ঢাকা ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

অস্থির চালের বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩১ এএম
অস্থির চালের বাজার
সিন্ডিকেট ভাঙতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

গ্রামের ঘরে ঘরে এখন নতুন ধানের ঘ্রাণ। আমনের ভরপুর উৎপাদন সত্ত্বেও বাজারে বেড়েই চলেছে চালের দাম। এর কারণ হিসেবে ক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতারা দূষছেন মিলমালিকদের। তাদের অভিযোগ, চালকলের মালিকদের কারসাজির কারণেই চালের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। বেশি মুনাফা লাভের আশায় তারা চাল মজুত করে রাখেন। চালের সংকট না থাকলেও বাজারে সরবরাহ কমিয়ে কৃত্রিমভাবে দাম বাড়িয়ে ভোক্তার পকেট কাটছেন। এ কারসাজির সঙ্গে বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান, বড় মিলার ও উৎপাদন অঞ্চলের কিছু পাইকারি ব্যবসায়ী জড়িত। সরকারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিল বা বাজারে চালের কমতি নেই। সরকারকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে সিন্ডিকেট করে ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়াচ্ছেন। প্রয়োজনে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। ইতোমধ্যে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না। 

গত এক মাসে চালের দাম ৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। চালের সরবরাহ বাড়াতে আমদানিতে উৎসাহ দিচ্ছে সরকার। বেনাপোল বন্দরের আমদানি ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মো. মহসিন মিলন খবরের কাগজকে বলেন, সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। চাল আমদানির ক্ষেত্রে দু-চারজনের ওপর নির্ভরশীল না থেকে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে, যেন সবাই চাল আমদানি করতে পারেন। তাহলে চালের দাম কমে যাবে। বৃহত্তর যশোরে ২ হাজার লোক আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত। তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হলে ভোক্তারা কম দামে সব পণ্য পাবেন। মাত্র ২ ঘণ্টায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে দেশে সব পণ্য চলে আসে। তাই চালও দ্রুত ঢাকায় চলে যাবে।

সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, দেশে বর্তমানে চালের দাম বেশি। সর্বশেষ তথ্যমতে, ৩১ অক্টোবর সরু চাল ৭০-৮০ টাকা কেজি, মাঝারি ৫৮-৬৫ ও মোটা চাল ৫২-৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। যেখানে গত বছরের একই সময়ে এই দাম ছিল যথাক্রমে ৬০-৭১ টাকা, ৫২-৫৫ ও ৪৮-৫২ টাকা কেজি।

সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, দেশে বন্যায় ৭ থেকে ৮ লাখ টন ধানের ক্ষতি হয়েছে। তবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় খাদ্যের মজুত কম নেই। চালের বিকল্প বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে। সরকার চালের ওপর শুল্ক কমানোর ঘোষণা দেওয়া মাত্র সাধারণত চালের দাম কমে যায়। এবার সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করার পরও তা কমছে না। 

আমদানিকারকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্যসচিব বলেন, ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে পিপিআর-২০০৮ আইন ফলো করে খাদ্য আমদানি 
করা হচ্ছে। কোনো মনোপলি হচ্ছে না। যে কেউ চালসহ খাদ্য আমদানি 
করতে পারবেন। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে এ পর্যন্ত দেশে বিভিন্ন গুদামে ১৪ লাখ ৩০ হাজার টন খাদ্য মজুত রয়েছে। এর মধ্যে চাল ৯ লাখ ৮০ হাজার টন ও গমের মজুত ৪ লাখ ৫০ হাজার টন।

ভরা মৌসুমে চালের বাজার অস্থির হওয়ার পেছনে যেসব সিন্ডিকেট রয়েছে তা ভাঙতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যেসব সুবিধাভোগী চালের মজুত রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছেন, তাদের ওপর নজরদারি বাড়িয়ে কঠোর অভিযান পরিচালনা করতে হবে। এমনিতেই নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস। তার ওপর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য চাল নিয়ে চলছে কারসাজি। এগুলো শক্ত হাতে প্রতিহত করার সময় এসেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, সেটিই প্রত্যাশা।

স্বৈরশাসক বাশারের পতন নিপীড়নমুক্ত গণতান্ত্রিক সিরিয়ার অপেক্ষায়

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:১০ পিএম
স্বৈরশাসক বাশারের পতন
নিপীড়নমুক্ত গণতান্ত্রিক সিরিয়ার অপেক্ষায়

মধ্যপ্রাচ্যের ভূমধ্যসাগরীয় দেশ সিরিয়ায় নতুন সূর্যোদয় হয়েছে। বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের মাত্র ১২ দিনের ঝোড়ো অভিযানে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সিংহাসন। দুই যুগ ধরে দেশ শাসন করার পর ‘স্বৈরশাসকে’র কলঙ্ক নিয়ে গতকাল তিনি রাশিয়ায় পালিয়ে গেছেন। 

বহু নৃগোষ্ঠী, বহু ধর্মের সহনশীল ধর্মনিরপেক্ষ দেশ সিরিয়া। এ দেশে সুন্নিরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। তবে তারা নানা গোষ্ঠীতে বিভক্ত। এদের বাইরেও রয়েছে আরও কিছু প্রভাবশালী গোষ্ঠী- আলউত, শিয়া প্রভৃতি। বাশার এই আলাউত গোষ্ঠীর বংশোদ্ভূত বলে তাদের স্বার্থ রক্ষা করতেন। নিজের ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে সেনাবাহিনী এবং দেশের ভেতরের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে ব্যবহার করেছেন। ভূ-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী রুশ-ইরান অক্ষশক্তির সঙ্গে ছিল তার সখ্য।

একুশ শতকের সূচনা বর্ষ, অর্থাৎ ২০০০ সালে বাশার আল-আসাদ ক্ষমতা গ্রহণ করেন। পিতা হাফেজ আল-আসাদের ৩০ বছরের শাসনের পর তিনি তার স্থলাভিষিক্ত হন। শুরুতে বাশার ‘সংস্কার’ কর্মসূচির কথা বললেও ধীরে ধীরে নিজের ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ আর নির্বিঘ্ন করার জন্য গণতন্ত্রের গলা টিপে ধরতে থাকেন। বাশারের শাসনামলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে দেশটি গৃহযুদ্ধে জর্জরিত ছিল। বাশার এই গৃহযুদ্ধকে জিইয়ে রেখেছেন। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। সংকট ২০১১ সালে ‘আরব বসন্তে’র সময় তুঙ্গে ওঠে। তিন লাখ মানুষ মারা যায়। এক লাখ মানুষ হয় বিলুপ্ত অথবা হারিয়ে গেছে অথবা জোরপূর্বক তাদের বিতাড়িত করা হয়েছে। কোথায় তারা, আজও আর তার হদিস মিলবে না। 

এভাবেই সাধারণ সিরীয়দের জীবনে সংকটের শুরু। মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক, অর্থাৎ ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ৬০ লাখ সিরীয় শরণার্থী হিসেবে বিভিন্ন দেশে মানবেতর জীবনযাপন করছে। হাজার হাজার মানুষকে বিনা বিচারে চরম নির্যাতন আর অবমাননাকর বন্দিজীবন কাটাতে হয়েছে। অবশেষে সিরীয়দের জীবনে এল সেই সোনালি সময়। প্রায় ৫০ বছরের স্বৈরশাসনের পর মুক্ত-স্বাধীন নতুন সিরিয়ার উদ্ভব ঘটেছে। বন্দিত্ব থেকে মুক্ত সিরিয়া আনন্দে ভাসছে। নতুন স্বপ্ন সিরীয়দের চোখেমুখে। এই স্বপ্ন যেমন মুক্তির, তেমনি ভবিষ্যতের মুক্ত-স্বাধীন-মানবিক সিরিয়ার। 

সিরিয়ার বিপ্লবীরা প্রকৃতপক্ষে দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সশস্ত্র সংগ্রামের পর দেশকে মুক্ত করেছে। ‘বিপ্লব’ বলতে যা বোঝায় সেটাই তারা করেছে। তাদের ছিল সংগ্রামকালীন সুস্পষ্ট ভাবনা ও কৌশল। বিপ্লব সফল হলে কীভাবে দেশ শাসিত হবে ছিল সেই পরিকল্পনা। সিরিয়ার এই বিপ্লবে যিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন সেই আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি শুরুতে ছিলেন ইসলামি চরমপন্থি সংগঠন আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্কিত ‘ইসলামিস্ট’। কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি মতাদর্শিকভাবে হয়ে উঠেছেন ‘জাতীয়তাবাদী’। ধর্মদ্বন্দ্ব, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব- সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে সিরিয়ার সমগ্র জনগোষ্ঠীকে তিনি ঐক্যবদ্ধ করেছেন।

 বাশারের দেশ ত্যাগ করার পর বিজয়োল্লাসের মধ্যে তিনি এই জাতীয় ঐক্যের ওপর গুরুত্ব দিয়ে সবাইকে শান্ত থাকতে বলেছেন। জাতীয় সম্পদ যাতে ধ্বংস করা না হয়, সেই আহ্বান জানিয়েছেন। এমনকি সাংবিধানিক ব্যবস্থা রক্ষা করে বাশারের নিয়োগ করা প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ গাজী আল-জালালি ক্ষমতা হস্তান্তর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন বলেও ঘোষণা করেছেন। 

সন্দেহ নেই, বিপ্লবের পথরেখা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন আবু মোহাম্মদ আল-জোলানিসহ তার বিপ্লবী সতীর্থরা। ফলে বিপ্লবোত্তর পরিবেশে সিরিয়ার মানুষ মুক্তির আনন্দে ভাসছেন ঠিকই, কিন্তু ধ্বংসাত্মক কোনো কর্মকাণ্ডে যুক্ত হচ্ছেন না। এই বিজয়ের কোনো নেতিবাচক সংবাদ বিশ্ব গণমাধ্যমে আসেনি। এভাবেই সিরিয়ার বিপ্লবীদের সম্পর্কে ইতিবাচক বার্তা পাচ্ছে বহির্বিশ্ব। আমরাও তাদের এই বিপ্লবকে স্বাগত জানাই। 

গ্রিক দার্শনিক প্লেটো বলেছিলেন, ‘গণতন্ত্রের অনুপস্থিতিতে স্বৈরশাসনের উদ্ভব ঘটে।’ এখন সিরিয়ায় সেই স্বৈরশাসনের অবসান ঘটেছে। আশা করি, দেশটিতে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা ঘটবে। ফিরে আসবে শান্তি। বিশ্ববাসীর মতো আমরা নিপীড়নমুক্ত গণতান্ত্রিক সিরিয়ার অপেক্ষায় থাকব। সার্বিক মুক্তির লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে তারা যে সংগ্রাম করছিলেন, আমরা তার ভবিষ্যৎ সাফল্য কামনা করছি। সিরীয় জনগোষ্ঠীর উদ্দেশে জ্ঞাপন করছি উষ্ণ অভিনন্দন।

রাজনৈতিক ও জন-আকাঙ্ক্ষার দাবি  সংস্কার শেষে আগামী বছরই নির্বাচন হোক

প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩৬ এএম
রাজনৈতিক ও জন-আকাঙ্ক্ষার দাবি 
সংস্কার শেষে আগামী বছরই নির্বাচন হোক

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর দুটি বিষয় সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে- একটি ‘সংস্কার’, অন্যটি ‘নির্বাচন’। রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ যেমন সংস্কার চাইছেন, তেমনি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশ নিয়মতান্ত্রিক সুস্থ রাজনীতিতে ফিরে আসুক সেই আকাঙ্ক্ষাও ব্যক্ত করছেন। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল সরাসরি ‘রোডম্যাপ’ও দাবি করেছে। 

গত ১৭ নভেম্বর সরকারের শতদিনের মেয়াদপূর্তি উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও বলেছিলেন, নির্বাচন কবে হবে, এই প্রশ্ন জনগণের মতো সরকারেও সারাক্ষণ আছে। সরকার নির্বাচনের ট্রেনযাত্রা শুরু করেছে। ‘এটা আর থামবে না। কিন্তু যেতে যেতে আমাদের অনেক কাজ সেরে ফেলতে হবে। এই ট্রেন শেষ স্টেশনে কখন পৌঁছাবে সেটা নির্ভর করবে কত তাড়াতাড়ি আমরা তার জন্য রেললাইনগুলো বসিয়ে দিতে পারি, আর তা হবে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের মাধ্যমে।’ প্রধান উপদেষ্টা তার এই বক্তব্যে ‘অনেক কাজ’ বলতে ইঙ্গিত করেছিলেন সংস্কারের ওপর।

 সরকারের পক্ষ থেকে এও বলা হয়েছিল, সংস্কার চলবে, পাশাপাশি নির্বাচনের কাজও এগিয়ে যাবে। কিন্তু নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হবে, সেই কথাটি সুনির্দিষ্ট করে বলেননি। রাজনৈতিক দলগুলো যে নির্বাচনি ‘রোডম্যাপ’ দাবি করে আসছিল, তা নিয়ে সরকার এখন পর্যন্ত মুখ খোলেনি। তবে দিন দিন নির্বাচনের প্রসঙ্গটি সামনে চলে আসছে। এ নিয়েই গতকাল খবরের কাগজের শীর্ষ প্রতিবেদন ছিল এ রকম- ‘আগামী বছরের শেষে নির্বাচন!’

নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য সময় নিয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কেউ কেউ যে ভাবছেন, শিক্ষা ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদের কথায় সেটি উঠে এসেছে। একটা সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘আগামী বছর নির্বাচিত সরকার দেখা যাবে।’ এরপরই তিনি বলেছেন, এটা তার ব্যক্তিগত মত। এর আগে গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান নির্বাচন যাতে ‘আঠারো মাসের মধ্যে হতে পারে’ সে জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন। সরকারের প্রেস উইং থেকে অবশ্য এরপর জানানো হয়েছিল, প্রধান উপদেষ্টাই সুবিধামতো সময়ে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন। কিন্তু সেই ঘোষণা এখনো আসেনি। 

এর মাঝে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নাটকীয় মোড় নিয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করা ও চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তারের পর সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে সর্বদলীয় সংলাপ হয়েছে। ধর্মীয় গোষ্ঠীর সঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি। আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যের। তার এই আহ্বানে সব দল ও ধর্মীয় গোষ্ঠী বিপুলভাবে সাড়া দিয়েছে। পাশাপাশি সাধারণ নির্বাচনের বিষয়টিও সংলাপে উঠে এসেছিল বলে গণমাধ্যমের সূত্রে জানা যাচ্ছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ‘দ্রুত নির্বাচন দিলে কেউ ষড়যন্ত্রের সাহস পাবে না’ বলে উল্লেখ করেছেন।

 ‘যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন চাই’ বলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘বুদ্ধিমান ও ভদ্রলোকদের দিনক্ষণ বলা লাগে না, তারা অনুমান করতে পারেন আসলে কতটা সময় দেওয়া হয়েছে।’ এই ধারাতেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও এর আগে বেশ কয়েকবার দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা জোনায়েদ সাকী, ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর- এরা সবাই খবরের কাগজের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে জরুরি সংস্কার শেষে নির্বাচনের কথা বলেছেন। নির্বাচন বিলম্বের ভাবনা কোনো দলেরই নেই। রাজনৈতিক পরিমণ্ডল এবং জনমানুষের মধ্যেও এ রকম আলোচনা আছে। দেশের পরিস্থিতি ভারতীয় গণমাধ্যমের ব্যাপক নেতিবাচক প্রচারে ঘোলাটে হওয়ার আগেই নির্বাচন হওয়া উচিত বলে মনে করছেন তারা।

সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল ও গণমানুষের এই আকাঙ্ক্ষার প্রেক্ষাপটে আমরাও মনে করি, যৌক্তিক দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত। দেশের পরিস্থিতি যেভাবে মাঝে মাঝে জটিল ও অস্থির হয়ে উঠছে, তাতে নির্বাচিত সরকারের হাতে দেশ শাসনের ভার থাকাটা যথার্থ হবে। জনগণের কাছে দায়বদ্ধতার বিষয়টি হবে আরও সুনিশ্চিত। তবে জন-আকাঙ্ক্ষার যে প্রধান বিষয়- ‘সংস্কার’ সাধনের পরেই নির্বাচন হওয়া উচিত।

গণতন্ত্রই যেহেতু শেষ কথা। নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে সেই ট্রেন তার সূচনাবিন্দু ইতোমধ্যে ছেড়ে এসেছে। সুতরাং গন্তব্যে নিরাপদে পৌঁছানই জাতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ও অভীষ্ট লক্ষ্য হওয়া উচিত। সরকার এ দিকটির প্রতি মনোযোগী হবে বলে আমরা আশা করছি। আর প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে সেটা যদি আগামী বছরের শেষের দিকে হয়, তাহলে জাতির জন্য কল্যাণকর হবে বলে আমরা মনে করি।

 

দেশের স্বার্থে রাজনৈতিক ঐক্য  ষড়যন্ত্র রুখতে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ান

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১০ পিএম
দেশের স্বার্থে রাজনৈতিক ঐক্য 
ষড়যন্ত্র রুখতে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ান

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত বুধবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ ৪০টির বেশি রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন ধর্মের ৩২ প্রতিনিধিকে নিয়ে বৈঠক করেছেন। উদ্দেশ্য হলো, দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সংকট মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্য নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপকে সফল মনে করছে রাজনৈতিক দলগুলো। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, জাতীয় ঐক্যের আহ্বানে এই সংলাপ শতভাগ সফল হয়েছে। 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা দেশের বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। জানা গেছে, বৈঠকে মূলত আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা, বাংলাদেশের পতাকার অবমাননা এবং দেশের সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের বিষয়ে করণীয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত চাওয়া হয়। বৈঠকে কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছেন নেতারা। এগুলো হলো, বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের দূতাবাসে আগের সরকারের নিয়োগপ্রাপ্তদের সরিয়ে বিপ্লবের পক্ষের শক্তির নিয়োগ দেওয়া। আওয়ামী লীগ সরকার ১৫ বছর ভারতের সঙ্গে যেসব চুক্তি করেছে তা প্রকাশ করা এবং স্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিল করাসহ ক্ষতিপূরণ আদায়। জাতীয় ঐক্যের প্রতীকী সংহতি দিবস হিসেবে এক দিন পালন করা। 

এই দিন যার যার অবস্থান থেকে জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে রাস্তায় নেমে আসা। জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠন করা। আন্তর্জাতিক মহলের প্রোপাগান্ডা প্রতিরোধে রাষ্ট্রীয়ভাবে পাবলিক রিলেশন সেল গঠন করা এবং তা বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে প্রকাশ করার পক্ষে মত দেন।

প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের নতুন বাংলাদেশের যাত্রাপথে এটা একটা মস্ত বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই জিনিসটা যেন আমরা ঠিকভাবে মোকাবিলা করতে ভুল না করি। সে জন্য সবার পরামর্শ নিয়ে আমরা যেন একযোগে কাজ করতে পারি। সবাই মিলে করলে একটা সমবেত শক্তি আসবে।’

এদিকে ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশের অঙ্গীকার ইস্যুতে বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন গণমাধ্যমে। জাতীয় ঐক্য সব সময় ভালো বলে উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের কিছুটা অবনতি হয়েছে। মূলত পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের সঙ্গে। কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বড় রকমের মতবিরোধ হয়নি। ভারতের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য সম্পর্ক খুবই গভীর। দুটিই প্রতিবেশী দেশ। তাই চেষ্টা করা হচ্ছে সম্পর্কের যাতে অবনতি না হয়। 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমি মনে করি, এটা একটা ইতিবাচক বিষয়। একটা ভূমিকা প্রধান উপদেষ্টা নিয়েছেন। ছাত্রদের সঙ্গে বসেছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসেছেন। এই সংকটে সবাইকে একত্রিত করা হয়েছে। এটা অত্যন্ত ভালো অগ্রগতি।’ 

দেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতার অস্তিত্ব ও মর্যাদার প্রশ্নে গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে দুই পক্ষের মধ্যেই পারস্পরিক সহনশীলতা প্রয়োজন। বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের টানাপোড়েন ও উত্তেজনার মধ্যে আগামী সপ্তাহে দুই দেশের পূর্বনির্ধারিত পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠক ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। আশা করছি, দুই দেশের এই বৈঠকের মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্কের টানাপোড়েন কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে।

 

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অস্থিরতা  শক্ত হাতে মোকাবিলা করুন

প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩২ এএম
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অস্থিরতা 
শক্ত হাতে মোকাবিলা করুন

স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ববোধ ও পারস্পরিক সম্মানবোধের জায়গাটি সঠিকভাবে গড়ে ওঠেনি। শ্রেণিবিভেদ প্রতিটি ক্ষেত্রে বিস্তর। ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ ফিকে হতে বসেছে। এ দেশের তরুণ প্রজন্ম গত তিন মাস আগে একটি বৃহৎ আন্দোলনে শরিক হয়েছে। দীর্ঘদিনের বিচারহীনতা ও বঞ্চনার সঙ্গে মানুষের প্রত্যাশার মধ্যে ছিল বিস্তর ফারাক। তেমনিভাবে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগত হিংসা-বিদ্বেষ প্রকাশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার আকাঙ্ক্ষাও। বিশ্লেষকরা মনে করেন, আমাদের সংস্কৃতিটা এমনভাবে গড়ে উঠেছে, যেখানে জিঘাংসা, হিংসা, পরশ্রীকাতরতা, বিদ্বেষ বা কাউকে ছোট করে অপমান করে তৃপ্তি পাওয়া যায়। এটা সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।
 
সামাজিকভাবে আমরা এগুলো কখনো চিহ্নিত করার চেষ্টা করিনি। আমরা সম্প্রতি লক্ষ করেছি, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দাবিদাওয়া নিয়ে সরব বিভিন্ন পক্ষ। এ পর্যন্ত শতাধিক সংগঠনের পক্ষ থেকে হাজারের বেশি দাবিদাওয়া জানানো হয়েছে। বিভিন্ন পেশার মানুষ কখনো বিক্ষোভ, কখনো  রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড় অবরোধ করেছেন। কোথাও কোথাও যানবাহনসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর করা হয়েছে। উদ্দেশ্য পূরণের চেষ্টা হয়েছে মবের মাধ্যমে। তারা মনে করছেন, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নতুন এই সরকারের কাছে দাবি আদায় করার মোক্ষম সময় এটি। ফলে তাদের মধ্যে প্রত্যাশার বিপরীতে হতাশা, পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ, নানা পক্ষের উসকানি, সহিংস মনোভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। 
সম্প্রতি রাজনৈতিক ও সামাজিক বিরোধ থেকে কাউকে কাউকে পিটিয়ে হত্যা করার খবর গণমাধ্যমে এসেছে।

 সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে রেললাইন অবরোধ করেন। সেখানে চলন্ত ট্রেনে ঢিল ছোড়ার ঘটনা ঘটে। এতে নারী ও শিশু রক্তাক্ত হন। গত কয়েক দিনে রাজধানীতে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে ক্যাম্পাস, সেই সঙ্গে লুট করা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মূল্যবান জিনিসপত্র। এ ছাড়া দুটি পত্রিকা অফিসের সামনে মব তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে। তৌহিদি জনতার নামে জোড়া গরু জবেহ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে মানুষের মধ্যে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে বলে সমাজ বিশ্লেষকরা মনে করছেন। শিক্ষাঙ্গনে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। তরুণ প্রজন্ম বইয়ের পরিবর্তে অস্ত্র ও লাঠির শক্তি প্রদর্শনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এটা গোটা জাতির জন্য একটা অশনিসংকেত। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রেজাউল করিম মনে করেন, যখন কোনো বিপ্লব হয়, তখন এ রকম পরিস্থিতি দেখা দেয়। সরকারের গতিবিধির ওপর তা নির্ভর করে। গত ১৬ বছরের সবকিছু একটা ধারায় অভ্যস্ত ছিল। নতুন পরিস্থিতিতে হয়তো সবাই সরকারকে সহযোগিতা করছে না। আবার সরকারকে বেকায়দায় ফেলার কৌশল বলেও কেউ কেউ মনে করছেন। এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে নিরপেক্ষভাবে দেখলে সব গ্রুপ রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত নাও হতে পারে। তারা সরকারকে দুর্বল মনে করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চায়। সরকারকে শক্ত হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।

টিআইবির প্রতিবেদন  সেবা খাতে ঘুষ ও দুর্নীতি বন্ধ করুন

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৮ এএম
টিআইবির প্রতিবেদন 
সেবা খাতে ঘুষ ও দুর্নীতি বন্ধ করুন

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) গত মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে সেবা খাতে দুর্নীতি: জাতীয় খানা জরিপ ২০২৩ অনুষ্ঠানে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে টিআইবি জানিয়েছে, বিগত সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে পাসপোর্ট, বিআরটিএ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সেবা খাতসমূহ।

 শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার, ভূমি, কৃষি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, বিচারিক খাতসহ ১৭টি সুনির্দিষ্ট খাতের ওপর বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে সংস্থাটি। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা নিতে গিয়ে সেবাগ্রহীতা কী ধরনের দুর্নীতির শিকার হন, তা পরিমাপ করতে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি। ২০২৩ সালের মে থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত সময়সীমার মধ্যে প্রস্তুতকৃত দুর্নীতিবিষয়ক জরিপে আরও জানা যায়, এই সময়ে সর্বোচ্চ ঘুষ বা নিয়মবহির্ভূত অর্থ আদায়ে বিচারিক সেবা, বিমা ও ভূমিসেবা খাতসমূহ শীর্ষে ছিল। 

প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালে সার্বিকভাবে দুর্নীতির শিকার ৭০ দশমিক ৯ শতাংশ খানা (পরিবার) এবং ঘুষের শিকার ৫০ দশমিক ৮ শতাংশ পরিবার। সেই সঙ্গে সার্বিকভাবে পরিবারগুলো গড়ে ৫ হাজার ৬৮০ টাকা ঘুষ বা নিয়মবহির্ভূত অর্থ দিতে বাধ্য হয়েছে। যেখানে গড় ঘুষের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি বিচারিকসেবা, ভূমিসেবা ও ব্যাংকিং খাতে। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত সেবা খাতে জাতীয় পর্যায়ে মোট ঘুষের ন্যূনতম প্রাক্কলিত পরিমাণ ১ লাখ ৪৬ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। 

জরিপে উঠে এসেছে, গ্রামাঞ্চলের পরিবারের তুলনায় শহরাঞ্চলের পরিবারগুলোকে বেশি ঘুষ দিতে হয়েছে এবং সেবা দিতে গিয়ে উচ্চ আয়ের তুলনায় নিম্ন আয়ের পরিবার তাদের বার্ষিক আয়ের অপেক্ষাকৃত বেশি অংশ ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছে। এটা নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর অতিরিক্ত বোঝার সৃষ্টি করেছে, যা বিগত সরকারের দুর্নীতি প্রতিরোধে দুর্বলতা হিসেবে প্রকাশ পেয়েছে। 

নারী সেবাগ্রহীতাদের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা খাতে উল্লেখযোগ্য হারে বেশি দুর্নীতির শিকার হওয়ার ফলে এসব খাতে নারীদের অংশগ্রহণকে নিরুৎসাহিত করছে। এতে নারীর উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে এসব সমস্যা থেকে উত্তরণে ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০২৩ সালের মধ্যে সকল পর্যায়ে দুর্নীতি ও ঘুষ কমিয়ে আনার অঙ্গীকার পূরণে সেবা খাতে দ্রুত কার্যকর কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেছে টিআইবি। উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপগুলো হলো- সেবা খাতে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া, সেবা পুরোপুরি ডিজিটালাইজড করা, সেবা খাতে হয়রানি বন্ধে গ্রিভেন্স রিড্রেস সিস্টেম (জিআরএস) ও অভিযোগ বাক্স স্থাপন করা এবং অভিযোগগুলো নিয়মিত পর্যালোচনা করে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। 

অন্য সুপারিশগুলোর মধ্যে সেবাদাতা ও সেবাগ্রহীতার মতামত নেওয়া। বিশেষ করে সেবা খাতের জন্য যুগোপযোগী আচরণবিধি প্রণয়ন। সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধির লক্ষ্যে গণশুনানি ও সামাজিক নিরীক্ষা চালুর বিষয় উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনগণের সচেতনতা ও অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য স্থানীয় পর্যায়ে সামাজিক আন্দোলন জোরদার করার সুপারিশ করেছে টিআইবি।

টিআইবি ১৭টি সুনির্দিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সেবা খাতের ওপর যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তা বিবেচনায় নিতে হবে। সুপারিশগুলোর যথার্থতা মূল্যায়ন করে সে অনুযায়ী সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সেবা খাতে ঘুষ ও দুর্নীতি বন্ধে সেবাগ্রহীতার মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।

'), descriptionParas[2].nextSibling); } if (descriptionParas.length > 6 && bannerData[arrayKeyTwo] != null) { if (bannerData[arrayKeyTwo].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyTwo].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyTwo].file)), descriptionParas[5].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyTwo].custom_code), descriptionParas[5].nextSibling); } } if (descriptionParas.length > 9 && bannerData[arrayKeyThree] != null) { if (bannerData[arrayKeyThree].type == 'image') { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertImageAd(bannerData[arrayKeyThree].url, ('./uploads/ad/' + bannerData[arrayKeyThree].file)), descriptionParas[8].nextSibling); } else { descriptionParas[0].parentNode.insertBefore(insertDfpCodeAd(bannerData[arrayKeyThree].custom_code), descriptionParas[8].nextSibling); } } });