সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর-২
নিচের ছকটি দেখে প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখ।
ক. BRAC-এর পূর্ণরূপ কী?
খ. UNDP-এর একটি উদ্দেশ্য বর্ণনা করো।
গ. উদ্দীপকে ‘?’ চিহ্নিত স্থানে কোন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে ইঙ্গিত করা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘বিশ্বব্যাপী শিশুর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, বিকাশ ও উন্নয়নে সংস্থাটির ভূমিকা অপরিসীম’ মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ করো।
উত্তর: ক. BRAC-এর পূর্ণরূপ হলো- Bangladesh Rural Advancement Committee।
খ. UNDP-এর একটি উদ্দেশ্য হলো- দারিদ্র্য বিমোচন।
UNDP সদস্য রাষ্ট্রগুলোর বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর দারিদ্র্য হ্রাস করার উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এ উদ্দেশ্য অর্জনে UNDP অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা ও সম্পদ বৃদ্ধি এবং সরবরাহ নিশ্চিত করে দেশগুলোর উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণে সহায়তা করে থাকে। সংস্থাটি দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে পাইলট প্রজেক্টে অনুদান দেয় এবং নারীদের উন্নয়নে সরকার ও জনগণকে ভূমিকা পালনে উদ্বুদ্ধ করে তোলে। সেই সঙ্গে এটি সরকারের সঙ্গে NGO-এর কার্যক্রমের সমন্বয় সাধনে সহায়তা দেয়।
গ. উদ্দীপকে ‘?’ চিহ্নিত স্থানে আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনিসেফকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
ইউনিসেফ হলো জাতিসংঘ পরিচালিত একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, যা সারা বিশ্বের শিশুদের কল্যাণে কাজ করে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে শিশুদের কল্যাণের উদ্দেশ্যে ১৯৪৬ সালের ১১ ডিসেম্বর সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থিত। বিশ্বব্যাপী নারী ও শিশু কল্যাণে এ সংস্থাটির অবদান সর্বজনস্বীকৃত। সারা বিশ্বের শিশুদের অধিকার সংরক্ষণ ও উন্নয়নে সংস্থাটি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, নারীর ক্ষমতায়ন, জরুরি ত্রাণ কার্যক্রমসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়ন ও তাদের প্রতি প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন সাধন এবং নারী-পুরুষ সমঅধিকার নিশ্চিত করতে ইউনিসেফ প্রচারিত ‘মিনা কার্টুন’ বহুল প্রশংসিত হয়েছে।
উদ্দীপকের ছকে দেখা যায়, একটি সংস্থার প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৪৬ এবং এর সদর দপ্তর নিউইয়র্ক। এটি বিশ্বব্যাপী শিশুদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে কাজ করে। সংস্থাটির অন্যতম কর্মসূচি হলো মিনা কার্টুন সম্প্রচার। উদ্দীপকের সংস্থাটির এ তথ্যগুলো উপরে বর্ণিত সংস্থা ইউনিসেফের সঙ্গে হুবহু সাদৃশ্যপূর্ণ। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে ‘?’ চিহ্নিত স্থানে ইউনিসেফকে নির্দেশ করা হয়েছে।
ঘ. ‘বিশ্বব্যাপী শিশুর শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, বিকাশ ও উন্নয়নে সংস্থাটির অর্থাৎ ইউনিসেফের ভূমিকা অপরিসীম’ মন্তব্যটি যথার্থ।
সারা বিশ্বের শিশুদের অধিকার রক্ষা ও সার্বিক কল্যাণের উদ্দেশ্যে ১৯৪৬ সালে ইউনিসেফ যাত্রা শুরু করে। এর সদর দপ্তর নিউইয়র্কে। উদ্দীপকের ছকে উল্লেখিত তথ্যগুলো আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনিসেফকেই ইঙ্গিত করে। সারা বিশ্বের শিশুদের অধিকার সংরক্ষণ ও উন্নয়নের উদ্দেশ্যে সংস্থাটি বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করে যাচ্ছে। সংস্থাটি শিশুদের শিক্ষার অধিকার রক্ষায় বিশ্বের অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন ও সংস্কার, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দানে সরকারকে সহায়তা করে। পাশাপাশি দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের সংস্থাটি বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ যেমন- বই, খাতা-কলম বিতরণসহ স্কুল ড্রেস ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতিও বিতরণ করে থাকে।
ইউনিসেফ শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাতৃমঙ্গল ও শিশুকল্যাণকেন্দ্র স্থাপন, গ্রামীণ স্বাস্থ্যকর্মী প্রশিক্ষণ, ওষুধ ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, সংক্রামক ব্যাধি প্রতিরোধে টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনা প্রভৃতি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। পাশাপাশি শিশুদের পুষ্টির চাহিদা পূরণে এটি জনসাধারণকে পুষ্টি বিষয়ে সচেতন করা, শিশুদের জন্য বিস্কুট ও দুগ্ধ বিতরণ, শিশুদের মাতৃদুগ্ধ পানে উৎসাহিত করা প্রভৃতি কর্মসূচি পরিচালনা করছে। আবার শিশুদের বিকাশ ও উন্নয়নের জন্য ইউনিসেফ বিশ্বব্যাপী শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম, শিশু পাচার ও শারীরিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। এভাবে বিশ্বব্যাপী শিশুদের রক্ষা ও কল্যাণের ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকার জন্য ইউনিসেফ ১৯৬৫ সালে নোবেল পুরস্কার এবং ২০০৬ সালে প্রিন্স অব এসটুরিয়াস অ্যাওয়ার্ড অব কনকর্ড লাভ করে।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, সারা বিশ্বের সুবিধাবঞ্চিত, অসহায় শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, বিকাশ ও উন্নয়নে উদ্দীপকে নির্দেশিত সংস্থা ইউনিসেফ অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
কামরুন নাহার রুনু,প্রভাষক, সমাজকর্ম
শের-ই-বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মধুবাগ, মগবাজার, ঢাকা/আবরার জাহিন