
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সেচেঞ্জে (ডিএসই) টানা ৯ দিন সূচক পতনের পর গতকাল রবিবার উত্থানে ফিরেছে। দর বেড়েছে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৩৫টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইউনিটের। ধারাবাহিক এমন পতনের পর সূচকের উত্থানকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন বিনিয়োগকারীরা।
তারা বলছেন, এক দিন সূচক বৃদ্ধির মাধ্যমে লোকসান হওয়া বিনিয়োগ ফিরে আসবে না। প্রয়োজন উত্থানের ধারাবাহিকতা। এর জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
টানা এই পতনে গত চার বছরের মধ্যে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রথমবারের মতো পাঁচ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমেছে।
সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারের এমন ধারাবাহিক পতনের পেছনে বিএসইসির বর্তমান চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের অযোগ্যতাকে দায়ী করছেন। ইতোমধ্যে চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে বিনিয়োগকারীরা মানববন্ধনসহ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন।
পাশাপাশি পুঁজিবাজারের মন্দাবস্থার জন্য বর্তমান কমিশনকে দায়ী করে সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসের কাছেও চিঠি দিয়েছে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আনম আতাউল্লাহ নাঈম বলেন, ধারাবাহিক পতনের পর গতকাল সূচকের উত্থানকে ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করা যায়। তবে এমন উত্থানের ধারাবাহিকতা না থাকলে বিনিয়োগকারীদের হতাশা আরও বাড়বে।
টানা ৯ দিনের পতন ইতোপূর্বে বিনিয়োগকারীরা আগে কখনো দেখেনি। বর্তমান কমিশনের সময় যেহেতু এমন পতন হয়েছে তাই এর দায় তাদেরই নিতে হবে বলে জানান তিনি।
এনএলআই সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী আব্দুল্লাহ বলেন, পুঁজিবাজারে গুজব আছে বিএসইসি চেয়ারম্যান পদত্যাগ করছেন। মূলত এ কারণেই গতকাল সূচক বেড়েছে। আর সূচকের পতন থামায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও হতাশা কিছুটা কেটেছে।
ডিএসইর লেনদেন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ১৩ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া সূচকের পতন ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এই সময়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ২৩৩ পয়েন্ট। আর গতকাল রবিবার সূচক বেড়েছে ২২ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট।
তবে অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দরপতনের ধারা অব্যাহত রয়েছে রবিবার। বাজারটিতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি কমেছে মূল্যসূচক। এর মাধ্যমে সিএসইতে টানা ১০ কার্যদিবস দরপতন হলো।
গতকাল লেনদেনের শুরুতে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দামতে শুরুকরে। এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫০ পয়েন্ট কমে যায়। ফলে আবারও দরপতনের শঙ্কা পেয়ে বসে বিনিয়োগকারীদের। কিন্তু লেনদেনের শেষ ঘণ্টার বদলে যায় বাজারের চিত্র।
দাম কমার তালিকা থেকে বেরিয়ে একের পর এক প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় চলে আসে। দুপুর ১টার পর থেকে লেনদেনের শেষ পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত থাকে। ফলে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার পাশাপাশি সব কটি মূল্যসূচক বেড়েই ডিএসইতে লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ২৩৫ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯৯টির। এ ছাড়া ৬৩টির দাম অপরিবর্তিত ছিল।
এদিন লেনদেন হওয়া ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির মধ্যে ১১৯টির শেয়ারের দাম বেড়েছে এবং ৬৫টির দাম কমেছে। এছাড়া ৩৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হওয়া ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানির মধ্যে ৬৬টি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। কমেছে ১১টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের।
সার্বিকভাবে দাম বাড়ার তালিকায় বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠান থাকায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২২ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৯৯৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১০৮ পয়েন্টে উঠে এসেছে। এ ছাড়া বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৭ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৮৫২ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
সব কটি মূল্যসূচক বাড়লেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৩৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৬৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ২৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৯৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২১০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮২টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০০টির এবং ২৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা।