
সম্প্রতি সরকারের গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে। সরকার থেকে নতুন শিল্প ও ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়ানোর পর দুদিন ধরে ঢালাও দরপতন হচ্ছে পুঁজিবাজারে। সেই সঙ্গে লেনদেনও নেমে এসেছে তলানিতে।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আট কার্যদিবসের মধ্যে সব থেকে কম লেনদেন হয়েছে। সেই সঙ্গে ভালো, মন্দ সব খাতের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দরপতন হয়েছে। ফলে কমেছে মূল্যসূচক।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি কমেছে সবকটি মূল্যসূচক। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। এর মাধ্যমে টানা তিন কার্যদিবস সিএসইতে ঢালাও দরপতন হলো।
এর আগে শিল্প গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হচ্ছে- এমন গুঞ্জনে রবিবার পুঁজিবাজারে ঢালাও দরপতন হয়। পুঁজিবাজারের লেনদেন শেষ হওয়ার পর শিল্প ও ক্যাপটিভের নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম ৩৩ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত জানায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিএসইসি)। এরপর মঙ্গলবারও পুঁজিবাজারে ঢালাও দরপতন হয়।
এ পরিস্থিতিতে গতকাল পুঁজিবাজারের লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই বাজারে ক্রেতাসংকট দেখা দেয়। ফলে দাম বাড়ার তালিকা থেকে একের পর এক প্রতিষ্ঠান দাম কমার তালিকায় চলে আসে। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত থাকে এই ধারা।
এতে দিনের লেনদেন শেষে সব খাত মিলে ডিএসইতে ১২০টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২১২টির। আর ৬৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৬৪টির শেয়ার দাম বেড়েছে এবং ১২৭টির দাম কমেছে। আর ২৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মাঝারি মানের বা ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া ৩১টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে ৪১টির দাম কমেছে এবং ১১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এ ছাড়া বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণে ‘জেড’ গ্রুপে স্থান হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২৫টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৪টির এবং ২৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আর ২টি মিউচুয়াল ফান্ডের দাম বাড়ার বিপরীতে দাম কমেছে ২৭টির এবং ৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
সার্বিকভাবে দাম কামার তালিকায় বেশি প্রতিষ্ঠান থাকায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২৬ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ১০৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৭ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৪৮ পয়েন্টে নেমে গেছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৫ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৮৭৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কমে আবার ৩০০ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৯৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪৪৬ কোটি ১২ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৪৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
এ লেনদেনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ২৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফাইন ফুডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ৭ লাখ টাকার। ১১ কোটি ৩৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইস্টার্ন লুব্রিকেন্ট।
গতকাল সার্বিক লেনদেনের মধ্যে ওষুধ ও রসায়ন খাতের মোট লেনদেন হয়েছে ৪৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের লেনদেন হয়েছে ৩৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ব্যাংক খাতের মোট লেনদেন হয়েছে ৩৫ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের মোট লেনদেন হয়েছে ৩৪ কোটি ২২ লাখ টাকা। বিবিধ খাতের মোট লেনদেন হয়েছে ৩২ কোটি ১০ লাখ টাকা।
সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৪৮ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২০৪ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬২টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২১টির এবং ২১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা।