ঢাকা ১৬ বৈশাখ ১৪৩২, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

স্বর্ণের দামে বিশ্ববাজারে চাঞ্চল্যকর পূর্বাভাস

প্রকাশ: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২২ পিএম
আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০২৫, ০১:০৩ পিএম
স্বর্ণের দামে বিশ্ববাজারে চাঞ্চল্যকর পূর্বাভাস
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছার পূর্বভাস পাওয়া গেছে।

বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদ হিসেবে সোনার প্রতি আগ্রহ বাড়াচ্ছেন। এরই প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতনামা বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইউবিএস এবং কমার্জ ব্যাংক নির্ধারিত মূল্য পূর্বাভাস বলেছে, চলতি বছর স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্সে তিন হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির ফলে সৃষ্ট অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদ হিসেবে সোনার প্রতি তাদের আগ্রহের কারণে এই ধাতুটি একটি রেকর্ড উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন। এরই প্রেক্ষিতে গত শুক্রবার আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতনামা বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান সুইস ইউবিএস এবং জার্মান কমার্জব্যাংক তাদের মজুদ করা স্বর্ণের দাম বাড়ানোর পূর্বাভাস দেয়।

ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ আর্থিক বাজারকে মারত্মকভাবে নাড়া দিয়েছে। ফলে বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি এবং বিশ্বব্যাপী মন্দার আশঙ্কা তৈরি হয়। তিনি বেশিরভাগ শুল্ক স্থগিত করলেও, চীনের উপর শুল্ক ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ান, যার ফলে বেইজিং মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়।

ইউবিএস বিশ্লেষকরা বলেন, আমরা আশা করছি স্বর্ণের দামের এই উত্থান আগামী বছর পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে এবং দাম আরও উচ্চ স্তরে স্থিতিশীল হবে। সম্ভবত এবছর প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম দাম ৩ হাজার ৩৫ ডলার (বাংলাদেশি টাকায় ৪ লাখ ২৭ হাজার) পৌঁছাবে।

বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কড়া বাণিজ্য নীতিমালা এর মূল কারণ। চীনের উপর শুল্ক ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, যার পাল্টা জবাবে বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের উপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এই পরিস্থিতি বৈশ্বিক বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে এবং মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা জোরালো হয়েছে।

শুক্রবার (১১ এপ্রিল) প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্সে ৩ হাজার ২০০ ডলার অতিক্রম করেছে। দিনের মধ্যভাগে স্পট গোল্ড ১.৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ২১৭ দশমিক ১৫ ডলারে, যেখানে এর কিছু সময় আগেই এটি পৌঁছায় রেকর্ড ৩ হাজার ২৩৭ দশমিক ৫৬ ডলারে।

আর সপ্তাহজুড়ে স্বর্ণের দাম বেড়েছে প্রায় ৬ শতাংশ এবং চলতি বছর এখন পর্যন্ত প্রায় ২২ শতাংশ মূল্য বেড়েছে। মার্কিন গোল্ড ফিউচারসও ১ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে পৌঁছেছে প্রতি আউন্স ৩ হাজার ২৩৪ দশমিক ৯০ ডলারে।

কমার্জ ব্যাংকও ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ স্বর্ণের মূল্য ৩ হাজার ডলার পর্যন্ত হতে পারে বলে জানায়। তারা উল্লেখ করে, মার্চ মাস শেষে গোল্ড এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ডে (ইটিএফ) ব্যবস্থাপনার অধীনে থাকা মোট সম্পদের পরিমাণ রেকর্ড ৩৪৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

স্বর্ণের দামের এই ঊর্ধ্বগতির আরেকটি প্রধান কারণ হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সক্রিয় স্বর্ণ কেনা। চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক টানা পাঁচ মাস ধরে স্বর্ণ কিনেছে। মার্চ মাসের শেষে দেশটির স্বর্ণের রিজার্ভ দাঁড়ায় ৭৩ দশমিক ৭ মিলিয়ন ফাইন ট্রয় আউন্স, যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৭৩ দশমিক ৬১ মিলিয়ন আউন্স।

এই সপ্তাহেই ডয়েচে ব্যাংক তাদের ২০২৫ ও ২০২৬ সালের স্বর্ণের গড় দাম পূর্বাভাস সংশোধন করে যথাক্রমে ৩ হাজার ১৩৯ এবং ৩ হাজার ৭০০ ডলার নির্ধারণ করেছে।

বিশ্বজুড়ে চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনা ও আর্থিক অনিশ্চয়তার মাঝে স্বর্ণ আবারও প্রমাণ করেছে, এটি বিনিয়োগকারীদের কাছে সবচেয়ে নিরাপদ এবং লাভজনক আশ্রয়স্থল হিসেবে টিকে আছে। সূত্র: খালিজ টাইমস

দিনা/অমিয়/

হকারদের শৃংখলায় আসতে হবে: মেয়র শাহাদাত

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৮ এএম
হকারদের শৃংখলায় আসতে হবে: মেয়র শাহাদাত
চসিক কার্যালয়ে হকার নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন মেয়র ডা. শাহদাত হোসেন। ছবি: খবরের কাগজ

চট্টগ্রাম নগরীর যানজট কমাতে হকারদের শৃংখলায় আসতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) বিকালে চসিক কার্যালয়ে হকার নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মেয়র এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘আগ্রাবাদ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক এলাকা। এখানে ৫টার আগে হকাররা বসতে পারবেন না এবং রাস্তায় যত্রতত্র চৌকি বসানো যাবেনা। নিউ মার্কেটে দুপুর ৩টার পর বসবেন। নগরীতে যত্রতত্র হকাররা বসতে পারবেন না। আমি যেভাবে নিয়ম করে দিয়েছি সেভাবে ব্যবসা করেন। হকারদের ব্যবসা করার স্থান নির্ধারণের জন্য আমি জায়গা খুঁজছি। আমরা প্রয়োজনে হকারদের তালিকা করব। ফ্লাইওভারের নীচে পে-মার্কেট মডলে হকারদের ব্যবসা করার জন্য বিবেচনা করা হচ্ছে।’

সভায় উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, বিএনপির কেন্দ্রীয় শ্রমিক সম্পাদক এএম নাজিম উদ্দিন, কাজী নুরুল্লা বাহার, শ ম জামাল উদ্দিন, তাহের আহমদ, মো. আনোয়ার, মো. দুলাল, মো. বাতেন, মো জসিম প্রমুখ।

সভায় চট্টগ্রাম সম্মিলিত হকার্স ফেডারেশনের পক্ষে হকারদের প্রস্তাবিত দাবিসমূহ: ১. জাতীয় শ্রমনীতির আলোকে সিটি করপোরেশন কর্তৃক হকার্স পূনর্বাসন নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে হকারদের পুনর্বাসন করা। পুনর্বাসন না হওয়া পর্যন্ত হকার অধ্যুষিত এলাকায় ফুটপাতের একপাশে শৃঙ্খলার সহিত ব্যবসা করার সুযোগ প্রদান করা। ২. সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কর্মকর্তাগণের মাধ্যমে নগরীতে কর্মরত হকার শ্রমিকদের তালিকা প্রণয়ন করে ই-ট্রেড লাইসেন্স ও যৌক্তিকভাবে ফি নির্ধারণ করা। ৩. শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের অধীন চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রম দপ্তর নিবন্ধিত ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠন সমূহের প্রতিনিধি সিটি করপোরেশন কর্মকর্তার দ্বারা হকার সকল সদস্যদের তালিকা প্রণয়ন করা। ৪. চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন/ শ্রম অধিদপ্তর/ হকার সংগঠন জাতীয় শ্রমিক সংগঠনের সমন্বয়ে যৌথ কমিটি গঠন করা। ৫. সন্ত্রাস-চাঁদাবাজ-ছিনতাই প্রতিরোধসহ নগরীর আইন-শৃঙ্খলা উন্নয়নে করপোরেশনের উদ্যোগে শ্রমিক-হকার নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা।

তাওফিক/

বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর শেয়ারে মার্জিন ঋণ না দেওয়ার প্রস্তাব টাস্কফোর্সের

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০০ এএম
বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর শেয়ারে মার্জিন ঋণ না দেওয়ার প্রস্তাব টাস্কফোর্সের
প্রতীকী ছবি

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর শেয়ার ক্রয়ে মার্জিন ঋণ না দেওয়ার প্রস্তাব করেছে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে গঠিত সংস্কার টাস্কফোর্স। এ ছাড়া যেসব বিনিয়োগকারীর দুটি বিও হিসাব রয়েছে, তার একটি যদি মার্জিন ঋণের মাধ্যম বিনিয়োগ করে লোকসান হয়, তাহলে অপর নন-মার্জিন হিসাবের শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে ঋণ পরিশোধের প্রস্তাব করা হয়েছে। 

সোমবার (২৮ এপ্রিল) আগারগাঁও বিএসইসির মাল্টিপারপাস হলে মার্জিন ঋণের বিষয়ে টাস্কফোর্সের চূড়ান্ত সুপারিশ প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে টাক্সফোর্সের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। 

সংবাদ সম্মেলনে টাস্কফোর্সের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘এই প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে আমরা এ-সংক্রান্ত সব অংশীজনের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছি। তারপরও আমাদের এই প্রতিবেদনে কোনো অংশ নিয়ে কারও কোনো দ্বিমত থাকলে আমরা অনুরোধ জানাব, আপনারা আমাদের সংশোধন করে দেবেন।’ 

সংবাদ সম্মেলনে প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের এমডি এবং সিইও মো. মনিরুজ্জামান সার্বিক বিষয় উপস্থাপন করে বলেন, মার্জিন রুলস, ১৯৯৯ যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স ‘মার্জিন রুলস’সংক্রান্ত চূড়ান্ত সুপারিশ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) জমা দেওয়া হয়েছে। সেখানে একজন বিনিয়োগকারী ১:১ অনুপাতে সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত মার্জিন ঋণ নিতে পারবেন বলে সুপারিশ করা হয়েছে। তবে টাস্কফোর্সের কাছে ১:০.৫ অনুপারে মার্জিন ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন পুঁজিবাজার অংশীজনরা। 

নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী ৩০ দিন পর্যন্ত যেই কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে মার্জিন ঋণ না দেওয়ার বিধান আছে। কিন্তু টাস্কফোর্সের পক্ষ থেকে তা অন্তত তিন মাস পর্যন্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এই তিন মাসের সেই কোম্পানির কোনো না কোনো প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী সেই কোম্পানি মার্জিন ঋণ পাবে কি না, সেটি নির্ধারণ করা যাবে। 

তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বিষয়ে টাস্কফোর্সের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চুক্তিভিত্তিক হয়ে থাকে। চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেল সেগুলোর নতুন করে অনুমোদন পাবে কি না তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। এ জন্য এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে মার্জিন ঋণ না দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। 

বলা হয়েছে, যেকোনো বিনিয়োগকারীর দুটি অ্যাকাউন্ট থাকে এবং এর একটি যদি মার্জিন ঋণের হিসাব হয় আর অপরটি নন-মার্জিন অ্যাকাউন্ট হয় তাহলে মার্জিন ঋণের হিসাবে শেয়ারের দাম ক্রয়মূল্যের চেয়ে কমে গেলে অপর অ্যাকাউন্টের শেয়ার বিক্রি করে তার হিসাব সমন্বয় করা যাবে। এমন প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মার্জিন ঋণের অ্যাকাউন্ট নেগেটিভ হলে ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান তারল্য সমস্যার সম্মুখীন হন এবং সেই বিনিয়োগকারীও লোকসানের কারণে নতুন বিনিয়োগ করতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে অপর হিসাব থেকে ঋণ সমন্বয় করা হলে প্রতিষ্ঠানের জন্য তা ভালো হবে। বিনিয়োগকারীও ঋণমুক্ত হবেন। 

পেনশনহোল্ডার, শিক্ষার্থী বা গৃহিণীদের নিয়মিত আয়ের ব্যবস্থা থাকে না। তারা মার্জিন ঋণ নিলে অনেক সময় সমস্যায় পড়ে যান। নিয়মিত আয় না থাকায় মার্জিন ঋণ পরিশোধ তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে যায়। সে জন্য যাদের নিয়মিত আয় আছে মার্জিন ঋণ নিলে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হন না, বাজারও ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। এ জন্য আমরা যাদের নিয়মিত আয়ের ব্যবস্থা আছে, তাদের জন্যই মার্জিন ঋণের সুপারিশ করা হয়েছে। 

টাস্কফোর্সের সুপারিশে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি বাড়ি ভাড়া পান, তার কিন্তু আয়ের একটা ব্যবস্থা আছে। মার্জিন ঋণ তার জন্য রেস্ট্রিক্টেড না। কিন্তু যাদের নিয়মিত আয় থাকে না, যেমন- অবসরের পর যে ভাতা পাওয়া যায় তা দিয়ে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের ঋণ পরিশোধ করা কঠিন। 

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়েছে, পৃথিবীর কোথাও মার্জিন ঋণ দীর্ঘ সময়ের জন্য দেওয়া হয় না। এ ঋণ নিয়ে সাধারণত বাজার সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকা দক্ষ বিনিয়োগকারীরা ব্যবসা করেন। তারা স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ নিয়ে তা দ্রুত পরিশোধ করে দেন।

এর আগে গত রবিবার বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ কাছে মার্জিন রুলস, ১৯৯৯-এর যুগোপযোগীকরণে চূড়ান্ত সুপারিশ জমা দেন পুঁজিবাজারের উন্নয়নে গঠিত সংস্কার টাস্কফোর্স। এ সময় কমিশনার মো. আলী আকবর ও কমিশনার ফারজানা লালারুখ উপস্থিত ছিলেন। 

এ ছাড়া সংস্কার টাস্কফোর্সের পক্ষে টাস্কফোর্সের সদস্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিএসই বিভাগের অধ্যাপক মো. মোস্তফা আকবর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন উপস্থিত ছিলেন। 

গত ৭ অক্টোবর ২০২৪ পুঁজিবাজার উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক মানের সুশাসন নিশ্চিত করতে পুঁজিবাজার সংস্কারের সুপারিশের জন্য পাঁচ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। 

পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট টাস্কফোর্সের সদস্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান, নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোংয়ের জ্যেষ্ঠ অংশীদার এ এফ এম নেসারউদ্দীন, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিএসই বিভাগের অধ্যাপক মো. মোস্তফা আকবর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন।

বিএসইসি গঠিত পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের কার্যপরিধি নির্ধারণ করা হয়েছে ১৭টি। এরই মধ্যে মার্চেন্ট ব্যাংক, আইপিও ও মার্জিন ঋণের বিষয়ে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে কমিশনে। এর মধ্যে রয়েছে পুঁজিবাজারের আকার, তথা জিডিপি ও বাজার মূলধন অনুপাত কম হওয়ার প্রধান কারণগুলো চিহ্নিত করা ও উন্নতির জন্য নীতি প্রণয়নের প্রস্তাব, দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে ব্যাংকঋণের বদলে পুঁজিবাজার থেকে অর্থায়নে সরকারের নীতি প্রণয়ন ও এ–সংক্রান্ত নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিএসইসির প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের সুপারিশ করা; বাজারের সুশাসনের উন্নতির জন্য বর্তমান পরিস্থিতি ও প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো বিশ্লেষণ করে সমাধানের সুপারিশ প্রণয়ন; বিএসইসির প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সুপারিশ; ডিএসই, সিএসই, সিডিবিএল, সিসিবিএলের তদারকি কার্যক্রম বিশ্বমানে উন্নীত করাসহ প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসন নিশ্চিতে সুপারিশ প্রণয়ন; প্রাইভেট প্লেসমেন্টসংক্রান্ত সিকিউরিটিজ নীতিমালা যুগোপযোগী করতে সুপারিশ; তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন, করপোরেট ঘোষণাসহ বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা ও বাজারের গভীরতা বৃদ্ধির সুপারিশ প্রণয়ন; বাজার মধ্যস্থতাকারীদের জন্য বিদ্যমান আইন ও বিধিবিধান যুগোপযোগী করতে সুপারিশ করা; বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও আস্থা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান; বাজারে কারসাজি, অনিয়মের বিচার ও জরিমানার সমতা আনতে সুনির্দিষ্ট পেনাল কোড এবং শাস্তির বিধিমালা প্রণয়ন করা; নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের জন্য একটি মানসম্মত পদ্ধতি বা নির্দেশিকা প্রণয়ন; তালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙ্গে অ–তালিকাভুক্ত কোম্পানি একীভূত, অধিগ্রহণসংক্রান্ত হাইকোর্টের অনুমোদনের আগে বিএসইসির অনাপত্তি গ্রহণসংক্রান্ত সুপারিশ করা ইত্যাদি।

নকশাবহির্ভূত রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০২ এএম
নকশাবহির্ভূত রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল
দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)

নকশাবহির্ভূত রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। 

সোমবার (২৮ এপ্রিল) গণমাধ্যমে এক গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করার বিষয়টি জানায় ডিএসসিসি।

গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় কিছু আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের অভ্যন্তরে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদিত নকশায় না থাকলেও বিধিবহির্ভূতভাবে রেস্তোরাঁ (রেস্টুরেন্ট) পরিচালনা করা হচ্ছে এবং ভবনের ছাদে অবৈধভাবে রুফটপ রেস্তোরাঁ পরিচালিত হচ্ছে, যা জনজীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বিধিবহির্ভূতভাবে রেস্তোরাঁ পরিচালনা করায় ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ও সম্পদহানির ঘটনা ঘটছে। এসব ক্ষেত্রে অনেক অবৈধ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অনৈতিক উপায়ে করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ করেছে।

ডিএসসিসির গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সম্পদ ও জানমালের ঝুঁকি এড়াতে নকশাবহির্ভূত সব রেস্তোরাঁ এবং ভবনের ছাদে স্থাপিত রুফটপ রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল ঘোষণা করা হলো। বাতিল করা লাইসেন্স দিয়ে কোনো ব্যবসা পরিচালনা করা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘যেসব রেস্তোরাঁ সঠিক তথ্য না দিয়ে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছে, সেগুলো বাতিল করা হয়েছে। তবে ভবনের অনুমোদন কিন্তু বাতিল করা হয়নি। ভবনের নকশায় রেস্তোরাঁ থাকলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা সশরীর উপস্থিত হয়ে আমাদের কাছে তথ্য-উপাত্ত দিলে সেগুলো সচল করা হবে।’ অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিটি রেস্তোরাঁকে আলাদা করে চিঠি পাঠাব।’

ডিএসসিসির এমন সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান। তিনি বলেন, কোনো প্রকার আলোচনা না করেই ডিএসসিসি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের ওপর জুলুম চলছে। ব্যবসাগুলো একদিনে গড়ে ওঠেনি। রাজউকের পাস করা ভবনের নকশায় রেস্তোরাঁ নেই বললেই চলে। বিগত সরকারের সময় এই জটিলতা নিরসনে একটা টাস্কফোর্স করা হয়েছিল। সেই টাস্কফোর্সের দুটি বৈঠক হয়েছিল। তারপর তো সরকার বদল হয়ে গেল।

ইমরান হাসান বলেন, ‘ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করে এখন যদি ডিএসসিসি অভিযানে নামে, তাহলে নতুন করে হয়রানিতে পড়বেন ব্যবসায়ীরা। এমন পরিস্থিতি হলে আমাদের রেস্তোরাঁ বন্ধ করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।’

গত বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনে ভয়াবহ আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর রেস্তোরাঁর অনুমোদন ও অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থার ঘাটতি সামনে আসে। ওই ভবনে আটটি রেস্তোরাঁ ছিল, তবে ভবনটিতে রেস্তোরাঁ প্রতিষ্ঠার কোনো অনুমোদনই ছিল না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) চার বছর আগে দেশের রেস্তোরাঁ খাত নিয়ে একটি জরিপ করে। সেই জরিপের তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালে দেশে মোট হোটেল ও রেস্তোরাঁ ছিল ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭৪টি, যা ২০০৯-১০ অর্থবছরের চেয়ে ৫৮ শতাংশ বেশি। সরকারি সংস্থার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৮৫২টি। বাকি সব ব্যক্তি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন।

রেস্তোরাঁ ব্যবসা করতে চাইলে একজন বিনিয়োগকারীকে সরকারের সাতটি সংস্থার অনুমোদন ও ছাড়পত্র নিতে হয়। রেস্তোরাঁর জন্য প্রথমে নিবন্ধন ও পরে লাইসেন্স নিতে হয় সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে। ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ২০২৪ সালের মার্চ মাসের তথ্য অনুযায়ী, সরকারের সব সংস্থার প্রয়োজনীয় অনুমোদন ও ছাড়পত্র নিয়ে ঢাকায় রেস্তোরাঁ ব্যবসা করছে মাত্র ১৩৪টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় রয়েছে ১২৮টি রেস্তোরাঁ।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি ঢাকা জেলায় পাঁচটি উপজেলা রয়েছে। সাভার, ধামরাই, কেরানীগঞ্জ, দোহার ও নবাবগঞ্জ- এই পাঁচ উপজেলার মধ্যে শুধু সাভারের ছয়টি রেস্তোরাঁর লাইসেন্স রয়েছে।

বেইলি রোডের আগুনের পর রাজধানীজুড়ে অভিযান শুরু করে সরকারের পাঁচ সংস্থা- রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও উত্তর সিটি করপোরেশন, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। মাঝে মাঝে সংস্থাগুলোর ‘বিচ্ছিন্ন’ অভিযানে রেস্তোরাঁ ভেঙে ফেলা, সিলগালা করে দেওয়া, কর্মীদের গ্রেপ্তার ও জরিমানার ঘটনা ঘটে। এর বাইরে সারা বছরই রেস্তোরাঁয় অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন সংস্থা। রেস্তোরাঁর মালিকদের অভিযোগ, সারা বছর সংস্থাগুলোর অসাধু কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করেই তাদের চলতে হয়।

তখন নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতিরা বলেছেন, রেস্তোরাঁয় উদ্যোক্তাদের কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। এতে লাখো মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। রেস্তোরাঁগুলোকে নিয়মের মধ্যে আনা দরকার। কিন্তু বিচ্ছিন্ন অভিযানে কোনো সমাধান আসবে না।

শ্রমক্ষেত্রে সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৯ এএম
শ্রমক্ষেত্রে সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে
রাজধানীর একটি হোটেলে গতকাল কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর আয়োজিত ‘পেশাগত স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা’ সম্মেলনে প্যানেল আলোচনায় অতিথিরা

শ্রমক্ষেত্রে সমন্বয়ের ঘাটতি আছে বলে  জানিয়েছেন বক্তারা। তারা বলেন, পেশাগত নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় ও তাদের তদারকি কার্যক্রম আরও বাড়ানো প্রয়োজন। এ ছাড়া পরিবহনসহ যেসব খাতে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে, সেগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করতে হবে।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীর একটি হোটেলে পেশাগত স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা নিয়ে আয়োজিত ‘ওএসএইচ সম্মেলন ২০২৫’-এ বক্তারা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শিল্প খাতে যখনই কোনো সংকট তৈরি হয়, তখন কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না। তেমন পরিস্থিতিতে নিজেদের ভাসমান মনে হয়, কোথায় যেতে হবে জানি না। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর।

অনুষ্ঠানে শ্রম উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেন, ‘যখনই কোনো সংকট হয়, তখন কিন্তু আমরা কাউকে খুঁজে পাই না। কিসের ট্রাইপার্টাইট (সংকট নিরসনে ত্রিপক্ষীয় কমিটি) আর কিসের কী; সংকট যখন আসে তখন আমি আর শ্রমসচিব নিজেদের ভাসমান অবস্থায় দেখি। কোথায় যেতে হবে জানি না। সুতরাং সংকটকালে সবাই টিম (একত্রে) হিসেবে কাজ না করলে তা কার্যকর হবে না।’

শ্রম উপদেষ্টা বলেন, ‘এই মন্ত্রণালয়ের (শ্রম) দায়িত্ব নিয়েছি সাত মাস হলো। এ সময়ে যে পরিমাণ সংকট হয়েছে, সেগুলো সব কিন্তু এই সাত মাসে তৈরি হয়নি। যেমন অনেক তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের দুই-তিন বছরের বেতনও বকেয়া আছে। গতকাল বিএটি বাংলাদেশের (ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, বাংলাদেশ) কিছু লোক এসেছিলেন, যাদের ২০১৯ সালে ছাঁটাই করা হয়েছিল। আমি (এই প্রসঙ্গে) বিএটিকে বলেছি, ফলো দ্য ল অর ওয়াইন্ড ইয়োর বিজনেস অ্যান্ড গো (আপনারা হয় আইন মেনে চলেন, না হয় এ দেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে চলে যান)। বাধ্য হয়ে এমন শক্ত কথা বলতে হয়েছে। এ ছাড়া অন্য উপায় ছিল না।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘মানুষ নির্বিঘ্নে কর্মক্ষেত্রে যাবে, অথচ আমরা কাজের জায়গাগুলোকে মৃত্যুকূপ বানিয়ে রেখেছি। শ্রম সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ দিয়েছে, তার প্রতিটি বিষয় নিয়ে কাজ করা হবে। এটা প্রধান উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতি। সে জন্য সময় নির্দিষ্ট কর্মকৌশল গ্রহণের সুপারিশ এসেছে।’

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের যুগ্ম মহাপরিদর্শক মো. মতিউর রহমান। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্যানুসারে, সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনা কিংবা অসুস্থতার কারণে বিশ্বে প্রতি ১৫ সেকেন্ডে অন্তত একজন কর্মী মারা যান। কর্মক্ষেত্র-সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনায় যে আর্থিক ক্ষতি হয়, তা বৈশ্বিক জিডিপির ৪ শতাংশের সমান।

অনুষ্ঠানে একাধিক বক্তা বলেন, দেশে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে দুর্ঘটনা কমলেও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে বাড়ছে। মতিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের ঘটনার পরও প্রায় প্রতিবছর কমবেশি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর অর্থ পেশাগত নিরাপত্তার ঝুঁকি রয়েই গেছে। তার অনুমান, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে আরও বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে, এসব সংবাদে আসছে না। এসব তথ্য পেলে দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও পেশাগত সুরক্ষার বিষয়ে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যেত।

জীবনের অধিকারের ক্ষেত্রে যে বৈষম্য, বর্তমানে সেটাই সবচেয়ে বড় বৈষম্য বলে মন্তব্য করেন শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ। পেশাগত নিরাপত্তা মানুষের মৌলিক অধিকার; এটা দর-কষাকষির বিষয় নয়। এটি যত দিন না ঠিক হবে, তত দিন শিল্পও টেকসই হবে না। সুলতান উদ্দিন আরও বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক খাতে আগের তুলনায় দুর্ঘটনা কমেছে। তবে একই হারে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে দুর্ঘটনা বাড়ছে।

সমন্বয়ের অভাব: শ্রমক্ষেত্রে সমন্বয়ের ঘাটতি আছে বলে মন্তব্য করেন একাধিক বক্তা। মতিউর রহমান বলেন, পেশাগত নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় ও তাদের তদারকি কার্যক্রম আরও বাড়ানো প্রয়োজন। এ ছাড়া পরিবহনসহ যেসব খাতে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে, সেগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করতে হবে।

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক মো. ইমরুল মহসিন বলেন, দ্বন্দ্ব নিরসনে মালিক, শ্রমিক ও সরকার- প্রত্যেকের মধ্যে একধরনের প্রতিপক্ষসুলভ মনোভাব কাজ করে। এটি থাকা ঠিক না। এই সুযোগে গরম তাওয়ায় কীভাবে রুটি ভেজে খাওয়া যায়, অনেকে আবার সেই চেষ্টা করেন।

পেশাগত স্বাস্থ্য উপেক্ষিত: অনুষ্ঠানে ‘পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কনভেনশন অনুসমর্থন’ বিষয়ে একটি প্যানেল আলোচনা হয়। সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশে আইএলওর প্রধান টুমো পুটিআইনেন।

বাংলাদেশে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে অনুষ্ঠানে আরেকটি উপস্থাপনা দেন সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেইনিং বিভাগের পরিচালক হাসনাত এম আলমগীর। তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হলেও পেশাগত অসুস্থতার বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। যেমন অনেক কর্মী লেড, অ্যাসিড প্রভৃতি রাসায়নিকের কারণে দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল অসুস্থতায় পড়েন। রিকশা-সিএনজিচালক, ট্রাফিক পুলিশসহ পরিবহন খাতে যুক্ত মানুষের বড় একটি অংশ ঠিকঠাক কানে শোনেন না। এ ছাড়া শ্রমিকরা ঠিকসময়ে বেতন না পেলে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ে। সুতরাং দুর্ঘটনার পাশাপাশি এসব বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) মহাসচিব ফারুক আহমেদ বলেন, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতেও পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা (ওএসএইচ) কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, সেটি দেখা প্রয়োজন। কারণ, ওএসএইচ বাস্তবায়নে শুধু আলোচনা না করে সময় নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন।

আইনের প্রয়োগ নেই: প্যানেল আলোচনায় বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভা প্রধান ও শ্রমবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য তাসলিমা আখতার। তিনি বলেন, পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কোনো ভাবেই দয়াদাক্ষিণ্যের বিষয় নয়; এটা শ্রমিকের মানবাধিকার। পেশাগত নিরাপত্তা নিয়ে কঠোর আইন রয়েছে, শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনেও সুপারিশ করা হয়েছে। আমরা চাই, এসব পরামর্শ কাগজে সীমাবদ্ধ না থেকে যেন বাস্তবায়িত হয়।

পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে ইতোমধ্যে দেশে আইন আছে। কিন্তু সেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ বিজনেস অ্যান্ড ডিজঅ্যাবিলিটি নেটওয়ার্কের ট্রাস্টি রূপালী চৌধুরী। এর কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, আইন ও প্রয়োগ নিয়ে সচেতনতার অভাব আছে।

ইন্ডাস্ট্রি অল বাংলাদেশ কাউন্সিলের উইমেন সেক্রেটারি চায়না রহমান বলেন, তৈরি পোশাক খাতে নারীরা নানা ধরনের হয়রানির শিকার হন। কাজের বাইরে পথে ঘাটে ও বাসাবাড়িতেও তারা সমস্যায় পড়েন। ফলে তারা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন।

সচিব পদ চান শুল্ক ও কর কর্মকর্তারা

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩৩ এএম
আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪১ এএম
সচিব পদ চান শুল্ক ও কর কর্মকর্তারা
কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট

উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশের চূড়ান্ত খসড়ার কিছু অংশে আপত্তি জানিয়ে মতামত দিয়েছে ঢাকার বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশন। প্রস্তাবিত রাজস্ব নীতি বিভাগে লোকবল নিয়োগের শর্ত নিয়ে তাদের এই আপত্তি। গত রবিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা এই আপত্তি জানিয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি সাতটি বিষয়ে নিজেদের মতামত প্রকাশ করেছে। উল্লেখ্য, ১৭ এপ্রিল উপদেষ্টা পরিষদের সভায় রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর চূড়ান্ত খসড়া অনুমোদিত হয়।

গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশন অধ্যাদেশের যেসব বিষয়ে নিজেদের মতামত দিয়েছে, সেগুলো হলো—এক, বিসিএস (কর) অ্যাসোসিয়েশন ও বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশন ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মরত কর্মকর্তাদের মধ্য হতে’ রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব নিয়োগের মতামত দিয়েছিল। কিন্তু খসড়ার অনুচ্ছেদে (৪২৩) ‘উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন যেকোনো সরকারি কর্মকর্তাকে’ রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব বা সিনিয়র সচিব নিযুক্ত করার বিধান রাখা হয়েছে। এতে রাজস্ব নীতি প্রণয়নে বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যক্ষভাবে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি মর্মে প্রতীয়মান। রাজস্ব নীতি প্রণয়নে কর রাজস্ব আহরণের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে রাজস্ব নীতি বিভাগের শীর্ষ পদে পদায়ন করা হলে রাজস্ব বিভাগকে পৃথক করার মূল উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়ক হবে।

দুই, রাজস্ব নীতি বিভাগের মৌলিক পদগুলো বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ও বিসিএস (কর) ক্যাডার থেকে পূরণের প্রস্তাব করা হলেও খসড়ায় আয়কর, কাস্টমস, ভ্যাট, অর্থনীতি, ব্যবসায় প্রশাসন, গবেষণা পরিসংখ্যান, প্রশাসন, নিরীক্ষা, আইনসংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তা থেকে পূরণের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। রাজস্ব আহরণ, ব্যবস্থাপনা ও নীতি প্রণয়নে বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের রাজস্ব নীতি বিভাগে সুনির্দিষ্টভাবে পদায়নের সুযোগ রাখা হয়নি।

তিন, খসড়ার অনুচ্ছেদ ৯-এ রাজস্ব নীতি বিভাগে জনবল পদায়নের সুপারিশের লক্ষ্যে একটি কমিটির কথা উল্লেখ থাকলেও ধারা ৪(৪)–এ এমন কোনো কমিটির উল্লেখ নেই। উক্ত কমিটির গঠন উল্লেখ করা প্রয়োজন।

চার, খসড়ায় রাজস্ব নীতি বিভাগের কার্যপরিধিতে কর আইন প্রয়োগ ও কর আহরণ পরিস্থিতি পরিবীক্ষণ যুক্ত করা হয়েছে। এ বিধান রাখায় নীতি বিভাগকে ব্যবস্থাপনা বিভাগের কার্যক্রম তদারকির সুযোগ থেকে যায়। এক বিভাগের কার্যক্রম সমমর্যাদাসম্পন্ন অপর বিভাগ কর্তৃক পরিবীক্ষণের বিধান রাখা হলে তা আইনের দৃষ্টিতেও সাংঘর্ষিক বিবেচিত হয়।

পাঁচ, খসড়ার অনুচ্ছেদ ৭(৩)–এ বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের থেকে রাজস্ব আহরণে ন্যূনতম ২০ বছরের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাকে পালাক্রমে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সিনিয়র সচিব বা সচিব হিসেবে নিয়োগ প্রদান—এই ধারা পরিবর্তনে রাজস্ব আহরণে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব বা সিনিয়র সচিব হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এতে কর-রাজস্ব আহরণে দীর্ঘদিনের অর্জিত বিশেষায়িত জ্ঞান ও দক্ষতাকে কাজে লাগানোর সুযোগ সীমিত করবে।

ছয়, খসড়ায় রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসনিক পদে প্রশাসন ক্যাডার থেকে পদায়ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বর্তমানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তারা পদস্থ রয়েছেন, যা তাদের নির্ধারিত পদ।

সাত, সরকার গঠিত রাজস্ব সংস্কারবিষয়ক পরামর্শক কমিটির প্রতিবেদন অন্য সংস্কার কমিশনের মতো জনসমক্ষে প্রকাশ করা সমীচীন বলে বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশন মনে করে।

এর আগে ২৬ এপ্রিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাল্টিপারপাস হলে বিসিএস কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশনের বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) অনুষ্ঠিত হয়। অ্যাসোসিয়েশনের আমন্ত্রণে সভায় সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও রাজস্ব কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাকাএভ) নির্বাহী কমিটির একটি প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিল।