদের ভাসমান মনে হয়, কোথায় যেতে হবে জানি না। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর।

অনুষ্ঠানে শ্রম উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, ‘যখনই কোনো সংকট হয়, তখন কিন্তু আমরা কাউকে খুঁজে পাই না। কিসের ট্রাইপার্টাইট (সংকট নিরসনে ত্রিপক্ষীয় কমিটি) আর কিসের কী; সংকট যখন আসে তখন আমি আর শ্রমসচিব নিজেদের ভাসমান অবস্থায় দেখি। কোথায় যেতে হবে জানি না। সুতরাং সংকটকালে সবাই টিম (একত্রে) হিসেবে কাজ না করলে তা কার্যকর হবে না।’

শ্রম উপদেষ্টা বলেন, ‘এই মন্ত্রণালয়ের (শ্রম) দায়িত্ব নিয়েছি সাত মাস হলো। এ সময়ে যে পরিমাণ সংকট হয়েছে, সেগুলো সব কিন্তু এই সাত মাসে তৈরি হয়নি। যেমন অনেক তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের দুই-তিন বছরের বেতনও বকেয়া আছে। গতকাল বিএটি বাংলাদেশের (ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, বাংলাদেশ) কিছু লোক এসেছিলেন, যাদের ২০১৯ সালে ছাঁটাই করা হয়েছিল। আমি (এই প্রসঙ্গে) বিএটিকে বলেছি, ফলো দ্য ল অর ওয়াইন্ড ইয়োর বিজনেস অ্যান্ড গো (আপনারা হয় আইন মেনে চলেন, না হয় এ দেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে চলে যান)। বাধ্য হয়ে এমন শক্ত কথা বলতে হয়েছে। এ ছাড়া অন্য উপায় ছিল না।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘মানুষ নির্বিঘ্নে কর্মক্ষেত্রে যাবে, অথচ আমরা কাজের জায়গাগুলোকে মৃত্যুকূপ বানিয়ে রেখেছি। শ্রম সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ দিয়েছে, তার প্রতিটি বিষয় নিয়ে কাজ করা হবে। এটা প্রধান উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতি। সে জন্য সময় নির্দিষ্ট কর্মকৌশল গ্রহণের সুপারিশ এসেছে।’

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের যুগ্ম মহাপরিদর্শক মো. মতিউর রহমান। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্যানুসারে, সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনা কিংবা অসুস্থতার কারণে বিশ্বে প্রতি ১৫ সেকেন্ডে অন্তত একজন কর্মী মারা যান। কর্মক্ষেত্র-সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনায় যে আর্থিক ক্ষতি হয়, তা বৈশ্বিক জিডিপির ৪ শতাংশের সমান।

অনুষ্ঠানে একাধিক বক্তা বলেন, দেশে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে দুর্ঘটনা কমলেও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে বাড়ছে। মতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের ঘটনার পরও প্রায় প্রতিবছর কমবেশি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর অর্থ পেশাগত নিরাপত্তার ঝুঁকি রয়েই গেছে। তার অনুমান, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে আরও বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে, এসব সংবাদে আসছে না। এসব তথ্য পেলে দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও পেশাগত সুরক্ষার বিষয়ে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যেত।

জীবনের অধিকারের ক্ষেত্রে যে বৈষম্য, বর্তমানে সেটাই সবচেয়ে বড় বৈষম্য বলে মন্তব্য করেন শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ। পেশাগত নিরাপত্তা মানুষের মৌলিক অধিকার; এটা দর-কষাকষির বিষয় নয়। এটি যত দিন না ঠিক হবে, তত দিন শিল্পও টেকসই হবে না। সুলতান উদ্দিন আরও বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক খাতে আগের তুলনায় দুর্ঘটনা কমেছে। তবে একই হারে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে দুর্ঘটনা বাড়ছে।

সমন্বয়ের অভাব: শ্রমক্ষেত্রে সমন্বয়ের ঘাটতি আছে বলে মন্তব্য করেন একাধিক বক্তা। মতিউর রহমান বলেন, পেশাগত নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় ও তাদের তদারকি কার্যক্রম আরও বাড়ানো প্রয়োজন। এ ছাড়া পরিবহনসহ যেসব খাতে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে, সেগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করতে হবে।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক মো. ইমরুল মহসিন বলেন, দ্বন্দ্ব নিরসনে মালিক, শ্রমিক ও সরকার- প্রত্যেকের মধ্যে একধরনের প্রতিপক্ষসুলভ মনোভাব কাজ করে। এটি থাকা ঠিক না। এই সুযোগে গরম তাওয়ায় কীভাবে রুটি ভেজে খাওয়া যায়, অনেকে আবার সেই চেষ্টা করেন।

পেশাগত স্বাস্থ্য উপেক্ষিত: অনুষ্ঠানে ‘পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কনভেনশন অনুসমর্থন’ বিষয়ে একটি প্যানেল আলোচনা হয়। সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশে আইএলওর প্রধান টুমো পুটিআইনেন।

বাংলাদেশে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে অনুষ্ঠানে আরেকটি উপস্থাপনা দেন সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেইনিং বিভাগের পরিচালক হাসনাত এম আলমগীর। তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হলেও পেশাগত অসুস্থতার বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। যেমন অনেক কর্মী লেড, অ্যাসিড প্রভৃতি রাসায়নিকের কারণে দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল অসুস্থতায় পড়েন। রিকশা-সিএনজিচালক, ট্রাফিক পুলিশসহ পরিবহন খাতে যুক্ত মানুষের বড় একটি অংশ ঠিকঠাক কানে শোনেন না। এ ছাড়া শ্রমিকরা ঠিকসময়ে বেতন না পেলে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ে। সুতরাং দুর্ঘটনার পাশাপাশি এসব বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) মহাসচিব ফারুক আহমেদ বলেন, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতেও পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা (ওএসএইচ) কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, সেটি দেখা প্রয়োজন। কারণ, ওএসএইচ বাস্তবায়নে শুধু আলোচনা না করে সময় নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন।

আইনের প্রয়োগ নেই: প্যানেল আলোচনায় বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভা প্রধান ও শ্রমবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য তাসলিমা আখতার। তিনি বলেন, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কোনো ভাবেই দয়াদাক্ষিণ্যের বিষয় নয়; এটা শ্রমিকের মানবাধিকার। পেশাগত নিরাপত্তা নিয়ে কঠোর আইন রয়েছে, শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনেও সুপারিশ করা হয়েছে। আমরা চাই, এসব পরামর্শ কাগজে সীমাবদ্ধ না থেকে যেন বাস্তবায়িত হয়।

পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে ইতোমধ্যে দেশে আইন আছে। কিন্তু সেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ বিজনেস অ্যান্ড ডিজঅ্যাবিলিটি নেটওয়ার্কের ট্রাস্টি রূপালী চৌধুরী। এর কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, আইন ও প্রয়োগ নিয়ে সচেতনতার অভাব আছে।

ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশ কাউন্সিলের উইমেন সেক্রেটারি চায়না রহমান বলেন, তৈরি পোশাক খাতে নারীরা নানা ধরনের হয়রানির শিকার হন। কাজের বাইরে পথে ঘাটে ও বাসাবাড়িতেও তারা সমস্যায় পড়েন। ফলে তারা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন।

সচিব পদ চান শুল্ক ও কর কর্মকর্তারা

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৩ এএম
আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪১ এএম
সচিব পদ চান শুল্ক ও কর কর্মকর্তারা
কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট

উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশের চূড়ান্ত খসড়ার কিছু অংশে আপত্তি জানিয়ে মতামত দিয়েছে ঢাকার বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশন। প্রস্তাবিত রাজস্ব নীতি বিভাগে লোকবল নিয়োগের শর্ত নিয়ে তাদের এই আপত্তি। গত রবিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা এই আপত্তি জানিয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি সাতটি বিষয়ে নিজেদের মতামত প্রকাশ করেছে। উল্লেখ্য, ১৭ এপ্রিল উপদেষ্টা পরিষদের সভায় রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর চূড়ান্ত খসড়া অনুমোদিত হয়।

গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশন অধ্যাদেশের যেসব বিষয়ে নিজেদের মতামত দিয়েছে, সেগুলো হলো—এক, বিসিএস (কর) অ্যাসোসিয়েশন ও বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশন ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মরত কর্মকর্তাদের মধ্য হতে’ রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব নিয়োগের মতামত দিয়েছিল। কিন্তু খসড়ার অনুচ্ছেদে (৪২৩) ‘উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন যেকোনো সরকারি কর্মকর্তাকে’ রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব বা সিনিয়র সচিব নিযুক্ত করার বিধান রাখা হয়েছে। এতে রাজস্ব নীতি প্রণয়নে বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যক্ষভাবে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি মর্মে প্রতীয়মান। রাজস্ব নীতি প্রণয়নে কর রাজস্ব আহরণের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে রাজস্ব নীতি বিভাগের শীর্ষ পদে পদায়ন করা হলে রাজস্ব বিভাগকে পৃথক করার মূল উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়ক হবে।

দুই, রাজস্ব নীতি বিভাগের মৌলিক পদগুলো বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ও বিসিএস (কর) ক্যাডার থেকে পূরণের প্রস্তাব করা হলেও খসড়ায় আয়কর, কাস্টমস, ভ্যাট, অর্থনীতি, ব্যবসায় প্রশাসন, গবেষণা পরিসংখ্যান, প্রশাসন, নিরীক্ষা, আইনসংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তা থেকে পূরণের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। রাজস্ব আহরণ, ব্যবস্থাপনা ও নীতি প্রণয়নে বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের রাজস্ব নীতি বিভাগে সুনির্দিষ্টভাবে পদায়নের সুযোগ রাখা হয়নি।

তিন, খসড়ার অনুচ্ছেদ ৯-এ রাজস্ব নীতি বিভাগে জনবল পদায়নের সুপারিশের লক্ষ্যে একটি কমিটির কথা উল্লেখ থাকলেও ধারা ৪(৪)–এ এমন কোনো কমিটির উল্লেখ নেই। উক্ত কমিটির গঠন উল্লেখ করা প্রয়োজন।

চার, খসড়ায় রাজস্ব নীতি বিভাগের কার্যপরিধিতে কর আইন প্রয়োগ ও কর আহরণ পরিস্থিতি পরিবীক্ষণ যুক্ত করা হয়েছে। এ বিধান রাখায় নীতি বিভাগকে ব্যবস্থাপনা বিভাগের কার্যক্রম তদারকির সুযোগ থেকে যায়। এক বিভাগের কার্যক্রম সমমর্যাদাসম্পন্ন অপর বিভাগ কর্তৃক পরিবীক্ষণের বিধান রাখা হলে তা আইনের দৃষ্টিতেও সাংঘর্ষিক বিবেচিত হয়।

পাঁচ, খসড়ার অনুচ্ছেদ ৭(৩)–এ বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের থেকে রাজস্ব আহরণে ন্যূনতম ২০ বছরের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাকে পালাক্রমে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সিনিয়র সচিব বা সচিব হিসেবে নিয়োগ প্রদান—এই ধারা পরিবর্তনে রাজস্ব আহরণে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব বা সিনিয়র সচিব হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এতে কর-রাজস্ব আহরণে দীর্ঘদিনের অর্জিত বিশেষায়িত জ্ঞান ও দক্ষতাকে কাজে লাগানোর সুযোগ সীমিত করবে।

ছয়, খসড়ায় রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসনিক পদে প্রশাসন ক্যাডার থেকে পদায়ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বর্তমানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তারা পদস্থ রয়েছেন, যা তাদের নির্ধারিত পদ।

সাত, সরকার গঠিত রাজস্ব সংস্কারবিষয়ক পরামর্শক কমিটির প্রতিবেদন অন্য সংস্কার কমিশনের মতো জনসমক্ষে প্রকাশ করা সমীচীন বলে বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশন মনে করে।

এর আগে ২৬ এপ্রিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাল্টিপারপাস হলে বিসিএস কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশনের বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) অনুষ্ঠিত হয়। অ্যাসোসিয়েশনের আমন্ত্রণে সভায় সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও রাজস্ব কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাকাএভ) নির্বাহী কমিটির একটি প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিল।

একদিন পর ফের পতনে পুঁজিবাজার

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১৯ এএম
একদিন পর ফের পতনে পুঁজিবাজার
ডিএসই-সিএসই

টানা ৯ দিন পতনের পর গত রবিবার সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছিল লেনদেন। এর বিপরীতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশাও জেগেছিল উত্থানে ফিরবে পুঁজিবাজার। কিন্তু এক দিনের ব্যবধানে আবারও পতনের মুখে পড়েছে লেনদেন। আগের দিনের তুলনায় ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে ৪২ পয়েন্ট। 

একইভাবে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি কমেছে সব কটি মূল্যসূচক। তবে সিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে।

গতকাল সোমবার ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলে। লেনদেনের প্রথম আড়াই ঘণ্টা বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ার ধারা অব্যাহত থাকে। কিন্তু দুপুর সাড়ে ১২টার পর বাজারের চিত্র বদলে যায়। গড়পড়তা ভালোমন্দ সব ধরনের কোম্পানির শেয়ার দাম কমতে থাকে। এতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের দাম কমার পাশাপাশি মূল্যসূচক বড় পতন দিয়ে দিনের লেনদেন শেষ হয়।

দিনের লেনদেন শেষে সব খাত মিলে ডিএসইতে ৯৪টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৪৬টির। আর ৫৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৫১টির শেয়ার দাম বেড়েছে এবং ১৩৯টির দাম কমেছে। আর ৩০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মাঝারি মানের বা ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া ৫টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে ৬১টির দাম কমেছে এবং ৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

গতকাল ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৪২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৫২ পয়েন্টে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৬ পয়েন্টে। আর বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৩০ পয়েন্টে। 

সব কটি মূল্যসূচক কমলেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৫৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৩৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ১১৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

এ লেনদেনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে মিডল্যান্ড ব্যাংকের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিচ হ্যাচারির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ৭৯ টাকার। ১৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে শাহাজিবাজার পাওয়ার।

এ ছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- শাহিনপুকুর সিরামিকস, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, ওরিয়ন ইনফিউশন, লাভেলো আইসক্রিম, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, সোনালি পেপার এবং ব্র্যাক ব্যাংক।

সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৪ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২২০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ৮৪টির। কমেছে ১০৯টির এবং দাম অপরিবর্তিত ছিল ২৭টির। মোট লেনদেন হয়েছে ৯ কোটি ২২ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।

পুঁজিবাজার তৃতীয় প্রান্তিকে লোকসানে জেএমআই সিরিঞ্জস

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১৫ এএম
তৃতীয় প্রান্তিকে লোকসানে জেএমআই সিরিঞ্জস
জেএমআই সিরিঞ্জস অ্যান্ড মেডিকেল ডিভাইসেস লিমিটেড

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ফার্মাসিউটিক্যালস খাতের কোম্পানি জেএমআই সিরিঞ্জস অ্যান্ড মেডিকেল ডিভাইসেস লিমিটেড গত ৩১ মার্চ, ২০২৫ তারিখে সমাপ্ত তৃতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

গতকাল অনুষ্ঠিত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর তা প্রকাশ করা হয়।

কোম্পানি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি ২ পয়সা লোকসান হয়েছে। গত বছর একই সময়ে শেয়ারপ্রতি ৩৬ পয়সা আয় হয়েছিল।

অন্যদিকে, তিন প্রান্তিক মিলিয়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ৬৮ পয়সা। গত বছর একই সময়ে ৫০ পয়সা আয় হয়েছিল। প্রথম তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নগদ টাকার প্রবাহ ছিল ২ টাকা ৬৭ পয়সা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৩ টাকা ৩৮ পয়সা। 

গত ৩১ মার্চ, ২০২৫ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ৮৭ টাকা ৪৪ পয়সা।