
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কারোপ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠনের দাবি জানিয়েছেন শীর্ষ ব্যবসায়ীরা।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এ কথা বলেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স-বাংলাদেশের (আইসিসিবি) সভাপতি মাহবুবুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘শুল্কারোপের কার্যকারিতা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সরকারের উচিত হবে এই সময়ের মধ্যে আলোচনা জোরালোভাবে চালিয়ে যাওয়া। এ জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করা দরকার, যেখানে ঢাকা চেম্বারসহ অন্যান্য চেম্বারের প্রতিনিধিদের যুক্ত করতে হবে।’
মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘শুধু কর ব্যবস্থাপনাই নয়, শুল্ক কাঠামোকে সম্পূর্ণ অটোপমেশনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে সার্বিক শুল্কহার আরও যৌক্তিকীকরণ করা হবে। তবে করহার খুব বেশি কমানোর সুযোগ নেই। কোনো কোম্পানি লোকসান করলেও যেন কর দিতে পারে, আসন্ন বাজেটে এ বিষয়ে কিছু না কিছু রাখার চেষ্টা থাকবে। অন্যদিকে আমদানিতে শুল্কহার কমানোর চেষ্টা থাকবে।’
আবদুর রহমান খান আরও বলেন, ‘রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য অটোমেশনের কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য এনবিআর অটোমেশন কার্যক্রম বাস্তবায়নকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করছে।’
তিনি বলেন, ‘আগামীতে পেপার রিটার্ন নেওয়া হবে না। কোম্পানি রিটার্নও অটোমেশন করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো চালু করা হয়েছে এবং ব্যবসায়ীরা এর সুবিধাও পাচ্ছেন। এখন আমদানি-রপ্তানির জন্য ১৯টি রেগুলেটর অথরিটির কাছ থেকে সার্টিফিকেট নিতে হয় ব্যবসায়ীদের। সিঙ্গেল উইন্ডো চালু হওয়াতে এক জায়গা থেকে সব সেবা মিলবে।’
চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের কর-জিডিপি অনুপাত খুবই কম। কারণ হচ্ছে আমাদের কর দেওয়ার প্রবণতা কম। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ১ কোটি ৪৫ লাখ টিআইএনর মধ্যে ৪৫ লাখের মতো রিটার্ন জমা দেন। রিটার্ন জমা দেওয়াদের মধ্যে তিন ভাগের দুই ভাগই করযোগ্য আয় নেই বিবেচনায় শূন্য রিটার্ন দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘দেশে কর অবকাশ নেওয়ার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। ফলে যে পরিমাণ কর আদায় করা হয়, তার সম পরিমাণ কর অব্যাহতি দেওয়া হয়। এই সংস্কৃতি থেকে বেরুতে চাই। আমরা বৈষম্যহীন কর রেট করতে চাই। সবার জন্য একই রেট করতে চাই।’
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বিনিয়োগ ও ব্যবসার প্রবৃদ্ধি না বাড়লে অর্থনীতি সম্প্রসারিত হবে না। এ জন্য সহায়ক নীতিমালা নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় সংস্কার আবশ্যক। আমাদের দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন প্রক্রিয়ায় গলদ রয়েছে। ফলে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ব্যবসা-বাণিজ্যে অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বিনিয়োগ সম্প্রসারণের জন্য কার্যকর এবং সহায়ক কর নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।’
এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ব্যবসাবান্ধব বাজেটের কোনো বিকল্প নেই। দীর্ঘদিন যাবৎ সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি বজায় থাকলে বেসরকারি খাতে প্রবৃদ্ধি আশানুরূপ হবে না। উদ্যোক্তারা পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে আর্থিক কর্মকাণ্ড সম্প্রসারিত করতে আগ্রহী। তবে প্রয়োজন সহায়ক নীতিমালা।’
আব্দুল আউয়াল মিন্টু আরও বলেন, রাজস্ব নীতিমালার সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্য নীতিগুলোর মধ্যে সমন্বয় থাকা জরুরি। কর-জিডিপির হার বৃদ্ধিকল্পে টিআইএন থাকা সত্ত্বেও যারা কর দেন না, তাদেরকে করের আওতায় নিয়ে আসার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
এফবিসিসিআইর আরেক সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, গতানুগতিক ঘাটতি বাজেট এবং সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছায়নি। আমি সরকারের কাছ থেকে একটি ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগবান্ধব, অন্তর্ভুক্তিমূলক, বাস্তবমুখী এবং সময়োপযোগী বাজেট প্রত্যাশা করি। এ ছাড়াও রাজস্ব ঘাটতি মেটাতে সরকারি ব্যয় হ্রাসে আরও মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম যুক্তরাষ্ট্রের ভালো মানের তুলা আমদানি বাড়াতে ওয়্যার হাউস নির্মাণ সুবিধা প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, সে দেশের সঙ্গে আমাদের এটা করতে পারলে বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস পাবে। ম্যান মেইড ফাইবারের মতো হাই ভ্যালু পণ্য উৎপাদনে উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
ডিসিসিআই সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘বিদ্যমান পরিস্থিতির আলোকে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা এলডিসি গ্রাজুয়েশনের জন্য প্রস্তুত নয়, তাই সরকারের আরও ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।’
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, ‘ইতোমধ্যে লজিস্টিক নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে, তবে এ খাতের সুফল পেতে হলে দশ বছর মেয়াদি একটি মাস্টারপ্ল্যান থাকা প্রয়োজন।’