নমুনা প্রশ্ন ও উত্তর
নমুনা প্রশ্ন: প্যানেলে আলোচনা করে ‘আমাদের সমাজে দারিদ্র্য দূরীকরণে জাকাতের ভূমিকা’ উপস্থাপন করো।
(প্রিয় শিক্ষার্থীরা তোমরা প্রথমেই পাঁচজন মিলে একটা প্যানেল গঠন করে উপরোক্ত শিরোনামের আলোকে আলোচনা এবং তথ্য সংগ্রহ করে তা যেকোনো একজন উপস্থাপন করবে।)
নমুনা উত্তর: একজনের উপস্থাপন: আজকের এই প্যানেল অনুষ্ঠানের সম্মানিত সভাপতি, আমার সম্মানিত শিক্ষক, মডারেটর প্যানেল আলোচক এবং আমার শিক্ষার্থী-বন্ধুরা। আসসালামু আলাইকুম। প্রথমে আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি এবং আমাকে আলোচনায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য প্যানেল অনুষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আজকে আমাদের আলোচ্য বিষয় হলো ‘আমাদের সমাজে দারিদ্র্য দূরীকরণে জাকাতের ভূমিকা বিশ্লেষণ’।
আমরা জানি, বিশ্বজুড়ে প্রতিনিয়ত দারিদ্র্যের থাবা বিস্তৃত হচ্ছে। ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিশ্বমানবতার জন্য চরম এক অভিশাপ। তাই ধনী ও দরিদ্রের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে ইসলাম কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য আর্থিক সাহায্যের বিধান রেখেছে। সম্পদ যেন শুধু বিত্তবানদের মধ্যেই পুঞ্জীভূত না থাকে, সেজন্য এতে দরিদ্রের একটি নির্দিষ্ট প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করে দেওয়া হয়েছে। একটি সুধী, সুন্দর ও উন্নত সামাজিক পরিবেশ গঠনে ধনাঢ্য মুসলমানদের অবশ্যই তাদের নিসাব পরিমাণ সম্পদের একটি নির্ধারিত অংশ দরিদ্র ও অভাবগ্রস্ত ব্যক্তিদের দুর্দশা মোচনের জন্য ব্যয় করতে হবে। ফলে অসহায় ও দুস্থ মানবতার কল্যাণই হবে না, বরং সমাজে আয় বণ্টনের ক্ষেত্রেও বৈষম্য হ্রাস পাবে। পবিত্র কোরআনে ধনসম্পদ বণ্টনের মূলনীতি সম্পর্কে বলা হয়েছে- ‘তোমাদের মধ্যে যারা বিত্তবান, কেবল তাদের মধ্যেই ঐশ্বর্য আবর্তন না করে।’ (সুরা হাশর-৭)
দারিদ্র্য বিমোচনে ইসলামে অর্থনৈতিক বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। জাকাতকে কেন্দ্র করেই সুষম বণ্টন, ন্যায় প্রতিষ্ঠা ও দারিদ্র্য দূরীকরণের কর্মপদ্ধতি পরিচালিত হয়। জাকাতের প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে সম্পদ যেন মুষ্টিমেয় ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত না থাকে।
জাকাতকে ধনীদের জন্য অবশ্য প্রদেয় এবং দরিদ্রদের জন্য অধিকার বলে ঘোষণা করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা ধনসম্পদ থেকে সাদাকা (জাকাত) আদায় করে তোমাদের ধনসম্পদ পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করো।’ (সুরা তাওবা-১০৩)
জাকাত আদায় ও তার যথাযথ ব্যবহার সমাজে আয় ও সম্পদের সুষম বণ্টনের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। জাকাতের মাধ্যমে সম্পদের একটি সুনির্দিষ্ট অংশ কয়েকটি নির্দিষ্ট খাতে ব্যবহৃত ও বণ্টিত হয়। তাই জাকাত আদায় বাধ্যতামূলক করা হলে এর মাধ্যমে বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও স্বনির্ভরতা অর্জন করা সম্ভব। জাকাত দারিদ্র্য বিমোচনের একটি স্থায়ী পদ্ধতি। সরকারি, বেসরকারি, ব্যক্তিগত ও সামাজিক পর্যায়ে দারিদ্র্য দূরীকরণের বিভিন্ন উদ্যোগ রয়েছে। এসব উদ্যোগের পাশাপাশি জাকাতভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলে দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীন জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন এবং সম্পূর্ণভাবে দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব। দরিদ্র ব্যক্তিকে এমন পরিমাণ জাকাত দেওয়া উচিত, যাতে তার কর্মসংস্থানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হয় এবং সে আর দ্বিতীয়বার জাকাতের অর্থের মুখাপেক্ষী না হয়। কিন্তু আমাদের সমাজে বর্তমানে প্রচলিত জাকাত দেওয়ার মাধ্যমে দারিদ্রতা দূর হচ্ছে না, এর অন্যতম কারণ হলো নগদ ৫০০-১০০০ টাকা কিংবা শাড়ি, লুঙ্গি দিয়ে জাকাত দেওয়া হয়, যা দারিদ্র্য বিমোচনে কোনো কাজে আসে না।
জাকাত উৎপাদন বৃদ্ধি করে। কারণ সমাজের গরিব, অসহায়, দুস্থ ও বেকার লোকদের হাতে অর্থ বা ক্রয়ক্ষমতা থাকে না বললেই চলে। কিন্তু জাকাত বণ্টন করে তাদের হাতে অর্থ পৌঁছালে তাদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং তারা আগের চেয়ে বেশি পণ্যসামগ্রী ক্রয় করতে সক্ষম হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের সম্পদ বৃদ্ধি পাবে বলে তোমরা যে সুদ দিয়ে থাকো, আল্লাহর দৃষ্টিতে তা ধনসম্পদ বৃদ্ধি করে না। কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য তোমরা যে জাকাত দাও, প্রকৃতপক্ষে তাই বৃদ্ধি পায়, তারাই (জাকাতদানকারীই) সমৃদ্ধিশালী।’ (সুরা আর রোম-৩৯)
জাকাতভিত্তিক অর্থনীতিতে যাবতীয় সম্পদ এমনভাবে বিনিয়োগ করা হয়, যাতে কমপক্ষে জাকাতের হারের সমান আয় বাড়ানো সম্ভব হয়। অন্যথায় আসল থেকে জাকাত দিতে হয়। ফলে অর্থনীতিতে পূর্ণ বিনিয়োগ ও সর্বোচ্চ উৎপাদন সম্ভব নয়। বেকার লোকদের কর্মসংস্থান ও ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, চাহিদা বাড়ে এবং জাতীয় প্রবৃদ্ধি হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বর্ধিত করেন।’ (সুরা আল-বাকারা-২৭৬)
আল্লাহতায়ালা আমাদের তার দেওয়া সম্পদ যথাযথ বণ্টন করার তৌফিক দিন। এই বলে সবাইকে সালাম দিয়ে উপস্থাপক তার আলোচনা শেষ করবে।
মুহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ,মাস্টার ট্রেইনার ও সিনিয়র শিক্ষক
শের-ই-বাংলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মধুবাগ, মগবাজার, ঢাকা/আবরার জাহিন