ঢাকা ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪

পোশাকশিল্পে শ্রম অসন্তোষ  ভাবমূর্তি সংকট কাটাতে পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৮ এএম
পোশাকশিল্পে শ্রম অসন্তোষ 
ভাবমূর্তি সংকট কাটাতে পদক্ষেপ নিন

দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তৈরি পোশাকশিল্পে এক ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের গত তিন মাসে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ কার্যাদেশ হাতছাড়া হয়েছে এ খাতে। পোশাকশিল্পের অস্থিরতার প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও। চট্টগ্রাম, গাজীপুর, আশুলিয়াসহ দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা ও শ্রমিক অসন্তোষের জেরে ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান এই খাত। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের শুল্কমুক্ত প্রবেশের অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা বা জিএসপি পুনর্বহাল না হওয়ায় পোশাকশিল্পের কার্যাদেশ চলে যাচ্ছে ভারত ও ভিয়েতনামে। গত তিন মাসে নানা ঘটনায় সরবরাহ চেইনে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পোশাকশিল্পের মালিকরা। দেশে অস্থিরতা ও শ্রমিকদের আন্দোলনে উৎপাদন ব্যাহত হয়।

 এতে পোশাকশিল্পের ভাবমূর্তি সংকটে পড়ে বায়ারদের কাছে। ফলে হাতছাড়া হচ্ছে বিপুল পরিমাণ কার্যাদেশ। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত তিন মাসে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাকের কার্যাদেশ ভারত, ভিয়েতনামসহ  প্রতিবেশী দেশে চলে গেছে। এ অবস্থায় রপ্তানি কমার পাশাপাশি দীর্ঘদিন প্রণোদনার টাকা আটকে থাকায় তারল্য সংকটে পড়েছেন পোশাক কারখানার মালিকরা। সংকট কাটাতে বেতন-ভাতা পরিশোধে স্বল্প সুদে ঋণ এবং এই খাতকে স্থিতিশীল রাখতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে রোডম্যাপ চান পোশাকশিল্পের মালিকরা। উদ্যোক্তাদের অনুমান, চলমান অস্থিতিশীলতায় অন্তত ২০ শতাংশ রপ্তানি আদেশ সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। 

দেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাজনিত কারণে অনেক ক্রেতা প্রতিনিধি বাংলাদেশে আসছেন না। এ ছাড়া জিএসপি পুনর্বহালসহ ঝুঁকিপূর্ণ তালিকার সমস্যাটিও সুরাহা হয়নি এখনো। এতে বৈরী প্রভাব পড়েছে পোশাক খাতে। গত ৪০ বছরে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দেশের শীর্ষ রপ্তানি খাতে পরিণত হয়েছে তৈরি পোশাকশিল্প। যদিও বৈশ্বিক মন্দার ক্রয়াদেশ ও পোশাকের দাম কমে যাওয়াসহ তিন বছর ধরে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি এই খাত। সম্প্রতি গণ-অভ্যুত্থান ও বন্যায় আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হওয়ায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন দেশের রপ্তানিকারকরা। রপ্তানি কমায় মধ্যম সারির পোশাক কারখানাগুলো হলিডে সিজনের প্রত্যাশিত ক্রয়াদেশ পাচ্ছে না। এতে চরম সংকটে পড়েছে কারখানাগুলো। 

এলসি খোলাসহ নানা বিষয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা। ক্রয়াদেশগুলো কেন অন্য দেশগুলোতে চলে যাচ্ছে, তা  চিহ্নিত করে ব্যবস্থা না নিলে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তাদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে। বিজিএমইএর নেতারা বলছেন, সরকার পোশাক কারখানাগুলোকে এক মাসের বেতনের সমপরিমাণ ঋণ দেওয়ার নির্দেশনা দিলেও ব্যাংকগুলো উচ্চ সুদ দাবি করায় তা কোনো কাজে আসছে না বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। এখানে কম সুদে ব্যাংকঋণ চান মালিকরা। 

বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর দেশের তৈরি পোশাকশিল্পে এক ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে। কিছু কারখানার শ্রমিক অযৌক্তিক বিষয় নিয়ে আন্দোলন করছে। সড়ক অবরোধ করছে, কারখানা ভাঙচুর করছে। এগুলো বিদেশি বায়ারদের কাছে বিরূপ প্রভাব পড়ে। কার্যাদেশ অন্য দেশে চলে যায়। নিরাপত্তাজনিত কারণকে বেশি গুরুত্ব দেয় বিদেশিরা। ফলে আমাদের দেশ থেকে পোশাকশিল্পের কার্যাদেশ চলে যাচ্ছে অন্য দেশে। বিশেষ করে ভারত, ভিয়েতনাম, পাকিস্তানের মতো দেশে যাচ্ছে পোশাকের কার্যাদেশ।

রপ্তানি আয় ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে পোশাকশিল্পের অবদান অনস্বীকার্য। অথচ সেই শিল্পের অস্থিরতা থামছেই না। শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য আন্দোলনের ফলে শিল্পাঞ্চল হঠাৎ উৎপাদনবিমুখ  হয়ে পড়েছে। হামলা-ভাঙচুরের ফলে বাধ্য হয়ে কারখানার মালিকদের শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব অর্থনীতির ওপর পড়ছে। তাই পোশাকশিল্পের কাজের পরিবেশ ফেরাতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। শিল্পোদ্যোক্তাদের শিল্পের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার সফল হবে, সেটাই প্রত্যাশা।

আইনের শাসন ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনুন সরকারের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ

প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৮ পিএম
সরকারের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ

মেয়াদ, সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে বিতর্কের কারণে সরকার তার কাঙ্ক্ষিত মেয়াদ পূর্ণ করতে পারবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কোন খাতে কী সংস্কার করা হবে, তা জানতে ও সম্পন্ন করতে ১৫টি স্বতন্ত্র সংস্কার কমিটি গঠন করা হয়েছে। জানা যায়, ডিসেম্বরের মধ্যে বিভিন্ন কমিটির কাছ থেকে সংস্কার প্রস্তাব পাওয়া যাবে। এরপর এসব প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হবে। সামগ্রিক বিবেচনায় সংস্কার যেমন জরুরি, তেমনি সংস্কার শেষে স্বাভাবিক নির্বাচনি ব্যবস্থায় ফেরাটাও জরুরি। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পাঠানো প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে জানা যায়, অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মপরিকল্পনার অন্যতম দিকটি হচ্ছে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা। ইতোমধ্যে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশনের কাজ চূড়ান্ত হলে বাস্তবায়নের দায়িত্ব পড়বে বর্তমান সরকারের ওপর। সরকারের মেয়াদ এবং সংস্কারকাজের জন্য প্রয়োজনীয় সময়ের মধ্যে যে ফারাক রয়েছে, সে বিষয়টি সম্প্রতি সামনে এনেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান। তিনি বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার যে উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, তা বাস্তবায়নের জন্য চার বা পাঁচ বছর দায়িত্বে থাকা প্রয়োজন হবে। তবে বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতি হচ্ছে, যৌক্তিক সময়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে দায়িত্বভার ছেড়ে দেওয়া, সম্ভবত এটি ১৮ মাস বা দুই বছর হতে পারে। এ অবস্থায় সংস্কারের বেশির ভাগ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। ফলে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার যেসব সংস্কারকাজে হাত দিয়েছে, তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব কার ওপর বর্তাবে।

দীর্ঘদিন ধরে দেশে আইনের শাসন না থাকায় অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে। আইনের শাসন ও গণতন্ত্র দুটোই আজ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে। সংসদীয় গণতন্ত্রের সঠিক চর্চা ও পরিচর্যা করা হয়নি দীর্ঘদিন ধরে। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি নেতিবাচকভাবে সামনে আসছে। এ পরিস্থিতিতে বর্তমান সরকার সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ সরকারের কাছে সর্বস্তরের মানুষের প্রত্যাশা অনেক। অন্তর্বর্তী সরকারও বিপুল কাজের ভার কাঁধে তুলে নিয়েছে। সরকার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় নিতেও কাজ করছে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির চেষ্টা করছে সরকার। জনশক্তি রপ্তানিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন উদ্যোগ থেকে আরও জানা যায়, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় বর্তমান সরকার কাজ করছে। নেওয়া হয়েছে ব্যাপক পরিকল্পনা। অভ্যুত্থান-পরবর্তী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় চলে আসবে- এমন একটি ধারণা জনমনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সংস্কার ও নির্বাচনের সময় নিয়ে তাই এ দলটিও সোচ্চার। রাজনৈতিক দল ছাড়াও সুধী সমাজের প্রতিনিধিরাও এ বিতর্কে যুক্ত হচ্ছেন। বিএনপি বলছে, সব সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকারের করার প্রয়োজন নেই। এগুলো নির্বাচিত সরকার করবে। অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সংস্কার সম্পন্ন না হলে দেশে আবার ফ্যাসিবাদের উত্থান হবে। 

সামগ্রিক সংস্কার ও করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার খবরের কাগজকে বলেন, হাতে নেওয়া সব কাজ সরকার শেষ করতে পারবে কি না, এটা সময়ই বলে দেবে। সময় কতটা পাওয়া যাবে তার ওপর সেসব নির্ভর করছে। তবে দেশে আইনের শাসন ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হলে এসব সংস্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, তাতে সবকিছু স্বাভাবিক এবং প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিক করতে হলে কর্তৃত্ববাদের রেখে যাওয়া বিধান বা ব্যবস্থায় হবে না। একদিনে স্বৈরাচারী সরকার সৃষ্টি হয়নি। বিদ্যমান ব্যবস্থার মধ্য দিয়েই সৃষ্টি হয়েছে। ফলে বিদ্যমান ব্যবস্থা বা পদ্ধতিগুলো দূর করতে না পারলে কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা দূর হবে না। তাই সংস্কারের জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় সময় দিতে হবে, যাতে সময় নির্ধারণ করে সরকার দায়িত্ব পালন করতে পারে। 

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনপ্রত্যাশা যেমন বেড়েছে, তেমনি জনপ্রত্যাশার আলোকে সংস্কারের কাজও চলমান রয়েছে। সংস্কার করতে গিয়ে সরকারকে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে সবার আগে দেশে প্রয়োজন আইনের শাসন ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। আশা করছি, অন্তর্বর্তী সরকার সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবে।

মব অপরাধ বন্ধে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে

প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩২ এএম
মব অপরাধ
বন্ধে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে

মব অপরাধ একটি আইনবহির্ভূত বিষয়। বর্তমানে বহুল আলোচিত শব্দ এটি। কথিত এই মব অপরাধ প্রবণতা সমাজে বাড়ছে। মানুষ তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। এখন সচেতন মহলের মধ্যে এমনই প্রশ্ন উঠে আসছে। সরকারের নানা উদ্যোগের পাশাপাশি সুধী সমাজের প্রতিনিধিরা এর প্রতিরোধে নানা পরামর্শ দিচ্ছেন। সরকার পতনের পর প্রতিহিংসা বা ঘৃণা-বিদ্বেষের মধ্য দিয়ে শুরু হলেও এখনো তা থামছে না। বরং সময়-সুযোগ বুঝে অনেকের মধ্যে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। গ্রাম-মহল্লার পাশাপাশি শিক্ষাঙ্গন, আদালত প্রাঙ্গণেও এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। নৃশংসভাবে হত্যার শিকার হচ্ছেন কেউ কেউ। 

সরকারসহ বিভিন্ন মহল থেকে এ ধরনের অপরাধ ঠেকাতে কঠোর নির্দেশনা থাকলেও তা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। বরং এই অপরাধকে বৈধতা দেওয়ার জন্য ‘মব জাস্টিস’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। যদিও মব জাস্টিসের একাডেমিক কোনো ভিত্তি নেই। এ অবস্থায় অন্যান্য অপরাধের চেয়ে ভয়ংকর এই অপরাধ বন্ধ করা যাবে কি না, তা নিয়ে অনেকে সংশয় প্রকাশ করেছেন। অপরাধ ও সমাজ বিশেষজ্ঞরা মবের মাধ্যমে হত্যা বন্ধে গণসচেতনতা এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কথা বলেছেন। এ ধরনের অপরাধের পেছনে কয়েকটি কারণের কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রথমত, এভাবে অপরাধ করে সহজে পার পাওয়া যায়। কারণ অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করা কঠিন হয়। আবার বিভিন্ন পক্ষের লোক জড়িত থাকায় বিচার-প্রক্রিয়াও কঠিন হয়ে পড়ছে। 

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত উচ্ছৃঙ্খল জনতা ১০০ জনকে পিটিয়ে হত্যা করে। বিভিন্ন পত্রিকার তথ্য থেকে এই তালিকা প্রস্তুত করা হয়। বিভাগভিত্তিক হিসেবে দেখা যায়, উচ্ছৃঙ্খল জনতার হাতে ঢাকায় ৪৪ জন, রাজশাহীতে ১৬, চট্টগ্রামে ১৩, খুলনায় ১১, বরিশালে ৬, সিলেটে ২ এবং রংপুর ও ময়মনসিংহে ৪ জন করে মারা যান। 

গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামে পুলিশের সঙ্গে ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের সমর্থকদের সংঘর্ষ চলাকালে সরকারি পাবলিক প্রসিকিউটর আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া আদালত অঙ্গনে আসামিদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটেছে। গত বুধবার হাইকোর্টের বিচারকের ওপর ডিম নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটেছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে একটি দলের শাসনের কারণে মানুষের মধ্যে সৃষ্ট ক্ষোভ থেকে প্রথমে মব জাস্টিস শুরু হলে অনেক সুযোগসন্ধানী মানুষও নানা ঘটনার মধ্যে ঢুকে পড়ে পরিস্থিতি ঘোলা করছে। এর মধ্যে চুরি, ডাকাতি থেকে শুরু করে প্রতিপক্ষের জমি দখল, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা, অবৈধ উপায়ে অর্থ অর্জনের মতো ঘটনাও রয়েছে। এ ছাড়া গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতন হওয়া রাজনৈতিক শক্তির উসকানি থাকা অস্বাভাবিক নয় বলে মনে করছেন তারা। সব মিলিয়ে সমাজে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ছে। বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। 

সিনিয়র আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিকের মতে, মব জাস্টিস বলতে আইনে কিছু নেই। এটা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর মতে, মানুষ মবের মাধ্যমে ক্ষমতা দেখাতে চায়। অনেক সময় নিজে একা ক্ষমতা দেখাতে পারে না। সে কারণে তারা সংঘটিত হয়ে তা প্রদর্শন করে। এ ধরনের অপরাধ বন্ধে সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক দল ও ছাত্রনেতাদের ভূমিকা রাখতে হবে।

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কখনোই কাম্য নয়। দেশে যে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটছে তার যথাযথ বিচার হওয়া দরকার। বিচার না হওয়ার সংস্কৃতি পেয়ে বসলে অপরাধীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। সমাজকে অরাজকতার দিকে ঠেলে দেবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ধরনের মব অপরাধ বন্ধ করতে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

মাদকের সর্বগ্রাসী ছোবল চাই সুস্থ, সৃষ্টিশীল, উৎপাদন-উন্মুখ জনগোষ্ঠী

প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৯ এএম
মাদকের সর্বগ্রাসী ছোবল
চাই সুস্থ, সৃষ্টিশীল, উৎপাদন-উন্মুখ জনগোষ্ঠী

মাদকাসক্তির কুফল সর্বগ্রাসী। শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়- এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যা মাদকের দ্বারা বিপন্ন হয় না। ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে রাষ্ট্রের একেবারে মর্মমূলকে ক্ষতবিক্ষত করে দেয় মাদক। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা যুবসমাজের। গবেষকরা বলছেন, যুবসমাজই মাদকের প্রতি সবচেয়ে বেশি প্রলুব্ধ হচ্ছে। অথচ তারাই সমাজ ও রাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল জনগোষ্ঠীর সৃষ্টিশীল কর্মক্ষম অংশ। একটা দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ অগ্রগতির অনেকাংশই তাদের ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। 

কিন্তু পরিতাপের বিষয়, মাদকের সর্বগ্রাসী বিস্তারে দেশ সর্বনাশের কিনারায় এসে ঠেকেছে। আর এতে মূল ভূমিকায় রয়েছে এমন কিছু মানুষ, যারা মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করেছে। তাদের একটাই লক্ষ্য- অর্থ উপার্জন, ধনী হওয়া। দেশ ও সমাজ রসাতলে গেলেও এ নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। মাদকের মাধ্যমে যেহেতু অর্থ উপার্জন করা সবচেয়ে সহজ, তাই মাদক ব্যবসাকেই তারা অর্থ উপার্জনের উপায় হিসেবে গ্রহণ করেছে। খবরের কাগজের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) সম্প্রতি দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা এসব সমাজবিরোধী অর্থগৃধ্নু মাদক কারবারির একটা তালিকা করেছে।

 এই তালিকা প্রস্তুতের লক্ষ্য হচ্ছে মাদকের কারবারকে নিয়ন্ত্রণ করা। যারা ইতোমধ্যে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে তাদের বিরত রাখা এবং যারা সম্ভাব্য মাদকসেবী, তাদের যথাসম্ভব দূরে রাখা। কোনো সন্দেহ নেই, খুবই জরুরি ছিল এই কাজটি। আগেও এ রকম তালিকা করা হয়েছে, কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন করে তালিকা করা আবশ্যক ছিল। কিছু পরিসংখ্যানের উল্লেখ করলেই মাদকাসক্তির ভয়াবহতা সম্পর্কে ধারণা করা যাবে।

বেসরকারি সংস্থা মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধের (মানস) তথ্য অনুসারে দেশে এখন মাদকসেবীর সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। গত জুলাই মাসের ১৪ তারিখে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর আয়োজিত আলোচনা সভায় বলা হয়েছিল, এই সংখ্যা ১ কোটি। বেসরকারি সংস্থার এই হিসাবকে বিবেচনায় না নিলেও সরকারি হিসাবেই তো বলা হচ্ছে, মাদকসেবীর সংখ্যা ১ কোটি। এই সংখ্যা নিঃসন্দেহে ভয়াবহ- মোট জনসংখ্যার প্রায় ১১ শতাংশ। এদের অধিকাংশই তরুণ। 

এই আসক্তি দেশকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করছে। যুবসমাজের একটা বড় অংশ অন্ধকার জগতে ইতোমধ্যে তলিয়ে গেছে বা যাচ্ছে। মাদক নিয়ন্ত্রণের তাই কোনো বিকল্প নেই। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সেই কাজই করে থাকে। এবার তারা শীর্ষ মাদক কারবারিদের আইনের আওতায় আনার জন্য তালিকা করে মাঠে নেমেছে। 

আমরা তাদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। এ বিষয়ে তাদের সার্বিক সাফল্য পেতে হলে আরও কিছু বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে। তালিকাভুক্ত শুধু ৭৯ জন নয়, তাদের যারা সহযোগী, যাদের সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি, তাদেরও আইনের জালে বন্দি করতে হবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই শাস্তি দিতে হবে।

আরেকটি বিষয়, শুধু তালিকা করার মধ্যেই দায়িত্ব সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না। মাদকবিরোধী সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মসূচি গ্রহণ করে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এই কর্মসূচি পরিবার ও শিক্ষাঙ্গন থেকে শুরু করে গণমাধ্যমের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে হবে সারা দেশে। অর্থাৎ মাদক নিরোধের জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আর তা জারি রাখতে হবে অব্যাহতভাবে। মনে রাখা জরুরি, মাদকাসক্ত প্রত্যেক ব্যক্তি আমাদের বৃহত্তর মানবসম্পদের অংশ। এই সম্পদ মাদকাসক্তির কড়াল গ্রাসে নিঃশেষ হয়ে যাবে, সেটা কখনোই দেশের জন্য মঙ্গলজনক হতে পারে না। আমরা চাই সুস্থ, সৃষ্টিশীল, উৎপাদন-উন্মুখ জনগোষ্ঠী।

থ্রি-জিরো তত্ত্ব এসডিজি অর্জনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে

প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৪ পিএম
থ্রি-জিরো তত্ত্ব 
এসডিজি অর্জনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে

অন্তর্বর্তী সরকার। গ্রামীণ ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণ ধারণার প্রবর্তক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বজুড়ে আলাদা সম্মান পেয়েছেন তার এই থ্রি-জিরো তত্ত্বের জন্য। সরকারি ও বেসরকারি উভয় পর্যায়ে তত্ত্বের কার্যকর প্রয়োগের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়নের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করা হবে বলে মনে করছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। এসডিজির লক্ষ্যগুলোর মূল পরিকল্পনা রয়েছে সবার জন্য কল্যাণকর পৃথিবী এবং টেকসই ভবিষ্যৎ নির্মাণ।

 বর্তমান পৃথিবীতে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও কার্যকর মডেল এটি। সামাজিক ও অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, যা তিনটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য অর্জনের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। সেগুলো হচ্ছে শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য কার্বন নিঃসরণ। তারুণ্য, প্রযুক্তি, সুশাসন ও সামাজিক ব্যবসা- এসব লক্ষ্য অর্জনের জন্য খুবই প্রয়োজন। এ তত্ত্বের মূল ভিত্তি হলো দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনা।
 
সম্প্রতি আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলনে বাসযোগ্য নিরাপদ পৃথিবী ও নতুন সভ্যতা গড়ে তুলতে থ্রি-জিরো তত্ত্বকে বৃহৎ পরিসরে তুলে ধরেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, এটি এক নতুন সভ্যতার জন্ম দেবে। গড়ে তুলবে এক নতুন পৃথিবী, যা সবার জন্য বাসযোগ্য হবে। বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিজেই দারিদ্র্য সৃষ্টি করে এবং এই ব্যবস্থার অধীনে দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব নয়। মানুষ এককভাবে দারিদ্র্য তৈরি করে না। আমাদের অর্থনৈতিক কাঠামোর ভেতরে তৈরি হয় দারিদ্র্য। ভালো চাকরি না খুঁজে উদ্যোক্তা তৈরিতে জোর দিতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে উদ্যোক্তা হতে হবে। কারও অধীনে নয়, বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে হবে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েই। এ তত্ত্বের আলোকে যুবসমাজ নিজেদের থ্রি-জিরো পারসন হিসেবে গড়ে তুলবে।

ইউনূস সেন্টারের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা লামিয়া মোরশেদ বলেন, পৃথিবীজুড়ে বর্তমানে প্রায় ৪ হাজার ৬০০টি থ্রি-জিরো ক্লাব রয়েছে। প্রতিটি ক্লাব ড. ইউনূসের নতুন সভ্যতার স্বপ্নে অনুপ্রাণিত। এসব ক্লাবের বেশির ভাগই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় গড়ে উঠেছে। কিন্তু বাংলাদেশে এই ক্লাব সমানভাবে গড়ে ওঠেনি। আগামী জানুয়ারিতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় যুব সম্মেলনে থ্রি-জিরো বিষয়টি রাখা হবে। 

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার থ্রি-জিরো তত্ত্ব পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন কমনওয়েলথ সচিবালয়ের আন্তর্জাতিক ট্রেড বিভাগের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ এবং গবেষণা সংস্থা র‌্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. এম এ রাজ্জাক। তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়নের সব সূচকে অভীষ্ট অর্জনের ক্ষেত্রে থ্রি-জিরো থিওরি অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে বলে আমার বিশ্বাস। এই তত্ত্ব বাংলাদেশে তরুণদের ক্ষমতায়ন, প্রযুক্তির ব্যবহার, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে কৃষিসহ অন্যান্য খাতে একটি নতুন বিপ্লব ঘটানোর সম্ভাবনা রাখে। আমাদের দেশে উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে না, অথচ উদ্যোক্তা বিকাশ ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন কোনোভাবে সম্ভব নয়। 

দেশের সামগ্রিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে এই তত্ত্বের প্রয়োগ ঘটানো খুবই প্রয়োজন। দেশের দারিদ্র্য ও বেকারত্ব শূন্যে নামিয়ে আনার যে চেষ্টা প্রধান উপদেষ্টা তার তত্ত্বে দেখিয়েছেন, এর সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের সহিষ্ণু মনোভাব গড়ে ওঠার ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে। যাতে থ্রি-জিরো ক্লাবে যুক্ত হয়ে এ দেশের যুবসমাজ মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন পরমতসহিষ্ণু মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে থ্রি-জিরো তত্ত্ব অন্তর্ভুক্তিকরণ একটি পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনা।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি  কার্যকর ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠা করতে হবে

প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৬ এএম
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্ররাজনীতি 
কার্যকর ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠা করতে হবে

বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির ধারা বন্ধের পক্ষে জনমত বাড়ছে। ছাত্রদের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়া দুই উপদেষ্টাও জাতীয় নির্বাচনের আগে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়ার পক্ষে কথা বলেছেন। অধিকাংশ শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কার্যকর ছাত্র সংসদের বিকল্প নেই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকেও এই ইস্যুতে নানা রকম পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রুটিন ওয়ার্ক তৈরি করছে। নেতৃত্ব তৈরিতে ছাত্র সংসদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 এ জন্য সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়টিকে ক্যালেন্ডার ইভেন্ট বা বছরের নির্দিষ্ট দিনে নির্বাচন দেওয়ার কথা বলছেন। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বিগত সরকারগুলোর এ নির্বাচনে এক ধরনের অনীহা ছিল। ২০১৯ সালে দীর্ঘ ২৯ বছর পর অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন। তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান নির্বাচন দিয়ে রেকর্ড করলেও ক্যালেন্ডার ইভেন্ট দিতে পারেননি। জুলাই বিপ্লবের পর একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তা হলো ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি। এতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও খানিকটা নড়েচড়ে বসেছে। সম্প্রতি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জোরালো হচ্ছে। 

ডাকসুর সাবেক নেতারা বলছেন, যদি নির্বাচন হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের বহুদিনের দাবি পূরণ হতে পারে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন নেতৃত্ব তৈরি হবে। নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিরা চাইলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন বহুদিন আটকে থাকায় দেশের রাজনীতিতে নতুন নেতৃত্ব তৈরি হয়নি। ফলে ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার কথিত রাজনীতিকের আবির্ভাব ঘটেছে। এতে রাজনৈতিক সংস্কৃতি একদিকে নষ্ট হয়েছে, অন্যদিকে পেশাজীবীদের মধ্যে দলবাজির প্রবণতা বেড়েছে। সার্বিকভাবে তাতে দেশের রাজনীতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যার খেসারত দিতে হচ্ছে পুরো জাতিকে। এ জন্য ছাত্রদের রাজনীতি-সচেতন হতে হবে। ছাত্র সংসদে নির্বাচন হলে শিক্ষার্থীরা সঠিক নেতৃত্ব বাছাই করতে পারবেন। লেজুড়বৃত্তি থাকবে না। ত্যাগের মহিমায় ছাত্ররা ভাস্বর থাকবেন।

 আগামী দিনে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে ছাত্ররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। তারা আগামীতে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করবেন। ডাকসুসহ সব ছাত্র সংসদের নির্বাচন নিয়মতান্ত্রিকভাবে নির্ধারিত সময়ে হওয়া উচিত। সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদের নির্বাচন না হওয়ার কারণে আমাদের নেতৃত্বের বিকাশ হচ্ছে না। আজকে যে গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির ব্যত্যয় হচ্ছে তা বন্ধ করা যেত, যদি নিয়মিত ছাত্র সংসদে নির্বাচন হতো। শিক্ষাঙ্গনে অরাজকতা, নৈরাজ্য, সন্ত্রাস, দলীয়করণ, অপহরণ, খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি বন্ধ হতো। শিক্ষার্থীদের মৌলিক দাবি-দাওয়া পূরণ হতো। সুস্থ রাজনীতি বিকশিত হওয়ার জন্য ছাত্র সংসদ কার্যকর থাকা দরকার। ছাত্র সংসদের দায়িত্ব পালন করলে ছাত্রদের নেতৃত্ব গুণ তৈরি হয়। এ জন্য ছাত্র সংসদের নির্বাচন খুবই জরুরি। 

রাজনীতিতে গুণগত মান বজায় রাখার জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন খুবই দরকার। ছাত্ররা রাজনীতি-সচেতন হলে সঠিক নেতৃত্ব গঠন করতে পারবে। সুস্থধারার রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে হলে ছাত্রদের সঠিক নেতৃত্ব প্রদানের সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। তাহলে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হবে। কার্যকর ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠা করতে পারলে ছাত্রদের মধ্য থেকে সঠিক নেতৃত্ব বের হয়ে আসবে বলে আশা করা যায়।