ভারতে চলমান সংবাদপত্রের সেন্সরশিপ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ‘এক্স’ (সাবেক টুইটার)। প্ল্যাটফর্মটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভারত সরকার গত ৩ জুলাই এক নির্দেশনায় ২ হাজার ৩৫৫টি অ্যাকাউন্ট ব্লক করতে বলেছে, যার মধ্যে রয়টার্স এবং রয়টার্স ওয়ার্ল্ডের দুটি অ্যাকাউন্টও ছিল।
রবিবার (৬ জুলাই) ভারতের জন্য রয়টার্স নিউজ অ্যাকাউন্ট পুনরায় সচল করে এক্স। এর আগের দিন প্ল্যাটফর্মটি জানিয়েছিল, একটি আইনি নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকার তাদের অ্যাকাউন্টটি সাময়িকভাবে স্থগিত করতে বলেছে।
এরপর আরও কয়েকটি অ্যাকাউন্ট পুনরায় চালু হয়। তবে নয়াদিল্লি জানিয়েছে, এসব অ্যাকাউন্ট ব্লক করার পেছনে তাদের কোনো ভূমিকা ছিল না।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) এক পোস্টে এক্স জানায়, ৩ জুলাই ভারত সরকার তাদের ‘তথ্যপ্রযুক্তি আইন, ২০০০’-এর ৬৯(এ) ধারায় ২,৩৫৫টি অ্যাকাউন্ট ব্লক করার নির্দেশ দেয়। নির্দেশনায় বলা হয়, এটি অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে—এক ঘণ্টার মধ্যেই, কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই। আর পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ রাখতে হবে।
এক্স জানায়, ‘জনমতের চাপে পড়ে ভারত সরকার রয়টার্স এবং রয়টার্স ওয়ার্ল্ডের অ্যাকাউন্ট পুনরায় চালুর অনুরোধ জানায়।’
ভারতে রয়টার্সের অংশীদার সংবাদ সংস্থা এএনআই এর একটি এক্স পোস্টে বলা হয়, ভারত সরকারের ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র দাবি করেছেন, ৩ জুলাই তারা কোনো ‘নতুন ব্লকিং আদেশ’ দেয়নি এবং ‘রয়টার্স কিংবা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ব্লক করার কোনো ইচ্ছাও ছিল না’।
পোস্টে বলা হয়, ‘ভারতে রয়টার্স ও রয়টার্স ওয়ার্ল্ডের অ্যাকাউন্ট ব্লক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সরকার এক্সকে তা পুনরায় সচল করতে বলে। ৫ জুলাই গভীর রাত থেকে এক্সের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে এবং অ্যাকাউন্টগুলো পুনরায় চালু করতে জোরালো প্রচেষ্টা চালায়।’
তবে মুখপাত্র অভিযোগ করেন, এক্স ‘প্রক্রিয়াগত কিছু বিষয়কে অযথা জটিল করে তোলে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিলম্ব করে’।
ভারতের ২০০০ সালের তথ্যপ্রযুক্তি আইন অনুযায়ী, সরকার মনে করলে, জাতীয় নিরাপত্তা কিংবা জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় যেকোনো অনলাইন কনটেন্ট মুছে ফেলার নির্দেশ দিতে পারে।
এক্স-এর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরেই নয়াদিল্লির সঙ্গে বিভিন্ন কনটেন্ট সরানোর নির্দেশনা নিয়ে বিরোধে জড়িয়েছে। মার্চ মাসে প্রতিষ্ঠানটি একটি সরকারি ওয়েবসাইটের বিরুদ্ধে মামলা করে, যেখানে দাবি করা হয়, সেটি এতটাই ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে যে এতে ‘অগণিত’ সরকারি কর্মকর্তারাও কনটেন্ট সরানোর আদেশ দিতে পারেন।
বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে পরিচিত ভারত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কনটেন্ট মুছে ফেলার অনুরোধের ক্ষেত্রে নিয়মিত শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে থাকে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসনামলে ভারতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা চাপে পড়েছে।
দেশটিতে অস্থিরতা চলাকালে প্রায়ই পুরোপুরি ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। চলতি বছরের এপ্রিলেই কাশ্মীরে একটি হামলার পর ‘উসকানিমূলক’ কনটেন্ট ছড়ানোর অভিযোগে এক ডজনের বেশি পাকিস্তানি ইউটিউব চ্যানেল নিষিদ্ধ করে ভারত, যদিও পরে সেগুলোর অনেকগুলোই পুনরায় চালু করা হয়।
২০২৩ সাল থেকে মণিপুর রাজ্যে জাতিগত সহিংসতার প্রেক্ষাপটে বারবার ইন্টারনেট বন্ধের পথ বেছে নিয়েছে নয়াদিল্লি।
সরকার বলছে, ভুয়া তথ্য ঠেকাতে এই পদক্ষেপগুলো জরুরি, বিশেষ করে এমন একটি দেশে যেখানে কোটি কোটি মানুষ খুব সস্তায় মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করে।
এক্স বলছে, তারা সেন্সরশিপ মোকাবিলায় সব ধরনের আইনি পথ খুঁজে দেখছে, তবে স্বীকার করেছে যে, ‘ভারতীয় আইনের সীমাবদ্ধতার কারণে’ তারা আদালতে কিছু চ্যালেঞ্জ জানাতে পারছে না।
এর আগে ২০০২ সালের গুজরাটের দাঙ্গায় নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা নিয়ে বিবিসি একটি ডকুমেন্টারি প্রকাশ করলে ভারতের বিবিসি অফিসে ধড়পাকড় চালায় মোদি সরকার এবং এ নিয়ে বিবিসি ও ভারত সরকারের মধ্যে উত্তেজনা ছড়ায় এবং সংবাদমাধ্যমটির প্রচারে বিধি নিষেধ আরোপ করে। সূত্র: আল জাজিরা
মাহফুজ/