ঢাকা ২৫ আষাঢ় ১৪৩২, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫
English

গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ও আহত পরিবারের জন্য বরাদ্দ ৪২৫ কোটি ২০ লাখ টাকা

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ০৪:৫৭ পিএম
আপডেট: ০২ জুন ২০২৫, ০৫:০০ পিএম
গণ-অভ্যুত্থানে নিহত ও আহত পরিবারের জন্য বরাদ্দ ৪২৫ কোটি ২০ লাখ টাকা
খবরের কাগজ গ্রাাফিকস

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেছেন। যেখানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত পরিবার ও আহতদের জন্য ৪২৫ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সোমবার (২ জুন) বিকেল ৩টায় নতুন বছরের জন্য প্রস্তাবিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ও দেশের ৫৪তম বাজেটবাজেট উপস্থাপন শুরু করেন অর্থ উপদেষ্টা।

এ সময় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের পরিবার ও আহতদের বরাদ্দের বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস ও স্মৃতি সংরক্ষণ, গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের পরিবার এবং আহত ছাত্র-জনতার পুনর্বাসনসহ গণঅভ্যুত্থানের আদর্শ ও চেতনাকে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে গণভবনকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

শিগগিরই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহিদদের পরিবার ও আহতদের জন্য ভাতা প্রদানের লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের পরিবার এবং আহতদের জন্য ৪২৫ কোটি ২০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করছি।

মেহেদী/

রেমিট্যান্সে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে শীর্ষে সৌদি আরব

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৯:২৫ এএম
আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৯:২৬ এএম
রেমিট্যান্সে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে শীর্ষে সৌদি আরব
প্রতীকী ছবি

সদ্য বিদায়ি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। ২৮ জুন পর্যন্ত ৩ হাজার ৪ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় দেশে এসেছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ বেশি। এর আগে এত বেশি রেমিট্যান্স আসেনি দেশে। এই আয়ে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছেন সৌদি আরব প্রবাসীরা। যদিও ২০২২ সালের জুলাই থেকে গত মার্চ পর্যন্ত রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষ দেশ হিসেবে কখনো সংযুক্ত আরব আমিরাত, কখনো যুক্তরাষ্ট্র, কখনো যুক্তরাজ্যকে দেখানো হচ্ছিল। গত এপ্রিলে আবার শীর্ষ দেশ হিসেবে সৌদি আরবের নাম উঠে এসেছে, যা মে মাসেও অব্যাহত রয়েছে। জুন মাসেও একই চিত্র দেখা যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

তাদের মতে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে প্রবাসীরা অনেক বেশি পরিমাণে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। আগে যার অর্ধেক আসত ব্যাংকিং চ্যানেলে। আহসান মনসুর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্ব নেওয়ার পর ডলারের দর একদফায় অনেকখানি বাড়িয়ে ১২২ টাকা নির্ধারণ করেন। এতে প্রবাসীরা বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন। বর্তমানে আইএমএফের পরামর্শে ডলারের দর বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। তারপরও স্থিতিশীল রয়েছে ডলারের বাজার। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, মে মাসে মোট ২৯৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্সের মধ্যে সৌদি আরব থেকে এসেছে ৫৩ কোটি ৩৩ লাখ ডলার; যা মোট রেমিট্যান্সের ১৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ। আর দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এসেছে ৩৫ কোটি ১৪ লাখ ডলার। যা মোট রেমিট্যান্সের ১১ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ৩৪ কোটি ডলার নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে যুক্তরাজ্য। চতুর্থ অবস্থানে থাকা মালয়েশিয়া থেকে ৩৪ কোটি ডলার এবং পঞ্চম অবস্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে ২২ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। পর্যায়ক্রমে শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় রয়েছে ওমান, ইতালি, কুয়েত, কাতার ও সিঙ্গাপুর।

দেশের ইতিহাসে একক মাসে সর্বোচ্চ ৩৩০ কোটি ডলার রেমিট্যান্সের রেকর্ড হয় গত মার্চে। ওই মাসে শীর্ষ আহরণকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৫৪ কোটি ৬১ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স আসে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আসে ৫০ কোটি ৮৩ লাখ ডলার। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ ৪৪ কোটি ৮৪ লাখ ডলার আসে সৌদি আরব থেকে। চতুর্থ যুক্তরাজ্য এবং পঞ্চম দেখানো হয় মালয়েশিয়াকে। গত অর্থবছরও শীর্ষ দেশ হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাত, দ্বিতীয় যুক্তরাষ্ট্র, তৃতীয় যুক্তরাজ্য, চতুর্থ সৌদি আরব এবং পঞ্চম অবস্থানে ছিল মালয়েশিয়া। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে সরাসরি ব্যাংক এবং এক্সচেঞ্জ হাউস- এই দুই মাধ্যমে দেশে আসে। এক্সচেঞ্জ হাউসের সংগ্রহ করা রেমিট্যান্স ব্যাংকগুলো কিনে নিয়ে সুবিধাভোগীকে টাকা পরিশোধ করে। দেশের মোট রেমিট্যান্সের বেশি অংশ আসে এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমে। যেসব দেশের এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আসে, এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিবন্ধিত কোম্পানি বেশি। ফলে প্রবাসীরা যে দেশ থেকেই অর্থ পাঠান না কেন, ক্লিয়ারিং হয় এক্সচেঞ্জ হাউসের নিবন্ধিত দেশ থেকে। অবশ্য প্রতিষ্ঠানগুলো দেশভিত্তিক আলাদাভাবে রেমিট্যান্সের হিসাব করে। তবে ব্যাংকগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আলাদাভাবে না দেখিয়ে ওই দেশের রেমিট্যান্স হিসেবে রিপোর্ট করে। এই ভুল রিপোর্টিংয়ের কারণে প্রায় তিন বছর শীর্ষ রেমিট্যান্স আহরণকারী হিসেবে অন্য দেশের নাম উঠে আসছে। এখন থেকে ব্যাংকগুলোকে যে দেশের রেমিট্যান্স, সেই দেশের আয় হিসেবে দেখানোর নির্দেশনা যথাযথভাবে মেনে চলতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যে কারণে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশি কোনো ব্যাংক হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানাধীন এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে ১০ লাখ ডলার কিনেছে। সেখানে পাঁচ দেশের রেমিট্যান্স আছে। এটি দেশভিত্তিক আলাদাভাবে না দেখিয়ে পুরোটাই হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের রেমিট্যান্স হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিপোর্ট করে আসছিল। এতে করে প্রকৃত চিত্র প্রতিফলিত হতো না। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে কথাও উঠেছে। এখন থেকে ব্যাংকগুলোকে দেশভিত্তিক প্রকৃত চিত্রের আলোকে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। সব ব্যাংক যথানিয়মে রিপোর্ট করলে আর ভুল রিপোর্টিং হবে না।

২০২২ সালের জুলাইয়ের আগ পর্যন্ত সব মাসেই সৌদি আরব শীর্ষে ছিল। হঠাৎ করে ওই মাসে যুক্তরাষ্ট্রকে শীর্ষ আয়ের দেশ দেখানো হয়। দ্বিতীয় ছিল সৌদি আরব এবং তৃতীয় সংযুক্ত আরব আমিরাত। অবশ্য সব মিলিয়ে ওই অর্থবছরে সৌদি আরব শীর্ষে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান উঠে আসে দ্বিতীয়। আর তৃতীয় ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলেন, দেশে ডলার সরবরাহের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে রেমিট্যান্স এবং রপ্তানি আয়। বিগত সরকারের সময়ে রেমিট্যান্স কম আসায় দেশে ডলারের চরম সংকট দেখা দেয়। এতে রিজার্ভ কমে আশঙ্কাজনক পর্যায়ে নেমে যায়। তবে সরকার পরিবর্তনের পর থেকে প্রবাসীদের আয়ে ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। এখন পর্যন্ত রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে শক্তিশালী করছেন প্রবাসীরা। ফলে বিপুল পরিমাণ বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ থাকা সত্ত্বেও দেশের রিজার্ভ স্থিতিশীল রয়েছে। 

জানা গেছে, আলোচ্য সময়ে জনশক্তি রপ্তানিও খুব বেশি বাড়েনি। কয়েক বছর ধরেই বিদেশের মাটিতে দেশের শ্রমবাজার ধারাবাহিকভাবে সংকুচিত হচ্ছে। গত এক বছরেই বৈশ্বিক শ্রমবাজারে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ৩০ ভাগ কমেছে। আর বিশ্বের মাত্র তিনটি দেশের ওপর নির্ভর করেই এখন চলছে বৈদেশিক শ্রমবাজারের ৯০ ভাগ, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বিদেশে নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টি না হওয়া এবং কয়েকটি বড় শ্রমবাজার বন্ধ থাকায় ক্রমেই কমে যাচ্ছে জনশক্তি রপ্তানি। 

বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ১০ লাখ ১১ হাজার ৮৬৯ জন কর্মী বিদেশে গেছেন। এর মধ্যে ৯৫ ভাগ কর্মী গেছেন মাত্র পাঁচটি দেশ সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, কাতার, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে। তবে এই সংখ্যা ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ৩০ ভাগ কম। ২০২৩ সালে ১৩ লাখ ৭ হাজার ৮৯০ জন কর্মীকে বিদেশ পাঠানো হয়। বিএমইটির তথ্যে আরও জানা যায়, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি যে তিনটি দেশে জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- সৌদি আরব ৭৩ শতাংশ, কাতারে ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং সিঙ্গাপুরে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ। অর্থাৎ এই তিনটি দেশ মোট জনশক্তি রপ্তানির ৯০ ভাগ পূরণ করেছে। বিশ্বের বাকি দেশগুলোতে গেছে মাত্র ১০ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলেন, জনশক্তি রপ্তানি বাড়াতে সরকারকে আরও উদ্যোগী হতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামীতে রেমিট্যান্স আরও বাড়বে। এদিকে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তির অন্যতম শর্ত হচ্ছে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানো।

আকু বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে ২৪ বিলিয়ন ডলার

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৯:২০ এএম
আকু বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে ২৪ বিলিয়ন ডলার
ছবি: সংগৃহীত

আমদানি বিল বাবদ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) বিল পরিশোধের পর দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিছুটা কমে ২৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

এর আগে, গত ২ জুলাই রেমিট্যান্স প্রবাহের অব্যাহত বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার ঋণ ছাড় হওয়ায় রিজার্ভ বেড়ে ২৬ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) আকু বিল বাবদ ২ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আকু বিল পরিশোধের পর আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ ম্যানুয়াল অনুযায়ী রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার। এ সময় গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৯ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়াও কমেছে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ বা এনআইআর। তবে তা আইএমএফের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার বেশি রয়েছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘বর্তমানে দেশের রিজার্ভের অবস্থা স্বস্তিদায়ক আছে। তাই আকু পেমেন্টের পরও এর খুব একটা প্রভাব পড়বে না।’

এর আগে, গত ৩ জুলাই পর্যন্ত বিপিএম-৬ ম্যানুয়াল অনুযায়ী রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া ২০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ বা এনআইআর।

আকু হলো একটি আন্তদেশীয় লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মায়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার লেনদেনের দায় পরিশোধ করা হয়। এ ব্যবস্থায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি দুই মাস অন্তর আমদানির অর্থ পরিশোধ করে। তবে এখন আকুর সদস্যপদ নেই শ্রীলঙ্কার। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে আমদানি ব্যয় পরিশোধের বিভিন্ন শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় দেশটির আকু সদস্যপদ সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বাংলাদেশ প্রতি দুই মাস অন্তর আকুর বিল পরিশোধ করে থাকে। এর আগে গত ৬ মে মার্চ ও এপ্রিল মাসের আমদানির জন্য ১.৮৮ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছিল, যার ফলে বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ নেমে গিয়েছিল ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। তবে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার ঋণের অর্থ ডলারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় রিজার্ভ প্রায় চার বিলিয়ন ডলার বেড়েছে।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে বাড়ছে নারীদের অংশগ্রহণ

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৯:১৭ এএম
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে বাড়ছে নারীদের অংশগ্রহণ
ছবি: খবরের কাগজ

বর্তমানে শাখাবিহীন ব্যাংকিংয়ে ঝুঁকছে ব্যাংকগুলো। এতে একদিকে ব্যাংকের খরচ কমছে অন্যদিকে গ্রামীণ অর্থনীতিও চাঙা হচ্ছে। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের প্রচার ও প্রসার। চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিক শেষে এজেন্টের সংখ্যার পাশাপাশি বেড়েছে আমানত, ঋণ বিতরণ ও রেমিট্যান্স আহরণসহ সব ধরনের কার্যক্রম। এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমে পুরুষদের তুলনায় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। অর্থাৎ এই উদ্ভাবনী পদ্ধতিটি গ্রামীণ এলাকার মানুষের বিশেষ করে নারীদের ক্ষমতায়ন, বিভিন্ন আর্থিক কর্মকাণ্ডে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে। 

প্রতিবেদন অনুযায়ী, আলোচ্য সময়ে নারী এজেন্ট এবং হিসাব সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রামীণ এলাকার তুলনায় শহরাঞ্চলে নারী এজেন্টের সংখ্যা বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি মার্চে নারী এজেন্টের সংখ্যা ৪৮ জন বেড়েছে। এর মধ্যে শহরাঞ্চলে বেড়েছে ১০ দশমিক ১ শতাংশ এবং গ্রামীণ এলাকায় ২ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। নারীদের আমানত এবং ঋণ হিসাবও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে আমানতের পরিমাণও। 

ব্যাংকের শাখা না থাকলেও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এখন সারা দেশের মানুষ ব্যাংকিং সেবা পাচ্ছে। পরিচালন ব্যয় কমাতে বর্তমানে ব্যাংকগুলো শাখার পরিবর্তে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মতো বিকল্প সেবার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে। এতে গ্রামীণ মানুষ আরও বেশি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে পারছেন। এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী এখন সহজেই ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে পারছে। প্রয়োজনে ঋণও নিতে পারছে। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থও সহজে পৌঁছে যাচ্ছে সুবিধাভোগীদের কাছে। এর মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামগঞ্জে। চাঙা হচ্ছে প্রত্যন্ত এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য। এর ফলে শক্তিশালী হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি। 

৪১ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, মূলত গ্রামীণ জনগোষ্ঠীই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানত রাখছেন। চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিক শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩৪ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর। আর শহরাঞ্চলের আমানতের পরিমাণ ৮ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা। এসব আমানতের ৮১ দশমিক ৩৬ শতাংশ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর। মার্চ প্রান্তিক শেষে ঋণ বিতরণও বেড়েছে। এ সময় মোট ঋণ বিতরণের পরিমাণ ১০ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে শহরে বেড়েছে ৫১ শতাংশ আর গ্রামে বেড়েছে মাত্র ৪ শতাংশ। 

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৩১টি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব ব্যাংকের মোট এজেন্টের সংখ্যা ১৫ হাজার ৮৩৮টি, যা আগের প্রান্তিকের তুলনায় ১ দশমিক ১ শতাংশ কম। এসব এজেন্টের ৮৬ শতাংশ ও আউটলেটের ৮৭ শতাংশই গ্রামে। 
জানা গেছে, দেশের সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিতেই ২০১৪ সালে চালু হয় এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম। এ জন্য বাড়তি চার্জ গুনতে হয় না গ্রাহককে। ব্যাংকের ডেবিট কার্ড ব্যবহারের সুযোগও পাচ্ছেন তারা। ফলে এই সেবা দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পরিচালন ব্যয় কম হওয়ায় এখন ব্যাংকগুলোও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে মনোযোগ দিচ্ছে। এতে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে প্রতিনিয়ত বাড়ছে গ্রাহক সংখ্যা, সেই সঙ্গে বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণও। 

এই প্রসঙ্গে ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরফান আলী খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বিরাট জনগোষ্ঠী এখনো ব্যাংকিং সেবার বাইরে রয়েছে। তাদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে এজেন্ট ব্যাংকিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গত ৯ বছরে এই এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। কেননা এর মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহ অনেক বেড়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করতে এজেন্ট ব্যাংকিং আগামী দিনে আরও বড় ভূমিকা রাখবে। 

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে একদিকে কোনো খরচ ছাড়াই ব্যাংকের লাভ করার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে ব্যাংকের গ্রাহক সংখ্যাও বাড়ছে কোনো খরচ ছাড়াই। আর গ্রাহকরাও সহজেই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারছেন এবং তাদের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছেন।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, গ্রামীণ সুবিধাবঞ্চিত পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিতে এজেন্ট ব্যাংকিং চালুর উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। সঠিকভাবে পরিচালনা করলে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিটি ঘরে ঘরে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। এ ছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সংগৃহীত আমানতের অর্থে সিংহভাগ গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিনিয়োগের সুযোগ করা গেলে তা গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা আরও শক্তিশালী ও সচল রাখতে, বিশেষ করে গ্রামের নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে বলে মন্তব্য করেন তারা। আগামী দিনে সেই চেষ্টাই করা হবে বলেও জানান তারা। 

জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালা জারির পর ২০১৪ সালে প্রথম এ সেবা চালু করে বেসরকারি খাতের ব্যাংক এশিয়া। এখন পর্যন্ত এ সেবায় শীর্ষে অবস্থান করছে বেসরকারি খাতের ডাচ-বাংলা ব্যাংক। এরপরই রয়েছে ব্যাংক এশিয়া এবং ইসলামী ব্যাংক। 

প্রসঙ্গত, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হিসাব খোলা, টাকা জমা ও উত্তোলন, টাকা স্থানান্তর (দেশের ভেতর), রেমিট্যান্স উত্তোলন, বিভিন্ন মেয়াদি আমানত প্রকল্প চালু, ইউটিলিটি সার্ভিসের বিল পরিশোধ, বিভিন্ন প্রকার ঋণ উত্তোলন ও পরিশোধ এবং সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় সরকারি সব ধরনের ভর্তুকি গ্রহণ করা যায়। এজেন্টরা কোনো চেক বই বা ব্যাংক কার্ড ইস্যু করতে পারে না। এজেন্টরা বৈদেশিক বাণিজ্যসংক্রান্ত কোনো লেনদেনও করতে পারেন না। এ ছাড়া এজেন্টদের কাছ থেকে কোনো চেকও ভাঙানো যায় না। মোট লেনদেনের ওপর পাওয়া কমিশন থেকেই এজেন্টরা আয় করেন।

পোশাকশিল্পে সমন্বিত আচরণবিধি প্রণয়নের দাবি বিজিএমইএর

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৯:০৬ এএম
পোশাকশিল্পে সমন্বিত আচরণবিধি প্রণয়নের দাবি বিজিএমইএর
ছবি: সংগৃহীত

পোশাকশিল্পের জন্য একটি সমন্বিত আচরণবিধি প্রণয়নে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ওয়ার্ল্ডওয়াইড রেসপন্সিবল অ্যাক্রেডিটেড প্রোডাকশনের (ডব্লিউআরএপি) হেড অব অপারেশন ফর বাংলাদেশ আ্যন্ড পাকিস্তান কামরুন নাহারকে অনুরোধ জানিয়েছেন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান।

গত সোমবার (৭ জুলাই) এক সৌজন্য সাক্ষাৎকারে এ অনুরোধ জানান বিজিএমইএ সভাপতি। বৈঠকে ডব্লিউআরএপির সঙ্গে বিজিএমইএর দীর্ঘদিনের অংশীদারত্ব আরও জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।  

আলোচনাকালে ডব্লিউআরএপির অডিটের বিভিন্ন দিকও উঠে আসে। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএর পরিচালক নাফিস-উদ-দৌলা এবং ডব্লিউআরএপির ম্যানেজার অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অপারেশনস তানজিনা আফরিন।

বৈঠকে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, বিজিএমইএ ও ডব্লিউআরএপি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের পোশাক খাতে নৈতিক ও টেকসই উৎপাদনের প্রসারে সম্মিলিতভাবে কাজ করছে এবং এই অংশীদারত্ব আরও জোরদার করা হলে তা বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

তিনি পোশাক ব্র্যান্ডদের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের জন্য একটি সমন্বিত আচরণবিধি (ইউনিফায়েড কোড অব কন্ডাক্ট) প্রণয়নে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ডব্লিউআরএপিকে অনুরোধ জানান।

ডব্লিউআরএপির হেড অব অপারেশনস ফর বাংলাদেশ অ্যান্ড পাকিস্তান কামরুন নাহার বলেন, এ ব্যাপারে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। তিনি বিজিএমইএ সদস্যদের জন্য ডব্লিউআরএপি প্রশিক্ষণ কোর্সগুলোতে আরও সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণের বিষয়ে সভাপতিকে অনুরোধ জানান।

বৈঠকে ২০২২ সালে বিজিএমইএ ও ডব্লিউআরএপি যে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছিল, তার সম্পূর্ণ বাস্তবায়নসহ সহযোগিতার সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলো অন্বেষণ করা হয় এবং অডিটের মানদণ্ডগুলোকে সময়োপযোগী করা নিয়েও আলোচনা হয়। বিশেষ করে অডিট প্রক্রিয়ায় কারখানা ভবনের ছাদ ৩০ শতাংশ খোলা রাখা (এতে করে কারখানাগুলো ছাদে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপন করতে পারে না), শেয়ার্ড কারখানা ভবন বিষয়ে বাধ্যবাধকতা থেকে শিল্পকে অব্যাহতিদানের ওপর তারা গুরুত্বারোপ করেন।

বিজিএমইএ সভাপতি ডব্লিউআরএপিকে সংস্থাটির অডিট থেকে বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর যে সামগ্রিক চিত্র উঠে আসে, তা বিজিএমইএকে শেয়ার করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, এটি শিল্পের জন্য নীতি প্রণয়নে সহায়তা করবে এবং বিশ্বে নৈতিক উৎপাদনের একটি পছন্দের কেন্দ্র হিসেবে আমাদের পোশাকশিল্পের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।

ভারতে ‘এক্স’ এর ২ হাজার অ্যাকাউন্ট বন্ধের নির্দেশ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৮:৪৭ পিএম
আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৮:৪৯ পিএম
ভারতে ‘এক্স’ এর ২ হাজার অ্যাকাউন্ট বন্ধের নির্দেশ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’
ছবি: সংগৃহীত

ভারতে চলমান সংবাদপত্রের সেন্সরশিপ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ‘এক্স’ (সাবেক টুইটার)। প্ল্যাটফর্মটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভারত সরকার গত ৩ জুলাই এক নির্দেশনায় ২ হাজার ৩৫৫টি অ্যাকাউন্ট ব্লক করতে বলেছে, যার মধ্যে রয়টার্স এবং রয়টার্স ওয়ার্ল্ডের দুটি অ্যাকাউন্টও ছিল।

রবিবার (৬ জুলাই) ভারতের জন্য রয়টার্স নিউজ অ্যাকাউন্ট পুনরায় সচল করে এক্স। এর আগের দিন প্ল্যাটফর্মটি জানিয়েছিল, একটি আইনি নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকার তাদের অ্যাকাউন্টটি সাময়িকভাবে স্থগিত করতে বলেছে।

এরপর আরও কয়েকটি অ্যাকাউন্ট পুনরায় চালু হয়। তবে নয়াদিল্লি জানিয়েছে, এসব অ্যাকাউন্ট ব্লক করার পেছনে তাদের কোনো ভূমিকা ছিল না।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) এক পোস্টে এক্স জানায়, ৩ জুলাই ভারত সরকার তাদের ‘তথ্যপ্রযুক্তি আইন, ২০০০’-এর ৬৯(এ) ধারায় ২,৩৫৫টি অ্যাকাউন্ট ব্লক করার নির্দেশ দেয়। নির্দেশনায় বলা হয়, এটি অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে—এক ঘণ্টার মধ্যেই, কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই। আর পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ রাখতে হবে।

এক্স জানায়, ‘জনমতের চাপে পড়ে ভারত সরকার রয়টার্স এবং রয়টার্স ওয়ার্ল্ডের অ্যাকাউন্ট পুনরায় চালুর অনুরোধ জানায়।’

ভারতে রয়টার্সের অংশীদার সংবাদ সংস্থা এএনআই এর একটি এক্স পোস্টে বলা হয়, ভারত সরকারের ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র দাবি করেছেন, ৩ জুলাই তারা কোনো ‘নতুন ব্লকিং আদেশ’ দেয়নি এবং ‘রয়টার্স কিংবা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ব্লক করার কোনো ইচ্ছাও ছিল না’।

পোস্টে বলা হয়, ‘ভারতে রয়টার্স ও রয়টার্স ওয়ার্ল্ডের অ্যাকাউন্ট ব্লক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সরকার এক্সকে তা পুনরায় সচল করতে বলে। ৫ জুলাই গভীর রাত থেকে এক্সের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে এবং অ্যাকাউন্টগুলো পুনরায় চালু করতে জোরালো প্রচেষ্টা চালায়।’

তবে মুখপাত্র অভিযোগ করেন, এক্স ‘প্রক্রিয়াগত কিছু বিষয়কে অযথা জটিল করে তোলে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিলম্ব করে’।

ভারতের ২০০০ সালের তথ্যপ্রযুক্তি আইন অনুযায়ী, সরকার মনে করলে, জাতীয় নিরাপত্তা কিংবা জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় যেকোনো অনলাইন কনটেন্ট মুছে ফেলার নির্দেশ দিতে পারে।

এক্স-এর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরেই নয়াদিল্লির সঙ্গে বিভিন্ন কনটেন্ট সরানোর নির্দেশনা নিয়ে বিরোধে জড়িয়েছে। মার্চ মাসে প্রতিষ্ঠানটি একটি সরকারি ওয়েবসাইটের বিরুদ্ধে মামলা করে, যেখানে দাবি করা হয়, সেটি এতটাই ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে যে এতে ‘অগণিত’ সরকারি কর্মকর্তারাও কনটেন্ট সরানোর আদেশ দিতে পারেন।

বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে পরিচিত ভারত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কনটেন্ট মুছে ফেলার অনুরোধের ক্ষেত্রে নিয়মিত শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে থাকে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসনামলে ভারতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা চাপে পড়েছে।

দেশটিতে অস্থিরতা চলাকালে প্রায়ই পুরোপুরি ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। চলতি বছরের এপ্রিলেই কাশ্মীরে একটি হামলার পর ‘উসকানিমূলক’ কনটেন্ট ছড়ানোর অভিযোগে এক ডজনের বেশি পাকিস্তানি ইউটিউব চ্যানেল নিষিদ্ধ করে ভারত, যদিও পরে সেগুলোর অনেকগুলোই পুনরায় চালু করা হয়।

২০২৩ সাল থেকে মণিপুর রাজ্যে জাতিগত সহিংসতার প্রেক্ষাপটে বারবার ইন্টারনেট বন্ধের পথ বেছে নিয়েছে নয়াদিল্লি।

সরকার বলছে, ভুয়া তথ্য ঠেকাতে এই পদক্ষেপগুলো জরুরি, বিশেষ করে এমন একটি দেশে যেখানে কোটি কোটি মানুষ খুব সস্তায় মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করে।

এক্স বলছে, তারা সেন্সরশিপ মোকাবিলায় সব ধরনের আইনি পথ খুঁজে দেখছে, তবে স্বীকার করেছে যে, ‘ভারতীয় আইনের সীমাবদ্ধতার কারণে’ তারা আদালতে কিছু চ্যালেঞ্জ জানাতে পারছে না।

এর আগে ২০০২ সালের গুজরাটের দাঙ্গায় নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা নিয়ে বিবিসি একটি ডকুমেন্টারি প্রকাশ করলে ভারতের বিবিসি অফিসে ধড়পাকড় চালায় মোদি সরকার এবং এ নিয়ে বিবিসি ও ভারত সরকারের মধ্যে উত্তেজনা ছড়ায় এবং সংবাদমাধ্যমটির প্রচারে বিধি নিষেধ আরোপ করে। সূত্র: আল জাজিরা

মাহফুজ/