
ভোজ্যতেল, পেঁয়াজের পর খাতুনগঞ্জে এবার ঊর্ধ্বমুখী গমের বাজার। ৩ মাসের ব্যবধানে প্রতিমণ গমে বেড়েছে ১১০ টাকা। সে হিসাবে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ৩ টাকা।
গত বছরের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় খাতুনগঞ্জে কমে এসেছিল গমের দাম। ওই সময় প্রতিকেজি গম বিক্রি হয়েছিল ৩১ টাকায়। বর্তমানে আবারও দাম বেড়ে প্রতিকেজি গম ৩৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিন মাস আগে প্রতিমণ গম এক হাজার ২৯০ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪০০ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, হাতেগোনা কয়েকজন ব্যবসায়ী গম আমদানি করেন। তাদের কাছ থেকে বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। তাই পাইকারি বাজারে এর প্রভাব পড়ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ১২ নভেম্বর ইউক্রেন থেকে সাড়ে ৫২ হাজার টন গম নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে একটি জাহাজ আসে। এর পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বন্দরে আরও দুটি জাহাজে গমের চালান আসে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি আর্জেন্টিনা থেকে আসে ৫০ হাজার ২০০ টন গম। এর পর গত ১৩ ফেব্রুয়ারি একই দেশ থেকে আরও ৫২ হাজার টন গম আমদানি করা হয়।
বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুসারে, ২০২২ সালের নভেম্বরে প্রতি টন গমের বুকিং রেট ছিল ৪২২ ডলার। ওই বছরের ডিসেম্বরে এ রেট ছিল ৩৮৬ ডলার। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন গম বিক্রি হয় ৩৪৫ ডলারে। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রতি টন গমের বুকিং রেট পড়ে ৩৯৪ ডলার। এর পর ২০২৩ সালের মার্চে প্রতি টন গম বিক্রি হয় ৩৬৯ ডলারে। ওই বছরের এপ্রিলে প্রতি টন গমের বুকিং রেট ছিল ৩৭৮ ডলার।
এদিকে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে প্রতি টন গম কিনতে আমদানিকারকের খরচ পড়ে ২৮৩ ডলার। ফেব্রুয়ারিতে দাম কমে হয় ২৭৮ ডলার এবং মার্চে হয় ২৭৪ ডলার। ওই বছরের ডিসেম্বরে বিশ্ববাজারে প্রতি টন গমের বুকিং রেট পড়ে ২৬০ থেকে ২৬২ ডলার।
অপরদিকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রতি টন গমের বুকিং রেট ছিল ২৪৩ ডলার। বর্তমানে বুকিং রেট চলছে ২২৭ ডলার। জানা গেছে, বিশ্বে গম উৎপাদনে শীর্ষে রাশিয়া ও ইউক্রেন। কিন্তু দেশ দুটিতে যুদ্ধ বাধার পর বিশ্ববাজারে গমের দাম রেকর্ড বেড়ে যায়। পরে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পদক্ষেপে রাশিয়া-ইউক্রেনের সমঝোতার কারণে গমের বুকিং রেট কমে আসে।
দেশের পাইকারি বাজারে গমের দাম বাড়ায় এর প্রভাব পড়েছে আটা-ময়দার খুচরা বাজারে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি খোলা আটা ২ টাকা বেড়ে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিছু কিছু দোকানে ৪২ টাকা চাইতে দেখা গেছে। প্রতিকেজি প্যাকেট আটায় ৫ টাকা বেড়ে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিকেজি প্যাকেট ময়দা ৫ টাকা বেড়ে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খাতুনগঞ্জের এক গম ব্যবসায়ী বলেন- রাশিয়া, ইউক্রেন ও আর্জেন্টিনা থেকে গম আমদানি করা হয়। বর্তমানে বিশ্ববাজারে গমের দাম নিম্নমুখী। তাই দেশের বাজারেও দাম কম হওয়ার কথা। কিন্তু চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজসহ অন্য ভোগ্যপণ্যের বাজার যেভাবে তদারকি করা হয়, সেভাবে গমের বাজার তদারকি করা হয় না। তাই আমাদের দেশে দাম বেশি।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের আইনবিষয়ক সম্পাদক ও চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘খাতুনগঞ্জে এলাচ, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, গমসহ কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে। আশা করছি, সরবরাহ বাড়লে দাম কমে আসবে।’
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘বিশ্ববাজারে গমের দাম নিম্নমুখী। তা হলে আমাদের দেশে গমের দাম কমার কথা। বাজার তদারকির ব্যবস্থা জোরদার নেই বলে এমনটা হচ্ছে। সামনে কোরবানির ঈদ। এটিকে পুঁজি করে যেন কেউ কারসাজি করতে না পারে সে জন্য নিয়মিত বাজার তদারকি করতে হবে।’