
সুতা, দুধসহ বেশ কিছু ভারতীয় পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) এবং গত রবিবার দুই দফায় এসব প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ডুপ্লেক্স বোর্ড, নিউজপ্রিন্ট, ক্রাফট পেপার, সিগারেট পেপার, মাছ, সুতা, আলু, গুঁড়া দুধ, টোব্যাকো, রেডিও-টিভি পার্টস, সাইকেল ও মোটর পার্টস, ফরমিকা শিট, সিরামিকওয়্যার, স্যানিটারিওয়্যার, স্টেইনলেস স্টিলওয়্যার, মার্বেল স্ল্যাব ও টাইলস এবং মিক্সড ফেব্রিক্স আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে ভারত থেকে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ করা হয়েছে। ফলে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা ও বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুবিধা বাতিল হয়েছে। ওই সব স্থলবন্দর দিয়ে মূলত ভারত থেকে সুতা আমদানি হতো। তবে স্থলপথ ছাড়া সমুদ্রপথে বা অন্য কোনো পথে সুতা আমদানি করা যাবে।
এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা আল-আমিন শেখ খবরের কাগজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ২০২৪ সালের ২৭ আগস্ট জারি করা প্রজ্ঞাপন সংশোধন করে নতুন এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এই আদেশ তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করা হয়।
এর আগে গত রবিবার এনবিআর আরেক প্রজ্ঞাপনে ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে আমদানিযোগ্য সুতা, গুঁড়া দুধ, টোব্যাকো, নিউজপ্রিন্ট, বিভিন্ন ধরনের পেপার ও পেপার বোর্ডসহ একাধিক পণ্য আমদানিতে সীমাবদ্ধতা জারি করে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, “নেপাল ও ভুটানে উৎপাদিত এবং প্রক্রিয়াজাত সুতা ও আলু ছাড়া অন্য সব পণ্য আমদানি করা যাবে। তবে ভারতের ক্ষেত্রে আরও বিস্তৃত নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ডুপ্লেক্স বোর্ড, নিউজপ্রিন্ট, ক্রাফট পেপার, সিগারেট পেপার, মাছ, সুতা, আলু, গুঁড়া দুধ, টোব্যাকো, রেডিও-টিভি পার্টস, সাইকেল ও মোটর পার্টস, ফরমিকা শিট, সিরামিকওয়্যার, স্যানিটারিওয়্যার, স্টেইনলেস স্টিলওয়্যার, মার্বেল স্ল্যাব ও টাইলস এবং মিক্সড ফেব্রিক্স—এই পণ্যগুলো ভারত থেকে আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।”
তবে মূসক নিবন্ধিত বিড়ি উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো কাঁচামাল হিসেবে তামাক ডাঁটা আমদানি করতে পারবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ রয়েছে।
এর আগে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং স্থানীয় খামারীদের পক্ষ থেকে এনবিআরে আবেদন করে জানানো হয়, স্থানীয় বাজারে চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট পরিমাণ দুধ উৎপাদন হচ্ছে দেশে। এমন পরিস্থিতিতে ভর্তুকিপ্রাপ্ত দেশ থেকে নিম্নমানের গুঁড়া দুধ আমদানি বন্ধ করার দাবি জানান খামারিরা। নিম্নমানের গুঁড়া দুধ আমদানির কারণে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে উল্লেখ করা হয়। তাদের দাবি ভর্তুকি পাওয়া দেশ থেকে নিম্নমানের গুঁড়া দুধ কম শুল্কে আমদানি বন্ধ করতে হবে। এই খাতে খামারিদের ভর্তুকি দিতে হবে। তা না হলে তারা অসম প্রতিযোগিতায় পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
গত ফেব্রুয়ারিতে স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে বস্ত্র খাতের অন্যতম কাঁচামাল সুতা আমদানি বন্ধের দাবি জানায় বস্ত্রশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। এরপর গত মার্চ মাসে এক চিঠিতে পোশাকশিল্পে দেশে তৈরি সুতার ব্যবহার বাড়াতে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ করার জন্য এনবিআরকে ব্যবস্থা নিতে বলে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।
তখন ট্যারিফ কমিশন থেকে এনবিআর চেয়ারম্যানকে পাঠানো চিঠিতে দেশীয় টেক্সটাইল শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণে সব সীমান্ত সংলগ্ন সড়ক ও রেলপথ এবং স্থলবন্দর ও কাস্টমস হাউসের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে সুতা কাউন্ট নির্ণয়ে যথাযথ অবকাঠামো প্রস্তুত না হওয়া পর্যন্ত আগের মতো সমুদ্রবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুপারিশ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেন।
জানা গেছে, ভারতের উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলে উৎপাদিত সুতা কলকাতায় গুদামজাত করা হয়। এরপর সেখান থেকে সুতা বাংলাদেশে পাঠানো হয়। এসব সুতা তুলনামূলক কম দামে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এ কারণে দেশি সুতার পরিবর্তে স্থলবন্দর দিয়ে আসা সুতা বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ কারণে দেশের বস্ত্রশিল্প কারখানাগুলো বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছে বলে দাবি করে বিটিএমএ।
মিল মালিকরা বলছেন-চীন, তুরস্ক, উজবেকিস্তান এবং দেশে উৎপাদিত সুতার দাম প্রায় একই রকম হলেও স্থলবন্দর দিয়ে আসা ভারতীয় সুতার দাম অনেক কম থাকে। অর্থাৎ, স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা সুতা চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে ঘোষিত দামের চেয়ে অনেক কম দামে আসে। এতে দেশের সুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না।