
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে বিভিন্নমুখী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বাজার নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পদক্ষেপগুলোর সুষ্ঠু বাস্তবায়ন করা হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সূত্রমতে, অগ্রাধিকারের তালিকায় আছে বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাড়ানো, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দূরত্ব হ্রাস এবং অতিরিক্ত মুনাফাকারীদের তাৎক্ষণিক শাস্তিদান। বাজার নজরদারিতে স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের এ কাজে অংশগ্রহণ থাকবে বলে জানা গেছে। পণ্য মজুতকারীদের ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের জেল-জরিমানাও করা হবে। এবারের রোজায় পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে করণীয় নির্ধারণে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে গত নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সরকারের উচ্চপর্যায়ে নীতিনির্ধারকদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সেখানে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়। সে সময়ই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার পুরো বিষয়টি সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস তদারকি করছেন। পণ্যের আমদানি বাড়ানোর পাশাপাশি খালাসেও মনোযোগ বাড়াতে বলা হয়েছে। অভিযোগ এসেছে, দাম বাড়ানোর কৌশল হিসেবে কিছু আমদানিকারক পণ্য খালাসে বিভিন্ন অজুহাত দেখাচ্ছেন।
চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না বাড়ায় পণ্যসংকটে বাজারে দাম বাড়ে। বিগত সরকারের প্রভাবশালী অনেকেই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ভোগ্যপণের উচ্চমূল্য নির্ধারণ করে অতিরিক্ত ব্যবসা করছেন। কারসাজি করে কয়েক গুণ বেশি দামে পণ্য বিক্রি করা হলেও সে সময় তা নজরদারির আওতায় আনা হয়নি। বর্তমান সরকার এরই মধ্যে পুরোনো আমদানিকারকদের অনেকের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। পণ্য সরবরাহ বাড়াতে শুল্কছাড়, এলসি সুবিধাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে নতুন আমদানিকারকদের উৎসাহিত করা হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত বছরের জানুয়ারিতে ২১৪টি প্রতিষ্ঠান রোজায় পণ্য আমদানি করলেও এরই মধ্যে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে ৩৬৫ হয়েছে।
ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটে কারা জড়িত, গোয়েন্দা সংস্থা থেকে তা অনুসন্ধান করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর
দেশের ভোগ্যপণ্য খাতের শীর্ষস্থানীয় এক আমদানিকারকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে আমদানি কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় আরেক প্রতিষ্ঠানকেও এরই মধ্যে ভোগ্যপণ্য আমদানির নামে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তথ্যপ্রচার করায় সতর্ক করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের উপপরিচালক ড. মো. শাহ আলম খবরের কাগজকে বলেন, দেশের সবচেয়ে বেশি ভোগ্যপণ্য আমদানি হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। রমজান সামনে রেখে এ বছর এই বন্দরে ভোগ্যপণ্য আমদানিতে রেকর্ড হয়েছে। প্রতিদিনই পণ্যবাহী জাহাজ আসছে। এ ধারা রোজার পরও থাকবে।
রমজানের নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সরকারে নেওয়া উদ্যোগ প্রশংসনীয়। বিগত সরকারের সময়েও বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেটের কারণে। মজুতদাররা ভোক্তার কাছ থেকে অধিক মুনাফা লাভের আশায় অবৈধভাবে পণ্য মজুত করে। তাই সরকারকে পণ্য সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি সিন্ডিকেট ও মজুতদারির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই সঙ্গে ভোক্তা সচেতনতা বাড়ানোর ওপরও জোর দিতে হবে।