
এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক (এএইচ) প্রকল্পটি জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএন এসক্যাপ) একটি সহযোগী প্রকল্প। প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল ১৯৫৯ সালে। এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক স্থল বাণিজ্য এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাবে।
প্রকল্পটির দৈর্ঘ্য ১ লাখ ৪০ হাজার ৭৭৯ কিলোমিটার। এটি এশিয়ার ৩২টি দেশকে ইউরোপের সঙ্গে যুক্ত করবে। হাইওয়ের সঙ্গে রয়েছে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে। এটি বাস্তবায়ন হলে ব্যবসা-বাণিজ্যে বিপ্লব ঘটবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এ নেটওয়ার্ক তৈরির জন্য ২০০৩ সালে ব্যাংককে একটি আন্তসরকার চুক্তি হয়। ২০০৯ সালে আঞ্চলিক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে এশিয়ান হাইওয়েতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ হবে। এটি এমন একটি রুট যেটি ঢাকার সঙ্গে সংযুক্ত হবে। এশিয়ান হাইওয়ে শুরু হবে জাপানের টোকিও থেকে, শেষ হবে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে।
অন্যদিকে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে হলো ইউরোপ ও এশিয়াজুড়ে একটি সমন্বিত মালবাহী রেলওয়ে নেটওয়ার্ক। এটিও ইউএন এসক্যাপের একটি সহযোগী প্রকল্প। ইউএন এসক্যাপের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এশিয়ান একটি আঞ্চলিক পরিবহন সহযোগিতার প্ল্যাটফর্ম, যার লক্ষ্য এশিয়ায় সড়ক অবকাঠামো গড়ে তোলা।
ম্যাপ অনুযায়ী, এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কে ৪৪টি পৃথক রুট রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি রুট তামাবিল-বেনাপোল ৪৯২ কিলোমিটার, তামাবিল-বাংলাবান্ধা ৫১৭ কিলোমিটার এবং টেকনাফ-মোংলা ৭৬২ কিলোমিটার পড়েছে বাংলাদেশে। বর্তমানে তিনটি রুটের কাজই চলমান। তবে শেষ হতে অনেক সময় লাগবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, তিনটি রুটই রাজধানী ঢাকাকে ছুঁয়ে যাবে। দুটি রুট দুই প্রান্তে ভারতকে সংযুক্ত করবে। অন্য রুট বাংলাদেশের মধ্যে থাকলেও মায়ানমারসহ প্রতিবেশী দেশগুলোয় নেওয়া হতে পারে। বর্তমানে তহবিলসংকটে একরকম বন্ধই হয়ে আছে প্রকল্পের কাজ। বাংলাদেশের মধ্যে ১ হাজার ৮০৪ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়ক ও ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে নিয়ে ৩০০ কিলোমিটারেরও কম অংশের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ উদ্যোগটি থমকে আছে। এই দীর্ঘ সময়ে উদ্যোগের অগ্রগতি তেমন উল্লেখযোগ্য নয়। এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হওয়ার উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে আমাদের অনেক অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। সেগুলো সংযোগ করে দিলেই হবে। কিন্তু সীমান্তে এসব অবকাঠামোর আন্তর্দেশীয় সংযোগের ক্ষেত্রে অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি না।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অবকাঠামো বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল হক খবরের কাগজকে বলেন, এশিয়ার দেশগুলো ছোট ছোট ব্লকে নিজেদের মতো করে একটি মাল্টিমোডাল কানেকটিভিটি তৈরি করে উদার বাণিজ্যের পথ তৈরি করবে- এমনটিই ছিল এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কের লক্ষ্য।
বৈষম্যহীন অর্থনীতির জন্য আঞ্চলিক যোগাযোগব্যবস্থা আরও সমন্বয় করার কথা বলা হয়েছিল। এতে প্রতিটি দেশ উপকারভোগী হবে। একটি দেশের পণ্য অন্য দেশে সহজে পরিবহন করা যাবে, এতে নেটওয়ার্ক এ থাকা সব দেশ উপকারভোগী হবে।
এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ঘুরে দাঁড়াবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি আর্থসামাজিক উন্নয়নও ত্বরান্বিত হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ব্যয় সাশ্রয়ে বড় সুবিধা পাবে। পণ্য পরিবহনে সময় কমবে।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এই নেটওয়ার্কে থাকা সব দেশই উপকারভোগী হবে। স্থল বাণিজ্যে বাংলাদেশের গতিশীলতা ফিরে আসবে। প্রতিবেশী দেশ ভারত ও চীন এ দেশের উন্নয়ন সহযোগিতায় এগিয়ে আসবে, সেটিই প্রত্যাশা।