ঢাকা ২৬ আষাঢ় ১৪৩২, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
English
বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২

এশিয়ান হাইওয়ে: দেশের স্থল বাণিজ্যে গতি আনবে

প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৪, ১১:৪৯ এএম
আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৪, ০২:১২ পিএম
এশিয়ান হাইওয়ে: দেশের স্থল বাণিজ্যে গতি আনবে

এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক (এএইচ) প্রকল্পটি জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএন এসক্যাপ) একটি সহযোগী প্রকল্প। প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল ১৯৫৯ সালে। এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক স্থল বাণিজ্য এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাবে। 

প্রকল্পটির দৈর্ঘ্য ১ লাখ ৪০ হাজার ৭৭৯ কিলোমিটার। এটি এশিয়ার ৩২টি দেশকে ইউরোপের সঙ্গে যুক্ত করবে। হাইওয়ের সঙ্গে রয়েছে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে। এটি বাস্তবায়ন হলে ব্যবসা-বাণিজ্যে বিপ্লব ঘটবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। 

এ নেটওয়ার্ক তৈরির জন্য ২০০৩ সালে ব্যাংককে একটি আন্তসরকার চুক্তি হয়। ২০০৯ সালে আঞ্চলিক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে এশিয়ান হাইওয়েতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ হবে। এটি এমন একটি রুট যেটি ঢাকার সঙ্গে সংযুক্ত হবে। এশিয়ান হাইওয়ে শুরু হবে জাপানের টোকিও থেকে, শেষ হবে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে। 

অন্যদিকে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে হলো ইউরোপ ও এশিয়াজুড়ে একটি সমন্বিত মালবাহী রেলওয়ে নেটওয়ার্ক। এটিও ইউএন এসক্যাপের একটি সহযোগী প্রকল্প। ইউএন এসক্যাপের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এশিয়ান একটি আঞ্চলিক পরিবহন সহযোগিতার প্ল্যাটফর্ম, যার লক্ষ্য এশিয়ায় সড়ক অবকাঠামো গড়ে তোলা। 

ম্যাপ অনুযায়ী, এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কে ৪৪টি পৃথক রুট রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি রুট তামাবিল-বেনাপোল ৪৯২ কিলোমিটার, তামাবিল-বাংলাবান্ধা ৫১৭ কিলোমিটার এবং টেকনাফ-মোংলা ৭৬২ কিলোমিটার পড়েছে বাংলাদেশে। বর্তমানে তিনটি রুটের কাজই চলমান। তবে শেষ হতে অনেক সময় লাগবে। 

সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, তিনটি রুটই রাজধানী ঢাকাকে ছুঁয়ে যাবে। দুটি রুট দুই প্রান্তে ভারতকে সংযুক্ত করবে। অন্য রুট বাংলাদেশের মধ্যে থাকলেও মায়ানমারসহ প্রতিবেশী দেশগুলোয় নেওয়া হতে পারে। বর্তমানে তহবিলসংকটে একরকম বন্ধই হয়ে আছে প্রকল্পের কাজ। বাংলাদেশের মধ্যে ১ হাজার ৮০৪ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়ক ও ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে নিয়ে ৩০০ কিলোমিটারেরও কম অংশের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ উদ্যোগটি থমকে আছে। এই দীর্ঘ সময়ে উদ্যোগের অগ্রগতি তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হওয়ার উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে আমাদের অনেক অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। সেগুলো সংযোগ করে দিলেই হবে। কিন্তু সীমান্তে এসব অবকাঠামোর আন্তর্দেশীয় সংযোগের ক্ষেত্রে অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি না। 

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অবকাঠামো বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল হক খবরের কাগজকে বলেন, এশিয়ার দেশগুলো ছোট ছোট ব্লকে নিজেদের মতো করে একটি মাল্টিমোডাল কানেকটিভিটি তৈরি করে উদার বাণিজ্যের পথ তৈরি করবে- এমনটিই ছিল এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কের লক্ষ্য। 

বৈষম্যহীন অর্থনীতির জন্য আঞ্চলিক যোগাযোগব্যবস্থা আরও সমন্বয় করার কথা বলা হয়েছিল। এতে প্রতিটি দেশ উপকারভোগী হবে। একটি দেশের পণ্য অন্য দেশে সহজে পরিবহন করা যাবে, এতে নেটওয়ার্ক এ থাকা সব দেশ উপকারভোগী হবে। 

এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ঘুরে দাঁড়াবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি আর্থসামাজিক উন্নয়নও ত্বরান্বিত হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ব্যয় সাশ্রয়ে বড় সুবিধা পাবে। পণ্য পরিবহনে সময় কমবে। 

কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এই নেটওয়ার্কে থাকা সব দেশই উপকারভোগী হবে। স্থল বাণিজ্যে বাংলাদেশের গতিশীলতা ফিরে আসবে। প্রতিবেশী দেশ ভারত ও চীন এ দেশের উন্নয়ন সহযোগিতায় এগিয়ে আসবে, সেটিই প্রত্যাশা।

ভোটের আগে জোটের রাজনীতি সবার অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনই কাম্য

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ০৬:০৩ পিএম
ভোটের আগে জোটের রাজনীতি
সবার অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনই কাম্য

দেশের মানুষের দৃষ্টি এখন নির্বাচনের দিকে। কিছুদিন আগে এ নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা ছিল। কিন্তু এখন তা আর নেই। প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, গণমাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। তাদের এই প্রস্তুতি চলছে। সাধারণ মানুষও নির্বাচনি উত্তাপ অনুভব করতে শুরু করেছেন। রাজনীতির হালফিল অবস্থা মূলত এ রকমই। ইতোমধ্যে সুনির্দিষ্ট করে না হলেও নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় সম্পর্কে দেশবাসী জেনে গেছেন।

 প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার লন্ডন বৈঠকের পর নির্বাচন নিয়ে যে অনিশ্চয়তা ছিল, তাও দূর হয়েছে। ফলে নির্বাচনি প্রস্তুতিতেও গতি এসেছে। দেশের সব রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে বড় দলগুলো নির্বাচনের উত্তাপটা বেশ বুঝতে পারছে। সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষিত হলে এই উত্তাপ নিঃসন্দেহে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। আপাতত চলছে প্রাথমিক প্রস্তুতি। 

নির্বাচনে জয়ী হওয়া সব দলেরই লক্ষ্য থাকে। তবে শক্তিমত্তার দিক থেকে সবাই সমান নয়। জয়ী হওয়ার নানা উপায় এবং পদ্ধতি নিয়ে তাই তাদের ভাবতে হয়। এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনে না আসতে পারে, তাহলে নির্বাচনের মাঠে এককভাবে শীর্ষে থাকবে বিএনপি। অন্য দলগুলোও প্রাণপণ লড়বে। জয়ী হওয়ার জন্য তাই তারা জোট বাঁধার কথা ভাবছে। খবরের কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কমপক্ষে দুটি বড় নির্বাচনি জোট হতে চলেছে। এর একটি গঠিত হতে পারে উদারপন্থি গণতান্ত্রিক দলগুলোকে নিয়ে; আরেকটি ইসলামপন্থিদের নিয়ে। 

খবরের কাগজের প্রতিবেদক জানাচ্ছেন, আওয়ামী লীগ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না- এমনটা ধরে নিয়ে ভোটের মাঠে বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে ওঠাই ছোট দলগুলোর লক্ষ্য। তাদের তৎপরতা আপাতত সীমাবদ্ধ আছে পর্দার আড়ালের প্রাথমিক আলাপ-আলোচনার মধ্যে। নির্বাচন-পূর্ব এবং নির্বাচনকালীন নির্বাচনি কৌশল কী হবে, সেসব নিয়েই তারা কথাবার্তা বলছেন। তারা চাইছেন ভোটের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপির বিকল্প শক্তি হয়ে উঠতে। এই উদ্যোগকে তারা এখনই জোট বলতে চাইছেন না। জোট গঠনের ঘোষণাও দিচ্ছেন না। নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার ঠিক আগে বা পরে এই জোট গঠনের ঘোষণা আসতে পারে। 

সংস্কার নিয়েও তাদের মধ্যে কথাবার্তা হচ্ছে। এই সংস্কারও হয়ে উঠছে নির্বাচনি কৌশল। বিএনপির তুলনায় ছোট দলগুলো গুরুত্ব দিচ্ছে পিআর (ভোটের আনুপাতিক হার অনুসারে আসন প্রাপ্তি) পদ্ধতির ওপর। অন্যদিকে বিএনপি চাইছে পূর্বের, অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট প্রাপ্তির ভিত্তিতে জয়ী হওয়ার নির্বাচন পদ্ধতি। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল থাকা জরুরি। এ জন্য জোটের গুরুত্ব রয়েছে। এটা হলে আগামী নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে উঠবে। প্রাণবন্ত থাকবে সংসদ। সরকারি দল নিজেদের খেয়ালখুশিমতো একতরফাভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। আমরাও মনে করি, জবাবদিহিমূলক সংসদই গণতন্ত্র সুরক্ষার চাবিকাঠি। সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল থাকলে গণতন্ত্র সুরক্ষিত থাকে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন তাই জরুরি। নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অবাধ, অংশগ্রহণমূলক এবং বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখার জন্য সরকারও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। অন্তর্বর্তী সরকার দক্ষ ও পেশাদার কর্মকর্তাদের দিয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চাইছে। এ লক্ষ্যে স্বচ্ছ, কর্মঠ, পেশাদার কর্মকর্তাদের জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে নিয়োগ দিতে সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে। ভোটকেন্দ্র স্থাপনের কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছে নির্বাচনি কর্মকর্তাদের। এ-সংক্রান্ত গেজেট ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।

 এভাবেই ‘ভোটারবিহীন নির্বাচন’ বা ‘দিনের ভোট রাতে’ হয়েছে- এমন অভিযোগ বা বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকতে চায় সরকার। সার্বিকভাবে নতুন সরকারের বৈধতা নিয়ে যাতে কোনো প্রশ্ন না ওঠে, সরকারের লক্ষ্য সেটাই। আমরা সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। আশা করছি, এবার কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে না। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য আরও যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, সরকার সেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এবারের নির্বাচন যাতে সব দিক থেকে স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ নির্বাচন হয়, দেশবাসী সেটাই প্রত্যাশা করে।

মব ভায়োলেন্স থামছেই না  পুলিশকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৬:২৮ পিএম
মব ভায়োলেন্স থামছেই না 
পুলিশকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে

দেশে মব ভায়োলেন্স প্রতিনিয়তই ঘটছে। সরকার, সেনাবাহিনী ও পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার কঠোর পদক্ষেপের কথা বলা হলেও থামানো যাচ্ছে না এ অপরাধ। এখন প্রশ্ন উঠেছে, মব ভায়োলেন্স থামানোর ব্যাপারে পুলিশ আসলে কতটা সক্রিয়। পাশাপাশি এ বাহিনীর সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অনেকের মতে, পুলিশ এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। নিরপেক্ষভাবে পুলিশের দায়িত্ব পালনের মতো রাজনৈতিক পরিস্থিতি আছে কি না, তা নিয়ে বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন। তাদের মতে, প্রতিদিন যেসব মব ভায়োলেন্সের খবর আসছে, এতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠছে। কুমিল্লার মুরাদনগরে একই পরিবারে তিনজনকে হত্যা, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানায় হামলা চালিয়ে আসামি ছিনতাই, পটিয়া থানায় হামলাসহ সম্প্রতি বেশ কিছু মব সন্ত্রাসের ঘটনায় চরম উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে সচেতন মহলে। 

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত মব ভায়োলেন্স বা ‘গণপিটুনির’ ঘটনায় কমপক্ষে ৯৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। অপরাধ বিশ্লেষকরা এসব ঘটনায় অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্বল ভূমিকা বা তৎপরতার অভাবকে দায়ী করছেন। তাদের মতে, মব ভায়োলেন্স ঠেকাতে গিয়ে পুলিশ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করছে। বেশির ভাগ মব ভায়োলেন্সের ঘটনা ঘটছে রাজনৈতিক পক্ষ-বিপক্ষের মধ্যে। ফলে নির্বাচনে কোন দল ক্ষমতায় যাবে, কারা এখন মাঠে শক্তিশালী, সেসব হিসাব কষছেন পুলিশের অনেকেই। অনেক ক্ষেত্রে আবার যথাযথ পদক্ষেপ নিতে গিয়ে পুলিশ নিজেরাও মব ভায়োলেন্সের শিকার হচ্ছে। নানা ‘ট্যাগ’ দিয়ে অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে তুলকালাম কাণ্ড ঘটানো হচ্ছে। এসব পরিস্থিতির কারণে পুলিশ অনেক সময় দ্বিধাগ্রস্ত বা ধূম্রজালের মধ্যে পড়ছে। ঘটনার তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে তাদের কী করা উচিত বা কোনটি সঠিক, অনেক ক্ষেত্রে তারা তা বুঝতে পারছে না। 

মব ভায়োলেন্সের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পৃক্ততা বা যোগসূত্র টানছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করছেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এ ধরনের পথ বেছে নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি এসব বিষয়ে সরকারের দায়িত্বশীল ভূমিকা দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধান কাঠামো বাংলাদেশ পুলিশ এখনো সেভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বলে মনে করেন তারা। কারণ হিসেবে বলছেন, পুলিশও হরহামেশা মব ভায়োলেন্সের শিকার হচ্ছে। তারাও মব সন্ত্রাস থেকে রেহাই পাচ্ছে না। গত ছয় মাসে পুলিশের ওপর দুই শতাধিক হামলা বা মব ভায়োলেন্সের ঘটনা ঘটেছে। 

সামাজিক অপরাধ বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক খবরের কাগজকে বলেন, ৫ আগস্ট-পরবর্তী যেসব মব ভায়োলেন্সের ঘটনা ঘটেছে, তার বেশির ভাগই রাজনৈতিক যোগসাজশে বা পূর্ববিরোধের সূত্র ধরে। মব ভায়োলেন্সের মাধ্যমে সামাজিক অস্থিরতা যেমন বাড়ে, তেমনি মানুষের মৌলিক অধিকার, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়ে। পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও এ জাতীয় পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারছে না। কী করবে তা নিয়েও দ্বিধাগ্রস্ত হচ্ছে। পুলিশ শক্তভাবে ঘুরে না দাঁড়ালে সাধারণ মানুষের আস্থা আরও নষ্ট হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা রাষ্ট্রকেই মানুষের মৌলিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। 

সরকারকে মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে কার্যকর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মব ভায়োলেন্স বা এ জাতীয় বেআইনি কাজের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। তারা শক্তভাবে ঘুরে না দাঁড়ালে আস্থার সংকটে পড়বে।

ট্রাম্পের বাড়তি শুল্কারোপে গ্রহণযোগ্য সমাধানই কাম্য

প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৫, ০৩:১৮ পিএম
ট্রাম্পের বাড়তি শুল্কারোপে গ্রহণযোগ্য সমাধানই কাম্য

ট্রাম্পের বাড়তি শুল্কারোপের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বুধবার। এই ইস্যুতে বাংলাদেশ কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নির্ধারিত সময়ের আগেই তা জানাতে হবে ট্রাম্প প্রশাসনকে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ধরে রাখতে পারবে কি না, এ নিয়ে দেশের রপ্তানিকারকরা উদ্বেগে আছেন। তারা বলেছেন, গ্রহণযোগ্য সমাধান না হলে রপ্তানি খাত বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্প বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। কারণ ৩৭ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা কার্যকর হলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে না বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এখন ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করে। গত ৩ এপ্রিল হঠাৎ ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশি পণ্যের ওপর বাড়তি ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিভিন্ন শুল্কহার আরোপ করে একই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৬০টি দেশের ক্ষেত্রে। বাড়তি শুল্ক আরোপ কার্যকরের কথা ছিল ৯ এপ্রিল। তবে ওই দিনই যুক্তরাষ্ট্র বাড়তি শুল্কহার কার্যকরের ঘোষণা তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখে। স্থগিতের মেয়াদ শেষ হবে আগামী বুধবার। তার আগেই বাংলাদেশকে তার অবস্থান জানাতে হবে ট্রাম্প প্রশাসনকে। যুক্তরাষ্ট্র যদি শুল্ক না কমায় তাহলে বর্তমানের চেয়ে বেশি হারে বাংলাদেশি পণ্য সে দেশের বাজারে প্রবেশ করাতে হবে। তখন প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হবে বাংলাদেশের জন্য।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এখন বাংলাদেশের অনুকূলে রয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ বেশি রপ্তানি করে। বিপরীতে আমদানি করে কম। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের যুক্তরাষ্ট্রের ৮৩৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি হয়েছে ২২১ কোটি ডলারের পণ্য। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি ৬ বিলিয়ন ডলার। এই ঘাটতি কমিয়ে আনতে চায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার। সে জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করতে আগ্রহী দেশটি। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের শুল্ক চুক্তি করার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই চুক্তির অগ্রগতি কতদূর, শেষ পর্যন্ত চুক্তি হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকেই। সরকার চেষ্টা করছে একটা ভালো চুক্তি করার, যাতে বাংলাদেশের স্বার্থ সংরক্ষিত থাকে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রও লাভবান হয়। বাংলাদেশের অর্থনীতির সক্ষমতা বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া শর্তগুলো যদি মানা সম্ভব হয় তাহলে চুক্তি হবে। আলোচনা চলছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। ৮ ও ৯ জুলাই ইউএসটিআরের সঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা এই ইস্যুতে আরও একটি বৈঠক করবেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর পাশাপাশি ভারত, ভিয়েতনাম ও জাপানে পাল্টা শুল্কের হার কমানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, উল্লিখিত দেশগুলো কী করছে তা অনুসরণ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বাংলাদেশকে। সেটা হলে দর-কষাকষি করতে সুবিধা হবে। 

ট্রাম্পের বাড়তি শুল্কারোপ বিষয়ে চলছে শেষ মুহূর্তের দর-কষাকষি। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল সেখানে অবস্থান করছে। আশা করছি, সরকার অর্থনীতির সক্ষমতা বিবেচনায় রেখে রপ্তানি খাতকে বড় ধরনের বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করবে। এ লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য সমঝোতার গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথে এগোবে।

গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫, ০১:২৭ পিএম
গণপরিবহনে বিশৃঙ্খলা
কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি

গণপরিবহনের বিশৃঙ্খলা নিয়ে রাজধানীবাসীর অভিযোগ অন্তহীন। দিন যায়, কিন্তু সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে বৃদ্ধি পেতে থাকে। ঢাকায় সড়কের তুলনায় যানবাহন বেশি। আদর্শ পরিস্থিতি হচ্ছে এ রকম- যেকোনো নগরীর মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ এলাকায় সড়ক থাকা দরকার। ঢাকায় সে তুলনায় আছে মাত্র ৭-৮ শতাংশ। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জনসংখ্যার চাপ এবং বেসরকারি গাড়ির আধিক্য ঢাকার সড়কগুলোকে আরও সংকুচিত করেছে। 
গণপরিবহনসংকটের মূল কারণ অবশ্য নিহিত রয়েছে অন্যত্র। স্বার্থান্বেষীদের স্বার্থ রক্ষাই রাজধানীর গণপরিবহনব্যবস্থাকে আরও সংকটাপন্ন করে তুলেছে। খবরের কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এই সংকট এবার আরও তীব্র হতে চলেছে।

রাজধানী ঢাকায় এখন বাস চলছে সাড়ে ৬ হাজারের বেশি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের তথ্যানুসারে, ঢাকার সড়কে ৫ হাজার ৫৪২টি বাস চলাচলের অনুমোদন রয়েছে। এর বাইরে অনুমোদনহীনভাবে চলছে আরও ১ হাজার ৮০টি বাস। ইতোমধ্যে ঢাকার সড়কগুলো যানবাহনের চাপে যানজটে বিপর্যস্ত। এর সঙ্গে এখন যুক্ত হচ্ছে আরও আড়াই হাজারের মতো নতুন বাস। 
জানা গেছে, রাজধানীতে বাস চলাচলের অনুমোদন দেওয়ার দায়িত্বে যারা রয়েছেন তারাই নতুন করে ২১টি বাস কোম্পানিকে ২৩টি রুটে আড়াই হাজার বাস চালানোর অনুমোদন (রুট পারমিট) দিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ সড়ক কর্তৃপক্ষের কিছু সদস্যকে ‘ম্যানেজ’ করে বেসরকারি বাস কোম্পানির প্রভাবশালী মালিকরা ওই সুযোগ নিয়েছেন। আপত্তি উঠেছিল এভাবে এই মুহূর্তে নতুন করে রুট পারমিট না দেওয়ার।

 কিন্তু পরিবহনমালিকদের চাপে তা গ্রাহ্য করা হয়নি। অভিযোগ ওঠে, সরকারি সব প্রতিষ্ঠানকে পাশ কাটিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এই অনুমোদন দিয়েছে। ডিএমপিরই একজন কর্মকর্তা আপত্তি জানিয়ে বলেছিলেন, ঢাকার বাস রুটগুলোকে যৌক্তিক (র‌্যাশনালাইজ) সমন্বয় সাধন না করে রুট পারমিট দেওয়া সমীচীন হবে না। কিন্তু সেই আপত্তি অগ্রাহ্য করে নতুন রুট পারমিট এবং বাস নামানোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। রুট পারমিট ছাড়াই অবশ্য রাজধানীতে আগে থেকেই অনেক বাস চলছে। এক রুটের নামে অনুমোদন নিয়ে বাস চালানো হচ্ছে অন্য রুটে, এ রকম চলছে দীর্ঘদিন ধরে। অধিকাংশ বাসের রুট পারমিট আবার মেয়াদোত্তীর্ণও হয়ে গেছে। এ ছাড়া নগরবাসীর চোখের সামনে লক্কড়ঝক্কড় বাস তো চলছেই।

 কিছুদিন আগে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছিলেন, ঢাকার সড়ক থেকে এসব পুরোনো বাস সরিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এখনো রাজধানীবাসীর চোখে তা দৃশ্যমান হয়নি। সব মিলিয়ে ঢাকার গণপরিবহনে চলছে চরম নৈরাজ্য। পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এ ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসবে বলে মনে করা হলেও বাস্তবে কিছুই বদলায়নি। দিন দিন তা জটিল হচ্ছে। রাজধানীর সড়কে নতুন করে আড়াই হাজার বাস নামলে এই সংকট আরও তীব্রতর হবে, তাতে সন্দেহ নেই। ঢাকায় গণপরিবহনের অংশ হিসেবে বাসের সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে, কিন্তু তার আগে ট্রাফিকব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনা দরকার।

 সেটা না করে বাসের সংখ্যা বাড়ালে নগরে চলাচলে স্বস্তি পাওয়া যাবে না। আমরা তাই মনে করি, অবিলম্বে বাস রুটের অনুমোদনের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা উচিত। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে এমনিতেই ঢাকায় যানজটের মাত্রা ক্রমশ বাড়ছে, তার ওপরে এই সিদ্ধান্ত মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো এই মহানগরীর মুমূর্ষু দগদগে অবস্থাকে আরও দৃশ্যমান করে তুলবে। এই আশঙ্কা থেকেই আমরা মনে করি, রুট পারমিটের অনুমোদন বাতিল করে বিদ্যমান অবস্থার ভেতর থেকেই গণপরিবহনে শৃঙ্খলার সূচনা করা প্রয়োজন। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সব মহল বিবেচনায় নিয়ে সাধারণ নগরবাসীকে চলাচলবান্ধব রাজধানী উপহার দেবেন বলে আমরা আশা করছি। 

নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করুন

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫, ১১:৩১ এএম
নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি
পণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করুন

বছরের ব্যবধানে বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। এবার আমনের পর বোরো ধানের বেশি ফলন হলেও চালের দাম কমেনি; বরং বেড়েছে। গত এক বছরে দেশে চাল, সয়াবিন তেলসহ অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। কিছুটা কমেছে মুরগি, ডিম ও চিনির দাম। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় এমনিতেই সাধারণ মানুষের দুর্বিষহ অবস্থা। তার ওপর দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য চালের দামের অসহনীয় বৃদ্ধি সংকটকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে তুলেছে। চাল উৎপাদনে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পান না; অন্যদিকে ভোক্তাকে বেশি দরে চাল কিনতে হচ্ছে। মধ্যস্বত্বভোগীরা অধিক মুনাফার আশায় চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে পণ্যের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে পদক্ষেপ নিতে হবে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) এক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, এক বছরের ব্যবধানে মাঝারি চালের দাম বেড়েছে প্রায় ১৫ থেকে ৩৯ শতাংশ। কারণ গত বছরের জুনে ৫২ থেকে ৫৮ টাকায় এই চাল বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ৬০ থেকে ৬৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৪৮ থেকে ৫০ টাকার মোটা চাল বর্তমানে ৫৫ থেকে ৫৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়েছে ১৪ শতাংশের বেশি। ৬৫ থেকে ৭২ টাকার সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮২ টাকা। দাম বেড়েছে ১৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বলছে, গত বছরের জুনে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১৬৩ টাকায়, বর্তমানে তা ১৮৮ টাকায় ঠেকেছে। মাছের দামের ক্ষেত্রে একই চিত্র। পাঙাশ, তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন মাছের দাম বেড়েছে। বছরের ব্যবধানে সবজির দামও বেড়েছে। 

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নাসির-উদ-দৌলা খবরের কাগজকে বলেন, 'আমরা চাল, ডাল, মুরগি, ডিম থেকে শুরু করে সবজির পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে থাকি। নির্ধারিত দরে কোনো কোনো পণ্য বিক্রি হয়; আবার কোনোটা হয় না। কমবেশি দরে বিক্রি হয়। আমাদের লোকবল দিয়ে বাজার যাচাই করে তার তথ্য প্রকাশ করা হয়। বাজারে যাতে এসব পণ্য যৌক্তিক মূল্যে বিক্রি হয়, আমরা সেটাই প্রত্যাশা করি।' 

নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারকে বাজার তদারকি বাড়াতে হবে। বিশেষ করে চালের দাম কারা এবং কীভাবে বাড়াচ্ছে, সেই সিন্ডিকেট খুঁজে বের করতে হবে। অভিযোগ আছে, মিলমালিকরা ইচ্ছামতো চালের দাম বাড়াচ্ছেন। ভোক্তা অধিদপ্তর খুচরা পর্যায়ে অভিযান চালিয়ে কিছু জরিমানা করে থাকলেও তাতে কোনো কাজ হয় না। মধ্যস্বত্বভোগীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

 বোরো ধানের মৌসুম এলেও চালের এমন মূল্যবৃদ্ধি কেউই স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছেন না। বাজারে যাতে যৌক্তিক দামে পণ্য পাওয়া যায়, সে জন্য সরকারকে কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বাজার নিয়ন্ত্রণে বেশ দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছিল। যে কার্যক্রমে ছাত্র প্রতিনিধিরাও অংশগ্রহণ করেছিল কিন্তু সেই অবস্থায় এখন অনেকটাই ভাটা পড়েছে। প্রত্যাশা করছি, পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকার নিত্যপণ্যের যৌক্তিক দাম নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।