আগের সপ্তাহে অধিকাংশ সবজির দাম বেড়েছিল। বেগুন, শসা, টমেটো, কাঁকরোল, শজনে ডাঁটার কেজি সেঞ্চুরি অর্থাৎ ১০০ টাকা ছাড়ায়।
বৃহস্পতিবার (১০জুলাই) পর্যন্ত সেই ধারা অব্যাহত ছিল। তবে কাঁচা মরিচের দাম তিন গুণ বেড়েছে। প্রতি কেজি ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়।
এদিকে কিছুটা বেড়েছে সোনালি মুরগির দামও। ইলিশ মাছের দামও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ২ হাজার ৪০০ টাকা থেকে বেড়ে ৩ হাজার টাকায় ঠেকেছে কেজি। বেড়েছে ২০ শতাংশ। বিক্রেতারা বলছেন, বর্ষায় ফলন কমে গেছে। এ জন্য সবকিছুর দাম বেশি। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
স্বস্তি নেই সবজির বাজারে
আগের সপ্তাহে বেগুন ১০০ থেকে ১৪০ টাকায় ঠেকেছে। গতকালও সেই দরে বিক্রি হয়। এ ছাড়া টমেটো ৮০ থেকে ১০০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকার কমে মিলছে না। পটোল, ঝিঙে, ধুন্দুল ৬০ থেকে ৮০ টাকায় ঠেকেছে। শসা ৫০ থেকে বেড়ে ১০০, ১২০ টাকার কাঁচা মরিচ ৩০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কচুরমুখী ও কাঁকরোল ৭০ থেকে ৮০ টাকায়, শজনে ডাঁটা ১২০ থেকে ১৪০, ঢ্যাঁড়শ ৫০ থেকে ৭০, কাঁচা পেঁপে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। সব ধরনের শাকের দামও বাড়তি। পুঁইশাকের আঁটি ৪০ টাকায় বিক্রি হয়। সেগুনবাগিচা বাজারের আবদুর বারেকসহ অন্য সবজি বিক্রেতারা খবরের কাগজকে বলেন, ‘বর্ষাকালে অধিকাংশ এলাকা ডুবে থাকে। সরবরাহ কমে যায়। এ জন্য সবজির দাম বাড়তি। তবে আলু, পেঁয়াজ, আদা ও রসুনের দাম বাড়েনি।
ইলিশের কেজি ৩ হাজার টাকা
সপ্তাহের ব্যবধানে সোনালি মুরগির দামও কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৩২০ টাকা কেজি হয়েছে। তবে আগের মতোই ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকায় বিক্রি হয়। মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের ব্রয়লার হাউসের স্বত্বাধিকারী শিবলী মাহমুদসহ অন্য বাজারের খুচরা বিক্রেতারা খবরের কাগজকে বলেন, ‘সোনালির দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে ব্রয়লারের দাম বাড়েনি।’ অন্য মুরগি বিক্রেতারা বলেন, আগের মতোই দেশি মুরগি ৬৫০ থেকে ৬৮০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০, খাসির মাংস ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি ও ডিম ১২০ থেকে ১৩০ টাকা ডজনে বিক্রি হচ্ছে।
বর্ষা মৌসুমে বাজারে নদীর মাছের সরবরাহ কম হওয়ায় বেশি দামেই মাছ বিক্রি হচ্ছে। কাজলি, ট্যাংরা, চিংড়ি ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার কমে মেলে না। বাইলা মাছও ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা কেজি। তবে আকারভেদে চাষের রুই, কাতলা মাছের কেজি ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৫০০, চিংড়ি ৫০০ থেকে ৮০০, তেলাপিয়া ও পাঙাশ ২২০ এবং কাচকি মাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
মৌসুম শুরু হলেও বাজারে ইলিশ অতি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। দাম একেবারে নাগালের বাইরে চলে গেছে। আগের সপ্তাহে এক কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা বিক্রি হলেও বৃহস্পতিবার ৩ হাজার টাকায় ঠেকেছে। ছোট বা ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দামও দ্বিগুণ দরে বিক্রি হয়। ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার পিস দেড় থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। টাউন হল বাজারের ইলিশ মাছ বিক্রেতা রমজান আলী খবরের কাগজকে বলেন, ‘মৌসুম শুরু হয়েছে। তবে নদীতে আগের মতো ইলিশ পাওয়া যায় না। এ জন্য দাম বেশি।’
কমে না চালের দর
বোরো ধান ওঠার পর চালের দাম কমবে এমনটি সবাই আশা করলেও সেই আশায় গুড়ে বালি। খুচরা চাল বিক্রেতারা বলছেন, কৃষকের ধান মিলমালিকদের গোডাউনে চলে গেছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা ইচ্ছামতো চালের দাম বাড়াচ্ছেন। এ জন্য বাড়তি দরে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে। মনজুর, রশিদ, সাগরসহ অন্যান্য কোম্পানির মিনিকেট চালের দাম বেড়ে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ডায়মন্ড, হরিণ, মোজাম্মেল কোম্পানির চাল আরও বেশি দামে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আটাশ চালের দামও বেড়ে ৬২ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মোটা চাল আগের মতোই ৫২ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে শওকত রাইস স্টোরের মো. শওকত আলীসহ অন্য খুচরা চাল বিক্রেতারা বলেন, ‘ঈদের পর থেকে মিলমালিকরা চিকন চালের দাম বাড়িয়েছেন। এ জন্য আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। চালের দাম কমাতে হলে রাইস মিল ধরতে হবে। তারা কমালে আমরাও কম দরে বিক্রি করতে পারব।’