ইন্টারনেট
‘ইন্টারনেট’ বা ‘অন্তর্জাল’ হলো ইন্টারনেটওয়ার্কের (Internetwork) সংক্ষিপ্তরূপ। ইন্টারনেট এমন এক প্রযুক্তি যা পৃথিবীজুড়ে বিস্তৃত পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত অনেকগুলো কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সমষ্টি। এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। আইপি বা ইন্টারনেট প্রোটোকল নামের এক প্রামাণ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে ডেটা বা তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হলো ইন্টারনেট। ইন্টারনেট হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার পরিকাঠামো কম্পিউটারগুলোর মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক তথ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করে। ১৯৬০-এর দশকে মার্কিন সামরিক বাহিনীর গবেষণা সংস্থা অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি পরীক্ষামূলকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাগারের মধ্যে এ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। সেটিই সূচনা। ইন্টারনেট বর্তমান আধুনিক বিশ্বে যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রধান মাধ্যম। তথ্য আদান-প্রদান, সংবাদপত্র পড়া, সামাজিক যোগাযোগ, পড়াশোনা, গবেষণা, টেলিভিশন দেখা, রেডিও শোনা, তথ্য সংগ্রহ ইত্যাদি তথা মানুষের পুরো জীবন ব্যবস্থাই ইন্টারনেটনির্ভর। ফলে মানুষের কর্মকাণ্ড পরিচালনা হয়ে উঠেছে সহজ এবং সাশ্রয়ী। ইন্টারনেট পৃথিবীর দূরত্বকে কমিয়ে দিচ্ছে। পুরো পৃথিবী ক্রমান্বয়ে গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হচ্ছে। মানুষ ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় এর সুফল ভোগ করছে। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, আধুনিক জীবনযাত্রায় ইন্টারনেটের গুরুত্ব অপরিসীম।
নবান্ন উৎসব
অতীতে গ্রাম-গঞ্জের বাঙালিরা নানা ধরনের উৎসব পালন করত। তার মধ্যে অন্যতম প্রধান একটি উৎসব হলো ‘নবান্ন উৎসব’। ‘নব’ মানে নতুন আর ‘অন্ন’ মানে ভাত। এভাবে ‘নবান্ন’ শব্দটির অর্থ দাঁড়ায় নতুন চাল বা নতুন ভাত। হেমন্তকালে নতুন ধান কাটার পর গ্রামের মানুষ যে উৎসব করত তাই নবান্ন উৎসব নামে পরিচিত। একসময় এ দেশে নবান্ন উৎসবের ঐতিহ্য ছিল। হেমন্তকালে নতুন ধান কেটে ঘরে তুললে গ্রামে গ্রামে এ উৎসব হতো। গ্রামের মানুষ নতুন ধানের পিঠা-পায়েস তৈরি করে এ উৎসব পালন করত। এ নবান্ন উৎসবের সঙ্গে গ্রামের মানুষের আনন্দ, হাসি-কান্না জড়িত। কিন্তু কালের বিবর্তনে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও অনিয়মিত ঋতু পরিবর্তনের কারণে এখন আর নবান্ন উৎসব দেখা যায় না। সারা দেশে দু-একটি জায়গা ছাড়া নবান্ন উৎসব প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলা যায়। তবে ভিন্ন আঙ্গিকে নগর সভ্যতায় কোথাও কোথাও নবান্ন উৎসব দেখা যায়। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটে প্রতিবছর নবান্ন উৎসব পালিত হয়ে থাকে। এ উপলক্ষে দেশের সংস্কৃতিকর্মীরা বিভিন্ন রকমের পিঠার প্রদর্শনী করে থাকে। এ ছাড়া দিনব্যাপী চলে দেশীয় ঐতিহ্যকে ধারণ করে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। নবান্ন উৎসব আমাদের বাঙালি জীবনে তাৎপর্য ও ঐতিহ্যময় উৎসব। এ উৎসব মানুষের মাঝে প্রাণের জোয়ার বয়ে আনে। বাঙালির ঐতিহ্য ও ইতিহাস ধরে রাখার জন্য এ উৎসব নিয়মিত পালন করা উচিত। এক্ষত্রে সরকারি ও বেসরকারিভাবে সবার এগিয়ে আসা উচিত।
ফেসবুক
বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটের নাম ফেসবুক বা www.facebook.com। যোগাযোগ ব্যবস্থার এই সাইটটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি। তবে ২০০৩ সালে মার্ক জাকারবার্গ নির্মিত ফেসমাশ নামের সাইটটির উত্তরসূরি হিসেবেই ফেসবুকের জন্ম। ফেসবুকের মাধ্যমে মানুষ সহজেই পরিচিতজনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। ফেসবুকে কোনো রকম খরচ ছাড়াই সদস্য হওয়া যায়। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা ফেসবুকের সঙ্গে সংযুক্ত অন্যান্য পরিচিত মানুষের বন্ধু হিসেবে সংযোজন করতে পারে, নানা রকম বার্তা ও মন্তব্য করতে পারে, বন্ধুদের সম্পর্কে জানতে পারে এবং ব্যবহারকারী তার ব্যক্তিগত তথ্যাবলির আলাপও সেরে নিতে পারে। উন্নত সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ২০০৮ সালে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ চ্যাটিং সিস্টেম চালু করে। ফেসবুকের মাধ্যমে একজন ব্যবহারকারী শহর, কর্মস্থল, বিদ্যালয় এবং অঞ্চলভিত্তিক নেটওয়ার্কেও যুক্ত হতে পারে। বর্তমানে এই সুবিধা ব্যবহার করে রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডও পরিচালিত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মিসরের তাহরির স্কয়ারে সরকার পতনের আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল ফেসবুকের মাধ্যমে, এমনকি বাংলাদেশের ব্লগারদের দ্বারা পরিচালিত যুদ্ধাপরাধীর বিচার দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনেও ফেসবুকের সহায়ক ভূমিকা রয়েছে। তবে ফেসবুক যেমন সামাজিক হৃদ্যতা বাড়ায় তেমনি অনেকাংশে মানসিক অস্থিরতাও বাড়ায়। এর মাধ্যমে সাইবার অপরাধও সংঘটিত হয়ে থাকে। ইদানীং ফেসবুক ব্যবহার তরুণদের নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে স্বাভাবিক কাজকর্ম বিঘ্নিত হয় অনেকের। তবু বলতে হয়, কিছু কিছু সমস্যা থাকা সত্ত্বেও তথ্যপ্রযুক্তির এই সময়ে ফেসবুকের অবদান অপরিসীম।
হরতাল
‘হরতাল’ শব্দটি গুজরাটি, এর আভিধানিক অর্থ- বিক্ষোভ প্রকাশের জন্য দোকান ও গাড়ি চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রাজনীতিবিদদের ভাষায় ‘হরতাল’ বা ‘ধর্মঘট’ গণতন্ত্রের ভাষা হলেও এটি কেবল রাজনৈতিক পরিমণ্ডলেই সীমাবদ্ধ নয়। কথা বলার অধিকার ও শ্রমের বিনিময়ে আর্থিক পাওনা ন্যায্যভাবে আদায় করার বিশেষ পদ্ধতি বা প্রক্রিয়াই হরতাল। পৃথিবীর কোথায় সর্বপ্রথম হরতাল পালন শুরু হয় তার সঠিক ইতিহাস জানা না গেলেও ১৮২৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ার গৃহনির্মাণ শ্রমিকরা কাজের সময় কমিয়ে ১০ ঘণ্টা করার দাবিতে যে আন্দোলন ও ধর্মঘট করেছিলেন তাই ইতিহাসে প্রথম ধর্মঘট হিসেবে স্বীকৃত। শাসকের বিরুদ্ধে শোষিতের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সংগ্রামের একটি হাতিয়ার হলো হরতাল। কলকারখানা, শিল্পপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের দাবি আদায়ে হরতাল পালিত হয়। গণতান্ত্রিক দেশগুলোয় বিরোধীদল সরকারের নানা কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার জন্য হরতাল কর্মসূচি দিয়ে থাকে। একসময় দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনে হরতাল কর্মসূচি গুরুত্বপূর্ণ দাবি আদায়ে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু বর্তমানে হরতাল নাম শুনলেই জনগণ আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। অতীত ও বর্তমানের আলোকে হরতাল কর্মসূচিতে ভালো-মন্দ দুটি দিকই পরিলক্ষিত হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের বৈধ হাতিয়ার হলো হরতাল। কিন্তু বর্তমানে হরতাল স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। জাতির সংকট উপলব্ধিতে অক্ষম এক শ্রেণির সুবিধাভোগী রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এ জন্য দায়ী।
মো. সুজাউদ দৌলা, সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ
রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, ঢাকা/আবরার জাহিন