ঢাকা ২৬ আষাঢ় ১৪৩২, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২

পানি ছাড়াই হাঁস পালনে সফল ফরিদপুরের নাহার

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৫, ১০:৩৭ এএম
আপডেট: ২৩ জুন ২০২৫, ১০:৩৮ এএম
পানি ছাড়াই হাঁস পালনে সফল ফরিদপুরের নাহার
নিজ খামারে হাঁসের পরিচর্যা করছেন কামরুল নাহার। খবরের কাগজ

ফরিদপুর সদর উপজেলার কামরুল নাহার খাঁচায় পানি ছাড়া হাঁস পালন করে সফল হয়েছেন। তিনি পালন করেন ‘পিকিং স্টার ১৩’ জাতের হাঁস। মাত্র ৪৫ দিনে এই হাঁস ৩-৪ কেজি ওজনের হয়। লাভ বেশি, খরচ কম। আগে মুরগি পালনে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও হাঁস পালন করে এখন স্বাবলম্বী তিনি। স্থানীয় এনজিওর সহায়তায় শুরু করা এই খামার থেকে এখন বিভিন্ন জেলায় হাঁস সরবরাহ হচ্ছে। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগও তাকে সহায়তা দিচ্ছে। 

কামরুল নাহার জানান, এক সময় তিনি ব্রয়লার মুরগি পালন করতেন। কিন্তু রোগবালাই ও অব্যবস্থাপনার কারণে ওই খামার বন্ধ হয়ে যায়। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তখন হতাশার মধ্যেই ছিলেন তিনি। ঠিক সেই সময় ফরিদপুরের এনজিও সংস্থা ‘সোসাইটি ডেভেলপমেন্ট কমিটি’ (এসডিসি) তাকে নতুন একটি পথ দেখায়। সংস্থাটি তাকে ‘পিকিং স্টার ১৩’ জাতের হাঁস পালনের পরামর্শ দেয়। পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ও হাঁসের বাচ্চাও সরবরাহ করে। সেই থেকে শুরু নতুন যাত্রা।

প্রথম পর্যায়ে এসডিসির সহায়তায় ৫০টি হাঁসের বাচ্চা দিয়ে শুরু করেন কামরুল নাহার। এর মধ্যে দুটি বাচ্চা মারা গেলেও বাকি ৪৮টি হাঁসই বিক্রি করে তিনি আয় করেন ৪৮ হাজার টাকা। এই সাফল্যের পর তিনি আর পেছনে ফিরে তাকাননি। দ্বিতীয় ধাপে ২০০টি হাঁসের বাচ্চা কিনে বড় পরিসরে খামার গড়ে তোলেন। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়। এতে করে অল্প সময়ে ও অল্প খরচে কামরুল নাহার লাভবান হচ্ছেন।

কামরুল নাহারের এই সফলতা এলাকার অনেক মানুষের জীবনেও প্রভাব ফেলেছে। প্রতিবেশী খায়রুন সুলতানা বলেন, ‘আমাদের গ্রামের কামরুল নাহারের খামার থেকে সহজেই হাঁস কিনতে পারছি। তিনি হাঁস পালন করে আমাদের এলাকায় স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। এখন জেলার অনেকেই তার খামার থেকে হাঁস কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।’

নাহার বলেন, ‘আগে মুরগি পালন করতাম। রোগে মুরগি মারা যেত। এতে অনেক ক্ষতি হয়। তখন ভাবছিলাম সব শেষ। মাসছয়েক আগে এসডিসির সহায়তায় নতুন জাতের হাঁস পালন শুরু করি। এই হাঁস পালন সহজ, কম খরচে লাভ বেশি। এখন ফরিদপুর শহরের হোটেল থেকে শুরু করে অন্য জেলাতেও আমি হাঁস সরবরাহ করছি। খুব শিগগিরই ৫০০ থেকে ১ হাজার হাঁস পালনের পরিকল্পনা করছি।’ তিনি আরও জানান, হাঁস পালনের পাশাপাশি ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদনও করছেন তিনি। খামারের মলমূত্র ও খৈল দিয়ে এই সার তৈরি করে বাড়তি আয় করছেন। এই সার স্থানীয় কৃষকরাও ব্যবহার করছেন।

উদ্যোক্তা কামরুল নাহার ফরিদপুর শহরতলির কোমরপুর গ্রামের সাহান খানের স্ত্রী। একজন নারী হিসেবে নিজ উদ্যোগে হাঁস পালন শুরু করে সফল হওয়া সমাজে বিরল দৃষ্টান্ত। তার এই উদ্যোগ এখন আশেপাশের নারীদেরও অনুপ্রাণিত করছে। অনেকেই এখন তার খামারে কাজ শিখে নিজেরাও হাঁস পালনে আগ্রহী হচ্ছেন।

আগামী এক বছরে খামার আরও সম্প্রসারণ করতে চান কামরুল নাহার। এ জন্য তিনি সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা কামনা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি চাই অন্যরাও এই কাজ শিখে নিজের পায়ে দাঁড়াক। আমি এখন খামারের জন্য আরও আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাও গড়ে তুলতে চাই।’

এসডিসির প্রকল্প ব্যবস্থাপক ডা. বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, ‘আমরা তাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে হাঁস পালনের সব দিক বুঝিয়ে দিই। শুরুতে তাকে ৫০টি হাঁসের বাচ্চা সরবরাহ করি। তিনি দারুণ সফল হন। এখন আরও বড় পরিসরে খামার গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছেন।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সঞ্জীব কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘কামরুল নাহারের হাঁস পালনের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। আমরা তাকে প্রযুক্তিগত পরামর্শ দিচ্ছি। ওষুধ ও টিকা সরবরাহ করছি। পাশাপাশি বাজারজাত করতেও তাকে সহযোগিতা করছি।’

 

নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে বেনাপোল বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কমেছে

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ০৯:২৮ এএম
আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৫, ০৯:৩৪ এএম
নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে বেনাপোল বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কমেছে
ফাইল ছবি

পণ্যে আমদানি নিষেধাজ্ঞার কারণে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হঠাৎ কমে গেছে। বন্দর সূত্র জানায়, বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমদানি কমেছে ৬ লাখ টন এবং রপ্তানি ৭৫ হাজার টনের বেশি। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বেনাপোল দিয়ে আমদানির পরিমাণ ছিল ২১ লাখ ৩০ হাজার ২২৮ টন। বিদায়ী বছরে তা ৬ লাখ ৩১ হাজার ৩৩০ টন কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৯৮ হাজার ৮৯৮ টনে। একই সময়ে রপ্তানি কমেছে ৭৫ হাজার ২৩২ টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতে রপ্তানি হয়েছিল ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৬৭২ টন। এবার তা কমে হয়েছে ৩ লাখ ৮১ হাজার ৪৪০ টন।

আমদানি-রপ্তানি কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও বন্দর সংশ্লিষ্টদের আয় কমেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখনই বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া না হলে ক্ষতি আরও বাড়বে।

বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আলহাজ মহসিন মিলন বলেন, ‘এ বন্দর দিয়েই ভারত-বাংলাদেশের সিংহভাগ বাণিজ্য চলে। কিন্তু রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর থেকে ট্রাক চলাচল কমেছে। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বাণিজ্য অনেকটাই নেমে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এর প্রভাব পড়ছে সরকারের রাজস্ব আয়েও। ক্ষতির মুখে পড়েছে দুই দেশই।’

বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক শামীম হোসেন জানান, সরকার বেশ কিছু পণ্যে আমদানি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এসব পণ্য দেশের অভ্যন্তরেই উৎপাদিত হয়। এতে ওই পণ্যগুলো আর বন্দর দিয়ে আসছে না। তিনি বলেন, ‘আগে প্রতিদিন ভারত থেকে প্রায় ৬০০ ট্রাক পণ্য আসত, রপ্তানি হতো ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাক পণ্য। এখন তা কমে এসেছে ৫০০ ট্রাকে, রপ্তানি নেমে গেছে ১০০ ট্রাকের নিচে।’
ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও আরোপিত বিধিনিষেধ শিথিল না হলে বেনাপোল বন্দরের বাণিজ্য আরও কমে যেতে পারে।

সবুজ তালিকায় ‍যুক্ত হলো আরও দুটি পোশাক কারখানা

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ০৯:১৯ এএম
আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৫, ০৯:২১ এএম
সবুজ তালিকায় ‍যুক্ত হলো আরও দুটি পোশাক কারখানা
ফাইল ছবি

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতে আরও দুটি পোশাক কারখানা গ্রিন ফ্যাক্টরি বা সবুজ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষে থাকা বাংলাদেশে এখন সবুজ কারখানা ২৫০টি। এর মধ্যে ১০৫টি কারখানা প্ল্যাটিনাম এবং ১৩১টি কারখানা গোল্ড সার্টিফিকেশন পেয়েছে।

বুধবার (৯ জুলাই) পোশাকমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। নতুন করে স্বীকৃতি পাওয়া দুটি প্রতিষ্ঠান হলো- ইভিটেক্স অ্যাপারেলস লিমিটেড ও আসওয়াদ কম্পোজিট মিলস লিমিটেড, ইউনিট-২।

বিশ্বের সর্বোচ্চ রেটপ্রাপ্ত বা সবুজ কারখানার তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুদৃঢ় হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি কারখানার ৯টি এবং শীর্ষ ১০০ কারখানার ৬৮টি অবস্থিত বাংলাদেশে।

নীতিমালা সংশোধন, সর্বোচ্চ ৮ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া যাবে

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ০৯:১৮ এএম
আপডেট: ১০ জুলাই ২০২৫, ০৯:২১ এএম
নীতিমালা সংশোধন, সর্বোচ্চ ৮ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া যাবে
ফাইল ছবি

দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে স্টার্ট-আপ উদ্যোগে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্থায়ন বাড়াতে চায় সরকার। সেই লক্ষ্যে স্টার্ট-আপ অর্থায়ন সংক্রান্ত নীতিমালায় বেশকিছু পরিবর্তন এনে বুধবার (৯ জুলাই) সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 

আগের নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফার ১ শতাংশ দিয়ে আলাদা স্টার্ট-আপ তহবিল গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। নতুন নিয়মে, এই তহবিল থেকে ব্যাংক গুলো ঋণ দিতে পারবে না। এই অর্থ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে আলাদা একটা ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি করবে। এখান থেকে স্টার্ট-আপ প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থায়ন সুবিধা পাবে। মালিকানা ব্যাংকেরই থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের যে ৫০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হয়েছিল, সেটা আগের মতোই পুনঃঅর্থায়ন তহবিল আকারে চালু থাকবে।

নতুন নিয়মে, বেশকিছু শর্ত পরিবর্তন করা হয়েছে। আগে যেখানে বয়সসীমা ছিল ২১ থেকে ৪৫ বছর। নতুন নীতিমালায় ২১ বছরের ওপরে যে কেউ ঋণ নিতে পারবে। অর্থাৎ বয়সের ঊর্ধ্বসীমা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এখন ৬৫ বা ৭০ বছরের কেউ চাইলেও ঋণ নিতে পারবে। আগে ঋণ সীমা ছিল ১ কোটি। এখন সেখানে তিনটা পর্যায়ে ঋণ নিতে পারবে। ২ কোটি, ৫ কোটি এবং সর্বোচ্চ ৮ কোটি টাকা ঋণ নিতে পারবেন। 

এর আগে, উদ্ভাবনী উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে তিন বছর আগে ২০২১ সালের মার্চে বিনা জামানতে মাত্র ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কর্মসংস্থান ও উৎপাদন বাড়াতে ‘স্টার্ট-আপ ফান্ড’ নামে ৫০০ কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করা হয়। একই সঙ্গে প্রতি ব্যাংকের নিট মুনাফা থেকে ১ শতাংশ আলাদা রেখে নিজস্ব স্টার্ট-আপ তহবিল গঠন করতে বলা হয়। ব্যাংকগুলো সব মিলিয়ে ৫০৫ কোটি টাকার ফান্ড গঠনও করেছে। দুটি মিলিয়ে গত আগস্ট পর্যন্ত স্টার্ট-আপে ঋণ দেওয়ার জন্য গঠিত তহবিলের আকার দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫ কোটি টাকা। অথচ এখন পর্যন্ত ১০০ কোটি টাকার ঋণও বিতরণ করা হয়নি। 

স্টার্ট-আপ বলতে বাজারজাত করার জন্য নতুন পণ্য, সেবা, প্রক্রিয়া বা প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও অগ্রগতিকে বোঝায়। এ পর্যন্ত শেয়ারট্রিপ, চালডালের মতো হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান স্টার্ট-আপের বিশেষ কর্মসূচির আওতায় কম সুদের ঋণ পেয়েছে।

সার্কুলারে বলা হয়েছে, কোম্পানিগুলোর প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং উদ্ভাবনে চালিকাশক্তি হিসেবে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। ব্যবসাক্ষেত্রে উদ্ভাবনী অবকাঠামো তৈরি, বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ সুবিধার সঙ্গে সুযোগের পাশাপাশি স্টার্ট-আপ উদ্যোগগুলো নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করছে, যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার একটি মূল লক্ষ্য। উচ্চ সম্ভাবনাময় স্টার্ট-আপ উদ্যোগসমূহে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থায়ন গতিশীল করতেই নতুন সার্কুলার জারি করা হয়েছে। 

নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, স্টার্ট-আপ উদ্যোগের ক্ষেত্রে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা বাতিল করা হয়েছে। এখন ২১ বছরের ওপরে যে কেউ চাইলে ঋণ নিতে পারবে। ঋণের সীমা বাড়িয়ে ৮ কোটি টাকা করা হয়েছে। তবে এই পরিমাণ ঋণ পেতে হলে প্রতিষ্ঠানটিকে অবশ্যই নিবন্ধনের সময় থেকে ১২ বছরের অভিজ্ঞতা দেখাতে হবে। 

স্টার্ট-আপ উদ্যোগে অর্থায়ন পদ্ধতি ও অর্থায়ন সীমা দুটোতেই ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের স্টার্ট-আপ ফান্ড হতে শুধুমাত্র ঋণ বা বিনিয়োগ সুবিধা দিতে পারত। নতুন প্রণীত মাস্টার সার্কুলার মোতাবেক স্টার্ট-আপ উদ্যোগের অনুকূলে ঋণ বা বিনিয়োগের পাশাপাশি ইক্যুইটি সুবিধা দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। ফলে ব্যাংকের গঠিত নিজস্ব ‘স্টার্ট-আপ ফান্ড’ হতে স্টার্ট-আপ উদ্যোগে শুধু ইক্যুইটি বিনিয়োগ সুবিধা দিতে পারবে, স্টার্ট-আপ প্রতিষ্ঠানসমূহে ইক্যুইটি হিসেবে আর্থিক বিনিয়োগ সহজতর করার প্রয়াসে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। উক্ত ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠানে তফসিলি ব্যাংকসমহূ কর্তৃক তাদের স্টার্ট-আপ ফান্ডে রক্ষিত সমুদয় অর্থ ইক্যুইটি হিসেবে বিনিয়োগ হবে যা ব্যাংকগুলোর আর্থিক বিবরণীতে ইক্যুইটি বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হবে। উক্ত কোম্পানি গঠনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্ট প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করবে। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল গঠন নিয়ে পরবর্তীতে আলাদা গাইডলাইন দেওয়া হবে বলেও সার্কুলারে জানানো হয়েছে। স্টার্ট-আপ উদ্যোক্তাদের অনুকূলে ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোকে তাদের নিজস্ব বিনিয়োগযোগ্য তহবিল ব্যবহার করতে হবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের নিজস্ব বিনিয়োগযোগ্য তহবিল হতে স্টার্ট-আপ উদ্যোক্তাদের অনুকূলে ঋণ দিতে পারবে। এক্ষেত্রে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্টার্ট-আপ উদ্যোক্তাদের অনুকূলে বিতরণকৃত ঋণের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক গঠিত ‘স্টার্ট-আপ ফান্ড’ নামে ৫০০ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল হতে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে। তবে নতুন সার্কুলার জারির পর থেকে ব্যাংকের নিজস্ব ‘স্টার্ট-আপ ফান্ড’ থেকে স্টার্ট-আপ উদ্যোক্তাদের অনুকূলে নতুন করে কোনো ঋণ বিতরণ করা যাবে না। তবে, ইতোমধ্যে মঞ্জুরীকৃত ঋণের অর্থ ছাড় করা যাবে। 

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজস্ব ঋণ তহবিল হতে স্টার্ট-আপ উদ্যোক্তাদের অনুকূলে ঋণ গ্রাহক পর্যায়ে ছাড় করার ক্ষেত্রে অশ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতে ০ দশমিক ৫০ শতাংশ হারে জেনারেল প্রভিশন সংরক্ষণ করবে।

সার্কুলারে আরও বলা হয়েছে, সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায়, নতুন জারিকৃত এ সার্কুলারে যে সব পরিমার্জন ও পরিবর্ধন আনা হয়েছে তা সম্ভাবনাময় এ খাতের অর্থায়ন সুবিধা প্রাপ্তির পথ সহজ করার পাশাপাশি এ খাতের কার্যকর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সহায়ক হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আঞ্চলিক বাজার সম্প্রসারণে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি জরুরি

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ০৯:০৭ এএম
আঞ্চলিক বাজার সম্প্রসারণে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি জরুরি
ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ-পূর্ব এবং এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে বাজার সম্প্রসারণে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দিয়েছেন দুই দেশের ব্যবসায়ীরা। এ জন্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) বাস্তবায়ন জরুরি বলে মনে করছেন তারা। 

বুধবার (৯ জুলাই) গুলশানে এফবিসিসিআই এবং থাই-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের মধ্যে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ অভিমত ব্যক্ত করা হয়। 
সভায় সভাপতিত্ব করেন এফবিসিসিআইর প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রয়েল থাই অ্যাম্বাসির চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স মি. পানম থং প্রায়ুন।

সভায় বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যকার বাণিজ্য সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে এফবিসিসিআইর প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, থ্যাইল্যান্ড হলো এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্যতম বাণিজ্যিক হাব। আর বাংলাদেশের রয়েছে বিপুল দক্ষ এবং তরুণ জনশক্তি। এসব সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে উভয় দেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধির পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, পর্যটন, স্বাস্থ্যসেবা ও ঔষধ, অবকাঠামো, জ্বালানি এবং হাল্কা প্রকৌশল প্রভৃতি খাতে বিনিয়োগ সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন এফবিসিসিআইর প্রশাসক।

উভয় দেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা এফটিএ ইস্যুতে অগ্রসর হবে আশাবাদ ব্যক্ত করে মো. হাফিজুর রহমান বলেন, বাণিজ্য চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পণ্য ও সেবা আমদানি-রপ্তানি আরও ত্বরান্বিত হবে। পাশাপাশি বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে। এ সময়, দক্ষিণ-পূর্ব এবং এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের বাজার সুবিধাকে কাজে লাগাতে আঞ্চলিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। 
থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এবং পারস্পরিক সহযোগিতার সম্পর্ক উন্নয়নে উভয় পক্ষ নিবিড়ভাবে কাজ করবে বলে আশাবাদী রয়েল থাই অ্যাম্বাসির চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স পানম থং প্রায়ুন। এই সভার মাধ্যমে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে নেটওয়ার্কিং আরও শক্তিশালী হবে বলে প্রত্যাশা তার।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, থাই-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি শামস মাহমুদ, থাই-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং এফবিসিসিআইর সাবেক সহ-সভাপতি মো. মুনির হোসেন, এফবিসিসিআইর মহাসচিব মো. আলমগীর, এফবিসিসিআইর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স উইংয়ের প্রধান মো. জাফর ইকবাল এনডিসি, থাই-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের নেতারা এবং উভয় দেশের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা।

দাতাদের নয়, নিজস্ব উদ্যোগে সংস্কার হচ্ছে: অর্থ উপদেষ্টা

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ০৯:০৪ এএম
দাতাদের নয়, নিজস্ব উদ্যোগে সংস্কার হচ্ছে: অর্থ উপদেষ্টা
ছবি: সংগৃহীত

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন বলেছেন, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ কিংবা দাতাদের চাপে নয়, নিজস্ব উদ্যোগে সংস্কার হচ্ছে।

বুধবার (৯ জুলাই) হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিং সামিটে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, আর্থিক খাতের সংস্কার নিয়ে অনেক বাধা বিপত্তি আছে। অনেকেই মনে করছেন আর্থিক খাতের সংস্কার বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের চাপে হচ্ছে। বাস্তবে এমনটা না। সরকারের নিজস্ব উদ্যোগেও সংস্কার হচ্ছে। তবে তার ( দাতারা) ভালো পরামর্শ দিলে আমরা তা গ্রহণ করব। অনুষ্ঠানে এফআরসির চেয়ারম্যান ড. সাজ্জাদ হোসেন ভূঁইয়া প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, অধিকাংশ ব্যাংকের অডিট রিপোর্টে গরমিল রয়েছে। এই খাতে স্বচ্ছতা আনতে আমরা ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি শুরু করেছি। 

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বচ্ছতা-জবাবদিহি নিশ্চিতে অডিটিং-অ্যাকাউন্টি বড় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে যারা এসব কাজে জড়িত তাদের স্বচ্ছতা ও সততা নিশ্চিত করতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান পেপার সাবমিট করেন যার বেশির ভাগই মানসম্পন্ন না।
এনবিআরে অডিট করা খুবই জরুরি- এ কথা উল্লেখ করে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতি ১০০ জন করদাতার মধ্যে ৭০ জনই শূন্য ট্যাক্স দেয়, এটা অবিশ্বাসযোগ্য। যারা মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে তাদের হিসাব খতিয়ে দেখা উচিত। আবার ১৮ লাখ রিটার্ন জমা পড়ছে সে তথ্যেও গরমিল থাকতে পারে। যারা অডিট করে তাদের অন্তর দৃষ্টি দিয়ে অডিট কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো বিষয়ে তিনি বলেন, যদি আমরা বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে চাই তাহলে অডিটিং এবং অ্যাকাউন্টিংকে গুরুত্ব দিতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, অধিকাংশ ব্যাংকের অডিট রিপোর্টে গরমিল পাওয়া যায়। ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি (রিস্ক বেসড সুপারভিশন) পুরোপুরি কার্যকর হবে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বিশ্বাস অর্জন করতে গেলে অডিট রিপোর্টে স্বচ্ছতা ও সঠিক তথ্য দিয়ে রিপোর্ট সাবমিট করতে হবে। এটার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক জয়েন্টলি কাজ করবে। পাওনা নিয়ে চার সরকারি প্রতিষ্ঠানে অডিট করতে গেলে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেনি। যদি অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড কোনো প্রতিষ্ঠান অনুসরণ না করে তাদের ওপর শাস্তি আরোপ করা উচিত।

অডিটরদের সৎ থাকার পরামর্শ দিয়ে দুদক চেয়ারম্যান আব্দুল মোমেন বলেন, বর্তমানে আমি যদি বিচার করি তাহলে স্বচ্ছ অডিটর পাওয়া যাবে না। আইএফআইসি ব্যাংকে প্রচুর কেলেঙ্কারি হয়েছে। সালমান এফ রহমান অডিট রিপোর্টের সহায়তায় একটা পেপার কোম্পানির ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তথ্য দেখিয়ে অর্থ নিয়েছেন। গত শাসনামলে ব্যাংক খাতের একের পর এক আর্থিক অনিয়ম হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। কিছু অডিট প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এটা প্রশংসার দাবিদার। তবে তাদের বিরুদ্ধে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।