ঢাকা ১৭ বৈশাখ ১৪৩২, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
English
বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড, ভরিতে বাড়ল ৩০৩৩ টাকা

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৪৬ পিএম
আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৫২ পিএম
স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড, ভরিতে বাড়ল ৩০৩৩ টাকা
ছবি : সংগৃহীত

দেশের বাজারে ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম। সর্বশেষ ৩ হাজার ৩৩ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ২০৯ টাকা, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। 

নতুন মূল্য আজ বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়।

বাজুস জানায়, স্থানীয় বাজারে পিওর গোল্ড বা তেজাবি স্বর্ণের দামে ঊর্ধ্বগতির কারণে এ দাম পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৩ এপ্রিল রাতে স্বর্ণের দাম ভরিপ্রতি সর্বোচ্চ ১ হাজার ৩৮ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৬২ হাজার ১৭৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়, যা গতকাল রাত পর্যন্ত কার্যকর ছিল।

খবরে বলা হয়েছে, বিশ্ববাজারেও চলছে স্বর্ণের দামের উল্লম্ফন। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা ও পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের প্রতি আউন্সের দাম ৩ হাজার ৩০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা সর্বকালের সর্বোচ্চ।

স্বর্ণের দামে বড় ধরনের পরিবর্তন এলেও রুপার দামে কোনো পরিবর্তন হয়নি। বাজুসের নির্ধারিত দর অনুযায়ী ২২ ক্যারেট রুপা ২ হাজার ৫৭৮ টাকা, ২১ ক্যারেট ২ হাজার ৪৪৯ টাকা, ১৮ ক্যারেট ২ হাজার ১১১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রুপার দাম ১ হাজার ৫৮৬ টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, নিরাপদ বিনিয়োগের ঝোঁক এবং স্থানীয় বাজারে সরবরাহ সংকট মিলিয়ে স্বর্ণের দামে এই রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। দাম আরও বাড়তে পারে এমন শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন অনেক ব্যবসায়ী।

বাজারে যমুনা ইলেকট্রনিক্সের পণ্য  শক্তিশালী অবস্থানে

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩০ এএম
বাজারে যমুনা ইলেকট্রনিক্সের পণ্য  শক্তিশালী অবস্থানে
ছবি: খবরের কাগজ

খবরের কাগজ: যমুনা ফ্রিজ, এসি ও ফ্যান বর্তমানে মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। দেশব্যাপী এসব পণ্যের বিস্তারে কী পরিকল্পনা আপনাদের?

মনিকা ইসলাম: আপনি যথার্থই বলেছেন, সময়ের পথপরিক্রমায় দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে যমুনা ইলেকট্রনিক্স ক্রেতাদের কাছে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে। ইলেকট্রনিক্সের বাজারে নেতৃত্ব দেওয়ায় দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যমুনা ইলেকট্রনিক্স অন্যতম শীর্ষস্থান দখল করে আছে। আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন যমুনা ফ্যান দিয়ে ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রিতে আমাদের পথচলা শুরু। দীর্ঘ চার যুগেরও বেশি সময় ধরে যমুনা ফ্যান বাংলার ঘরে ঘরে আজও সমানভাবে জনপ্রিয় ও সমাদৃত। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা, দক্ষ জনশক্তি, উন্নত মানের কাঁচামাল আর ক্রেতার চাহিদা ও প্রয়োজন অনুসারে পণ্য উৎপাদনের ফলে যমুনা আজ দেশের এক নম্বর কোয়ালিটি ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড। আমাদের উৎপাদিত হোম অ্যাপ্লায়েন্সের মধ্যে রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এলইডি টিভি, এসি, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ব্লেন্ডার, জুসার, ইলেকট্রিক কেটলি, আয়রন, গ্যাস স্টোভসহ অন্যান্য স্মল অ্যাপ্লায়েন্স। ক্রমবর্ধমান চাহিদা আর ক্রেতা সন্তুষ্টির দিকে নজর রেখে যমুনা ইলেকট্রনিক্স নিত্যনতুন প্রযুক্তি, উন্নত কাঁচামাল ও একদল নিবেদিত প্রাণ দক্ষ জনবলে মাধ্যমে নিজস্ব কারখানায় এসব হোম অ্যাপ্লায়েন্স তৈরি করছে। আমাদের উৎপাদিত এসব কোয়ালিটি হোম অ্যাপ্লায়েন্স যাতে ক্রেতারা সহজেই কিনতে পারেন, সেজন্য দেশব্যাপী আমাদের ফ্ল্যাগশিপ শোরুম তথা যমুনা প্লাজা রয়েছে। এ ছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলেও যাতে যমুনা ইলেকট্রনিক্সের পণ্যসামগ্রী ক্রেতারা সহজে পেতে পারেন সে জন্য আমাদের দেশব্যাপী ডিলার নেটওয়ার্ক রয়েছে।

খবরের কাগজ: গত এক দশকে দেশে ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বাজারের আকার বেশ বড় হয়েছে। বর্তমানে এ বাজারের কী অবস্থা? এ বাজারে আপনাদের অংশীদারত্ব কত?

মনিকা ইসলাম: গত এক দশকে ইলেকট্রনিক্স শিল্প খাতে বিপুল অগ্রগতি হয়েছে। একসময়ে যেটি ছিল নিতান্ত শখের জিনিস, বর্তমানে সেটি প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ। ফলে প্রাত্যহিক জীবনে এসব হোম অ্যাপ্লায়েন্সের ব্যবহার দিন দিন এ শিল্পকে বিকশিত করছে। বর্তমানে গ্রাম থেকে শহর কিংবা শহরতলি সর্বত্র ইলেকট্রনিক্স পণ্যের শোরুম দেখতে পাওয়া যায়। স্থানীয় শিল্প বিকাশে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। 
বাজারে যমুনা ইলেকট্রনিক্সের একটি শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স ব্যবসায় আমাদের কোম্পানিগুলো দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ব্যবসা পরিচালনা করছে। কিন্তু ভালো মানের পণ্য সরবরাহের ঘাটতি থেকেই আমাদের গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মনে করলেন, ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে জনগণের দুয়ারে সেরা পণ্যটি পৌঁছে দিতে হবে। সে লক্ষ্যে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী যমুনা গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান যমুনা ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড অটোমোবাইলস লি. ২০১৪ সালে বৃহৎ পরিসরে ইলেকট্রনিক্স হোম অ্যাপ্লায়েন্স উৎপাদন শুরু করে। আমাদের অত্যাধুনিক কারখানাটি বিশ্বমানের ইলেকট্রনিক্স পণ্য তৈরি করে, যা গ্লোবাল ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারে। বাংলাদেশের বড় জনসংখ্যার কারণেও এখানে বড় বাজারে পরিণত হয়েছে। এদিকে দেশের বেশির ভাগ এলাকা বিদ্যুতায়নের আওতায় আসার ফলে গ্রামীণ অঞ্চলেও ইলেকট্রনিক্স পণ্যের ব্যবহার বাড়ছে।

খবরের কাগজ: এ বছর আপনাদের এসি, ফ্যান ও ফ্রিজের চাহিদা কেমন?

মনিকা ইসলাম: আমাদের যাপিত জীবনযাত্রার এক অন্যতম অনুষঙ্গ ফ্যান, রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ। এ ছাড়া এসির ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে ও শহর কিংবা গ্রাম, উচ্চবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্ত এমনকি নিম্নআয়ের মানুষের ঘরেও স্থান করে নিয়েছে ফ্যান এবং ফ্রিজ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এসব পণ্যের ব্যবহার বাড়ছে, বছরে এ বৃদ্ধির হার প্রায় ২০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত। মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন, দেশব্যাপী বিদ্যুৎ সংযোগ ও ব্যস্ত জীবনকে সহজ করতে গৃহস্থালির নানা কাজে ফ্রিজসহ ব্যবহৃত হচ্ছে নানা ধরনের ইলেকট্রনিক্স হোম অ্যাপ্লায়েন্সেস। বেড়েছে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা, তা ছাড়া স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হওয়ায় দেশীয় ফ্রিজের দাম আমাদের ক্রেতাদের হাতের নাগালে।

খবরের কাগজ: আসন্ন কোরবানির ঈদ উপলক্ষে ক্রেতাদের জন্য আপনারা কী কী অফার দিচ্ছেন?

মনিকা ইসলাম: যার যেমন প্রয়োজন তেমনি আছে আয়োজন। যমুনা ইলেকট্রনিক্স তার ক্রেতাদের প্রয়োজন ও ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সেরা পণ্যটি সাশ্রয় মূল্যে দিতে বদ্ধপরিকর। সাধারণত কোরবানি ঈদে রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজারসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। ঈদকে কেন্দ্র করে সাধারণত চাঙ্গা হয়ে ওঠে দেশের ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বাজার। ফলে পণ্যের চাহিদা ও বিক্রি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। আর এসব বর্ধিত চাহিদা পূরণে এগিয়ে রয়েছে দেশীয় কোম্পানিগুলো। তাদের মধ্যে যমুনা ইলেকট্রনিক্স অন্যতম।

ঈদের খুশিকে বেশি করতে যমুনা ইলেকট্রনিক্স নিয়ে এসেছে ডাবল খুশি অফার (সিজন-৩)। সম্মানিত ক্রেতা সাধারণ এই ঈদে আমাদের যমুনা প্লাজা, ডিলার শপ কিংবা অনলাইনে যমুনা রেফ্রিজারেটর বা অন্যান্য হোম অ্যাপ্লায়েন্স কিনে রেজিস্ট্রেশন করেই জিতে নিতে পারবেন ঈদ উপহার আর লটারির মাধ্যমে প্রতি সপ্তাহে একের অধিক ভাগ্যবানরা পেয়ে যেতে পারেন বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ। এ ছাড়া সব পণ্যে নগদ ডিসকাউন্ট তো থাকছেই।

আমাদের রয়েছে ২০ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে সহজ কিস্তি সুবিধা। ভোক্তারা আমাদের যমুনা প্লাজা শোরুম থেকে ৬ মাস, ৯ মাস এবং ১২ মাস মেয়াদি কিস্তিতে এসিসহ সকল ইলেকট্রনিক্স পণ্য কিনতে পারবেন। এ ছাড়া ক্রেডিট কার্ডে জিরো পার্সেন্ট ইন্টারেস্টে ব্যাংক ইএমআই সুবিধাও রয়েছে ।

খবরের কাগজ: আপনাদের এসি, ফ্রিজ ও ফ্যানের নতুন কোন কোন মডেল এসেছে?

মনিকা ইসলাম: আমরা প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন ফিচার ও ডিজাইনের ফ্রিজ গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। আমাদের আরএনডি টিম পণ্যের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা ও মানোন্নয়নে সর্বদা কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমান ব্যস্ত সময়ে অনেকেই স্বল্প সময়ে এবং সহজে গৃহস্থালির কাজকর্ম করতে চায়। নানাবিধ ইলেকট্রনিক্স পণ্য এ কাজটি সহজ করে দিয়েছে যার মধ্যে ফ্রিজ অন্যতম।

বাংলাদেশে যে গ্লাসডোর ফ্রিজগুলো দেখা যায় এর প্রথম উদ্যোক্তা যমুনা ইলেকট্রনিক্স। খুব সম্প্রতি আমরা বাজারে নতুন ডিজাইনের বেশকিছু স্মার্ট রেফ্রিজারেটর বাজারজাত করেছি এবং ভোক্তাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি। আমরা সাশ্রয়ী মূল্য, দীর্ঘ স্থায়িত্ব, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী, আকর্ষণীয় ডিজাইন, উন্নত কম্প্রেসর, ওয়ারেন্টি, বিক্রয়োত্তর সেবা এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির পণ্যটি সরবরাহ করছি। সে কারণেই দেশের মানুষের কাছে যমুনা রেফ্রিজারেটর এক নাম্বার চয়েজ।
সর্বাধুনিক প্রযুক্তি গুণগত মান আর দীর্ঘস্থায়িত্বের জন্য যমুনা ফ্যান চার যুগেরও বেশি সময় ধরে বাংলার ঘরে ঘরে জনপ্রিয়। গ্রাহক সন্তুষ্টি আর তাদের চাহিদা বিবেচনায় একদল নিবেদিত প্রাণ কর্মিবাহিনী যমুনা ফ্যান উৎপাদন করছে। সময়ের চাহিদানুসারে সিলিং ফ্যানের পাশাপাশি স্ট্যান্ড ফ্যান, ওয়াল ফ্যান, নেট ফ্যান, হাই স্পিড ফ্যান, রিচার্জেবল ফ্যান, এগজস্ট ফ্যানসহ অন্যান্য বৃহৎ ফ্যান তৈরি করছি। 

খবরের কাগজ: টাকার অবমূল্যায়নের কারণে কাঁচামাল আমদানিতে আপনাদের কোন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে?

মনিকা ইসলাম: গাজায় ইসরায়েলি বর্বর নৃশংসতা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও পণ্যের সরবরাহ চেইনে এক ধরনের নতুন চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। এসব আগ্রাসী হামলার ফলে অস্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে, খাদ্য ও পণ্যের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে, মূল্যস্ফীতির করাল গ্রাসে পড়ছে মানুষ। নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় মূল্যবৃদ্ধির বিরূপ প্রভাব ফেলছে এবং পণ্যের স্বাভাবিক সরবরাহ চেইন বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব আগ্রাসন যে কেবল বাজার অস্থিতিশীল করছে তা নয়, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেল-গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবহন ব্যয় বেড়েছে বহুগুণ। ফলে অনিচ্ছা সত্ত্বেও পণ্য উৎপাদনকারীকে মূল্যবৃদ্ধি করতে হচ্ছে। ডলারসংকট ও মূল্য বৃদ্ধির ফলে বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি এবং ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন পণ্য উৎপাদনে কাঁচামাল আমদানিতে ব্যাপক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কাঁচামাল আমদানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে।

তবে এমন বহুমুখী চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও যমুনা দেশ ও মানুষের সার্বিক কল্যাণে ব্যবসা পরিচালিত করে। পরিবর্তিত চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতেও আমরা পণ্যের দাম না বাড়িয়ে ক্রেতাদের কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে সেরা পণ্যটি তুলে দিচ্ছি।

এসি এখন বিলাসী পণ্য নয়

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১৪ এএম
আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১৭ এএম
এসি এখন বিলাসী পণ্য নয়
স্মার্ট ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড (সনি-স্মার্ট) ব্র্যান্ডের মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয়) সারোয়ার জাহান চৌধুরী

একটি ভালো এসি কেনার জন্য শুধু ব্র্যান্ড নয়, ফিচারগুলোর দিকেও নজর দেওয়া জরুরি। যেমন ইনভার্টার প্রযুক্তি, বিদ্যুৎসাশ্রয়, স্মার্ট সেন্সর, স্বয়ংক্রিয় ক্লিনিং, ডুয়াল কুলিং ইত্যাদি। আবার অনেকের কাছে প্রতি মাসে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল বহন করাও কঠিন হয়ে পড়ে। ফলে অনেকেই এসি কিনতে খানিকটা দ্বিধায় ভোগেন। তবে আধুনিক প্রযুক্তির বিদ্যুৎসাশ্রয়ী এসিগুলো এই সমস্যা অনেকটাই কমিয়ে এনেছে। এসব বিষয়ে খবরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন স্মার্ট ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড (সনি-স্মার্ট) ব্র্যান্ডের মহাব্যবস্থাপক (বিক্রয়) সারোয়ার জাহান চৌধুরী।

খবরের কাগজ: আপনাদের ব্র্যান্ডের এসি প্রথম বাজারে এসেছিল কবে? তারপর থেকে আপনাদের বিক্রির অভিজ্ঞতা কেমন?
সারোয়ার জাহান চৌধুরী: দেশের ইলেকট্রনিকস পণ্যের বাজারে আমরা এসি বাজারজাত শুরু করি ২০২২ থেকে। এখন পর্যন্ত আমরা আশানুরূপ সাড়া পেয়েছি। যৌক্তিক দামে মানসম্মত পণ্য বাজারজাতের মাধ্যমেই আমরা কাঙ্ক্ষিত বাজার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে যাচ্ছি। 

খবরের কাগজ: বাসাবাড়ির জন্য এখন কোন ধরনের এসির চাহিদা বেশি?
সারোয়ার জাহান চৌধুরী: বাসাবাড়িতে মূলত ইনভার্টার এবং নন-ইনভার্টার, এই দুই ধরনের এসি ব্যবহার হয়। এর মধ্যে ইনভার্টার এসির চাহিদা বর্তমানে সবচেয়ে বেশি। ইনভার্টার ও নন-ইনভার্টার এসির বেশ কিছু বিষয়ে পার্থক্য হয়। যেমন ইনভার্টার এসির ক্ষেত্রে কম্প্রেসার বারবার চালু হয় না, তাই এই এসিতে বিদ্যুৎ খরচ তুলনামূলক কম হয়। নন-ইনভার্টার এসির ক্ষেত্রে বারবার এসি চালু ও বন্ধ হওয়ায় বিদ্যুৎ খরচ অনেকটাই বেড়ে যায়। বিদ্যুৎ খরচের পার্থক্যের পাশাপাশি ইনভার্টার এসি নন-ইনভার্টার এসির তুলনায় বেশি পরিবেশবান্ধবও। নন-ইনভার্টার এসির কম্প্রেসার বারবার অন-অফ হওয়ায় এটি ইনভার্টার এসির তুলনায় বেশি শব্দ করে। প্রতিবার কম্প্রেসার চালু হওয়ার সময় বেশ শব্দ করে চালু হয়। ইনভার্টার এসির ক্ষেত্রে এই সমস্যা দেখা যায় না। এ ছাড়া ইনভার্টার এসি সাধারণত দ্রুত সময়ে ঘর ঠাণ্ডা করতে পারে। এটি শুরুতেই বেশি শক্তি ব্যবহার করে চালু হয়। পরে কম্প্রেসার পুরোপুরি বন্ধ না হয়ে শুধু মোটরের কাজের গতির পরিবর্তন হয়। নন-ইনভার্টার এসির ক্ষেত্রে ঘর ঠাণ্ডা হতে ইনভার্টার এসির থেকে বেশি সময় লাগে।

খবরের কাগজ: আপনাদের ব্র্যান্ডের এসির প্রযুক্তিগত বিশেষত্ব কী? 
সারোয়ার জাহান চৌধুরী: আমাদের স্মার্ট ব্র্যান্ডের এসিতে ১৮ হাজার বিটিইউ শক্তিশালী কুলিং ক্যাপাসিটি আছে, যা দ্রুত ও কার্যকরভাবে বড় জায়গাও ঠাণ্ডা করতে সক্ষম। শক্তিশালী কুলিং নিশ্চিত করার পাশাপাশি পরিবেশগত ক্ষতি কমিয়ে আনতে পরিবেশবান্ধব রেফ্রিজারেন্ট (R32) ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতি ঘণ্টায় ১ দশমিক ৮ লিটার আর্দ্রতা শোষণ করে, যা বাতাসকে সতেজ ও আরামদায়ক রাখে। সর্বনিম্ন ৩০ dB(A) শব্দমাত্রা, যা শোবার ঘর, অফিস ও বসার ঘরের জন্য আদর্শ। আমাদের এসিটি চালানোর জন্য ১ হাজার ৭৫৮ ওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করে। (ক্লাইমেট কন্ডিশন) অনুযায়ী এটি নির্ধারিত বিদ্যুৎ খরচ, যেখানে আবহাওয়া তুলনামূলক স্বাভাবিক থাকে। এটি শক্তি সাশ্রয়ী ইনভার্টার প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ খরচ কম রাখে।

খবরের কাগজ: বিক্রয়োত্তর কী কী সেবা আপনারা দিচ্ছেন?
সারোয়ার জাহান চৌধুরী: দেশের বাজারে অল্প সময়ে আমাদের শেয়ার বেশ উল্লেখযোগ্য। আমাদের এই অবস্থানের পেছনে অন্যতম নিয়ামক, ‘জি-ফাইভ’ পলিসি। মানে আমরা কেবল পণ্য বিক্রি করছি তা নয়, বরং আমরা নিশ্চিত করছি, জেনুইন প্রোডাক্ট, জেনুইন প্রাইস, জেনুইন সার্ভিস, জেনুইন প্যাশন ও জেনুইন কেয়ার। আমাদের এই পলিসি গ্রাহকরা ব্যাপকভাবে গ্রহণ করেছেন এবং এই পলিসির কারণে অন্য সবার চেয়ে গ্রাহকদের কাছে সমাদৃত হচ্ছি আমরা। আমাদের এসিতে বিক্রয়োত্তর সেবা হিসেবে রয়েছে পাঁচ বছরের কম্প্রেসার ও সার্ভিস ওয়ারেন্টি এবং দুই বছরের পার্টস ওয়ারেন্টি।

খবরের কাগজ: ক্রেতাদের উদ্দেশে যদি কিছু বলতে চান।
সারোয়ার জাহান চৌধুরী: একটা সময় এসিকে বিলাসী পণ্য হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু বর্তমান সময়ে তীব্র গরমে এসি এখন সবার জন্য প্রয়োজনীয় একটি পণ্যে পরিণত হয়েছে। গরমে স্বস্তি পেতে, এসির বিকল্প নেই। এই গরমে স্মার্ট এসি আপনাকে দেবে শব্দহীন সজীব নিশ্বাস আর আরামের অনুভূতি। তীব্র গরমে যখন চারপাশ ধুঁকবে, তখন স্মার্ট এসি আপনাকে নতুন একটা আরামের দুনিয়ায় নিয়ে যাবে। এই গরমে সমাধান পেতে সারা দেশে থাকা সনি-স্মার্ট শোরুম থেকে স্মার্ট এসি কিনুন, আপনার ও পরিবারের আরাম নিশ্চিত করুন।

খবরের কাগজ: স্মার্ট এসির স্লোগান, ‘স্মার্ট এসি থাকলে ঘরে, এক ক্লিকেই হবে দুনিয়া ঠাণ্ডা!’ এক ক্লিকেই বিষয়টা কীভাবে নিশ্চিত করা হয়?
সারোয়ার জাহান চৌধুরী: স্মার্ট ব্র্যান্ডের এসির বড় সুবিধা হচ্ছে, এর কমপ্রেসর মোটরটি প্রয়োজনমতো তার চলার গতি পরিবর্তন করতে পারে। এতে একটি সেন্সর থাকে। যা ঘরের তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে, কমপ্রেসর পুরোপুরি বন্ধ না করে, মোটরটির চলার গতি কমিয়ে দেয়। ফলে বিদ্যুৎ খরচ কমে আসে। এই এসির রয়েছে ‘কুইক কুলিং’ টেকনোলজি যা ঘরকে দ্রুত ঠাণ্ডা করে শীতল বাতাস প্রবাহিত করে। তাই গরমের অস্বস্তি কাটিয়ে স্মার্ট এসির শীতলতা গ্রাহককে দেবে হিম স্বস্তি। তা ছাড়া বারবার রিমোট দিয়ে তাপমাত্রা পরিবর্তনেরও প্রয়োজন নেই স্মার্ট ব্র্যান্ডের এই এসিতে। কারণ স্মার্ট এসিতে রয়েছে ‘ভেরিয়েবল স্পিড কমপ্রেসর’, যা রুমের তাপমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তাপমাত্রাকে পরিবর্তন করতে পারে। স্মার্ট এসিতে আরও রয়েছে ‘কোয়াইট অপারেশন’ সিস্টেম, যার কল্যাণে এসি প্রায় নিঃশব্দে আপনাকে দেবে তার সর্বোচ্চ প্রশান্তি। আগেই বলেছি, স্মার্ট এসি মানে কমফোর্ট অনুভূতি। ফোর ওয়ে সুইং, স্লিপ টাইমার, টার্বো মোড এবং মেমোরি ফাংশন—ব্যতিক্রমধর্মী সব কমফোর্ট ফিচার আপনার এসি ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে করবে আগের তুলনায় সমৃদ্ধ। সবশেষে বলব, গ্রাহক আমাদের স্মার্ট পণ্য কিনবে যাতে নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন সেজন্য আমাদের স্মার্ট এসিতে আছে পাঁচ বছরের কম্প্রেসার ওয়ারেন্টি। কেনার পর কোনো ত্রুটি দেখা দিলে আমরা দুই বছরের পার্টস ও সার্ভিস ওয়ারেন্টির ব্যবস্থা রেখেছি। এসব কারণেই আমরা বলছি, স্মার্ট এসি থাকলে ঘরে, এক ক্লিকেই হবে দুনিয়া ঠাণ্ডা!

খবরের কাগজ: এবার গ্রীষ্মে এসি ক্রেতাদের জন্য আপনারা কোনো বিশেষ অফার দিচ্ছেন?
সারোয়ার জাহান চৌধুরী: এবারের গরমে আমরা চালু করেছি, গরমের কুলিং সমাধান অফার। এর আওতায় আমরা সব ধরনের এসিতে ক্রেতাদের জন্যে রেখেছি বিশেষ মূল্যছাড় সুবিধা। একই সঙ্গে থাকছে ২০টিরও বেশি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তির আওতায় জিরো পার্সেন্ট ইএমআই সুবিধায় কিস্তিতে পণ্য কেনার সুযোগ, বিনামূল্যে হোম ডেলিভারি এবং ১০ ফিট কপার পাইপসহ বিনামূল্যে এসি ইনস্টলেশন সুবিধা। সুতরাং আপনার ঘরের জন্য ‘স্মার্ট’ এসি আজই সংগ্রহ করুন, দেশব্যাপী থাকা ‘সনি স্মার্ট’-এর যেকোনো শোরুম থেকে। অথবা ঘরে বসে এসিটি কিনতে চাইলে ভিজিট করুন sonysmart.com.bd।

হোম অ্যাপ্লায়েন্স খাতে বিশাল সম্ভাবনা আছে

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:০৯ এএম
আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১৮ এএম
হোম অ্যাপ্লায়েন্স খাতে বিশাল সম্ভাবনা আছে
সৈয়দ তাহমিদ জামান রাশিক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, বেস্ট ইলেকট্রনিক্স

বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক পরিবেশ বেশ প্রতিকূল। মানুষের আয় ও ক্রয়ক্ষমতা কিছুটা কমে গেছে। ফলে আমাদের মতো কোম্পানিগুলো এখন ‘ভ্যালু ফর মানি’বা ভালো মানের পণ্য সাশ্রয়ী দামে কীভাবে দিতে পারে, সেটাতে গুরুত্ব দিচ্ছে। আমরা আপাতত মিড-রেঞ্জ ও এন্ট্রি লেভেল প্রোডাক্টের ওপর বেশি ফোকাস করছি। তবে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা আবার প্রিমিয়াম সেগমেন্টে ফিরব।

গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের হোম অ্যাপ্লায়েন্স খাতে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। একসময় যেখানে সাধারণ এসি, রেফ্রিজারেটর আর টিভিই ছিল প্রধান, এখন সেখানে এসেছে এলজির ডুয়েল ইনভার্টার প্রযুক্তি, যা বিদ্যুৎসাশ্রয়ে অনেক কার্যকর। Panasonic MirAi টেকনোলজি গ্রাহকদের মধ্যে ইতোমধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

এ ছাড়া Whirlpool তাদের 6th Sense টেকনোলজি, Hisense-এর AI-বেইসড স্মার্ট ফিচারস গ্রাহকদের লাইফস্টাইল আরও স্মার্ট ও সহজ করে তুলেছে।

দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোও পিছিয়ে নেই। Walton এখন নিজেদের R&D-এর মাধ্যমে নতুন ফিচারগুলো নিয়ে আসছে। সব মিলিয়ে, এখনকার হোম অ্যাপ্লায়েন্স খাত শুধু প্রয়োজনীয়তা নয়, বরং একটি লাইফস্টাইল সলিউশন হয়ে উঠেছে।

বর্তমানে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির গ্রাহকদের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। তাই এই সেগমেন্টে প্রতিযোগিতা তীব্র। স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলো দামে বেশি সুবিধা দিলেও আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো নির্ভরযোগ্যতা ও দীর্ঘস্থায়িত্বে এগিয়ে। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী আমরা দুটোরই সমন্বয়ে কাজ করছি।

আমরা চেষ্টা করি যেসব পণ্য স্থানীয়ভাবে ভালো মানে তৈরি হচ্ছে, সেগুলো দেশেই উৎপাদন করতে। আর যেসব পণ্যে এখনো প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা আছে, সেগুলো আমদানি করে সাশ্রয়ী মূল্যে বাজারে দিচ্ছি।

এই খাতে সফল হতে হলে ধৈর্য, দূরদৃষ্টি আর বাস্তবিক বাজার বিশ্লেষণ খুব জরুরি। বিশেষ করে এখন যেহেতু হোম অ্যাপ্লায়েন্স ক্রমশ স্মার্ট হয়ে উঠছে, IoT (Internet of Things) ভিত্তিক প্রযুক্তির দিকে তরুণদের নজর দেওয়া উচিত। ভবিষ্যতের গ্রাহক চাইবে এমন পণ্য যা স্মার্টফোন থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, যেটা তাদের বিদ্যুৎ খরচ হিসাব করে দেয়, এমনকি সময় অনুযায়ী নিজেদের অ্যাডজাস্ট করে।

Best Electronics আগামী পাঁচ বছরে দেশের প্রতিটি জেলা ও গুরুত্বপূর্ণ উপজেলায় উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। আমাদের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ১৯০টি আউটলেট এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে মোট ৪০০টি আউটলেট চালু করা।

তবে শুধু অফলাইন নয়, আমরা সমান গুরুত্ব দিচ্ছি অনলাইন প্ল্যাটফর্মকেও। আমাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট ও ই-কমার্স চ্যানেলের মাধ্যমে ঘরে বসেই পণ্য কেনার অভিজ্ঞতা দিচ্ছি গ্রাহকদের।

আমরা সব সময় চেষ্টা করি কাস্টমার স্যাটিসফ্যাকশনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে। প্রোডাক্ট কোয়ালিটি, আফটার সেলস সার্ভিস এবং ট্রান্সপারেন্ট প্রাইসিং আমাদের ব্র্যান্ড ভ্যালু গড়ে তুলেছে।

বর্তমান কর কাঠামোতে কিছু ইতিবাচক দিক আছে, তবে চ্যালেঞ্জও রয়েছে। গত সরকার শুধু স্থানীয় উৎপাদকদের জন্য একচেটিয়া কর সুবিধা দিয়েছে, যা অবশ্যই দেশীয় শিল্প বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই একতরফা সুবিধার ফলে যারা শুধু অ্যাসেম্বলি বা ইনোভেটিভ, নিস পণ্য আমদানি করে দেশেই অ্যাসেম্বল করে বিক্রি করতেন, তাদের অনেকেই ব্যবসা থেকে ছিটকে পড়েছেন।

সব গ্রাহক এক রকম পণ্য চান না—অনেকেই আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের এক্সক্লুসিভ, প্রিমিয়াম প্রোডাক্ট খোঁজেন যেগুলো স্থানীয়ভাবে উৎপাদন সম্ভব নয় বা করে লাভজনক হয় না। তাই, এমন অ্যাসেম্বলারদের জন্যও কর কাঠামোতে কিছু যৌক্তিক সুবিধা থাকা দরকার, যাতে তারা সীমিত কিন্তু উচ্চমানের পণ্য বিক্রি করে নির্দিষ্ট ক্রেতাদের সেবা দিতে পারেন।

এ বছর পরিস্থিতি বেশ অনিশ্চিত। সাধারণত মার্চ মাস থেকেই এসি বিক্রি  শুরু হয়। কিন্তু এ বছর এপ্রিলেও সেটি আমরা দেখতে পাচ্ছি না। এর ওপর ঈদুল ফিতরেও সার্বিকভাবে সব কোম্পানির বিক্রি প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম হয়েছে।

আমরা আশা করছি, ঈদুল আজহা উপলক্ষে নতুন রেঞ্জের ফ্রিজ ও ডিপ ফ্রিজার এবং গ্রাউন্ড ব্রেকিং প্রমোশনাল অফারের মাধ্যমে বাজারে একটি পজিটিভ টার্নআরাউন্ড হবে। আমাদের ফোকাস থাকবে সাশ্রয়ী দামের ভালো মানের পণ্য এবং সহজ কিস্তির মাধ্যমে গ্রাহককে আকৃষ্ট করা।

আমরা এখন ইনভার্টার প্রযুক্তির এসি বিক্রি করছি, যা বিদ্যুৎসাশ্রয়ে অত্যন্ত কার্যকর। একই সঙ্গে Energy Rating নিশ্চিত করছি যেন গ্রাহক জানেন কী পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হবে।

বাংলাদেশে ই-ওয়েস্ট ব্যবস্থাপনায় এখনো অগ্রগতি সীমিত। কিছু প্রতিষ্ঠান যেমন পুরোনো মোবাইল ফোনের PCB থেকে মূল্যবান ধাতু সংগ্রহের জন্য ছোট আকারে রিসাইক্লিং প্লান্ট গড়ে তুলেছে, কিন্তু এগুলো এখনো বাণিজ্যিকভাবে খুব সীমিত পর্যায়ে চলছে।

এই খাতে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষ করে যদি আমরা বিদেশি বিনিয়োগ, প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের দিকনির্দেশনা পাই। যথাযথ রিসাইক্লিং প্রযুক্তি এবং সরকারিভাবে সমন্বিত উদ্যোগ থাকলে ই-ওয়েস্ট ব্যবস্থাপনা শুধু পরিবেশবান্ধবই হবে না, বরং নতুন কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বারও খুলে যাবে।

আমরা সব সময় দীর্ঘস্থায়ী এবং মানসম্পন্ন পণ্য বাজারে দিতে চেষ্টা করি। প্রযুক্তি আপডেট করা ও কাঁচামালের দাম বাড়া এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তবে ব্র্যান্ডের মান ধরে রাখতে আমরা কোনো আপস করি না।

রপ্তানির সম্ভাবনা অনেক। তবে দাম, মান এবং সার্টিফিকেশন—এই তিনটা বিষয়ে আমাদের আরও শক্তিশালী হতে হবে। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও ভারতনির্ভর কিছু দেশে ইতোমধ্যে কিছু সুযোগ তৈরি হচ্ছে।

বাংলাদেশ এখন আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল নয়: অর্থ উপদেষ্টা

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২০ পিএম
আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২৬ পিএম
বাংলাদেশ এখন আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল নয়: অর্থ উপদেষ্টা
সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ এখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের ওপর নির্ভর করে না বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, আইএমএফের সহায়তা ছাড়াই বাংলাদেশের রিজার্ভ স্থিতিশীল। তারা বাজেট সহায়তা যেটা দিতে চেয়েছে তা না দিলে বাংলাদেশ সরকার নিজেরাই সেটা করতে পারবে। আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি বজায় রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ কঠিন সিদ্ধান্ত নেবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকে অংশগ্রহণ শেষে দেশে ফিরে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ গতকালই প্রথম অফিস করেন। ওই বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টার পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার প্রমুখ যোগ দিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে ২১ এপ্রিল শুরু হয়ে ২৬ এপ্রিল শেষ হয় এ বৈঠক। বসন্তকালীন বৈঠকের ফাঁকে আইএমএফের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সাইডলাইনে আলাদা বৈঠক হয়।

এর আগে, চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচির তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির পর্যালোচনা করতে আইএমএফের একটি মিশন দুই সপ্তাহের জন্য ঢাকা ঘুরে গেছে। কিন্তু ঢাকা বা ওয়াশিংটন- কোথাও আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচি থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ পাওয়া নিয়ে ইতিবাচক কোনো বার্তা পাওয়া যায়নি।

এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, আইএমএফের সব শর্ত মেনে আমরা ঋণ নিতে চাই না। তারা যে শর্ত দিয়েছে এর সব আমরা বাস্তবায়ন করব না। আমাদের স্বার্থেই আমরা নেব। তারা অযৌক্তিকভাবে যদি ঋণ না দেয় সেটা তাদের সমস্যা। আমরা তো ঋণের বোঝা নিতে চাই না। আমি যদি ঋণ নিতে থাকি, টাকার বিনিময় হার কমে গেলে আমার যেখানে ৩ বিলিয়ন ডলার শোধ করার কথা, পরে ওটা ৫ বিলিয়ন ডলার হয়ে যাবে। তখন আমার ১৬০-১৮০ টাকা করে ডলার কিনতে হবে। আমরা এসব বিষয় চিন্তাভাবনা করছি। তিনি বলেন, সার্বিকভাবে এখন আমরা আর আইএমএফ নির্ভরশীল না। ওই দিন চলে গেছে। বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার শর্ত রয়েছে আইএমএফের; এ কথা উল্লেখ করে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘তারা বলেছে, বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে। আমরা বলেছি, বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তা পুরোপুরি বাজারে ছেড়ে দেওয়া সম্ভব নয়। তখন বিনিময় হার পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কার মতো হয়ে যেতে পারে।’ অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নেব আমাদের মতো। এতে আইএমএফ কিস্তি দিলে দেবে, না দিলে নিজেদের মতো করে বাজেট করব।’ তিনি বলেন, আইএমএফ থেকে টাকা পয়সা না নিয়েই ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেট ও রিজার্ভ স্থিতিশীল আছে। এই সরকার আসার পর কিন্তু আমরা আইএমএফ থেকে কোনো টাকা পাইনি। তাদের বলেছি তোমাদের টাকা ছাড়াই আমরা সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীল আনতে পেরেছি। তাই আমরা চিন্তাভাবনা করছি নিজেদের মতো করে বাজেট দিতে চেষ্টা করব।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘বাজেট সাপোর্ট নিয়ে আলোচনা চললেও বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আমাদের প্রজেক্ট সাপোর্ট দিতে চেয়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রজেক্ট ঋণ ওরা বলেছে কন্টিনিউ করবে। এডিবিও পাইপলাইনে আছে। এ ছাড়া এআইবি থেকে ১ মিলিয়ন ডলার চেয়েছি। এনডিবি ও ইসলামি ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক থেকে সহায়তা চেয়েছি। ফলে প্রজেক্ট সাপোর্টের ব্যাপারে তেমন কোনো সমস্যা দেখছি না। 

দেশের ঋণমান পুনর্বিবেচনার আহ্বান বাংলাদেশ ব্যাংকের

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৫৪ পিএম
দেশের ঋণমান পুনর্বিবেচনার আহ্বান বাংলাদেশ ব্যাংকের
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

বহুজাতিক কয়েকটি প্রধান ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা বাংলাদেশের রেটিং একাধিকবার কমিয়েছে। সংস্থাগুলোকে দেশের রেটিং পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 

সোমবার (২৮ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে কয়েকটি রেটিং এজেন্সির সঙ্গে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এই আহ্বান জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। 

তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে রেটিং এজেন্সিগুলোকে বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমান বিভিন্ন সূচকের অগ্রগতি নিয়ে রেটিং এজেন্সিগুলো সন্তুষ্ট। তাদের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে রেটিংয়ের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।’ 

আরিফ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ ২০২৬ সালের নভেম্বরে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে যাবে। তখন বৈদেশিক ঋণ বা সহায়তা পাব না। যেটুকু সময় আছে তার থেকে যাতে বঞ্চিত না হয়, তাই রেটিং এজেন্সিগুলোকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করার কথা বলা হয়েছে।’ 

গত বছরের জুলাইতে বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়ে দিয়েছে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঋণমান যাচাইকারী কোম্পানি এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের ঋণমান ‘বিবি মাইনাস’ থেকে কমিয়ে ‘বি প্লাস’ করেছে। এর আগে সর্বশেষ যে প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের ঋণমান অবনমন করেছিল, সেটি হলো ফিচ রেটিংস। গত মে মাসের শেষ দিকে তারা ৮ মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়ে দেয়। তখন প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের ফরেন কারেন্সি ইস্যুয়ার ডিফল্ট রেটিং (আইডিআর) ‘বিবি মাইনাস’ থেকে ‘বি প্লাস’ করে, যদিও দেশের অর্থনীতি সম্পর্কিত পূর্বাভাস স্থিতিশীল রাখে তারা। এরপর রেটিং এজেন্সি মুডিসও দীর্ঘমেয়াদে দেশের ঋণমান কমিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে দেশের বেশ কয়েকটি বড় ব্যাংকেরও ঋণমান কমিয়ে দিয়েছে সংস্থাটি। 

সে সময়ই বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছিল, মুডিস রেটিংস বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি ঋণমান কমানো যথাযথ হয়নি। এই বিষয়ক এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছিল, গণ-অভ্যুত্থানের পর নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করেছে, তা মুডিস রেটিংসে যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়নি। মুডিসের প্রতিবেদনে ব্যাংক খাতের সংস্কার, ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন বিষয়ে বর্তমান সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে বলা হয়েছিল, ‘আমরা আশা করি, মুডিস শিগগিরই বাংলাদেশ সফরের পর দেশের অর্থনীতির আরও ব্যাপকভাবে মূল্যায়ন করবে। তখন তারা সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও অভিজ্ঞ অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে সরাসরি পরামর্শ করবে। এর ফলে সরকারের নেওয়া নীতি ও উন্নয়নের সঠিক মূল্যায়ন করতে সক্ষম হবে তারা।’

সোমবারের বৈঠকে মূল্যস্ফীতি, ডলার রেট, নতুন টাকা ও দুর্বল ব্যাংকসহ দেশের অর্থনীতির প্রতিটি সূচক নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখপাত্র। 

তিনি বলেন, ‘দুর্বল ব্যাংকের অনিয়মের কারণে কয়েকটি ব্যাংকে তারল্য সংকট পড়ে। তার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ছাপিয়ে দেওয়া হয়। এসব ব্যাংকের প্রকৃত চিত্র দেখার জন্য টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ব্যাংক রেজল্যুশন অ্যাক্ট করা হয়েছে। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি কাঙ্ক্ষিত হারে কমানো যায়নি। তবে কিছুটা কমছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়ায় ডলারের দর স্থিতিশীল রয়েছে, এটা ভালো দিক।