ঢাকা ১৬ বৈশাখ ১৪৩২, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৬ বৈশাখ ১৪৩২

ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক মোকাবিলায় কর্মকৌশল তৈরি হচ্ছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১৪ এএম
ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক মোকাবিলায় কর্মকৌশল তৈরি হচ্ছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
বুধবার ( সচিবালয়ের গণমাধ্যমকেন্দ্রে ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ: চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা ও সরকারের করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন বলেছেন, আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশ থেকে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক নিয়ে আলোচনার জন্য। পাল্টা শুল্কারোপ মোকাবিলায় এ জন্য কর্মকৌশল তৈরি হচ্ছে। প্রতিনিধিদল দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি, ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ বাধা এবং দুই দেশের অর্থনীতির জন্য পরিপূরক পণ্যগুলোর সরবরাহ বাড়ানোর কৌশল নিয়ে আলোচনা করবে। পাশাপাশি শুল্ক বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষার সরাসরি ধারণা নিয়ে পরবর্তী কর্মকৌশল গ্রহণ করবে।

বুধবার ( সচিবালয়ের গণমাধ্যমকেন্দ্রে ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ: চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা ও সরকারের করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএসআরএফের সভাপতি ফসিহ উদ্দীন মাহতাব, সঞ্চালনায় ছিলেন বিএসআরএফের সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক।
এদিকে ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল প্রসঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আকাশ পথে কাগো পরিবহন খরচ কীভাবে কমানো যায়, সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি। 

বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের ওপর একপেশে শুল্ক আরোপ করেছে। এটি ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হলেও পরবর্তী সময় এটা কীভাবে সহনীয় করা যায় সে বিষয়ে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। শুল্ক সমস্যা সমাধানে প্রধান উপদেষ্টা নিজেও খুব আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন। প্রায় প্রতিদিন তিনি সরকারের সব মহল, অংশীদার প্রতিষ্ঠান ও অর্থনীতিবিদদের নিয়ে বারবার বৈঠক করছেন। শুল্ক সমস্যা সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত, অর্থ উপদেষ্টাসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি বিবেচনায় যে পাল্টা শুল্ক যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছে, সে ক্ষেত্রে কিন্তু পণ্যের বিষয় বিবেচনা করা হলেও সেবার বিষয়গুলো আমলে নেওয়া হয়নি। আমরা তাদের বিভিন্ন ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছি, নানা ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করছি, গুগল-ফেসবুকের মতো যত প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছি, এ সেবা তারা আমলে নেয়নি। এ ছাড়াও তৃতীয় দেশের মাধ্যমে বাংলাদেশসহ আরও অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানি করছি। সবকিছু মিলে হিসেব করলে আমাদের যে বাণিজ্য ঘাটতি দেখানো হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে সেটা হবে না। এসব আলোচনা করে পাল্টা শুল্ক মোকাবিলায় কর্মকৈশল তৈরি করছি।

তিনি বলেন, যে প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন, তারা আলোচনা করে একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিধি ঠিক করবেন, যুক্তরাষ্ট্র কী চায়। তারা বাংলাদেশের ট্যারিফ নন-ট্যারিফ কাঠামো তুলে ধরবেন। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্কে বাণিজ্যের যে বৈচিত্র্য, সেটা নিয়ে আলোচনা করবেন। ওই দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একদম সুনির্দিষ্ট আলোচনা হবে।

উপদেষ্টা বলেন, এর মধ্যে আমরা চিন্তা করছি, যেসব পণ্য আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করি, ভবিষ্যতে সেগুলো আরও কীভাবে বাড়ানো যায়। সেজন্য আমাদের কি ধরনের অবকাঠামো দরকার। কি ধরনের নীতি সহায়তা দরকার। পাশাপাশি দুই দেশের পরিপূরক যেসব পণ্য সেগুলোর বাণিজ্য কীভাবে বাড়ানো যায়। যেমন পশুখাদ্য, তুলা, তেলবীজসহ আরও যেসব পণ্য আমরা আনছি।

প্রসঙ্গ ট্রান্সশিপমেন্ট: ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের ফলে কয়েকটি দেশে বাংলাদেশি পণ্য পরিবহন খরচ দুই হাজার কোটি টাকা বেড়েছে জানিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, শিগগির যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছি তাতে এ খরচ শূন্যের কোঠায় নেব।
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, এ ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে আমাদের খরচ প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা বেড়ে যাবে। আমরা চেষ্টা করছি, কর্মসূচি নিয়েছি, বাতিলের পর দিনরাত আলোচনা করছি।

তিনি বলেন, আমি নিজে পয়লা বৈশাখের সারা দিন বিমানবন্দরে কাটিয়েছি। নিজে বোঝার চেষ্টা করেছি, কীভাবে এ সমস্যা হচ্ছে, কেন আমাদের দেশের পণ্যবাহী কার্গো আরেক দেশের সহায়তা নিয়ে তৃতীয় দেশে যেতে হচ্ছে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, আশা করি এটা সমাধান করতে পারব। আবার আমাকে (বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা) নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এটা সেই কর্মসূচিকে গতিশীল করবে। আমি মনে করি, ঠিক যেভাবে বাজারকে পণ্যের বৈচিত্র্যময়, সরবরাহ ঠিক করার মাধ্যমে স্থিতিশীল করেছি, এ কাজও সেভাবে বিমানে পণ্যবাহী কার্গো ঠিকমতো পরিবহন করতে পারব।

তিনি বলেন, বাড়তি দুই হাজার কোটি টাকা পোষাতে পারব, এটি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনব।

রাজস্ব নীতিতে অভিজ্ঞতার অবমূল্যায়নের অভিযোগ কাস্টমস ও ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশনের

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪৮ পিএম
আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৫০ পিএম
রাজস্ব নীতিতে অভিজ্ঞতার অবমূল্যায়নের অভিযোগ কাস্টমস ও ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশনের
ছবি: সংগৃহীত

রাজস্ব প্রশাসনের সংস্কারে বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের মতামত যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছে বিসিএস (কাস্টমস ও ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশন।

প্রস্তাবিত ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়ায় অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের উপেক্ষা এবং বিশেষায়িত জ্ঞানের অবমূল্যায়নের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সংগঠনটি । 

রবিবার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে এক প্রেস বিবৃতিতে এ বিষয়টি জানানো হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিএস (কাস্টমস ও ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশন প্রেসিডেন্ট কাজী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, রাজস্ব সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য যাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও বিশেষায়িত দক্ষতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল, সেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতামত যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়নি।  ফলে একদিকে যেমন কর-জিডিপি অনুপাত উন্নয়নের স্বপ্নে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে রাজস্ব প্রশাসনের টেকসই উন্নয়নের পথও হয়ে পড়েছে অনিশ্চিত।

এ বিষয়ে বিসিএস (কাস্টমস ও ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল একে এম নুরুল হুদা আজাদ জানান, রাজস্ব প্রশাসন সংস্কার এবং কর-জিডিপি অনুপাত উন্নয়নে করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা সভায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাশাপাশি সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর চূড়ান্ত খসড়া নিয়েও আলোচনা করা হয়।  এ সময় কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তাদের নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে রাজস্ব আহরণ এবং দেশের অর্থনৈতিক বিকাশে অবদানের কথা স্মরণ করা হয়।

অ্যাসোসিয়েশনের প্রেস বিবৃতিতে ও সভায় বক্তারা জানান, কর-জিডিপি অনুপাত উন্নয়নে অতিমূল্যায়িত জিডিপি, রাজস্ব প্রশাসনের শীর্ষপদে বাস্তব অভিজ্ঞতার ঘাটতি এবং রাজস্ব আহরণে সর্বনিম্ন বিনিয়োগ বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা সরকারের কাছে রাজস্ব আহরণে অধিক বিনিয়োগ এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মনোযোগ দেওয়ার দাবি জানান।

এসব বিষয়ে বিসিএস কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশন মনে করে, রাজস্ব সংস্কার শুধু নীতি ও বাস্তবায়ন পৃথক করলেই যথেষ্ট নয় বরং রাজস্ব প্রশাসনের সামগ্রিক শক্তিশালীকরণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং উন্নয়ন অপরিহার্য।  

সভায় বক্তারা জানান, সরকার গঠিত পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট রাজস্ব সংস্কার পরামর্শক কমিটির আহ্বানে বিসিএস কাস্টমস ও ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশন এবং বিসিএস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশন যৌথভাবে মতামত পেশ করেছে।

তবে সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত অধ্যাদেশের খসড়া পর্যালোচনা করে অ্যাসোসিয়েশন দুটি লক্ষ্য করেছে যে, তাদের প্রস্তাবিত গুরুত্বপূর্ণ মতামত সঠিকভাবে প্রতিফলিত হয়নি। সভায় বিসিএস কাস্টমস ও ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশন নিম্নলিখিত পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে- রাজস্বনীতি বিভাগের শীর্ষপদে কর-রাজস্ব আহরণে বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের পদায়নের প্রস্তাব থাকলেও খসড়ায় ‘যেকোনো সরকারি কর্মকর্তা’ নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে।

রাজস্ব নীতি বিভাগের মৌলিক পদে বিশেষায়িত ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের সুনির্দিষ্টভাবে নিয়োগের বিষয়টি উপেক্ষিত হয়েছে।  কর আইন প্রয়োগ ও আহরণ পরিস্থিতি পরিবীক্ষণের ক্ষমতা নীতি বিভাগকে দেওয়ার প্রস্তাবকে সাংঘর্ষিক হিসেবে অভিহিত করা হয়।

রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সিনিয়র সচিব নিয়োগে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ কর-রাজস্ব কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার না দেওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। প্রশাসনিক পদসমূহে সংশ্লিষ্ট ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।

বক্তারা বলেন, ‘ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও নীতিনির্ধারণে মাঠপর্যায়ের বাস্তব অভিজ্ঞতার গুরুত্ব অপরিসীম। অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের বাদ দেওয়া হলে প্রশাসনিক দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ব্যাহত হবে।’

একই সঙ্গে সভায় কর্মকর্তাদের কর্মস্পৃহা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। 

বিসিএস কাস্টমস ও ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশন মনে করে, কর-রাজস্ব আহরণ, ব্যবস্থাপনা এবং রাজস্ব নীতি প্রণয়নে বিশেষায়িত ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে প্রস্তাবিত বিভাগ দুটিকে ব্যবসা-বান্ধব, গতিশীল ও জনমুখী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে হবে। কোনো বিশেষ মহলের প্ররোচনায় জনআকাঙ্ক্ষার পরিপন্থি কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে তা কর-জিডিপি অনুপাত বৃদ্ধির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে বলে সভায় সতর্ক করে দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, বিসিএস (ট্যাক্সেশন) অ্যাসোসিয়েশন ও বিসিএস (কাস্টমস ও ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশন দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করে আসছিল, রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব নিয়োগে রাজস্ব প্রশাসনে সরাসরি কাজ করা অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের মধ্য থেকেই নির্বাচন করা উচিত। তাদের প্রস্তাব ছিল, ‘রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মরত কর্মকর্তাদের’ মধ্য থেকে সচিব নিয়োগ করতে হবে। 

কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত খসড়ার অনুচ্ছেদ ৪(৩)-এ বলা হয়েছে, ‘উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন যে কোনো সরকারি কর্মকর্তা’ রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব বা সিনিয়র সচিব হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন। এতে বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা অগ্রাহ্য করা হয়েছে বলে মনে করছে সংগঠন দুটি।

সুমন/

৯ দিন সূচক পতনের পর উত্থানে পুঁজিবাজার

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩৯ এএম
আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩৯ এএম
৯ দিন সূচক পতনের পর উত্থানে পুঁজিবাজার

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সেচেঞ্জে (ডিএসই) টানা ৯ দিন সূচক পতনের পর গতকাল রবিবার উত্থানে ফিরেছে। দর বেড়েছে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৩৫টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইউনিটের। ধারাবাহিক এমন পতনের পর সূচকের উত্থানকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন বিনিয়োগকারীরা। 

তারা বলছেন, এক দিন সূচক বৃদ্ধির মাধ্যমে লোকসান হওয়া বিনিয়োগ ফিরে আসবে না। প্রয়োজন উত্থানের ধারাবাহিকতা। এর জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। 

টানা এই পতনে গত চার বছরের মধ্যে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রথমবারের মতো পাঁচ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমেছে।

সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারের এমন ধারাবাহিক পতনের পেছনে বিএসইসির বর্তমান চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের অযোগ্যতাকে দায়ী করছেন। ইতোমধ্যে চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে বিনিয়োগকারীরা মানববন্ধনসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন। 

পাশাপাশি পুঁজিবাজারের মন্দাবস্থার জন্য বর্তমান কমিশনকে দায়ী করে সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসের কাছেও চিঠি দিয়েছে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ। 

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আনম আতাউল্লাহ নাঈম বলেন, ধারাবাহিক পতনের পর গতকাল সূচকের উত্থানকে ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করা যায়। তবে এমন উত্থানের ধারাবাহিকতা না থাকলে বিনিয়োগকারীদের হতাশা আরও বাড়বে।

টানা ৯ দিনের পতন ইতোপূর্বে বিনিয়োগকারীরা আগে কখনো দেখেনি। বর্তমান কমিশনের সময় যেহেতু এমন পতন হয়েছে তাই এর দায় তাদেরই নিতে হবে বলে জানান তিনি। 

এনএলআই সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী আব্দুল্লাহ বলেন, পুঁজিবাজারে গুজব আছে বিএসইসি চেয়ারম্যান পদত্যাগ করছেন। মূলত এ কারণেই গতকাল সূচক বেড়েছে। আর সূচকের পতন থামায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও হতাশা কিছুটা কেটেছে। 

ডিএসইর লেনদেন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ১৩ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া সূচকের পতন ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এই সময়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ২৩৩ পয়েন্ট। আর গতকাল রবিবার সূচক বেড়েছে ২২ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট। 

তবে অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দরপতনের ধারা অব্যাহত রয়েছে রবিবার। বাজারটিতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি কমেছে মূল্যসূচক। এর মাধ্যমে সিএসইতে টানা ১০ কার্যদিবস দরপতন হলো।

গতকাল লেনদেনের শুরুতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দামতে শুরুকরে। এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫০ পয়েন্ট কমে যায়। ফলে আবারও দরপতনের শঙ্কা পেয়ে বসে বিনিয়োগকারীদের। কিন্তু লেনদেনের শেষ ঘণ্টার বদলে যায় বাজারের চিত্র।

দাম কমার তালিকা থেকে বেরিয়ে একের পর এক প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় চলে আসে। দুপুর ১টার পর থেকে লেনদেনের শেষ পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত থাকে। ফলে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার পাশাপাশি সব কটি মূল্যসূচক বেড়েই ডিএসইতে লেনদেন শেষ হয়।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ২৩৫ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯৯টির। এ ছাড়া ৬৩টির দাম অপরিবর্তিত ছিল।

এদিন লেনদেন হওয়া ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির মধ্যে ১১৯টির শেয়ারের দাম বেড়েছে এবং ৬৫টির দাম কমেছে। এছাড়া ৩৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হওয়া ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানির মধ্যে ৬৬টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। কমেছে ১১টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের।  

সার্বিকভাবে দাম বাড়ার তালিকায় বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠান থাকায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২২ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৯৯৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। 

অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১০৮ পয়েন্টে উঠে এসেছে। এ ছাড়া বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৭ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৮৫২ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

সব কটি মূল্যসূচক বাড়লেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৩৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৬৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ২৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৯৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২১০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮২টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০০টির এবং ২৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা।

মার্জিন রুলস-সংক্রান্ত চূড়ান্ত সুপারিশ জমা দিল টাস্কফোর্স

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩০ এএম
আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩৯ এএম
মার্জিন রুলস-সংক্রান্ত চূড়ান্ত সুপারিশ জমা দিল টাস্কফোর্স
পুঁজিবাজারের উন্নয়নে গঠিত সংস্কার টাস্কফোর্স গতকাল রবিবার মার্জিন রুলস-সংক্রান্ত চূড়ান্ত সুপারিশগুলো কমিশনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেছে।

মার্জিন রুলস, ১৯৯৯-এর যুগোপযোগীকরণে চূড়ান্ত সুপারিশ জমা দিয়েছে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে গঠিত সংস্কার টাস্কফোর্স। গতকাল রবিবার মার্জিন রুলস-সংক্রান্ত চূড়ান্ত সুপারিশগুলো কমিশনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেছে টাস্কফোর্স।

এ সময় বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, কমিশনার মো. আলী আকবর ও কমিশনার ফারজানা লালারুখ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া সংস্কার টাস্কফোর্সের পক্ষে টাস্কফোর্সের সদস্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিএসই বিভাগের অধ্যাপক মো. মোস্তফা আকবর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন উপস্থিত ছিলেন।

গতকাল বিএসইসির পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি এবং পুঁজিবাজারে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত বছরের ৭ অক্টোবর পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষ পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স গঠন করে বিএসইসি। পরবর্তী সময়ে টাস্কফোর্সের পরামর্শে এবং তাদের কাজের সহযোগিতার জন্য পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপ গঠন করা হয়।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স কমিশনের কাছে মার্জিন রুলস, ১৯৯৯-এর যুগোপযোগীকরণের বিষয়ে খসড়া সুপারিশ জমা দেয়। পরবর্তী সময়ে ওই খসড়া সুপারিশের ওপর সংশ্লিষ্ট সবার মতামত আহ্বান করা হয়। ওই মতামত বিবেচনায় নিয়ে পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স এ-সংক্রান্ত চূড়ান্ত সুপারিশ প্রস্তুত করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানানো হয়।

পুঁজিবাজার আরএফএলের ইপিএস বেড়েছে ১০ শতাংশ

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২৪ এএম
আরএফএলের ইপিএস বেড়েছে ১০ শতাংশ
রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেড

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেডের তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ বেড়েছে। 

গত শনিবার অনুষ্ঠিত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে চলতি হিসাববছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ সময়ের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ তথ্য জানিয়েছে। 

তৃতীয় প্রান্তিক শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৯৯ পয়সা। গত বছর একই সময়ে শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছিল ৯০ পয়সা। 

অন্যদিকে, তিন প্রান্তিক মিলিয়ে জুলাই ২০২৪ থেকে মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩ টাকা ১৭ পয়সা। গত বছর একই সময়ে ৩ টাকা ৭ পয়সা আয় হয়েছিল। প্রথম তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নগদ টাকা ২ টাকা ৫২ পয়সা লোকসান করেছে, যা আগের বছর একই সময়ে আয় ছিল ২ টাকা ৮৪ পয়সা। 

পুঁজিবাজার লেনদেনের শীর্ষে ছিল যে কোম্পানিগুলো

প্রকাশ: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১০:১৮ এএম
লেনদেনের শীর্ষে ছিল যে কোম্পানিগুলো
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)

গতকাল রবিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনের শীর্ষে ছিল বিচ হ্যাচারি লিমিটেড। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এদিন কোম্পানিটির ১৭ কোটি ৫২ লাখ ৪৩ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা মিডল্যান্ড ব্যাংকের লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ৪৪ লাখ ৯০ হাজার টাকার। আর ১০ কোটি ৮৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন নিয়ে শীর্ষ তালিকার তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড।

লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে লাভেলো আইসক্রিম, বিএসসি, মীর আক্তার হোসেন, শাইনপুকুর সিরামিকস, ফাইন ফুডস এবং রিলায়েন্স ওয়ান মিউচুয়াল ফান্ড।