রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে প্রশাসনসহ সব ক্ষেত্রেই অস্থিরতা বিরাজমান। স্বাভাবিক কাজের গতি মন্থর হয়ে আছে। প্রশাসনের বড় বড় সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা গ্রহণে তৎপরতা নেই। শুধু রুটিন কাজগুলো চলছে। প্রশাসনের শীর্ষ পদে নিয়মিত কর্মকর্তার (ইন ওয়ার্ক) পদে হঠাৎ অনিয়মিত কর্মকর্তার (অফ ওয়ার্ক) নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিম খাচ্ছেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। এতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন, প্রশাসন ও বিভাগের কাজ সমাপ্ত করতে সময় নষ্ট হচ্ছে। প্রশাসনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ চলছে ধীরগতিতে। ইন ওয়ার্কে যেসব কর্মকর্তা ছিলেন, তাদের নিয়মিত প্র্যাকটিস থাকায় অনেক কিছু সহজেই বুঝে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। আর এখন অনেক সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব আছেন, যারা অনেক দিন প্রশাসনের কাজকর্মে যুক্ত ছিলেন না।
কয়েক বছর বা বেশ কিছু সময় তারা প্রশাসন থেকে বাইরে অর্থাৎ অফ ওয়ার্কে ছিলেন। তাই এসব কর্মকর্তার কাজ বুঝতে সময় লাগছে। তবে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে প্রশাসনের কর্মকাণ্ড। সূত্রমতে, চলতি সপ্তাহে স্থানীয় সরকারসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে সচিব এবং আট জেলায় ডিসি পদে নিয়োগ দেওয়া হবে। ফলে প্রশাসনে আরও কিছু পরিবর্তন আসছে। কিছুদিন ধরে সরকারের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সচিব পদ শূন্য রয়েছে। অতিরিক্ত সচিবরাই সেখানে রুটিন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। ফলে গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে এসেও দেখা গেছে, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে বঞ্চিত ও পদোন্নতিপ্রত্যাশী কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই কয়েকটি জেলায় ডিসি নিয়োগ নিয়ে প্রশাসনে নানা বিতর্ক ও সমালোচনা হয়। যা পরবর্তী সময়ে বাতিল করতে হয়। এসব জেলায় এখনো ডিসি নিয়োগ না হওয়ায় সেখানে মাঠ প্রশাসনে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এর পরও যোগ্য কর্মকর্তাদের (উপসচিব) যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে ডিসি নিয়োগের কাজ করছে সরকার। পাশাপাশি সচিব পদেও নিয়োগ নিয়ে কাজ চলছে।
গত ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সচিব পদে বড় ধরনের রদবদল আনা হয়। বিগত সরকারের সময় প্রশাসনে চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তার সংখ্যা বাড়তে থাকে। এটি নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি। প্রশাসনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকে নেতিবাচকভাবেই দেখা হয়। বর্তমান সরকারের আমলেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, অতীতের সরকারগুলোর পথেই হাঁটছে এ সরকার। ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত সরকারের শেষ সময়ে প্রশাসনে দুই শীর্ষ পদসহ অন্তত ২৪টি পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে ছিলেন অবসরে যাওয়া সাবেক আমলারা। এ নিয়ে প্রশাসনে অস্বস্তি তৈরি হয়। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এক দিনেই ১১ জন সচিবের চুক্তি বাতিল করে। পরে আরও বেশ কিছু চুক্তি বাতিল করা হয়। এর পর বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক কারণে বঞ্চিত ১৯৮২ নিয়মিত ব্যাচের বেশ কিছু কর্মকর্তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় প্রশাসনে।
প্রশাসনের উচ্চপদগুলোয় অধিকতর যোগ্য, সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তা যাচাই-বাছাই করে পদায়ন করতে হবে। আমলাতান্ত্রিক লাল ফিতার দৌরাত্ম্য থেকে মুক্তি পেতে প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর পথ তৈরি করতে হবে। বর্তমানে প্রশাসনের সামগ্রিক উন্নয়নকাজে এক ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। সেই স্থবির অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার প্রশাসনকে গতিশীল করতে যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।