স্বাধীনতা দিবস
স্বাধীনতা দিবস আমাদের জাতীয় জীবনের গৌরব ও তাৎপর্যময় দিন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ। এ দিনটি জাতীয় জীবনের ঐতিহ্য, অগ্রগতি ও বিকাশের প্রতীক। এটি একটি মর্যাদাপূর্ণ দিন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনীর অতর্কিত আক্রমণে ঢাকা শহর এক বধ্যভূমিতে পরিণত হয়। এ দেশের মানুষ উপলব্ধি করে যে স্বাধীনতা ছাড়া সম্মানজনকভাবে বেঁচে থাকার কোনো উপায় নেই। সে জন্য ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয় এবং শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতার চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে। বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। প্রতিবছর এ মহান দিনটি লাখো শহিদের স্মৃতি নিয়ে আমাদের সামনে দেখা দেয়। জাতীয় মর্যাদায় উদযাপিত হয় দিবসটি। কিন্তু আমাদের মনে রাখা দরকার, কী উদ্দেশ্য এবং পটভূমিকায় এই মহান স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। দেশের সব শ্রেণির মানুষের কাছে স্বাধীনতাকে যদি অর্থবহ করে তোলা যায়, যদি সবাই স্বাধীনতার আনন্দ উপভোগ করতে পারে, তবেই স্বাধীনতা দিবসটি সার্থক হয়ে উঠবে।
বাংলা নববর্ষ
বাংলা নববর্ষ বাঙালির জীবনে একটি আনন্দময় উৎসব হিসেবে প্রাচীনকাল থেকে উদযাপিত হয়ে আসছে। পহেলা বৈশাখ আমাদের নববর্ষের প্রথম দিন। এটি সরকারি ছুটির দিন। গতানুগতিক জীবনযাপন প্রণালির মধ্যে নববর্ষ নিয়ে আসে নতুন সুর ও উন্মাদনা। জীবনকে এক নতুন দৃষ্টিতে দেখার সুযোগ আসে তখন। অতীতকে বিসর্জন দিয়ে এক নতুন অধ্যায়ে উপনীত করে নববর্ষ জীবনকে এক নতুন চেতনায় উদ্দীপ্ত করে। দিনটি যাতে ভালোভাবে উপভোগ করা যায়, সেজন্য নানা উৎসব, খেলা, প্রদর্শনী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পারিবারিক জীবনে বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব হয় আমন্ত্রিত। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পালিত হয় হালখাতা অনুষ্ঠান। পুরোনো হিসাব শেষ করে নতুন হিসাবের খাতা খোলা হয়। নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে কিছু উপহার দেওয়ার রীতি প্রচলিত আছে। এভাবে ব্যক্তি জীবন নববর্ষের আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠে। জাতীয় জীবনেও নববর্ষ এক সর্বজনীন উৎসবের রূপ ধারণ করে আছে। নববর্ষের মেলা অর্থাৎ বৈশাখী মেলা এ দেশের এক সুপ্রাচীন ঐতিহ্য। বিচিত্র জিনিসের সমাহার ও আনন্দ-কোলাহলে মুখরিত হয়ে ওঠে বৈশাখী মেলা। এই মেলার মধ্যেই নববর্ষের যথার্থ আনন্দময় রূপটি প্রত্যক্ষ করা যায়। মোটকথা, নববর্ষ আমাদের জীবনে পরম আনন্দের উৎসব। এটি জীবনকে নতুন করে উপলব্ধি করার দিন। জাতীয় জীবনেও নববর্ষের তাৎপর্যকে ছড়িয়ে দিতে হবে।
বিজয় দিবস
আমাদের জাতীয় জীবনে সবচেয়ে বড় অর্জন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় লাভ। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বর্বর পাকিস্তানিদের পরাজিত করে আমরা বিজয় অর্জন করি। আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ হয়েছিল হানাদারমুক্ত। আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশ। একটি নিজস্ব মানচিত্র ও পতাকা। বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর ঠিকানা। এ বিজয়ের গৌরব ও আনন্দ অম্লান হয়ে থাকবে চিরদিন। কিন্তু এ বিজয় সহজে আসেনি। দীর্ঘপথ পরিক্রমায় অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার ফলে এ বিজয় লাভ সম্ভব হয়েছে। পাকিস্তানি বর্বর শাসকগোষ্ঠী বাংলার নিরীহ মানুষের ওপর আক্রমণ করে। হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ করে। বীর বাঙালিও পাকিস্তাদিনের এ বর্বর আক্রমণ রুখে দেয়। অত্যন্ত ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে প্রতিবছর ১৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয়ভাবে এ দিনটি পালন করা হয়। বিজয় দিবস আমাদের জাতীয় দিবস। তাই বিজয় দিবসের চেতনাকে জাতীয় জীবনের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। একটি শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই বিজয় দিবসের সত্যিকারের তাৎপর্য আমরা অনুধাবন করতে সক্ষম হব। বিজয় দিবসের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে জাতীয় উন্নতির জন্য আমাদের সব ভেদাভেদ ভুলে একযোগে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যেতে হবে।
বইমেলা
বই মানবসভ্যতার অন্যতম প্রাণসত্তা। বই মানুষকে পূর্ণতা দেয়; জীবনকে করে সমৃদ্ধ। বইমেলা প্রত্যেক জাতির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ। মানুষের মধ্যে বই সম্পর্কে আগ্রহ সৃষ্টি, বই পাঠের ব্যাপক প্রসার, মননশীলতা বৃদ্ধিতে বইমেলা অর্থবহ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশ্ব ইতিহাসে ১৮০২ সালে ম্যাথু কেরির উদ্যোগে প্রথম বইমেলার আসর বসে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে। ১৮৭৫ সালে প্রায় ১০০ জন প্রকাশক মিলে নিউইয়র্কের ক্লিনটন শহরে আয়োজন করে বৃহৎ এক বইমেলার। ওই মেলায় প্রদর্শিত হয়েছিল প্রায় ৩০ হাজার বই। ১৯৪৯ সালে শুরু হয় জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টের বৃহৎ বইমেলা। সেখান থেকেই আধুনিক বইমেলার স্মরণীয় শুভযাত্রা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দেশে দেশে বইমেলা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বর্তমানে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই আন্তর্জাতিক মানের বইমেলার আয়োজন করে থাকে। বাংলাদেশের বইমেলার ইতিহাস খুব দীর্ঘ নয়। ১৯৭২ সালে মুক্তধারা প্রকাশনীর কর্ণধার চিত্তরঞ্জন সাহা নিজের উদ্যোগে প্রথম বইমেলার আয়োজন করেন। ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমি পূর্ণাঙ্গ প্রাতিষ্ঠানিক বইমেলার আয়োজন করে। ১৯৮৫ সাল থেকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত বইমেলার নাম দেওয়া হয় ‘একুশে বইমেলা’। এই মেলা এখন বাঙালির প্রাণের মেলায় পরিণত হয়েছে। লেখক, প্রকাশক ও লাখ লাখ পাঠক সমাজ এ মেলার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। প্রতিবছর ১ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে এই বইমেলা। বইমেলা নিছক একটি আনন্দ মেলা নয়। এ মেলা লেখক-লেখিকা ও প্রকাশক-বিক্রেতার মাঝে অভূতপূর্ব সেতু বন্ধন ঘটায়। কবি, কথাশিল্পী, প্রাবন্ধিক ইত্যাকার মননশীল মানুষ তৈরিতেও বইমেলার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এ মেলাতেই মিলন ঘটে লেখক, পাঠকের, প্রকাশক-লেখকের। বইমেলার উৎসবে যোগ দিয়ে পাঠক পরিচিত হন নিত্যনতুন বইয়ের সঙ্গে। বিচিত্র লেখকের, বিচিত্র বর্ণের, বিচিত্র বিষয়ের উন্নতমানের বই মন কেড়ে নেয় পাঠকদের। বইয়ের প্রতি তাদের আকর্ষণ বাড়ে; তৈরি হয় বই কেনার মানসিকতা। সর্বসাধারণকে পাঠমুখী করা এবং মননশীল জাতি গঠনের ক্ষেত্রে বইমেলার গুরুত্ব অপরিসীম।
মো. সুজাউদ দৌলা, সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ
রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, ঢাকা/আবরার জাহিন