ঢাকা ২৪ আষাঢ় ১৪৩২, মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫
English
মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২

চট্টগ্রামে বেড়েছে সবজির দাম, স্থিতিশীল মাছ-মাংসের বাজার

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫, ১১:০১ এএম
চট্টগ্রামে বেড়েছে সবজির দাম, স্থিতিশীল মাছ-মাংসের বাজার
বিক্রির জন্য সবজির পসরা সাজিয়েছেন এক বিক্রেতা। ছবিটি চট্টগ্রাম মহানগরের কাজীর দেউড়ি বাজার থেকে তোলা।

সরবরাহ সংকটের অজুহাতে বেড়েছে সবজির দাম। ছয় ধরনের সবজির কেজিতে সপ্তাহের ব্যবধানে ৫ থেকে ৬ টাকা বেড়েছে। তবে স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে মাছ-মাংসের বাজার। 

শুক্রবার (৪ জুলাই) চট্টগ্রাম মহানগরের রিয়াজউদ্দিন বাজার ও চকবাজার কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে মুন্সীগঞ্জের আলু ২৫ টাকা ও বগুড়ার লাল আলু ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি বরবটি, পটোল ও চিচিঙ্গা ৬০ টাকায়, কাঁকরোল ৭০ থেকে ৮০ টাকা ও পেঁপে ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তা ছাড়া প্রতি কেজি মুলা ও কচুর লতি ৬০ এবং ঢেঁড়শ, চিচিঙ্গা ও ধুন্দল ৫০ টাকা, কচুরমুখী ৭০ ও মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। 

চকবাজার কাঁচাবাজারে সবজি বিক্রেতা মো. দিদার বলেন, ‘বাজারে সবজির সরবরাহ তুলনামূলক কম। তাই কিছু কিছু সবজির কেজিতে ৫-৬ টাকা বেড়েছে। তবে ক্রেতারা অধিকাংশ সবজি ৬০ টাকার ভেতরেই কিনতে পারছেন। সরবরাহ বাড়লে দাম কমে আসবে।’ 

রিয়াজউদ্দিন বাজার আড়তদার কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক শিবলী ফারুক বলেন, ‘সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে। আমরা আড়তেই সব ধরনের সবজি ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে বিক্রি করছি। সবজি কম আসছে, তাই দাম বেড়েছে। খুচরা বাজারে অধিকাংশ সবজি বর্তমানে ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে আছে। আশা করছি, এর বাইরে নতুন করে দাম আর বাড়বে না।’ 

মাছের বাজারে প্রতি কেজি রুই ৩০০, কাতলা ৩৫০ টাকা, বেলে ৮০০ টাকা, চিংড়ি ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, কাঁচকি ৪০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, টেংরা ৫০০ টাকা, বোয়াল ৭০০ টাকা ও ইলিশ আকারভেদে ১ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। 

এদিকে মুদি দোকানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়। পাশাপাশি দেশি রসুন ১২০ টাকা, চায়না রসুন ১৮০ টাকা, চায়না আদা ১৮০ থেকে ২০০ টাকা ও কেরালা আদা ১২০ দরে বিক্রি হয়েছে। তা ছাড়া প্রতি কেজি মসুর ডাল (ছোট) ১৩০ টাকা, মসুর ডাল (মোটা) ১১০ টাকা, মুগডাল (ছোট) ১৭০ টাকা, মুগডাল (বড়) ১৪০ টাকা, বুটের ডাল ১১০ টাকা, ছোলা ১০০ টাকা, খোলা চিনি (সাদা) ১২০ টাকা, খোলা চিনি (লাল) ১৪০ টাকা, প্যাকেট ময়দা (দুই কেজি) ১৪০ টাকা, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা ও খোলা সয়াবিন তেল ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

নগরের পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকার বাসিন্দা মো. আবদুল মোমেন বলেন, ‘বাজারে ৬০ টাকার নিচে সবজি নেই। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে চাল। ভোজ্যতেলের দাম আরও আগে থেকেই বাড়তি। ব্যবসায়ীরা যে যার মতো বিভিন্ন অজুহাতে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন। একবার দাম বাড়লে, তা আর কমাতে চায় না। আর আমরা সাধারণ মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি।’

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, ‘কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই ব্যবসায়ীরা কোনো না কোনো ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন। এসব নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ ও সময়োপযোগী কোনো উদ্যোগ নেই। তাই ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেন।’ 

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক ফয়েজ উল্যাহ খবরের কাগজকে বলেন, ‘অভিযান অব্যাহত আছে। নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজার, পাহাড়তলী, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের মতো বড় আড়তের পাশাপাশি খুচরা দোকানগুলোতেও আমাদের নজরদারি রয়েছে। অপরাধ প্রমাণ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি, সতর্ক করছি।’

 

ভারতে ‘এক্স’ এর ২ হাজার অ্যাকাউন্ট বন্ধের নির্দেশ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৮:৪৭ পিএম
আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৮:৪৯ পিএম
ভারতে ‘এক্স’ এর ২ হাজার অ্যাকাউন্ট বন্ধের নির্দেশ, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’
ছবি: সংগৃহীত

ভারতে চলমান সংবাদপত্রের সেন্সরশিপ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ‘এক্স’ (সাবেক টুইটার)। প্ল্যাটফর্মটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভারত সরকার গত ৩ জুলাই এক নির্দেশনায় ২ হাজার ৩৫৫টি অ্যাকাউন্ট ব্লক করতে বলেছে, যার মধ্যে রয়টার্স এবং রয়টার্স ওয়ার্ল্ডের দুটি অ্যাকাউন্টও ছিল।

রবিবার (৬ জুলাই) ভারতের জন্য রয়টার্স নিউজ অ্যাকাউন্ট পুনরায় সচল করে এক্স। এর আগের দিন প্ল্যাটফর্মটি জানিয়েছিল, একটি আইনি নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকার তাদের অ্যাকাউন্টটি সাময়িকভাবে স্থগিত করতে বলেছে।

এরপর আরও কয়েকটি অ্যাকাউন্ট পুনরায় চালু হয়। তবে নয়াদিল্লি জানিয়েছে, এসব অ্যাকাউন্ট ব্লক করার পেছনে তাদের কোনো ভূমিকা ছিল না।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) এক পোস্টে এক্স জানায়, ৩ জুলাই ভারত সরকার তাদের ‘তথ্যপ্রযুক্তি আইন, ২০০০’-এর ৬৯(এ) ধারায় ২,৩৫৫টি অ্যাকাউন্ট ব্লক করার নির্দেশ দেয়। নির্দেশনায় বলা হয়, এটি অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে—এক ঘণ্টার মধ্যেই, কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই। আর পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ রাখতে হবে।

এক্স জানায়, ‘জনমতের চাপে পড়ে ভারত সরকার রয়টার্স এবং রয়টার্স ওয়ার্ল্ডের অ্যাকাউন্ট পুনরায় চালুর অনুরোধ জানায়।’

ভারতে রয়টার্সের অংশীদার সংবাদ সংস্থা এএনআই এর একটি এক্স পোস্টে বলা হয়, ভারত সরকারের ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র দাবি করেছেন, ৩ জুলাই তারা কোনো ‘নতুন ব্লকিং আদেশ’ দেয়নি এবং ‘রয়টার্স কিংবা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ব্লক করার কোনো ইচ্ছাও ছিল না’।

পোস্টে বলা হয়, ‘ভারতে রয়টার্স ও রয়টার্স ওয়ার্ল্ডের অ্যাকাউন্ট ব্লক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সরকার এক্সকে তা পুনরায় সচল করতে বলে। ৫ জুলাই গভীর রাত থেকে এক্সের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে এবং অ্যাকাউন্টগুলো পুনরায় চালু করতে জোরালো প্রচেষ্টা চালায়।’

তবে মুখপাত্র অভিযোগ করেন, এক্স ‘প্রক্রিয়াগত কিছু বিষয়কে অযথা জটিল করে তোলে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিলম্ব করে’।

ভারতের ২০০০ সালের তথ্যপ্রযুক্তি আইন অনুযায়ী, সরকার মনে করলে, জাতীয় নিরাপত্তা কিংবা জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় যেকোনো অনলাইন কনটেন্ট মুছে ফেলার নির্দেশ দিতে পারে।

এক্স-এর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরেই নয়াদিল্লির সঙ্গে বিভিন্ন কনটেন্ট সরানোর নির্দেশনা নিয়ে বিরোধে জড়িয়েছে। মার্চ মাসে প্রতিষ্ঠানটি একটি সরকারি ওয়েবসাইটের বিরুদ্ধে মামলা করে, যেখানে দাবি করা হয়, সেটি এতটাই ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে যে এতে ‘অগণিত’ সরকারি কর্মকর্তারাও কনটেন্ট সরানোর আদেশ দিতে পারেন।

বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে পরিচিত ভারত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কনটেন্ট মুছে ফেলার অনুরোধের ক্ষেত্রে নিয়মিত শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে থাকে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসনামলে ভারতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা চাপে পড়েছে।

দেশটিতে অস্থিরতা চলাকালে প্রায়ই পুরোপুরি ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। চলতি বছরের এপ্রিলেই কাশ্মীরে একটি হামলার পর ‘উসকানিমূলক’ কনটেন্ট ছড়ানোর অভিযোগে এক ডজনের বেশি পাকিস্তানি ইউটিউব চ্যানেল নিষিদ্ধ করে ভারত, যদিও পরে সেগুলোর অনেকগুলোই পুনরায় চালু করা হয়।

২০২৩ সাল থেকে মণিপুর রাজ্যে জাতিগত সহিংসতার প্রেক্ষাপটে বারবার ইন্টারনেট বন্ধের পথ বেছে নিয়েছে নয়াদিল্লি।

সরকার বলছে, ভুয়া তথ্য ঠেকাতে এই পদক্ষেপগুলো জরুরি, বিশেষ করে এমন একটি দেশে যেখানে কোটি কোটি মানুষ খুব সস্তায় মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করে।

এক্স বলছে, তারা সেন্সরশিপ মোকাবিলায় সব ধরনের আইনি পথ খুঁজে দেখছে, তবে স্বীকার করেছে যে, ‘ভারতীয় আইনের সীমাবদ্ধতার কারণে’ তারা আদালতে কিছু চ্যালেঞ্জ জানাতে পারছে না।

এর আগে ২০০২ সালের গুজরাটের দাঙ্গায় নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা নিয়ে বিবিসি একটি ডকুমেন্টারি প্রকাশ করলে ভারতের বিবিসি অফিসে ধড়পাকড় চালায় মোদি সরকার এবং এ নিয়ে বিবিসি ও ভারত সরকারের মধ্যে উত্তেজনা ছড়ায় এবং সংবাদমাধ্যমটির প্রচারে বিধি নিষেধ আরোপ করে। সূত্র: আল জাজিরা

মাহফুজ/

 

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে আলোচনা বুধবার: বাণিজ্য উপদেষ্টা

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৪:১৭ পিএম
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক নিয়ে আলোচনা বুধবার: বাণিজ্য উপদেষ্টা
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন। ফাইল ছবি

বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ নিয়ে আগামীকাল বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠক করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) যুক্তরাষ্ট্র থেকে চিঠি পাওয়ার পর একথা বলেন তিনি।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ ইস্যুতে আগামীকাল ৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠক রয়েছে। সেখানে ভালো কিছু আশা করছে বাংলাদেশ।’

এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, ‘বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানও এই প্রতিনিধিদলে রয়েছেন। বাংলাদেশ গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চিঠি পেয়েছে, যেখানে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ দল মার্কিন পক্ষের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করেছে। ৯ জুলাই আরেক দফা আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। আলোচনায় বাংলাদেশ পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন শেখ বশির উদ্দিন। ঢাকা ওয়াশিংটন ডিসির সঙ্গে একটি শুল্ক চুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে, যা উভয় দেশের জন্য লাভজনক হবে বলে আমরা আশা করি।’

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন, ‘৩৫ শতাংশ শুল্ক চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নয়। আলোচনা চলমান। ৯ জুলাই পরবর্তী আলোচনার তারিখ। ভালো কিছুর জন্য বাংলাদেশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে এবং সেই সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি।’

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের চিঠির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র চুক্তির জন্য একটি নতুন নথি পাঠিয়েছে। এটি বেশ বড় একটি নথি। আমাদের পড়ে দেখতে হবে তারা কী চাইছে এবং চুক্তি হলে তারা কতটা পর্যালোচনা করতে ইচ্ছুক।’

সালমান/

স্বর্ণের দাম কমল, কার্যকর আজ থেকেই

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০১:১৪ পিএম
স্বর্ণের দাম কমল, কার্যকর আজ থেকেই
ছবি: সংগৃহীত

দেশের বাজারে আরেক দফা কমেছে স্বর্ণের দাম। এবার ভরিতে এক হাজার ৫৭৫ টাকা কমিয়ে ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম ভরিপ্রতি ১ লাখ ৭০ হাজার ৫৫১ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)।

সোমবার (৭ জুলাই) স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়। আজ মঙ্গলবার থেকে নতুন দাম কার্যকর।
 
চলতি বছর এ নিয়ে ৪২ বার দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হলো। যেখানে দাম বেড়েছে ২৭ বার কমেছে ১৫ বার।

নতুন দাম অনুযায়ী, দেশের বাজারে প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম পড়বে ১ লাখ ৭০ হাজার ৫৫১ টাকা, ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৬২ হাজার ৭৯৪ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৩৯ হাজার ৫৪৮ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৯২ টাকা।

স্বর্ণের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে সরকার-নির্ধারিত ৫ শতাংশ ভ্যাট ও বাজুস-নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি ৬ শতাংশ যুক্ত করতে হবে। তবে গহনার ডিজাইন ও মানভেদে মজুরির তারতম্য হতে পারে।

গেল ১ জুলাই দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয় করেছিল বাজুস। তখন ভরিতে ১ হাজার ৮৯০ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ৭২ হাজার ১২৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

অমিয়/

কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের স্বপ্নদ্রষ্টা আমজাদ খান চৌধুরী

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ১১:৫১ এএম
আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৫, ১১:৫২ এএম
কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের স্বপ্নদ্রষ্টা আমজাদ খান চৌধুরী
আমজাদ খান চৌধুরী

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মেজর জেনারেল (অব.) আমজাদ খান চৌধুরীর দশম মৃত্যুবার্ষিকী আজ (৮ জুলাই)। তিনি বাংলাদেশের কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পের পথিকৃৎ ছিলেন। এ দেশের শিল্প খাতে আমজাদ খান চৌধুরীর অবদানের কারণে সবাই তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। ক্ষুদ্র পরিসরে ব্যবসা শুরু করে গড়ে তুলেছেন আন্তর্জাতিক মানের একাধিক প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববাজারে এসব প্রতিষ্ঠানের কারণে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধি পেয়েছে। 

২০১৫ সালের ৮ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনায় ডিউক মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাকে ঢাকার বনানী সেনা কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে।

১৯৫৬ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন আমজাদ খান চৌধুরী। ১৯৮১ সালে মেজর জেনারেল হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যান। 

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আমজাদ খান চৌধুরী তার চারপাশের মানুষকে প্রায় বলতেন, ‘দেশে রয়েছে উর্বর জমি, প্রচুর নদীনালা, বর্ষব্যাপী উৎপাদনকাল, সহজ ও কম খরচে যাতায়াতের উপযোগী পথঘাট এবং প্রচণ্ড পরিশ্রমী এক বিশাল জনগোষ্ঠী, যারা প্রথাগতভাবে কৃষক। প্রকৃতির অফুরন্ত এসব সম্পদ থাকার পরও আমরা কেন দরিদ্র থাকব। দেশের মানুষের জন্য কিছু করার তাগিদেই প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পথ চলা।’

প্রাণ-আরএফএল প্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরও বলতেন, কৃষিতে উৎপাদন বাড়াতে আধুনিক প্রযুক্তির বিকল্প নেই।

অল্প খরচে কৃষিতে ব্যবহার উপযোগী যন্ত্র কীভাবে বানানো যায় সে লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন ব্যবসার এই দিকপাল। রংপুরে ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেড (আরএফএল)’। 

প্রতিষ্ঠানে স্বল্প পরিসরে নানা ধরনের কৃষি উপকরণ তৈরি করতে থাকেন। 

আমজাদ খান চৌধুরীর ব্যবসার পুঁজি ছিল পেনশনের টাকা। স্ত্রী সাবিহা আমজাদ পৈতৃক সম্পত্তি ব্যাংকে গচ্ছিত রেখে তাকে আরও কিছু টাকা দেন। এ টাকায় প্রথমে অকশনের কিছু মেশিনপত্র জোগাড় করেন। যা দিয়ে হালকা কৃষি উপকরণ তৈরি করেন। এসব দিয়েই পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করেন ব্যবসা। প্রাথমিক পর্যায়ে রাইস হলার (ধান ভাঙানোর মেশিন), কোদাল, বেলচা, কেরোসিন চুলা, ইঞ্জিনের পিস্টন-লাইনার ট্রেডল পাম্প, তারা পাম্প, রংপুর পাম্প ইত্যাদি ম্যানুয়াল কৃষি ও সেচ উপকরণ তৈরি করা হয়। বর্তমানে এসব উপকরণের আধুনিক সংস্করণ (ওয়াটার পাম্প, পাইপ, ফিটিংস) তৈরি করা হয় তার প্রতিষ্ঠানে।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মৌসুম ছাড়াও কীভাবে কৃষকরা টিকে থাকতে পারে তা নিয়ে ভাবতেন। ব্যবসার এই দিকপালের চেষ্টা ছিল মৌসুম ছাড়াও কৃষককে লাভবান করা। তিনি প্রায় বলতেন, বছরের অন্য সময় কৃষকের তিন বেলা খেয়ে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। এ ছাড়া মৌসুমের সময়ও তারা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। কৃষককে বাঁচাতে দেশের মানুষের খাদ্য সমস্যা সমাধানে কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণে পদক্ষেপ নিতে হবে। সে চেষ্টাই করে গেছেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের এই কর্ণধার। 

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপকে দেশের বৃহৎ খাদ্যসামগ্রী ও গৃহস্থালি পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলেছেন। 

প্রতিষ্ঠানটি থেকে খাদ্য ও গৃহস্থালি- এ দুটি খাতে সর্বাধিক বহুমুখী পণ্য উৎপাদন করা হয়। লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্লাস্টিক খাতে আছে ৫ হাজার ৫০০-এর বেশি পণ্য। খাদ্যসামগ্রী উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির প্রোডাক্ট লাইনে রয়েছে ২ হাজার ৫০০টিরও বেশি পণ্য। এসব পণ্য দেশে উৎপাদনের জন্য দেশের ৩০টি জায়গায় প্রাণ আরএফএল গ্রুপের কারখানা রয়েছে। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ এখন বিশাল একটি পরিবার যেখানে ১ লাখ ৫৮ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলছে। এ ছাড়া এ কর্মসংস্থান বেসরকারি পর্যায়ে সর্বোচ্চ। বর্তমানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গ্রুপের নির্ভরশীল প্রায় ১৫ লাখ মানুষ। তবে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন কারখানায় নারী কর্মীর সংখ্যা প্রায় ৬০ শতাংশেরও বেশি।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের রপ্তানি বাড়াতে সব সময় চেষ্টা করতেন আমজাদ খান চৌধুরী। প্রাণকে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ডে পরিণত করেছেন। আন্তর্জাতিক বাজারে ‘প্রাণ’-এর অর্জন বেড়েই চলেছে। 

দেশের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের উৎপাদিত কৃষিজপণ্য প্রক্রিয়াজাত করে উন্নত বিশ্বের ভোক্তাদের খাবার টেবিলে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৭ সালে। বিশ্বের এমন অনেক দেশ রয়েছে যেখানে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন নেই কিন্তু সেখানে আমরা ‘প্রাণ’ এর মাধ্যমে বাংলাদেশের পতাকা বহন করছি। ‘প্রাণ’-এর মাধ্যমে বাংলাদেশের পরিচিতি বিস্তৃত করার চেষ্টা করেন আমজাদ খান চৌধুরী। 

প্রাণ পণ্য সুদূর আফ্রিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশসহ ১৪৮টিরও বেশি দেশে নিয়মিত রপ্তানি হচ্ছে। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনের কাছ থেকে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করেছে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে অবদান রাখায় সরকারের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ পরপর ২১ বার জাতীয় রপ্তানি ট্রফি অর্জন করছে।

সব সময় ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপকে এগিয়ে নিয়েছে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি তার কর্মীদের বলতেন, আমাদের লক্ষ্য হলো প্রাণ-আরএফএল গ্রুপকে বাংলাদেশের প্রথম বহুজাতিক কোম্পানি (মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। 

বিগত কয়েক দশকে দেশের সামগ্রিক কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হলেও দুগ্ধশিল্প আশানুরূপ বিকাশলাভ করতে পারেনি। দুগ্ধশিল্প এমন একটি খাত যেখানে সব বয়সের নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। দুগ্ধশিল্পের উন্নয়নের জন্য আমজাদ খান চৌধুরী ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। প্রান্তিক পর্যায়ে দুগ্ধ খামারিদের পশুপালনবিষয়ক প্রশিক্ষণ, পশু চিকিৎসা ও ওষুধ সরবরাহ, রোগপ্রতিষেধক টিকা প্রদান, কৃত্রিম প্রজনন, গবাদিপশুর জন্য উপযুক্ত খাবার সরবরাহ, দুগ্ধখামারিদের সুসংহত করা ও তাদের আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। 

এ ছাড়া উৎপাদনকারীদের কাছে থেকে দুগ্ধ সংগ্রহের লক্ষ্যে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দুগ্ধ সংগ্রহ ও শীতলীকরণ কেন্দ্রের সূচনা করেন। বর্তমানে সারা দেশে প্রাণের ১১০টি দুগ্ধ সংগ্রহ রয়েছে। 

পাস্তুরিত দুধের পাশাপাশি গুঁড়া দুধ উৎপাদনের জন্য তিনি বৃহৎ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলেন। নরসিংদীর প্রাণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে প্লান্ট স্থাপন করেন। যেখানে গড়ে প্রতিদিন ২ লাখ লিটার তরল দুধ প্রক্রিয়াজাত করা হয়। 

প্রাণ-আরএফএল প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বাংলাদেশের কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে কাজ করেছেন। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য থেকে প্রান্তিক পর্যায়ে ক্ষুদ্র চাষিদের রক্ষা করতে এবং তাদের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পরিকল্পনা করে কাজ করেছেন। ‘কন্ট্রাক্ট ফার্মিং’ তথা চুক্তিভিত্তিক চাষাবাদ শুরু করেন। চাষিদের উন্নতমানের বীজ, সার-কীটনাশকের ব্যবস্থা করেছেন। কোন ফসলের জন্য বছরের কোন সময়ে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে সে বিষয়ে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিতেন। ফসল ওঠার পর তাদের কাছে থেকে তা কিনে নিতেন। কৃষক প্রতিনিধিসহ বাজারদর যাচাই করে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে কিনে নিতেন। আমজাদ খান চৌধুরী সিংহভাগ কাঁচামাল সংগ্রহ করতেন ‘কন্ট্রাক্ট ফার্মিং’ তথা চুক্তিবদ্ধ কৃষকদের মাধ্যমে।

তার কর্মীদের আমজাদ খান চৌধুরী বলতেন, কঠোর পরিশ্রম এবং নিয়মানুবর্তিতা সফলতার মূল শক্তি। মানুষের জীবনে সময় অত্যন্ত সীমিত। এই সীমিত সময়ে যদি সফলতা অর্জন করতে সময়মতো কাজ করতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই ‘টাইম ম্যানেজমেন্ট’ অত্যন্ত প্রয়োজন। এ ছাড়া টিমওয়ার্ক, জব স্যাটিসফ্যাকশনও অত্যন্ত জরুরি বলে তিনি মনে করতেন।

১৯৩৯ সালে নাটোরে আমজাদ খান চৌধুরীর জন্ম। বাবা মরহুম আলী কাশেম খান চৌধুরী। আমজাদ খান চৌধুরী শিক্ষা জীবন শুরু করেন ঢাকায়, গ্র্যাজুয়েশন করেন পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি এবং অস্ট্রেলিয়ান স্টাফ কলেজ থেকে। তিনি ১৯৫৬ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে তিনি সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল হিসেবে অবসর গ্রহণের পর বসে না থেকে ১৯৮১ সালে ছোট ঢালাই লোহার ফাউন্ড্রির মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের দরিদ্র জনগণের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহে টিউবওয়েল ও কৃষিকাজে সেচের পানি সরবরাহের উদ্দেশ্যে কৃষি সহায়ক যন্ত্রপাতি তৈরি শুরু করলেন। আমজাদ খান চৌধুরী সেই ফাউন্ড্রির নাম দিলেন রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেড। সেখান থেকে আজকের এই প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পথচলা শুরু।

পারিবারিক জীবন

আমজাদ খান চৌধুরীর সহধর্মিণী মিসেস সাবিহা আমজাদ শুধু গৃহিণীই নন, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। এই দম্পতির চার সন্তান। তারা হলেন আজার খান চৌধুরী, ডা. সেরা হক, আহসান খান চৌধুরী ও উজমা চৌধুরী। তাদের মধ্যে আহসান খান চৌধুরী গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উজমা চৌধুরী গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট ফিন্যান্স) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

আমজাদ খান চৌধুরী বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যিক সংগঠন রিহ্যাব, বাপা, ইউসেপসহ বিভিন্ন সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ

রংপুরে ১৯৮১ সালে রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেডের (আরএফএল) পথচলা শুরু। ক্ষুদ্র পরিসরে যাত্রা শুরু করেও আজকে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ৩৪টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে পাবলিক লিমিটেড দুটি কোম্পানি। অ্যাগ্রিকালচারাল মার্কেটিং কোম্পানি লিমিটেড এবং রংপুর ফাউন্ড্রি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি থেকে খাদ্য ও গৃহস্থালি- এ দুটি খাতে সর্বাধিক বহুমুখী পণ্য উৎপাদন করা হয়। লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ও প্লাস্টিক খাতে আছে ৫ হাজার ৫০০-এর বেশি পণ্য। খাদ্যসামগ্রীর উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির প্রোডাক্ট লাইনে রয়েছে ২ হাজার ৫০০টিরও বেশি পণ্য। এসব পণ্য দেশে উৎপাদনের জন্য দেশের ৩০টি জায়গায় প্রাণ আরএফএল গ্রুপের কারখানা রয়েছে। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ এখন বিশাল একটি পরিবার যেখানে ১ লাখ ৫৮ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলছে। এ ছাড়া এ কর্মসংস্থান বেসরকারি পর্যায়ে সর্বোচ্চ। বর্তমানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গ্রুপের নির্ভরশীল প্রায় ১৫ লাখ মানুষ।

মন্দায় পুঁজিবাজার ছাড়ছেন বিনিয়োগকারীরা

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ১১:২৩ এএম
মন্দায় পুঁজিবাজার ছাড়ছেন বিনিয়োগকারীরা

পুঁজিবাজারের লোকসানে জুন ক্লোজিংয়ে এসে সিংহভাগ বিনিয়োগকারী তাদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব নবায়ন করেনি। ফলে জুলাইয়ের ৭ তারিখ পর্যন্ত প্রায় চার হাজারের বেশি দেশীয় বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বন্ধ হয়েছে। শুধু দেশীয় বিনিয়োগকারী নয়, প্রবাসী বিনিয়োগকারীদেরও বিও হিসাবও কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে।

২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের ধারাবাহিকভাবে পুঁজিবাজার ছাড়ার তথ্য প্রকাশ করতে থাকে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড বাংলাদেশের (সিডিবিএল), যা অব্যাহত থাকে চলতি বছরের ২০ মে পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে বিদেশি ও প্রবাসীদের বিও হিসাব কমেছে ৯ হাজার ১৭৬টি।

তবে চলতি বছরের ২০ মে থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত পুঁজিবাজারে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বাড়ার তথ্য প্রকাশ করে সিডিবিএল। এই সময়ের মধ্যে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বেড়েছে ৭৪টি।

নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিবছরের ৩০ জুনের মধ্যে ৫০০ টাকা ফি দিয়ে বিও হিসাব নবায়ণ করতে হয় উভয় শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের। এই সময়ের মধ্যে বিও হিসাব নবায়ন না করলে সেই হিসাব বন্ধ করে দেয় সিডিবিএল। 

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি বছরের জুন ও জুলাই মাসে পুঁজিবাজারের কিছুটা উত্থান দেখা গেলেও তার আগে জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে সূচকের পতন হয়েছে। এমনও সপ্তাহ গেছে যার ৫ দিনের লেনদেনে ৫ দিনই কমেছে সূচক। লেনদেন নেমে এসেছিল আড়াইশ কোটি টাকার ঘরে। 

তারা বলছেন, এমন অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা তাদের সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ হারিয়েছে। যদিও এখন পুঁজিবাজারে সূচক বাড়ছে তার পরও সে সময়ে যে লোকসান হয়েছে সেটি কাটিয়ে ওঠা এখনো সম্ভব হয়নি। ফলে যেসব বিনিয়োগকারীদের যৌথ নামে বিও আছে সেগুলো বন্ধ হয়েছে। আবার বিনিয়োগ সুরক্ষার জন্য লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে বের হয়ে গেছেন অনেকে। সেই বিও হিসাবগুলো এই বছরের জুনে এসে বন্ধ হয়ে গেছে।

বিও হলো পুঁজিবাজার বিনিয়োগের জন্য ব্রোকারেজ হাউস অথবা মার্চেন্ট ব্যাংকে একজন বিনিয়োগকারীর খোলা হিসাব। এই বিও হিসাবের মাধ্যমেই বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে লেনদেন করেন। বিও হিসাবের তথ্য রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)।

এই সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, ৩ জুলাই পর্যন্ত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ৯৯৭টি, যা গত ২৬ জুন ছিল ১৬ লাখ ৮৮ হাজার ৭০২টি। এ হিসাবে মাত্র পাঁচ কার্যদিবসে পুঁজিবাজারে বিও হিসাব কমেছে ৪ হাজার ৭০৫টি।

বর্তমানে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব আছে ৪৫ হাজার ৯০৩টি। গত ২৬ জুন বিদেশি ও প্রবাসীদের নামে বিও হিসাব ছিল ৪৬ হাজার ৪১০টি। অর্থাৎ পাঁচ কার্যদিবসে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমেছে ৫০৭টি।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর পুঁজিবাজারে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বাড়তে দেখা যায়। তবে শেষ পাঁচ কার্যদিবসে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবও কমেছে। সিডিবিএলের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশি বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব আছে ১৬ লাখ ২০ হাজার ৩৮৬টি, যা গত ২৬ জুন ছিল ১৬ লাখ ২৪ হাজার ৫১৫টি। অর্থাৎ শেষ পাঁচ কার্যদিবসে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমেছে ৪ হাজার ১২৯টি।

৫ আগস্টের আগে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব ছিল ১৬ লাখ ৩ হাজার ৮২২টি। এ হিসাবে হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশি বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বেড়েছে ১৬ হাজার ৫৬৪টি। 

হাসিনা সরকারের পতনের পর পুঁজিবাজারে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বাড়লেও তার আগে অনেক বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজার ছেড়েছেন। ২০২৪ সালের শুরুতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব ছিল ১৭ লাখ ৭৩ হাজার ৫৫১টি। আর বর্তমানে বিও হিসাব আছে ১৬ লাখ ৮৩ হাজার ৯৯৭টি। অর্থাৎ ২০২৪ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিও হিসাব কমেছে ৮৯ হাজার ৫৫৪টি।

এদিকে বর্তমানে পুরুষ বিনিয়োগকারীদের নামে বিও হিসাব আছে ১২ লাখ ৬৩ হাজার ৯৫১টি। গত ২৬ জুন এই সংখ্যা ছিল ১২ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৪টি। অর্থাৎ পাঁচ কার্যদিবসে পুরুষ বিনিয়োগকারীদের হিসাব কমেছে ৩ হাজার ৫৩৩টি।

অপরদিকে বর্তমানে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২ হাজার ৩৩৮টি। গত ২৬ জুন এই সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৩ হাজার ৪৪১টি। এ হিসাবে শেষ পাঁচ কার্যদিবসে নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব কমেছে ১ হাজার ১০৩টি।

নারী ও পুরুষ বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি শেষ পাঁচ কার্যদিবসে কোম্পানির বিও হিসাবও কমছে। বর্তমানে কোম্পানি বিও হিসাব রয়েছে ১৭ হাজার ৭০৮টি। গত ২৬ জুন এই সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ৭৭৭টি। এ হিসাবে পাঁচ কার্যদিবসে কোম্পানি বিও হিসাব কমেছে ৬৯টি।

বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের যে বিও হিসাব আছে তার মধ্যে একক নামে আছে ১২ লাখ ৫ হাজার ৩৪৭টি, যা গত ২৬ জুন ছিল ১২ লাখ ৮ হাজার ৫৩১টি। অর্থাৎ পাঁচ কার্যদিবসে একক নামে বিও হিসাবে কমেছে ৩ হজার ১৮৪টি।

এ ছাড়া বিনিয়োগকারীদের যৌথ নামে বিও হিসাব আছে ৪ লাখ ৬০ হাজার ৯৪২টি। গত ২৬ জুন যৌথ বিও হিসাব ছিল ৪ লাখ ৬২ হাজার ৩৯৪টি। অর্থাৎ শেষ পাঁচ কার্যদিবসে যৌথ বিও হিসাব কমেছে ১ হাজার ৪৫২টি।