
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ-পাহাড়তলীতে এখনো কাটেনি ঈদের আমেজ। আড়তদার-শ্রমিকদের হাঁকডাকে মুখরিত থাকা বড় এই দুই ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজারে এখন শুধুই নীরবতা। কিছু কিছু দোকানপাট খুললেও অধিকাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। যারাই খুলেছেন, ক্রেতা না থাকায় পার করেছেন অলস সময়। তবে আগামী সপ্তাহ থেকে ভোগ্যপণ্যের বাজার পুরোনো রূপে ফিরে যাবে, এমনটাই জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বাজার দুটি ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য সময়ে খাতুনগঞ্জে ক্রেতা, বিক্রেতা আর শ্রমিকদের সমাগম আর হাঁকডাকে সরব থাকা বাজার দুটিতে এখন কেউই নেই। সারা বছর বড় বড় পণ্যবাহী গাড়ি, রিকশা আর মানুষের সমাগমে সরু রাস্তায় যানজট দেখা দিলেও এখন পুরো রাস্তাই ফাঁকা। রাস্তার দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে ভ্যানগাড়ি রেখেছেন শ্রমিকরা। ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ সকালের দিকে দোকান খুললেও কুশল ও ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ে সময় কেটেছে। ক্রেতা সমাগম না থাকায় তারা আবার দুপুরে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে চলে যান। অধিকাংশ ব্যবসায়ী গ্রাম থেকে না ফেরা এবং ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজারে এখন সুনসান নীরবতা। একই চিত্র দেখা গেছে পাহাড়তলী বাজারেও। সেখানেও নেই ট্রাকের সারি বা যানজট।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যবসায়ীদের অনেকেই ঈদ উপলক্ষে গ্রামের বাড়িতে সময় কাটাচ্ছেন। পরিবারকে সময় দিচ্ছেন। আগামী রবিবার থেকে শুরু হবে ব্যাংকিং কার্যক্রম। সেদিন থেকে খাতুনগঞ্জ-পাহাড়তলী পুরোদমে সচল হবে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি বন্দরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভোগ্যপণ্যবাহী গাড়ি আসবে। তখন সবকিছু আবার সরব হয়ে উঠবে। পাশাপাশি ভোগ্যপণ্যে সরবরাহ সংকট বা দাম বাড়ার মতো পরিস্থিতি হবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন ব্যবসায়ীরা।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের আইনবিষয়ক সম্পাদক ও চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের অধিকাংশ এখনো গ্রাম থেকে ফেরেনি। এর উপর ব্যাংকিং কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি ক্রেতারাও এখন পণ্য কিনতে আসবেন না। তাই রবিবার (১৫ জুন) থেকে পুরোদমে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু হবে।’
একই কথা জানালেন হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ নেই। যারা খুলেছেন, অলস সময় পার করেছেন। ব্যাংকিং কার্যক্রম সচল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসায়িক কার্যক্রমও সচল হয়ে উঠবে। এবার কোরবানির ঈদে পেঁয়াজ, আদা ও রসুনসহ অন্য মসলা পণ্যের দাম নিম্নমুখী ছিল। আশা করছি, আগামী দিনে সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে পণ্য কিনতে পারবেন।’
পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. নিজাম উদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘এবার ঈদের ছুটি বেশি। তাই সুযোগ পেয়ে ব্যবসায়ীরাও পরিবার-পরিজন, আত্মীয়স্বজনকে সময় দিচ্ছেন। পুরো বাজার নীরব। আগামী শনিবার বা রবিবার অধিকাংশ ব্যবসায়ী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলবেন। এরপরও পুরোদমে বিক্রি শুরু হতে আরও সপ্তাহখানেক সময় লেগে যাবে।’
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, ‘এ বছর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় পাইকারি বাজারে অধিকাংশ ভোগ্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে ছিল। এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। তবে পাইকারি বাজারে দাম কমার প্রভাব খুচরা বাজারে পড়েনি। তাই সাধারণ মানুষ কোনো সুফল পাননি। এই বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে ভাবার সময় এসে গেছে। এ ব্যাপারে প্রশাসন, ভোক্তা অধিকার, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।’